ইফতারীসহ বিভিন্ন খাদ্য ও পানীয়কে লোভনীয় করতে মেশানো হয় বিভিন্ন আকর্ষণীয় রং। সাধারণ মানুষ রংবিহীন বিশুদ্ধ খাবারের পরিবর্তে রংযুক্ত ভেজাল ও ক্ষতিকর খাদ্য ও পানীয় ক্রয় করতেই বেশি উৎসাহী। এতে করে তারা আর্থিকভাবে এবং স্বাস্থ্যগতভাবে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে কোনো কৃত্রিমতা নেই। এই পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার আমল থাকলে সাধারণ মুসলমান এভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতো না।
, ১১ রমাদ্বান শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ২৩ আশির, ১৩৯১ শামসী সন , ২২ মার্চ, ২০২৪ খ্রি:, ০৮ চৈত্র, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) মন্তব্য কলাম
ইফতারীতে হরেক রকম রং ব্যবহার করা হয়। ইফতারীর প্রায় সবগুলো সামগ্রী যেমন পেঁয়াজু, ছোলা, আলুর চপ, গোশতের চপ, কাবাব, কাটলেট, তেহারি, হালিম, জিলিপি, বিভিন্ন সিরাপ বা পাউডার দিয়ে ঘরে তৈরি শরবত, বাজারে বিক্রিত প্যাকেটজাত হরেক নামের তথাকথিত আমের বা কমলার রস ইত্যাদি সবকিছুতেই থাকে কৃত্রিম বিষাক্ত রংয়ের উপস্থিতি। রোজার পরে আসে ঈদের উৎসব। তার খাদ্য-আয়োজনেও থাকে রং-এর ব্যবহার। সেমাই, লাচ্ছা সেমাই, পোলাও ইত্যাদিতেও অনেকেই রং ব্যবহার করে। জর্দাও তৈরি হয় প্রায় বাড়িতেই। নিজেদের খাওয়া এবং অন্যদেরকে খাওয়ানোর জন্য রঙিন খাবারের এই আয়োজন এখন রেওয়াজে পরিণত হয়েছে।
এখন প্রশ্ন হলো- ইফতারীসহ বিভিন্ন খাবার ও পানীয়কে আকর্ষণীয় করতে হলুদ, কমলা, লাল, সবুজ ইত্যাদি রংয়ের এই যে ব্যবহার তা নিরাপদ কিনা। বিজ্ঞানীরা কিছু রংকে খাদ্য ও পানীয়তে ব্যবহারের জন্য অনুমোদন দিয়েছে। এগুলোকে বলে পারমিটেড ফুড কালার। খাদ্য ও পানীয়ে ব্যবহৃত কৃত্রিম রংগুলো বিভিন্নভাবে স্বাস্থ্যের ক্ষতি করে। পারমিটেড কালারগুলোও এ দোষ থেকে একেবারে মুক্ত নয়।
পারমিটেড কালারগুলোর দাম তুলনামূলকভাবে বেশি। এলাকায় যে দোকান থেকে খাদ্যে ব্যবহারের রং কেনা হয় সে দোকানি আবার আরেকজনের কাছ থেকে রং কেনে। এভাবে রং বেশ কয়েক হাত বদল হয়ে ভোক্তার হাতে আসে। ফলে এর যে কোন এক স্তরের কোনো একজন যদি ভাবে যে- রং যেহেতু সব দেখতে এক রকমই, সেহেতু অতি মুনাফার লোভে সে পারমিটেড কালারের বদলে একই রকম দেখতে কিন্তু অত্যন্ত ক্ষতিকর টেক্সটাইল কালার সেখানে বসিয়ে দেয়। বাণিজ্যের প্ররোচণার কারণে সরল বিশ্বাসে নিরাপদ মনে করে সাধারণ মানুষ সে রং নিজে খাচ্ছে, বাচ্চাদেরও মুখে তুলে দিচ্ছে।
অথচ এই টেক্সটাইল কালার রান্নাঘরে প্রবেশের কথা ছিল না। কথা ছিল এগুলো কাপড়ের কারখানায় থাকার, সেভাবেই এদেশে এগুলোকে আমদানির অনুমতি দেয়া হয়েছিল। ব্যবসায়ীদের অতি মুনাফার লোভ তাকে কাপড়ের কারখানা থেকে মানুষের রান্নাঘরে নিয়ে এসেছে, কারণ টেক্সটাইল কালারগুলো দামে অত্যন্ত সস্তা।
এই টেক্সটাইল কালারগুলো খাদ্য ও পানীয়ের সাথে মিশে শরীরে প্রবেশের পর এমন কোনো অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ নেই যার ক্ষতি করে না। তবে সবচেয়ে বেশি ও দৃশ্যমান ক্ষতিগুলো হয় আমাদের লিভার, কিডনি, হৃদপিন্ড ও অস্থিমজ্জার। এগুলো নষ্ট হয়ে যায়। বাচ্চা ও বৃদ্ধদের বেলায় নষ্ট হয় তাড়াতাড়ি, তরুণ-তরুণীদের কিছুটা দেরিতে। আজকাল আমাদের দেশে বিভিন্ন রকমের ক্যান্সার, লিভার সিরোসিস, কিডনি ফেলিউর, হৃদযন্ত্রের অসুখ, হাঁপানি এগুলো অত্যন্ত বেড়ে গেছে। সব বয়সী লোকজনই এতে আক্রান্ত হচ্ছে, তবে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে বাচ্চারা।
আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, এর প্রধান কারণ আমাদের দেশের খাদ্যে ব্যাপক পরিমাণে নকল-ভেজাল ও রংয়ের ব্যবহার। বায়ো-ডিগ্রেডেবল নয় বলে এসব টেক্সটাইল কালার আমাদের শরীরের মেটাবোলিজম বা বিপাক ক্রিয়াতেও নষ্ট না হয়ে দীর্ঘদিন শরীরে থেকে প্রাণঘাতি ক্ষতি করতেই থাকে।
বাংলাদেশে যেসব টেক্সটাইল কালার বিক্রি হয় তার তালিকা দীর্ঘ। তবে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃতগুলো হলো অরামিন, অরেঞ্জ টু, মেটানিল ইয়োলো, রোডামিন বি, ব্লু ভিআরএস ইত্যাদি। আমাদের মিষ্টির দোকানগুলোর অধিকাংশ দই-মিষ্টি, কনফেকশনারির কেক বিস্কুট পেস্ট্রি টফি লজেন্স, কিংবা উৎপাদকদের চানাচুর জ্যাম জেলি জুস আচারে হলুদ রং এর জন্য মেটানিল ইয়েলো এবং লাল রংএর জন্য রোডামিন বি বেশি ব্যবহার করা হয়। এছাড়া আরো যে টেক্সটাইল কালার ব্যবহৃত হয় তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- ব্ল্যাক এসবি, সান ইয়েলো আরসিএইচ, স্কাই ইয়েলো এফবি, ইয়েলো ৩জিএক্স, অরেঞ্জ এসই, অরেঞ্জ জিআর পিওপি, স্কারলেট ৪বিএস, গ্রিন পিএলএস, বরদু বিডব্লিউ, ফাস্ট রেড ৫বি, টুর্ক ব্লু জিএল, ব্রাউন সিএন ইত্যাদি।
অনুমোদিত রং নিয়ে আরো একটা সমস্যা রয়েছে যে, অনুমোদিত রংকে অনুমোদিত সর্বোচ্চ মাত্রা-সীমার মধ্যে ব্যবহার করেও নিস্তার নেই। অনুমোদিত সীমার মধ্যে ব্যবহার করলেও সবগুলো অনুমোদিত রংয়েরই কমবেশি পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া রয়েছে। যেমন সানসেট ইয়েলো নামের রংটি আমাদের দেশে কনফেকশনারি, ফাস্ট ফুডের দোকান, মিষ্টির দোকান, আইসক্রিম, কোমল পানীয়, পটেটো চিপস্ ইত্যাদিতে ব্যবহৃত হয়। এর ব্যবহারে আর্টিকেরিয়া ধরনের এলার্জি, নাক দিয়ে পানি পড়া, নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া, বমিভাব, বমি, পেটে ব্যথা, বদ্হজম, খাদ্যে অরুচি, কিডনিতে টিউমার, সন্তানসম্ভাবা মায়েদের ভ্রƒণের ক্ষতি, বিকলাঙ্গ শিশুর জন্ম ইত্যাদি দেখা দিতে পারে। যদি কোন ব্যবসায়ী বলেন যে তারা তাদের উৎপাদিত খাদ্যে সানসেট ইয়েলো নামের হলুদ রংটি ব্যবহার করে না, তারা ব্যবহার করে টারট্রাজিন, তাহলে এর পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়াগুলোও দেখে নেয়া যাক। এটি বাচ্চাদের ক্ষেত্রে হাঁপানি তৈরি করে। এছাড়া অন্যান্য ক্ষতিকর লক্ষণগুলো আগেরটির মতোই, তবে পার্থক্য হলো এটি কিডনির বদলে গলার থায়রয়েড গ্রন্থিতে টিউমার বা ক্যান্সার তৈরি করে। এছাড়া যাদের এসপিরিন সহ্য হয় না তাদের বেলায় এ রংটি আরো ক্ষতি করে।
-আল্লামা মুহম্মদ ওয়ালীউর রহমান।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
নারীরা এখন প্রকাশ্যে সিগারেট থেকে সব ধরণের মাদক সেবন ও বিকি-কিনিতে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে গেছে। রক্ষা পেতে নারীদের জন্য সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল উমাম আলাইহাস সালাম উনার ছোহবত মুবারক ইখতিয়ার করার বিকল্প নেই
২৮ এপ্রিল, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
ভীনদেশী অ্যাপের ফাঁদে পড়ে বিপথে যাচ্ছে দেশের তরুণ প্রজন্ম বাড়ছে নারীপাচার, দেশে বাড়ছে অশ্লীলতা ও পর্ণোগ্রাফির প্রচার কিশোর-কিশোরীদের টার্গেট করেই একটি মহল এসব অপসংস্কৃতির প্রচার ও প্রসার ঘটাচ্ছে এসব অপসংস্কৃতি নির্মূলে দ্বীন ইসলামই একমাত্র সমাধান
২৭ এপ্রিল, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের অবহেলায় কৃষিতে ব্যবহৃত হচ্ছে মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশক ও রাসায়নিক; বাড়ছে ক্যান্সারের ঝুঁকি। বিলুপ্তির পথে ১৯২ জাতের উপকারী পোকা। সরকারের উচিত অবিলম্বে কীটনাশক ও রাসায়নিকের ব্যবহার নিয়ন্ত্রন করে জনস্বাস্থ্য রক্ষা ও কৃষিকে বিষমুক্ত করা।
২৬ এপ্রিল, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সন্ত্রাসবাদ নয়; জিহাদী যোগ্যতা অর্জন করা পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ অনুযায়ী ফরয। ৯৮ ভাগ মুসলমান অধ্যুষিত দেশে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় সব নাগরিকের জন্য সামরিক প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক করতে হবে।
২৫ এপ্রিল, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও চিকিৎসকরা লাভবান হলেও চিকিৎসার উচ্চ ব্যয় মেটাতে গিয়ে প্রতিবছর দারিদ্রসীমায় চলে যাচ্ছে অর্ধকোটি মানুষ চিকিৎসার সরকারি ব্যয় আগের তুলনায় বেড়েছে। তারপরও মানুষের চিকিৎসা ব্যয় বেড়েই চলেছে। যার বড় একটি কারণ চিকিৎসকদের একটি অংশের অনৈতিক সুবিধা গ্রহণ সরকারকে সত্ত্বর ব্যবস্থা নিতে হবে।
২৪ এপ্রিল, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
খাবারের নামে আমরা কী খাচ্ছি? ভেজাল খাবারে দেশব্যাপী চলছে নীরব গণহত্যা। ভেজাল দমনে ইসলামী মূল্যবোধের প্রতিফলন ঘটাতে হবে।
২৩ এপ্রিল, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
রক্ত নিয়ে বাণিজ্য- মেশানো হচ্ছে স্যালাইন, লবণ পবিত্র দ্বীন ইসলামী মূল্যবোধের প্রসার ব্যতীত রক্ষা নেই
২২ এপ্রিল, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
তথাকথিত ইসলামী ব্যাংকগুলো আদৌ ইসলামী নয়। সুদবিহীন ব্যাংক নয়। দ্বীনদার, পরহেজগার মুসলমানের জন্য সুদবিহীন ইসলামী ব্যাংকের সুবিধা ও সেবা নিশ্চিত করতে হবে।
২১ এপ্রিল, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
প্রসঙ্গঃ জবরদখলে থাকা সরকারি সম্পত্তি, পরিত্যক্ত সম্পত্তি, খাস জমি অথবা রেলওয়ের বেহাত জমি। পরিত্যক্ত জমির হিসাব ভূমি মন্ত্রণালয়ে নেই। উদ্ধারেও সক্রিয় ও জোরদার তৎপরতা নেই।
২০ এপ্রিল, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সবজি উৎপাদন ১২ বছরে ৭ গুন বাড়লেও বাড়ছেনা বিষমুক্ত সবজি উৎপাদন। উৎপাদন পর্যায়েই সবজিতে মিশছে ২০ গুন বিষাক্ত কীটনাশক। ক্যান্সার, প্যারালাইসিস, কিডনি রোগ, হৃদরোগ ও ডায়াবেটিসের প্রকোপ বাড়ছেই।
১৯ এপ্রিল, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ভূমি সম্পর্কিত প্রয়োজনীয় আইন-কানুন জানেনা দেশের সিংহভাগ মানুষ পাঠ্যপুস্তকে ভূমি বিষয়ক আইন ও নিয়মকানুন এখন সময়ের দাবিতে পরিণত হয়েছে।
১৮ এপ্রিল, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সম্ভাবনাময় স্ট্রবেরি চাষ সমৃদ্ধি অর্জনের নতুন সোপান। অশিক্ষিত-শিক্ষিত সব বেকারেরই ভাগ্য বদলের উছীলা।
১৭ এপ্রিল, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার)