জীবনী মুবারক
১৩ হিজরী শতকের মুজাদ্দিদ, মুজাহিদে মিল্লাত, শহীদে বালাকোট, আমীরুল মু’মিনীন, হযরত সাইয়্যিদ আহমদ শহীদ বেরেলবী রহমতুল্লাহি আলাইহি (১৩)
বিলাদত শরীফ: ১২০১ হিজরী বিছাল শরীফ: ১২৪৬ হিজরী বয়স মুবারক: ৪৫ বছর
, ২৭ ছফর শরীফ, ১৪৪৭ হিজরী সন, ২৩ ছালিছ, ১৩৯৩ শামসী সন , ২২ আগস্ট, ২০২৫ খ্রি:, ০৭ ভাদ্র, ১৪৩২ ফসলী সন, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
বালাকোটের জিহাদ ও হযরত সাইয়্যিদ আহমদ শহীদ বেরেলবী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার শাহাদাত মুবারক:
হযরত সাইয়্যিদ আহমদ শহীদ বেরেলবী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার শাহাদত মুবারক লাভ ও বালাকোটের জিহাদের আলোচনা করার আগে উনার আরো একটি আশ্চর্য ও বিস্ময়কর বড় কারামত মুবারকের আলোচনা না করলে এই সুওয়ালটির দীর্ঘ জবাবই যেন অসম্পূর্ণ থেকে যায়। আর তা হচ্ছে- একবার উনার কিছু খাছ খলীফা ও মুরীদান উনাকে অত্যন্ত আদবের সহিত জিজ্ঞাসা করলো, ‘হুযূর! এই ভারত বর্ষের লোকেরা হচ্ছে, পীর ও মাজার ভক্ত। এদেশে এমন বহু অশিক্ষিত, আনপড়, বিদ্য়াতী, ভন্ড, ফকীর আছে যারা পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ ও শরীয়তের কোন জ্ঞানই রাখে না। তারা গাইরুল্লাহর নামে মানত করে থাকে।
মাজার শরীফ যিয়ারতের নামে পুরুষ-মহিলা একত্রে বেপর্দা হয়ে শরীয়তের সীমালঙ্ঘন করে ফেলে। এছাড়া আমাদের সমাজে আরো দুনিয়াদার বহু নামধারী ভন্ড পীর, ফকির আছে যারা শরীয়তের কোনই তোয়াক্কা করে না, সর্বক্ষণই পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফের খিলাফ চলে এবং মানুষকে দ্বীন থেকে ফিরিয়ে নিয়ে যায়। তাদের দরবারেও বহু মানুষের আনাগোনা রয়েছে। আর আপনি হচ্ছেন এই ভারত বর্ষের হক্কানী-রব্বানী বুযূর্গ পীর ছাহেবদের পীর-মুর্শিদ। আপনি যদি ইন্তিকাল করেন তবে তো আপনার কামালত বেলায়েতের সম্মানের দিকে লক্ষ্য করে মানুষ আপনার জিসিম মুবারক মাটিতে না রেখে মাথায় নিয়ে ঘুরে বেড়াবে। ’
মুরীদানদের এই প্রশ্নের জবাবে হযরত সাইয়্যিদ আহমদ শহীদ বেরেলবী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, তোমরা নিশ্চিত থাকো, মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাকে তিনটি ওয়াদা দিয়েছেন।
প্রথমতঃ মহান আল্লাহ পাক আমাকে ওয়াদা দিয়েছেন, আমি ও আমার সাথীরা অর্থাৎ মুজাহিদ বাহিনীরা যেখানেই থাকি না কেন তিনি সেখানেই কুদরতীভাবে রিযিক পৌঁছাবেন।
দ্বিতীয়তঃ আমাকে কোন যাদু-টোনা, বান, বিষপান ইত্যাদি করা হলে সেটার কোন ক্রিয়া করবে না।
আর তৃতীয়তঃ আমার ইন্তেকালের পরে কেউ আমার জিসিম (দেহ) মুবারক খুঁজে পাবে না।
খলীফাতুল্লাহ, হযরত সাইয়্যিদ আহমদ শহীদ বেরেলবী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার এই তিনটি কথাই পরবর্তীতে হুবহু সত্য পরিণত হয়েছিলো। যেমন, রিযিকের ব্যাপারে হযরত সাইয়্যিদ আহমদ শহীদ বেরেলবী রহমতুল্লাহি আলাইহি ও উনার মুজাহিদ বাহিনীদের দেখা গেছে, উনারা এমন এক জনমানবহীন প্রান্তরে অথবা জঙ্গলে মোরাকাবা-মুশাহাদায় মশগুল আছেন অথবা তিনি উনার মুজাহিদ বাহিনীদের যুদ্ধ বিদ্যার প্রশিক্ষণ দিচ্ছিলেন। হঠাৎ দেখা গেলো কোথা থেকে অচেনা, অজানা অপরিচিত লোক উনাদের সামনে উপাদেয় খাদ্য ভরা পাত্র রেখে চলে গেছেন। এই ধরণের ঘটনা কেবলমাত্র উনার জীবনে একবার নয় বরং অসংখ্য ও বহুবার দেখা গিয়েছে।
সিধুর যুদ্ধে মুনাফিকদের ষড়যন্ত্রে উনার খাদ্যের মধ্যে বিষ মিশ্রিত করা হয়েছিলো। কিন্তু মহান আল্লাহ পাক উনার অশেষ মেহেরবানী ও রহমতের কারণে তিনি সেই বিষ মিশ্রিত খাদ্যভক্ষণ করেও সুস্থতা লাভ করেছেন।
১৮৩১ সালে শিখদের সাথে বালাকোটের প্রান্তরে যুদ্ধ করতে গিয়ে তিনি শহীদ হয়েছেন। বড় আশ্চর্য ও বিস্ময়ের ব্যাপার হচ্ছে- ১৮৩১ সালের পর থেকে আজ ২০২৫ সালের মধ্যেও অর্থাৎ এই দীর্ঘ প্রায় দু’শত বছরের ব্যবধানে আজ পর্যন্ত কেউ উনার মাজার শরীফের সন্ধান দিতে পারেনি। এমনকি বালাকোট ফেরত উনার বহু মুরীদ, খলীফা, মুজাহিদগণ পর্যন্ত যুদ্ধের ময়দানে শাহাদাতের পর উনার হুবহু শরীর মুবারক দেখেছেন একথারও কোন প্রমাণ বা স্বাক্ষ্য কোন কিতাবে মিলে না। সুবহানাল্লাহ!
এ থেকেই প্রমাণিত হয় যে, মুজাদ্দিদে যামান, আমিরুল মু’মিনীন, হযরত সাইয়্যিদ আহমদ শহীদ বেরেলবী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি কত বড় মহান আল্লাহ পাক উনার ওলী ছিলেন। এ ঘটনা আল্লামা নবাব ওয়াজীরুদ দৌল্লা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার “ওয়াসীলে ওয়াজীর আলা তরীকুল বাশীর ওয়ান নাজীর” কিতাবে, আল্লামা গোলাম রসূল মেহের উনার বিশ্ববিখ্যাত “সাওয়ানেহ আহমদী” কিতাবে এবং সাড়া জাগানো সীরাত গ্রন্থ “সীরাতে সাইয়্যিদ আহমদ শহীদ” কিতাবে বর্ণনা করেছেন।
হযরত সাইয়্যিদ আহমদ শহীদ বেরেলবী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার জিহাদী কার্যক্রমের দু’টি গতিধারা লক্ষ্য করা যায়।
প্রথমতঃ ভারতভূমি হতে চিরতরে ইংরেজ শক্তির মূলোৎপাটন করা।
দ্বিতীয়তঃ পাঞ্জাবের সীমান্তবর্তী অঞ্চলগুলো হতে শিখ ও পাঠান মুনাফিক মুসলমান সর্দারদের অস্তিত্ব মিটিয়ে দেয়া।
কেননা শিখদের সাথে সীমান্তের পাঠান মুনাফিক মুসলমান সর্দাররাও স্বার্থের তাগিদে একত্রিত হয়ে গিয়েছিলো। কারণ পূর্বে তারা ছিলো স্বাধীন। সীমান্তবর্তী রাজ্যগুলোর দেখাশোনার ভার তাদেরই হাতে ন্যস্ত ছিলো। তাই তারা জুলুম করে কৃষকদের ফসলের উপর সীমার অতিরিক্ত উশরের বোঝা চাপিয়ে দিয়েছিলো। যদি কোন কৃষক উশর দানে অস্বীকৃতি জানাতো তবে তার বাড়ি-ঘরে হামলা চালানো হতো। এবং জায়গা বিশেষ তাদেরকে শিখদের হাতে তুলে দেয়া হতো।
আর শরয়ী হুকুমত বলতে এদেরই নিয়মনীতি চলতো। শরীয়তের কোন আইন-কানুনই নির্দিষ্টভাবে এই সমস্ত এলাকায় কখনোই চালু করা সম্ভব ছিলো না। একমাত্র এদের দৌরাত্ম্যের কারণে। অবশেষে হযরত সাইয়্যিদ আহমদ শহীদ বেরেলবী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার আগমনের কারণে অত্র অঞ্চলগুলোতে শরীয়তের হুকুমত পূর্ণভাবে চালু হয়। (ইনশাআল্লাহ চলবে)
-মুহাদ্দিস আহমদ হুসাইন।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে সালাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু (২)
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
যাকাত সম্পর্কিত আহকাম, মাসায়িল ও ফাযায়িল (২)
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পর্দা পালন করা পুরুষ-মহিলা সবার জন্য ফরজ
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
যিনি খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে মুহব্বত মুবারক করা সমস্ত জিন-ইনসান, তামাম কায়িনাতবাসীর জন্য ফরযে আইন
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের আলোকে ছিরাতুল মুস্তাক্বীম উনার ছহীহ তাফসীর- ০১
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
যেখানে প্রাণীর ছবি থাকে, সেখানে রহমতের ফেরেশতা প্রবেশ করেন না
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
যা খাওয়া হারাম করা হয়েছে
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ইবলিসের পরে দ্বিতীয় উলামায়ে সূ হলো বালয়াম বিন বাউরা
০২ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পবিত্র ক্বাবলাল জুমুআহ্, বা’দাল জুমুআহ্ এবং সুন্নাতুল ওয়াক্ত নামায উনার শরঈ আহকাম (৪)
০২ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার)












