মুসলিম শাসনামলে হাজীদের সেবায় সালতানাতগুলোর উদ্যোগ
এডমিন, ২৪ শা’বান শরীফ, ১৪৪৪ হিজরী সন, ১৭ ‘আশির, ১৩৯০ শামসী সন , ১৭ মার্চ, ২০২৩ খ্রি:, ০৩ চৈত্র, ১৪২৯ ফসলী সন, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) ইতিহাস

পবিত্র মক্কা শরীফ এবং পবিত্র মদীনা শরীফ উনার প্রতি মুসলিম উম্মাহর গভীর আবেগ-অনুভূতি জড়িয়ে রয়েছে। প্রতিটি মুসলমান পবিত্র মক্কা শরীফ এবং পবিত্র মদীনা শরীফ উনার জিয়ারত মুবারকের আরজু নিয়েই বেড়ে ওঠে। এর প্রধান কারণ হলো, এই সম্মানিত ভূমি সাইয়্যিদুল মুরসালিন, ইমামুল মুরসালিন, খতামুন নাবিয়্যিন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত তাশরীফ মুবারকে ধন্য। সুবহানাল্লাহ!
পাশাপাশি, পবিত্র এই ভূমিতেই মুসলমানরা পবিত্র হজ্জ্ব পালন করে থাকেন। আর যুগ যুগ ধরে তাই পবিত্র হজ্জ্ব পালন সহজ করার জন্য বহুমুখী উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছিলো।
হযরত খোলাফায়ে রাশেদীন আলাইহিমুস সালাম উনাদের থেকে শুরু করে উসমানীয় সালতানাত পর্যন্ত সব শাসকই হজ্জ্ব যাত্রীদের সেবায় সচেষ্ট ছিলেন। হযরত খোলাফায়ে রাশেদীন আলাইহিমুস সালাম উনারা হজ্জ্বের যাবতীয় কার্যক্রম সরাসরি পরিচালনা করতেন এবং যাবতীয় অসুবিধাগুলো দূর করতেন। খাবার, পানীয় এবং অর্থনৈতিক সকল বাধাগুলো দূর করতেন। সুবহানাল্লাহ!
পরবর্তীতে আব্বাসীয় শাসকরা সরাসরি নিজেরাই হজ্জ্বে অংশগ্রহণ করতেন। হাজ্জ্বীদের জন্য তাঁরা বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করতেন। এ ক্ষেত্রে তাঁদের মধ্যে মাহদী এবং তাঁর ছেলে হারুনুর রশিদের নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। আব্বাসীয় শাসক মাহদি হারামাঈন শরীফাইন উনার অবকাঠামো উন্নয়নের উদ্যোগ নেন এবং হারুনুর রশিদ হজ্জ্ব কার্যক্রম পর্যবেক্ষণে বিশেষ প্রতিনিধি নিযুক্ত করেন। হারুনুর রশিদের নেককার আহলিয়া জোবায়দা খাতুন তিনি হাজিদের পানিসংকট দূর করতে কৃত্রিম খাল খনন করেন, যা ইতিহাসে ‘নহরে জোবায়দা’ নামে বিশেষভাবে মশহুর।
মামলুক শাসকদের ভেতর সুলতান কালাউন ও সুলতান রোকনুদ্দিন বাইবার্স আল বান্দুকদার রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাদের নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। সুলতান কালাউন পবিত্র মক্কা শরীফ উনার প্রশাসক নিয়োগের সময় শপথ নিতেন যেন সে, হাজিদের নিরাপত্তা ও সেবাদানে পূর্ণ মনোযোগ রক্ষা করে। সুলতান রোকনুদ্দিন রহমতুল্লাহি আলাইহি পবিত্র মক্কা শরীফ এবং পবিত্র মদীনা শরীফ উনার অঞ্চলের জন্য দ্বিগুণ অর্থ বরাদ্দ দিতেন, যেন প্রশাসন হাজিদের পরিপূর্ণ সেবা-যতœ করতে পারে।
মোগল শাসকরা হজ্জ্ব যাত্রীদের বহনকারী জাহাজগুলো পণ্য-রসদে সাজিয়ে দিতেন। হজ্জ্বের সময় তাঁরা ভারত মহাসাগরে গমনকারী হাজ্জ্বীদের নিরাপত্তায় নৌবাহিনীর টহল জাহাজ নিযুক্ত করতেন।
হাজিদের বিদায় জানাতে উসমানীয় সুলতানরা নিজেই উপস্থিত হতেন। তিনি হাজিদের সম্মানজনক উপহার দিতেন। তুর্কি হজ্জ্ব কাফেলায় সুলতানের পক্ষ থেকে একজন ‘আমিরুল হজ্জ্ব’ (হজ্জ্ব কাফেলার নেতা) নিযুক্ত করা হতো, যিনি হাজ্জ্বীদের সেবা ও সহযোগিতা করতেন এবং হাজ্জ্বীদের নিরাপত্তায় নিযুক্ত নিরাপত্তা বাহিনীর নেতৃত্ব দিতেন।
বিশেষ করে সুলতান দ্বিতীয় আব্দুল হামিদ ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি ১৯০০ সালে হজ্জ্বযাত্রা সহজ করতে হেজাজ রেলওয়ে নির্মাণের নির্দেশ দিয়েছিলেন। ইস্তাম্বুল থেকে পবিত্র মক্কা শরীফ পর্যন্ত বিস্তৃত প্রকল্পের দৈর্ঘ্য ছিল প্রায় এক হাজার ৩২০ কিলোমিটার।