উচ্চ রক্তচাপজনিত চোখের সমস্যা
এডমিন, ২১ মুহররমুল হারাম শরীফ, ১৪৪৪ হিজরী সন, ১০ ছালিছ, ১৩৯১ শামসী সন , ০৯ আগস্ট, ২০২৩ খ্রি:, ২৫ শ্রাবণ, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) স্বাস্থ্য

গঠনশৈলীর কারণে চোখ মস্তিষ্কের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। বিশেষ করে চোখের সব স্নায়ু সংযোগ সরাসরি মস্তিষ্কের সঙ্গে। ফলে উচ্চ রক্তচাপজনিত জটিলতায় চোখ প্রত্যক্ষভাবে সমস্যায় পড়ে। আবার উচ্চ রক্তচাপে স্ট্রোক বা মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হলে তার প্রভাব চোখে পড়ে।
সমস্যা সূক্ষ্ম রক্তনালি মূলত থাকে চোখের রেটিনা ও নার্ভে। দীর্ঘদিনের অনিয়ন্ত্রিত উচ্চ রক্তচাপে এসব রক্তনালিতে একধরনের ক্ষতের সৃষ্টি হয়। অনেক সময় নালিগুলো বন্ধ হয়ে যায়। ফলে রক্তপ্রবাহে স্থবিরতা দেখা দেয়। রক্তসঞ্চালন বিঘ্নিত হওয়ায় রেটিনার ও নার্ভে বিদ্যমান স্নায়ুকোষগুলো ক্রমান্বয়ে ধ্বংস হতে থাকে। এতে চোখের দৃষ্টির সমস্যা দেখা দেয়। অনেক সময় চোখের ভেতর রক্তক্ষরণও ঘটে। একে বলে ইন্ট্রাওকুলার হিমোরেজ। ফলে দৃষ্টি স্থায়ীভাবে নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়।
উচ্চ রক্তচাপের সঙ্গে সঙ্গে ডায়াবেটিস আছে কিনা সেটাও দেখতে হবে। ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি খুব পরিচিত এবং সঠিক চিকিৎসা না হলে রোগী অন্ধ হয়ে যেতে পারে। হাইপারটেনশন এবং ডায়াবেটিস একসাথে থাকলে জটিলতা আরও বেশী। এসময় অবশ্যই একজন ভাল অভিজ্ঞ চক্ষু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে।
মস্তিষ্কে যখন স্ট্রোক হয়, তখন চোখের পেশিকে নিয়ন্ত্রণ করা ক্রেনিয়াল নার্ভও আক্রান্ত হতে পারে এতে চোখের পেশিতে ভারসাম্যহীনতা দেখা দেয়। ফলে চোখ বাঁকা বা ট্যারা হয়ে যেতে পারে। এ অবস্থায় একটি বস্তুকে দুটি (ডাবল ভিশন বা ডিপ্লোপিয়া) দেখবে। এই সার্বিক অবস্থাকে বলা হয় প্যারালাইটিক স্কুইন্ট।
অনেক সময় স্ট্রোক খুব মৃদু হয়। ফলে বড় ধরনের প্যারালাইসিস না হওয়ায় বিষয়টি নজর এড়িয়ে যায়। অনেক সময় রোগী জানেনই না যে তাঁর উচ্চ রক্তচাপ আছে। প্যারালাইটিক স্কুইন্ট বা ডাবল ভিশন দেখে আঁচ করা যায় যে রোগী স্ট্রোক করেছিল।
প্রতিরোধ
উচ্চ রক্তচাপের মাত্রা ও মেয়াদ যদি বেশি হয় তবে হাইপারটেনসিভ রেটিনোপ্যাথির মাত্রাও বেশি হবে। হাইপারটেনসিভ রেটিনোপ্যাথির মূল চিকিৎসা রক্তচাপকে স্বাভাবিক মাত্রায় রাখা। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে না থাকলে জটিলতা বাড়বে। বিভিন্ন পরীক্ষা করে সঠিক রোগ নির্ণয় করে প্রয়োজন অনুযায়ী চিকিৎসা করতে হবে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে রেটিনায় লেজার চিকিৎসা করলে দৃষ্টির উন্নতি হয়। সাবধানতা উচ্চ রক্তচাপ থাকলে বছরে এক বা দুইবার অবশ্যই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে চোখের পরীক্ষা করতে হবে।
নিয়মিত কায়িক শ্রম বা ব্যায়াম, ধূমপান ও অ্যালকোহল পরিত্যাগ করা, ওজন নিয়ন্ত্রণ করা, খাবারে অতিরিক্ত তেল বিশেষ করে ট্র্যান্সফ্যাট পরিহার করা এবং সর্বোপরি সুশৃঙ্খল জীবনযাপনের অভ্যাস উচ্চ রক্তচাপজনিত জটিলতা অনেকটাই কমিয়ে দেয়।