ইমামুল মুসলিমীন, মুজাদ্দিদে মিল্লাত ওয়াদ দ্বীন, হাকিমুল হাদীছ, ইমামুল আইম্মাহ, মুহ্ইস সুন্নাহ ইমামে আ’যম সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি (২৪৭)
(বিলাদাত শরীফ- ৮০ হিজরী, বিছাল শরীফ- ১৫০ হিজরী)
, ১৯ রবীউল আউওয়াল শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ০৬ খ্বমীছ ১৩৯১ শামসী সন , ০৫ অক্টোবর, ২০২৩ খ্রি:, ২০ আশ্বিন, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
মুনাযারা বা বাহাস
(পূর্ব প্রকাশিতের পর)
ইমাম আওযাঈ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বললেন, আমি আপনাকে হাদীছ শরীফ বর্ণনা করলাম, ইমাম যুহরী রহমতুল্লাহি আলাইহি, ইমাম সালিম রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাদের সূত্রে। আর আপনি বর্ণনা করছেন হযরত হাম্মাদ রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত ইবরাহীম নাখঈ রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত আলক্বামা রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত আসওয়াদ রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহ তায়ালা আনহু উনাদের সূত্রে।
আপনি কিসের ভিত্তিতে আমার উপস্থাপিত পবিত্র হাদীছ শরীফখানা উনার উপর আপনার উপস্থাপিত পবিত্র হাদীছ শরীফখানা তারজীহ্ (প্রাধান্য) দিলেন।
ইমামুল মুসলিমীন, মুজাদ্দিদে মিল্লাত ওয়াদ দ্বীন, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বললেন, আমার উপস্থাপিত পবিত্র হাদীছ শরীফখানার বর্ণনাকারী (রাবীগণ) আপনার পেশকৃত পবিত্র হাদীছ শরীফ বর্ণনাকারী (রাবীগণের) চেয়ে বেশি ছিক্বাহ ও নির্ভরযোগ্য। যা সর্বজন স্বীকৃত ও মান্য।
এ জাওয়াব শুনে ইমাম আওযাঈ রহমতুল্লাহি আলাইহি লা-জাওয়াব (নির্বাক) হয়ে গেলেন। (আল মানাকিব লিল কারদারী-১/১৭৩, মুসনাদুল ইমামিল আ’যম-৫০, ফতহুল ক্বাদীর-১/২৯১, ইমাম আবু হানীফা-এর অবদান-৫৬)
খারিজীদের সাথে মুনাযারা বা বাহাস
খারিজী সম্প্রদায় জাহান্নামী বা বাতিল ৭২ ফিরক্বার অন্তর্ভুক্ত। তাদের অন্যতম ভ্রান্ত আক্বীদা-বিশ্বাস হচ্ছে- “কবীরা গুনাহকারী ব্যক্তি কাফির হয়ে যায়।” হক বা নাজীহ সম্প্রদায় তথা আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত উনাদের ছহীহ বা বিশুদ্ধ আক্বীদা- বিশ্বাস হচ্ছে- কবীরা গুনাহকে জায়িয মনে করে করলে কাফির হবে। কিন্তু যদি নাজায়িয বা হারাম মনে করতঃ নফসের বশবর্তী হয়ে করে তাহলে কাফির হবে না, তবে ফাসিক হবে। খারিজী সম্প্রদায় তাদের ভ্রান্ত মতকে ছহীহ বা সঠিক প্রমাণ করার জন্য সদা তৎপর। সে লক্ষ্যে একদিন ইমামুল মুহাদ্দিসীন, মুজাদ্দিদে মিল্লাত ওয়াদ দ্বীন, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি যে পবিত্র মসজিদে তা’লীম-তরবিয়ত দিতেন সেই পবিত্র মসজিদে অবস্থান নিলো। তিনি পবিত্র মসজিদে গেলেন ও তা’লীম তরবিয়তে মনোনিবেশ করলেন। খারিজীরা দরসগাহে প্রবেশ করলো। মুনাযারা বা বাহাস শুরু হলো। তারা তাদের ভ্রান্ত মতকে ছহীহ প্রমাণ করার জন্য উনাকে প্রশ্ন করলো, পবিত্র মসজিদ উনার দরজার সামনে দুটি জানাযা হাযির হয়েছে। একটি হলো একজন শরাবপায়ী ব্যক্তির, যে অধিক শরাব পানের কারণে শ্বাসরুদ্ধ হয়ে মারা গেছে। আর দ্বিতীয়টি হলো এক বদ চরিত্র মহিলার। যে ব্যাভিচারে লিপ্ত হয়েছিল। সন্তান সম্ভবা হওয়ার ভয়ে আত্মহত্যা করেছে। তাদের ব্যাপারে আপনি কি ফায়সালা দিবেন?
সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি খারিজীদেরকে জিজ্ঞাসা করলেন, এরা দুজন কোন ধর্ম ও দলের সাথে সম্পৃক্ত ছিল? এরা কি ইহুদী?
তারা বললো- না, তারা দুজন ইহুদী নয়। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, তারা কি খ্রিস্টান? তারা বললো- না, তারা খ্রিস্টানও নয়। তিনি বললেন, তারা তো অগ্নিপুজক ও নয়? খারিজীরা বললো- না, তারা অগ্নিপূজকও নয়।
তিনি বললেন- তাহলে সে ব্যক্তিদ্বয় সর্বশেষ কোন ধর্মের সাথে সম্পৃক্ত ছিলো?
খারিজীরা বললো-
لا اله الا الله محمد رسول الله صلى الله عليه وسلم
এই পবিত্র কালিমা শরীফ উনার স্বাক্ষ্যদাতা মিল্লাতের সাথে সম্পৃক্ত ছিলো।
তিনি বললেন, তাহলে এবার বলুন তো, এই পবিত্র কালিমা শরীফ উনার শাহাদাত বা স্বাক্ষ্য কি পবিত্র ঈমান উনার এক তৃতীয়াংশ, না এক চুতর্থাংশ, না এক পঞ্চমাংশ?
খারিজীরা বললো, সম্মানিত ঈমান উনাকে তো বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা যায় না।
তিনি বললেন, তাহলে এই স্বাক্ষ্যের সাথে পবিত্র ঈমান উনার সম্পর্ক কি?
তারা বললো, পূর্ণাঙ্গ ঈমান।
তিনি বললেন, তাহলে এমন ব্যক্তিদের সম্পর্কে প্রশ্নের কি অর্থ থাকতে পারে, যাদের মু’মিন হওয়ার বিষয়ে স্বয়ং তোমরা নিজেরাই স্বাক্ষ্য দিচ্ছ?
খারিজীরা কোন সদুত্তর দিতে পারলো না। বললো, যাক এখন বলুন এরা কি জান্নাতী না জাহান্নামী?
সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বললেন, আমি তাদের ব্যাপারে সে কথাই বলবো, যা হযরত ইবরাহীম খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি এদের চেয়ে আরো জঘন্য অপরাধী সম্প্রদায়ের ব্যাপারে বলেছিলেন যে-
مَن تَبِعَنِي فَإِنَّهُ مِنِّي. وَمَنْ عَصَانِي فَإِنَّكَ غَفُورٌ رَّحِيمٌ
অর্থ: “কাজেই যে ব্যক্তি আমার অনুসরণ করবে, সে আমার দলভুক্ত। আর যে ব্যক্তি আমার অবাধ্য হবে তার ব্যাপারে আপনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু।” (পবিত্র সূরা ইবরাহীম শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৩৬) (চলবে)
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
কাফির মুশরিকদের থেকে দূরে থাকতে এবং তাদেরকেও দূরে রাখার ব্যাপারে নির্দেশ মুবারক
২০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সম্মানিত ইসলামী শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে- ফুটবল-ক্রিকেটসহ সর্বপ্রকার খেলাধুলা করা, সমর্থন করা হারাম ও নাজায়িয (২)
২০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
যেখানে প্রাণীর ছবি থাকে, সেখানে রহমতের ফেরেশতা প্রবেশ করেন না
২০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের সম্মানিত ৩টি স্তর
২০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
আসমাউর রিজাল, জারাহ ওয়াত তা’দীল, উছুলে হাদীছ শরীফ উনার অপব্যাখ্যা করে অসংখ্য ছহীহ হাদীছ শরীফ উনাকে জাল বলছে ওহাবী সালাফীরা (৩)
২০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
পর্দা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া কবীরা গুনাহ
১৯ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৯ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
হযরত আব্বাস ইবনে মিরদাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
যাকাত সম্পর্কিত আহকাম, মাসায়িল ও ফাযায়িল (৪)
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
প্রাণীর ছবি তোলা হারাম ও নাফরমানীমূলক কাজ
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার)












