সম্মানিত সারিয়্যাতুল র্কুরা বা বি’রে মাঊনাহ উনার ঘটনা (৩)
, ১১ জুমাদাল ঊখরা শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ২৬ সাবি’ ১৩৯১ শামসী সন , ২৫ ডিসেম্বর, ২০২৩ খ্রি:, ১০ পৌষ, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) আইন ও জিহাদ
لَكِنْ مَا كُنْتُ لِأَرْغَبَ بِنَفْسِي عَنْ مَوْطِنٍ قُتِلَ فِيهِ حَضْرَتْ الْمُنْذِرُ بْنُ عَمْرٍو رَضِىَ اللهُ تَعَالَى عَنْهُ، وَمَا كُنْتُ لِتُخْبِرَنِي عَنْهُ الرّجَالُ ثُمّ قَاتَلَ الْقَوْمَ حَتَّى قُتِلَ
অর্থ: “যে জায়গায় হযরত মুনযির ইবনে আমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি শাহাদাতী শান মুবারক প্রকাশ করেছেন আমি সে জায়গা ছেড়ে যেতে চাই না। আমি নিজে কখনও লোকমুখে এ সম্মানিত শহীদ উনাদের সংবাদ শোনার জন্য বসে থাকি নাই। এই বলে তিনি কাফির মুশরিকদের সাথে জিহাদে অবতীর্ণ হলেন এবং সম্মানিত জিহাদ মুবারক করতে করতে পবিত্র শাহাদাতী শান মুবারক প্রকাশ করলেন।” সুবহানাল্লাহ!
আর হযরত আমর ইবনে উমাইয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি শত্রুদের হাতে বন্দী হলেন। তিনি যখন তাদের জানালেন যে, তিনি মুদার গোত্রের লোক, তখন তাদের মধ্য হতে আমির ইবনে তুফাইল সে উনার মাথার অগ্রভাগের চুল কেটে দিল এবং মায়ের একটি মানতের বিনিময় বাবদ উনাকে আযাদ করে দিল। (দালায়িলুন নুবুওওয়াহ, আল-মু’জামুল কাবীর লিত-ত্ববারানী, সীরাতুল হালাবিয়্যাহ, সীরাতুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- ইবনে হিশাম রহমতুল্লাহি আলাইহি, মাগাযিউল ওয়াক্বিদী, তারিখুল খ¦মিস, উসুদুল গাবা)
হযরত আমর ইবনে উমাইয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি আযাদী শান গ্রহণ করে পবিত্র মদীনা শরীফের দিকে ফিরছিলেন। তিনি যখন কানাত উপত্যকার উপকন্ঠে কারকারা নামক স্থানে পৌঁছলেন। তখন বানূ আমির গোত্রের দু’টি লোকের সাথে উনার সাক্ষাৎ হলো। তারা এখানে গাছের ছায়ায় বিশ্রাম নিচ্ছিলেন।
হযরত ইবনে হিশাম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, লোক দু’টি ছিল বানূ আমির শাখার কিলাব গোত্রের। হযরত আবূ আমর মাদানী বলেন, তারা ছিল সুলাইম গোত্রের লোক।
হযরত ইবনে ইসহাক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, উক্ত লোক দু’টি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পক্ষ থেকে প্রতিশ্রুতি ও নিরাপত্তাপ্রাপ্ত ছিলেন। কিন্তু হযরত আমর ইবনে উমাইয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার তা জানা ছিল না। তিনি তাদের জিজ্ঞাসা করলেন, আপনারা কোন গোত্রের লোক? তারা বলল, আমরা বানূ আমির গোত্রের। এরপর তিনি ক্ষণিকের জন্য অমনোযোগিতার ভান করলেন, পরে তারা ঘুমিয়ে গেল। যখন তারা ঘুমে অচেতন হয়ে গেল, তখন তিনি তরবারি নিয়ে তাদের দু’জনকে হত্যা করলেন। তিনি মনে করেছিলেন, বানূ আমির গোত্র নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে যে শহীদ করেছে, এর দ্বারা তিনি কিছুটা হলেও তার প্রতিশোধ নিতে পেরেছেন।
হযরত আমর ইবনে উমাইয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি পবিত্র মদীনা শরীফে এসে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমত মুবারকে সমস্ত ঘটনা পেশ করলেন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন-
لَقَدْ قَتَلْتَ قَتِيلَيْنِ لَأَدِيَنَّهُمَا
“আপনি যে, দু’ব্যক্তিকে হত্যা করেছেন আমাকে তাদের রক্তপণ (দিয়াত) পরিশোধ করতে হবে।” সুবহানাল্লাহ!
প্রসিদ্ধ তারিখ ও সীরত গ্রন্থসমূহে বর্ণিত রয়েছে-
ثُمّ قَالَ رَسُولُ اللّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ هَذَا عَمَلُ أَبِي بَرَاءٍ، قَدْ كُنْتُ لِهَذَا كَارِهًا مُتَخَوِّفًا. فَبَلَغَ ذَلِكَ أَبَا بَرَاءٍ فَشَقَّ عَلَيْهِ إخْفَارُ عَامِرٍ إيّاهُ وَمَا أَصَابَ أَصْحَابَ رَسُولِ اللّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ بِسَبَبِهِ وَجِوَارِهِ وَكَانَ فِيْمَنْ أُصِيبَ عَامِرُ بْنُ فُهَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالَى عَنْهُ
অর্থ: “অতঃপর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, এটা বারা’র কাজ। আমি শুরুতেই উনাদেরকে পাঠাতে অপছন্দ করেছিলাম। এরূপ ঘটাতে পারে বলে আমার আশংকা ছিল। (মূলতঃ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সৃষ্টির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সব কিছুই জানেন। সুবহানাল্লাহ!) একথা আবূ বারা’র কর্ণগোচর হলে সে ভীষণ মর্মাহত হলো। তার প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করার কারণে আমীরের প্রতি তার অন্তরে ক্ষোভ সঞ্চার হলো। তার কারণে এবং তার প্রদত্ত নিরাপত্তা সত্ত্বেও নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা যে জুলুমের শিকার হলেন, সেজন্য তার দুঃখের সীমা থাকল না। এ ঘটনায় যারা সম্মানিত শাহাদাতী শান মুবারক প্রকাশ করেছেন উনাদের মধ্যে হযরত আমির ইবনে ফুহাইরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি অন্যতম।” (দালায়িলুন নুবুওওয়াহ, সীরাতুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, ইবনে হিশাম রহমতুল্লাহি আলাইহি, সীরাতুল হালাবিয়্যাহ, আল ফুছূলু ফি-রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, সুবুলুল হুদা ওয়ার রাশাদ, আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, আল কামিলু ফিত্-তারিখ) (চলবে)
-আল্লামা সাইয়্যিদ শাবীব আহমদ।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
জঙ্গে জামাল ও সিফফিনের যুদ্ধের প্রেক্ষাপট ও সঠিক ইতিহাস
১৫ মে, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
বানূ নাযীরের সম্মানিত জিহাদ এবং ইহুদী গোত্রকে পবিত্র মদীনা শরীফ থেকে বিতাড়িত করা প্রসঙ্গে (১৩)
১৪ মে, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
বানূ নাযীরের সম্মানিত জিহাদ এবং ইহুদী গোত্রকে পবিত্র মদীনা শরীফ থেকে বিতাড়িত করা প্রসঙ্গে (১২)
০৭ মে, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
বানূ নাযীরের সম্মানিত জিহাদ এবং ইহুদী গোত্রকে পবিত্র মদীনা শরীফ থেকে বিতাড়িত করা প্রসঙ্গে (১১)
৩০ এপ্রিল, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
বানূ নাযীরের সম্মানিত জিহাদ এবং ইহুদী গোত্রকে পবিত্র মদীনা শরীফ থেকে বিতাড়িত করা প্রসঙ্গে (১০)
২৮ এপ্রিল, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম ও মুসলমানগণের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে আইনী কার্যক্রম
২৩ এপ্রিল, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পবিত্র উহুদ জিহাদ সংঘটিত হওয়ার ঘটনা
১৭ এপ্রিল, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
পবিত্র উহুদ জিহাদ সংঘটিত হওয়ার ঘটনা
১৭ এপ্রিল, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম ও মুসলমানগণের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে আইনী কার্যক্রম
১৬ এপ্রিল, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
বানূ নাযীরের সম্মানিত জিহাদ এবং ইহুদী গোত্রকে পবিত্র মদীনা শরীফ থেকে বিতাড়িত করা প্রসঙ্গে (৯)
১৬ এপ্রিল, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম ও মুসলমানগণের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে আইনী কার্যক্রম
০৩ এপ্রিল, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
বানূ নাযীরের সম্মানিত জিহাদ এবং ইহুদী গোত্রকে পবিত্র মদীনা শরীফ থেকে বিতাড়িত করা প্রসঙ্গে (৮)
০১ এপ্রিল, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার)