উসওয়াতুন হাসানাহ, খুলুকুন আযীম, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার গাযওয়া বা অভিযান মুবারক
, ১১ই রবিউছ ছানী শরীফ, ১৪৪৭ হিজরী সন, ০৫ খমীছ, ১৩৯৩ শামসী সন , ০৪ অক্টোবর, ২০২৫ খ্রি:, ২০ আশ্বিন, ১৪৩২ ফসলী সন, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
لَقَدْ كَانَ لَكُمْ فِيْ رَسُوْلِ اللهِ اُسْوَةٌ حَسَنَةٌ
অর্থ: “তোমাদের জন্য তোমাদের মহাসম্মানিত রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মধ্যেই রয়েছেন সর্বোত্তম আদর্শ মুবারক। ” (পবিত্র সূরা আহযাব শরীফ: আয়াত শরীফ ২১)
অর্থাৎ নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সর্বকালের সবার জন্য সর্বোত্তম আদর্শ মুবারক। মাখলুকাতের সবার জন্যই তিনি অনুসরণীয়-অনুকরণীয়। সঙ্গতকারণেই উনার পবিত্র সাওয়ানেহ উমরী মুবারক জানা, বেশি বেশি আলোচনা-পর্যালোচনা করা সবার জন্যই আবশ্যক।
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র সাওয়ানেহ উমরী মুবারক উনার বিশেষ অংশ ‘পবিত্র জিহাদ’। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র জিহাদ দুইভাগে বিভক্ত। প্রথমত, গাযওয়া বা বড় অভিযান। যে সমস্ত অভিযানে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সরাসরি তাশরীফ মুবারক গ্রহণ করেছেন, সেগুলোকে গাযওয়া বলা হয়। সর্বাধিক বিশুদ্ধ মতে, গাযওয়া মোট ৯টি। দ্বিতীয়ত, সারিয়া বা ছোট অভিযান। যে সমস্ত অভিযানে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সরাসরি তাশরীফ মুবারক গ্রহণ করেননি, বরং প্রতিনিধি প্রেরণ করেছেন, সেগুলোকে সারিয়া বলা হয়। সারিয়ার সংখ্যা নিয়ে বিভিন্ন মত রয়েছে।
নিম্নে গাযওয়া সম্পর্কে সংক্ষিপ্তাকারে আলোচনা করা হলো।
২. পবিত্র উহুদ জিহাদ
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার দ্বিতীয় জিহাদ পবিত্র উহুদ জিহাদ। পবিত্র বদর জিহাদে পরাজয়ের প্রতিশোধ গ্রহণ করতে পবিত্র মক্কা শরীফে অবস্থানকারী কাফিররা পবিত্র মদীনা শরীফ আক্রমণ করতে আসলে পবিত্র মদীনা শরীফ উনার ৩ মাইল উত্তর-পূর্বে উহুদ নামক একটি পাহাড়ের নিকটস্থ কঙ্করময় প্রান্তরে এই যুদ্ধ সংঘটিত হয়।
পবিত্র উহুদ জিহাদের জন্য নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ১ হাজার লোকের বাহিনী নিয়ে পবিত্র মদীনা শরীফ হতে রওয়ানা দেন। শাওত নামক স্থানে পৌঁছানোর পর জিহাদে অংশগ্রহণে অস্বীকৃতি জানিয়ে মুনাফিক নেতা উবাই ইবনে সুলুল ৩ শত লোক নিয়ে দলত্যাগ করে। এতে মুসলিম বাহিনীর লোক সংখ্যা হয় ৭ শত। উনাদের মধ্যে ১০০ জন বর্ম পরিহিত ছিলেন এবং ৫০ জন ছিলেন অশ্বারোহী। মুসলিম বাহিনীকে তিন ভাগে বিভক্ত করা হয়। মুহাজির বাহিনী, আউস বাহিনী ও খাজরাজ বাহিনী। অপরদিকে কাফিররা ছিলো তিন হাজারের বেশি। তাদের মধ্যে ৭০০ ছিলো বর্ম পরিহিত। ছিলো ২০০ ঘোড়া ও ৩০০০ উট।
তৃতীয় হিজরীর পবিত্র শাওওয়াল শরীফে কারো কারো মতে, পবিত্র ৭ই শাওওয়াল শরীফে পবিত্র উহুদ জিহাদ সংঘটিত হয়। মল্লযুদ্ধের মাধ্যমে জিহাদ শুরু হলে তা কঠিন আকার ধারণ করে। কাফিররা দলে দলে পালাতে থাকে। এক সময় পুরো ময়দান ফাঁকা হয়ে যায়। মুসলিম বাহিনী বিজয়ী হিসেবে জিহাদের মালামাল গুছানো শুরু করেন। এমতাবস্থায় জিহাদের নিয়ম ভঙ্গ করে কাফিররা পিছন দিকের গিরিপথ দিয়ে আক্রমণ করে। এতে কাফিররা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করলেও তা ছিলো সাময়িক। মূহুর্তের মধ্যেই মুসলিম বাহিনী কাফিরদের সমুচিত জওয়াব দেন। অনেক ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে সব কাফিরই পালিয়ে যায়। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানার্থে মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র উহুদ জিহাদেও মুসলমান উনাদেরকে সুস্পষ্ট বিজয় হাদিয়া করেন।
উল্লেখ্য যে, পবিত্র উহুদ জিহাদ নিয়ে ঐতিহাসিকরা মিথ্যা-বানোয়াট বিভিন্ন মন্তব্য করে। তারা বলতে চায়, পবিত্র উহুদ জিহাদে মুসলমানরা পরাজিত হয়েছেন। নাঊযুবিল্লাহ! নাঊযুবিল্লাহ! নাঊযুবিল্লাহ! মুসলমানরা গণিমতের মালামাল লুন্ঠন করতে গিয়ে আক্রান্ত হয়েছেন। নাঊযুবিল্লাহ! নাঊযুবিল্লাহ! নাঊযুবিল্লাহ! মূলত, বিশ্বের ইতিহাসে কোন জিহাদেই মুসলমানরা পরাজিত হননি। বরং প্রত্যেক জিহাদেই মুসলমানরা বিজয়ী হয়েছেন। উহুদ জিহাদেও মুসলমানরাই বিজয়ী হয়েছেন। কাফিররাই পরাজিত হয়েছে। তারা যদি বিজয়ী হতো, তাহলে তো তারা গণিমত ও বন্দি লাভ করতো। কিন্তু তারা যেহেতু পরাজিত হয়েছে, সেহেতু কোন গণীমত পায়নি এবং কাউকে বন্দিও করতে পারেনি। বরং তারা পালিয়ে গেছে। মুসলমানরাই বিজয়ী হয়েছেন, উনারা গণীমত লাভ করেছেন, কাফিরদের কয়েকজনকে বন্দিও করেছেন।
-আল্লামা সিরাজুদ্দীন আখি।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
হযরত ছাহাবায়ে কিরামগণ উনাদের মর্যাদা উম্মতের মাঝে সর্বোচ্চ ও সর্বোত্তম স্থানে
১০ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের বেমেছাল ফযীলত মুবারক (১ম পর্ব)
১০ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
পর্দা সর্বপ্রকার বিপদ-আপদ থেকে হিফাজত হওয়ার মাধ্যম
১০ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১০ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
কদমবুছী করা খাছ সুন্নত মুবারক
১০ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সম্মানিত জিহাদ মুসলমানদের একটি বিশেষ ফরয ইবাদত
০৯ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
কথিত ট্রান্সজেন্ডার বিষয়ে শরঈ ফতওয়া (১১)
০৯ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
প্রাণীর ছবি তোলা কবীরা গুনাহ ও অসন্তুষ্টির কারণ
০৯ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
০৯ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ মাহফিল উনার ইন্তিজামকারী বিনা হিসাবে সম্মানিত জান্নাতে প্রবেশ করবেন
০৯ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পুত-পবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ উনাদের সম্মানিত তিন স্তর
০৯ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
পবিত্র ‘ছলাতুল জুমুয়াহ’ উনার পূর্বে ৪ রাকায়াত সুন্নত নামায অর্থাৎ পবিত্র ‘ক্বাবলাল জুমুয়াহ’ নামায নিয়ে বাতিলপন্থিদের বিভ্রান্ত্রিকর ও মিথ্যা বক্তব্যের দলীলভিত্তিক জাওয়াব (২)
০৯ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার)












