ইতিহাসে ইহুদী চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র: আজকের নির্যাতিত-নিপীড়িত নিষ্পেষিত মুসলিম জনপদের দখল যেভাবে নিল কুখ্যাত ইহুদী গোষ্ঠী
০১লা যিলক্বদ শরীফের পর
, ০৪ যিলক্বদ শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ১৪ ছানী আশার, ১৩৯১ শামসী সন , ১৩, মে, ২০২৪ খ্রি:, ৩০ বৈশাখ, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
তুরস্কের উসমানীয় সালতানাত মুসলিম জাহানের ঐক্য ও ভ্রাতৃত্বের একটি কেন্দ্র ছিলো। সমগ্র মুসলিম জাহান তুর্কি সালতানাতকে কেন্দ্র করেই পরস্পরের প্রতি এক ভ্রাতৃত্বের বন্ধন অনুভব করতো তৎকালীন সময়ে। ইংরেজ ও ইহুদী ষড়যন্ত্রের ফলে তুরস্কের উসমানীয় সালতানাতের পতন হয় এবং মুসলিম জাহানের ঐক্য সূত্র ছিন্ন-ভিন্ন হয়ে যায়। তারপর থেকে মুসলমান দেশগুলো পরস্পরের সাথে বহুমুখী বিবাদে জড়িয়ে পড়ে। যার ভেতর কলকাঠি নেড়েছিলো কুখ্যাত ইহুদীরা।
তুরস্কের উসমানীয় সালতানাতের পতন ঘটানোর পর ইহুদীদের ক্রিড়নক কুখ্যাত কামাল পাশা তুরস্কের ২৫০০০ মুসলমানকে নির্মমভাবে শহীদ করেছিলো। বহু আলেম এবং ইসলামী ব্যক্তিত্বদের পৈশাচিকভাবে শহীদ করে উল্লাস প্রকাশ করে সে নিজেকে গাজী উপাধিতে ভূষিত করেছিলো। নাউযুবিল্লাহ! শহীদ হওয়া ব্যক্তিদের তার দৃষ্টিতে অপরাধ ছিলো তারা সবাই সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনাকে এবং তুরস্কের উসমানীয় সালতানাতকে মুহব্বত করতো।
এই কুখ্যাত ছদ্মবেশী ইহুদী কামাল পাশা মুসলমানদের ইবাদত বন্দেগী, ইসলামী রীতিনীতি ও আদব কায়দা সবকিছুই নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। এমনকি আরবী ভাষায় পবিত্র কুরআন শরীফ পাঠ করাও অপরাধ হিসেবে গণ্য করে। নাউযুবিল্লাহ!
উসমানীয় সালতানাতের পতন এবং কামাল পাশার মতো ছদ্মবেশী ইহুদীদের কারণে মধ্যপ্রাচ্যে ইহুদীদের রাষ্ট্র স্থাপনের পথ প্রশস্ত হতে থাকে। আরব-অনারব বিদ্বেষ ছড়িয়ে ইহুদীরা মুসলিম শক্তিকে দুর্বল করে দেয়। বিপরীতে প্রশস্ত হয় ইহুদীদের ফ্রিম্যাসন আন্দোলন।
ইহুদী চক্রান্ত একদিকে মুসলমানদের মধ্যে অন্তবিরোধ সৃষ্টি ও নানাবিধ ছদ্ম আন্দোলনের মাধ্যমে যুবসমাজকে সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার প্রতি বিরুপ ভাবাপন্ন করে তোলার কাজ চালানোর সাথে সাথে ফিলিস্তিনে ইহুদী রাষ্ট্র কায়েম করার আন্দোলনও চালিয়ে যেতে থাকে। ১৯১৬ খ্রিষ্টাব্দে ইহুদীদের বিশ্ব সংস্থা ‘ওয়ালর্ড জাইওনিষ্ট অর্গানাইজেশন’ বৃটেনের পররাষ্ট্র দফতরের সাথে আলোচনায় লিপ্ত হয় এবং এর ফলে ১৯১৭ সালে বৃটিশ সরকার কুখ্যাত ‘ব্যালফোর’ ঘোষণায় ফিলিস্তিনে ইহুদীদের জাতীয় আবাস ভূমি স্থাপনের দাবিকে সমর্থন করে। তৎকালীন বৃটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেমস ব্যালফোর এ ঘোষণায় স্বাক্ষর করে। ১৯৩৭ সালে রয়েল ফিলিস্তিন কমিশনের নিকট সাক্ষ্য দেয়ার সময় ব্যালফোর স্বীকার করে যে, ১ম বিশ্বযুদ্ধে ইহুদীরা মিত্র শক্তির সঙ্গে সহযোগিতা করায় পুরস্কারস্বরূপ পূর্ব নির্ধারিত গুপ্ত চুক্তি মুতাবিক বৃটিশ সরকার ফিলিস্তিনে ইহুদীদের জাতীয় আবাস ভূমি স্থাপনের আন্দোলন সমর্থন করে। ইহুদীরা এই ঘোষণাকে ব্যবহার করে দুনিয়ার বিভিন্ন দেশ থেকে ইহুদীদের নিয়ে এসে ফিলিস্তিনে জড়ো করতে শুরু করে।
ব্যালফোর ঘোষণার পর সারাবিশ্বে থেকে ইহুদীরা ফিলিস্তিনে এসে জড়ো হতে থাকে। ১৯১৮ সালে ফিলিস্তিনে মুসলমানদের মোট সংখ্যার এক দশমাংশ ছিলো ইহুদী এবং এদের সর্বমোট সংখ্যা ছিল মাত্র কয়েক হাজার। পরবর্তী বছরগুলোতে ফিলিস্তিনে ইহুদীদের সংখ্যা লাখ ছাড়িয়ে যায়।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হবার পর লাখ লাখ যুদ্ধ বিধ্বস্ত গৃহহীনদের মধ্যে বিপুল সংখ্যক ইহুদীও ছিল। তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রুম্যান ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী এটলীর সাথে পত্রালাপ করে ফিলিস্তিনে এক লক্ষ ইহুদীদের বসবাসের ব্যবস্থা করার জন্য বলে। এটলী এ বিষয়ে মার্কিন ও বৃটিশ প্রতিনিধিদের একটি যুক্ত কমিটি গঠনের প্রস্তাব করে। ট্রুম্যান এ প্রস্তাবে সম্মতি দেয়। ১৯৪৬ সালের ৩০ এপ্রিল ওয়াশিংটন ও লন্ডন থেকে কমিটির রিপোর্ট প্রকাশিত হয়। ঐ রিপোর্টে ফিলিস্তিনে এক লাখ ইহুদী বসবাসের ব্যবস্থা করার স্বপক্ষে মত প্রকাশ করা হয়। পরবর্তী সময়ে আরো ৫ লাখ ইহুদী অর্থাৎ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর প্রায় ৬ লাখ ইহুদীদের ফিলিস্তিনে অনুপ্রবেশ করানো হয়।
ফিলিস্তিনে ঘাটি গেড়েই কুখ্যাত ইহুদীরা বৃটিশদের ছত্রছায়ায় ফিলিস্তিনে ‘হেগনা ও ইরগুন’ নামের দুটি সন্ত্রাসবাদী সশস্ত্র ইহুদী সংগঠন তৈরী করে এবং এরা ফিলিস্তিনী মুসলমানদের উপর জুলুম নির্যাতন শুরু করে। নাঊযুবিল্লাহ!
ইহুদীরা ফিলিস্তিনে অনুপ্রবেশের পর ফিলিস্তিনি মুসলমানদের উপর ব্যাপক গণহত্যা শুরু করে। ফলে এ বিষয়টি জাতিসংঘে পেশ করা হয়। ১৯৪৭ সালের ২৮শে এপ্রিল জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের বিশেষ অধিবেশন হয়। ফিলিস্তিনের অবস্থা তদন্ত করে ওই বছরেই সেপ্টেম্বরের মধ্যে জাতিসংঘে রিপোর্ট পেশ করতে ১১ সদস্যের কমিটি গঠন হয়। এ কমিটির সদস্য ছিলো অষ্ট্রেলিয়া, কানাডা, চেকোশ্লোভাকিয়া, গুয়েতেমালা, ভারত, ইরান, নেদারল্যান্ড, পেরু, সুইডেন, উরুগুয়ে ও যুগোশ্লোভিয়া।
এই কমিটি গঠন হওয়ার পর কুখ্যাত ইহুদীরা চিৎকার-চেচামেচি করে ওঠে যে, জাতিসংঘ যে সিদ্ধান্তই গ্রহণ করুক না কেন, ফিলিস্তিনে স্বাধীন ইহুদী রাষ্ট্র গঠন ছাড়া কোনো প্রস্তাবে এরা সম্মত হবে না। যথাসময়ে রিপোর্ট পেশ করা হয়। তবে রিপোর্ট কমিটি দুইভাগে ভাগ হয়ে যায়। কানাডা, চেকোশ্লোভাকিয়া, পেরু, গুয়েতেমালা, নেদারল্যান্ড ও উরুগুয়ে ফিলিস্তিনকে বিভক্ত করে দুটি পৃথক রাষ্ট্র কায়েম করার প্রস্তাব করে। আর ভারত, ইরান, যুগোশ্লোভিয়া একটি ফেডারেল রাষ্ট্র গঠন করার সুপারিশ করে। এ কমিটিতে গুয়েতেমালা ও উরুগুয়ে ফিলিস্তিনকে বিভক্ত করার জন্য জোরদার চেষ্টা শুরু করে। ইহুদীদের জন্য এই দেশ দুটির এই চেষ্টার জন্য এখনো ইসরাইলের বিভিন্ন রাস্তাঘাটের নাম গুয়েতেমালা ও উরুগুয়ের নামে করা হয়েছে। তবে পাকিস্তানের প্রতিনিধি এ প্রস্তাবের তীব্র বিরোধিতা করেছিলেন।
তুমুল বিতর্কের পর ভোট গ্রহণ করা হয় এবং ২৯-১৩ ভোটে ফিলিস্তিন বিভক্তির প্রস্তাব পাশ হয়ে যায়। রাশিয়া ও আমেরিকা মুখে মুখে নিজেদের মধ্যে বিরোধী মনোভাব প্রকাশ করলেও তারা তখন একজোট হয়ে ফিলিস্তিন বিভক্তির পক্ষে ভোট দেয়।
-০-
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
আখেরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
১২ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
পবিত্র ছোহবত মুবারক গ্রহণের ফাযায়িল-ফযীলত, গুরুত্ব-তাৎপর্য ও আবশ্যকতা:
১২ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১২ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
যে নিজে পর্দা করে না ও অধীনস্থদের পর্দা করায় না সে দাইয়ূছ
১২ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
হাক্বীক্বী মৃত্যুকে স্মরণ করার মধ্যেই শহীদী দরজা মিলে
১২ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
শরীয়তের দৃষ্টিতে কোন রোগই ছোঁয়াচে নয়, ছোঁয়াচে বিশ্বাস করা কুফরী
১২ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
মূর্তি, প্রতিমা, ভাস্কর্য, ম্যানিকিন ও ছবি নাজায়িয ও হারাম
১১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
হযরত আব্বাদ ইবনে বিশর ইবনে ওয়াকাশ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু (২)
১১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
যাকাত সম্পর্কিত আহকাম, মাসায়িল ও ফাযায়িল (৩)
১১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
প্রাণীর ছবি তোলা কবীরা গুনাহ ও অসন্তুষ্টির কারণ
১১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সর্বক্ষেত্রে ফায়সালাকারী হিসেবে মেনে নেয়াই ঈমানদারের পরিচয়
১১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার)












