ইমামুল আউওয়াল মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি সম্মানিত দ্বীন ইসলাম ও জ্ঞান-বিজ্ঞানের চিকিৎসক স্বরূপ (৪)
, ৯ই শা’বান শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ১২ তাসি’, ১৩৯২ শামসী সন , ০৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রি:, ২৬ মাঘ, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
(পূর্ব প্রকাশিতের পর)
পূর্বেই আলোচনা করা হয়েছে যে, আবুল বাশার হযরত আদম ছফিউল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি সাত লক্ষের অধিক ভাষা মুবারক জানতেন। আর হাদীছ শরীফ অনুযায়ী ইমামুল আউওয়াল মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনিও সমস্ত ভাষা সম্পর্কে সম্যক অবগত। এমনকি সব পশু-পাখির ভাষাতেও উনার রয়েছে ব্যাপক ইলম মুবারক। যার বর্ণনা বিভিন্ন কিতাবাদিতে পাওয়া যায়। আর শুধু ভাষা জানার মাঝেই উনার ইলম মুবারক সীমাবদ্ধ নয়। বরং ভাষার অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার যাবতীয় বিষয়াবলী উনারই মুবারক আবিষ্কার।
যে কোন ভাষার বিশুদ্ধতা বজায় রাখা, বিকৃতি হতে ভাষাকে রক্ষা করা এবং সে ভাষার অনুশীলন ও প্রচলন সহজলভ্য করতে সে ভাষার ক্বাওয়ায়িদ বা ব্যাকরণ আবশ্যকীয় বিষয়। আর এই ক্বাওয়ায়িদ বা ব্যাকরণ প্রবর্তন করেছেন ইমামুল আউওয়াল মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি।
কিতাবে উল্লেখ করা হয়, হযরত আবুল আসওয়াদ আদ্ দুয়াইলী রহমতুল্লাহি আলাইহি হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা ইমামুল আউওয়াল মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার মুবারক খিদমতে আমি গমন করলাম। উনাকে আমি ভিন্ন শান মুবারকে দেখলাম। আমি উনার মুবারক খিদমতে উনার হুজনী শান মুবারক সম্পর্কে আরয করলাম। তিনি বললেন, এখানের লোকদেরকে অশুদ্ধভাবে আরবী বলতে বা অশুদ্ধভাবে পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ তিলাওয়াত করতে আমি শুনেছি। তাই, আমি আরবী ভাষার মৌলিক বিষয়াবলী তথা আরবী ব্যাকরণের নীতিমালাসমূহ লিপিবদ্ধ করতে চাই। তখন হযরত আবুল আসওয়াদ আদ্ দুয়াইলী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, যদি আপনি এরূপ করেন, তাহলে আপনি চিরস্মরণীয় হয়ে থাকতেন এবং আরবী ভাষা সর্বত্র ছড়িয়ে পড়তো।
হযরত আবুল আসওয়াদ আদ্ দুয়াইলী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, এ ঘটনার তিনদিন পর আমি উনার খিদমত মুবারকে গমন করলাম। তিনি আমাকে একখানা ছহীফা প্রদান করলেন। সেখানে লিপিবদ্ধ ছিলো-
بِسْمِ اللهِ الرَّحْمنِ الرَّحِيْمِ، اَلْكَلَامُ كُلُّهُ اِسْمٌ وَفِعْلٌ وَحَرْفٌ، فَالْإِسْمُ مَا أَنْبَأَ عَنِ الْمُسَمّـى، وَالْفِعْلُ مَا أَنْبَأَ عَنْ حَرَكَةِ الْمُسَمّـى، وَالْحَرْفُ مَا أَنْبَأَ عَنْ شَيْءٍ لَيْسَ بِـإِسْمٍ وَلَا فِعْلٍ
“বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম। কালাম বা শব্দসমূহ হলো ইসম বা বিশেষ্য, ফে’ল বা ক্রিয়া, হরফ বা অব্যয়। ইসম হলো মুসাম্মা বা বিশেষিত সম্পর্কে যা বর্ণনা করা হয়। ফে’ল হলো মুসাম্মার কার্যক্রম সম্পর্কে যা বলা হয়। হরফ হলো এমন বিষয়, যেখানে ইসম ও ফে’লের কোন সম্পর্ক নেই। ”
অতঃপর ইমামুল আউওয়াল মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি আরো কতিপয় নীতিমালা উল্লেখ করে ইরশাদ মুবারক করলেন-
كُلُّ فَاعِلٍ مَرْفُوْعٌ وَكُلُّ مَفْعُوْلٍ مَنْصُوْبٌ وَكُلُّ مُضَافٍ اِلَيْهِ مَجْرُوْرٌ
হে হযরত আবুল আসওয়াদ আদ্ দুয়াইলী রহমতুল্লাহি আলাইহি! আপনি এই নীতিমালাকে অনুসরণ করুন এবং তার অনুকরণে সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো সংযুক্ত করুন।
হযরত আবুল আসওয়াদ আদ্ দুয়াইলী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, ইমামুল আউওয়াল মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার নির্দেশনা মুবারক অনুযায়ী আমি আরবী ভাষার নীতিমালাসমূহ সন্নিবেশিত করলাম এবং উনার মুবারক খিদমতে পেশ করলাম। তিনি সেখানে আরো কিছু বিষয় সংযুক্ত করলেন। (তারীখুল খুলাফা, আখবারুল জুযাযী, আসবাবু নাশাতি ইলমিন নাহউইল আরাবী)
উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা প্রতিভাত হয় যে, ইমামুল আউওয়াল মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনিই আরবী ক্বওয়ায়িদের সম্মানিত প্রবর্তক। উনার মুবারক নির্দেশনা এবং সরাসরি মুবারক তত্ত্বাবধানেই আরবী ব্যাকরণ প্রকাশিত ও বিকশিত হয়েছে। বলা বাহুল্য যে, যদিও সাত লক্ষের অধিক ভাষা ছিলো বা রয়েছে, তথাপি সমস্ত ভাষার মূল ভাষা হলো আরবী ভাষা। প্রতিটি ভাষার মূল উপাদান বা ধারণা আরবী ভাষা হতে গ্রহণ করা হয়েছে। বর্তমান সময়ে আরবী ভাষা মৌলিক ভাষা হওয়ার ব্যাপারে অনেকে ইখতিলাফ করে থাকে। কিন্তু তাদের এই মতভেদ সঠিক নয়। যা বিভিন্নভাবে প্রমাণিত।
যেমন, পবিত্র হাদীছ শরীফে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ اِبْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ تَعَالـى عَنْهُمَا قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَحِبُّوْا الْعَرَبَ لِثَلَاثٍ لِأَنِّيْ عَرَبِيٌّ، وَالْقُرْآنُ عَرَبِيٌّ، وَكَلَامُ أَهْلِ الْجَنَّةِ عَرَبِيٌّ
অর্থ: হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, তোমরা তিন কারণে আরবী ভাষাকে মুহব্বত করো। আমি আরবী ভাষী, পবিত্র কুরআন শরীফ আরবী ভাষায়, জান্নাতবাসীর ভাষাও আরবী। (বাইহাক্বী শরীফ, আল জামিউছ ছগীর)
বর্ণিত পবিত্র হাদীছ শরীফ দ্বারা কয়েকটি বিষয় সুস্পষ্ট। প্রথমত, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নাবিইয়্যুল উম্মি তথা সমস্ত হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের মূল। তাই, উনার ভাষা মুবারক হতেই অন্যান্য হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের ভাষা মুবারক নির্ধারিত হয়েছে। দ্বিতীয়ত, পবিত্র কুরআন শরীফ আসমানী কিতাবসমূহের মূল।
-মুহম্মদ ইমামুদ্দীন।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
ইলিম অর্জন করার পর সে অনুযায়ী যে আমল করে না, তার তিনটি অবস্থার যে কোনো একটি হবেই-
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে সালাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু (৪)
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
ঢিলা-কুলুখের বিধান
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
বেপর্দা হওয়া শয়তানের ওয়াসওয়াসাকে সহজ করার মাধ্যম
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
মহান আল্লাহ পাক উনার রাস্তায় খরচ করলে তা দ্বিগুণ-বহুগুনে বৃদ্ধি করে ফিরিয়ে দেয়া হয়
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
আসমাউর রিজাল, জারাহ ওয়াত তা’দীল, উছুলে হাদীছ শরীফ উনার অপব্যাখ্যা করে অসংখ্য ছহীহ হাদীছ শরীফ উনাকে জাল বলছে ওহাবী সালাফীরা (১)
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে সালাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু (৩)
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
পবিত্র হাদীছ শরীফে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ইসলামী শরীয়ত মুতাবিক- ছবি তোলা হারাম
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র হাদীছ শরীফে ইরশাদ মুবারক করেন-
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার)












