একজন মুসলমান হিসেবে ভাল ও মন্দের পার্থক্য করুন!
, ৩০ শা’বান শরীফ, ১৪৪৪ হিজরী সন, ২৩ ‘আশির, ১৩৯০ শামসী সন , ২৩ মার্চ, ২০২৩ খ্রি:, ০৯ চৈত্র, ১৪২৯ ফসলী সন, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) মহিলাদের পাতা
মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র সূরা আ’লা শরীফ উনার ৯, ১০ ও ১১ নং পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন, “হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি উম্মতদেরকে নছীহত মুবারক করুন; নিশ্চয়ই আপনার নছীহত মুবারক উম্মতদের জন্য সম্মানিত দ্বীন পালনে অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক উনার ও আপনার সন্তুষ্টি মুবারক হাছিলের সহায়ক হবে। যাদের অন্তরে ভয় রয়েছে উনারাই শুধুমাত্র নছীহতের মাধ্যমে ফায়দা লাভ করবে। আর আপনার নছীহত মুবারক তারাই গ্রহণ করবে না, যাদের অন্তরে মহান আল্লাহ পাক উনার ভয় নেই এবং আপনার প্রতি মুহব্বত ও আদব নেই। অর্থাৎ যারা চরম বেয়াদব, বদবখত ও গোমরাহ।”
এই পবিত্র আয়াত শরীফ উনার ব্যাখ্যায় বলা হয়, যারা নছীহত মুবারক গ্রহণ করবেন, উনাদের জন্য অনেক সুসংবাদ রয়েছে। উনাদের সম্পর্কে পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ উনার ২৫নং পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে বলা হবে, যারা ঈমান এনে আমলে ছলেহ করবেন উনাদের জন্য রয়েছে এমন জান্নাত যার তলদেশ দিয়ে নহরসমূহ প্রবাহিত হয়, উনাদেরকে সেখান থেকে রিযিক হিসাবে ফলমূল দেয়া হবে। সেখানে উনাদের জন্য থাকবে পবিত্রতমা আহলিয়া। উনারা সেখানে অনন্তকাল অবস্থান মুবারক করবেন। সুবহানাল্লাহ!
এখানে শুধুমাত্র একটি দলীল পেশ করা হয়েছে কিন্তু এরূপ অসংখ্য আরো দলীল-প্রমাণ রয়েছে। সব তো বর্ণনা করা সম্ভব নয়। যে ব্যক্তি বুঝবে সে অল্পতেই বুঝবে বা হিদায়েত লাভ করবে। এখানে নেককার উনাদের বর্ণনা কিছুটা দেয়া হয়েছে। আর বদকারদের সম্পর্কে পবিত্র সূরা লাইল শরীফ উনার ১৫ নং পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, “গুনাহগার ও বদবখত তারা ব্যতীত অন্য কেউ জাহান্নামে প্রবেশ করবে না।” এই বদবখতদের দুটি প্রধান দোষ রয়েছে। প্রথমটি হলো: তারা সবসময় মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের উভয়ের সম্পর্কে ও উভয়ের সংশ্লিষ্ট বিষয়ে মিথ্যারোপ করে। নাউযুবিল্লাহ! দ্বিতীয়টি হচ্ছে: উনাদের উভয়ের থেকে এবং উভয়ের সংশ্লিষ্ট বিষয় থেকে মুখ ফিরিয়ে রাখে। নাউযুবিল্লাহ!
যখন তারা জাহান্নামে প্রবেশ করবে, সেখানে তারা এত আযাব-গযবে গ্রেফতার থাকবে যে, তারা মরার মতো মরবেও না এবং বাঁচার মতো বাঁচবেও না। তারপরও তারা মৃত্যু কামনা করবে। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, ঐ সমস্ত কাফিররা জাহান্নামে বলতে থাকবে, “হায় আফসুস! আমরা যদি মাটি হয়ে যেতাম বা নিশ্চিহ্ন হয়ে যেতাম! অর্থাৎ হাক্বীক্বী মৃত্যুবরণ করতাম সেটাই উত্তম হতো!”
তাদেরকে এত আযাব-গযব গ্রেফতার করবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। যখন তারা পানি পান করার জন্য পানি পানি বলে চিৎকার করতে থাকবে তখন তাদেরকে ফুটন্ত ঝরণার পানি পান করার জন্য দেওয়া হবে। সে পানির অবস্থা সম্পর্কে কিতাবে বর্ণিত রয়েছে- সে পানি এত গরম হবে তার এক ফোঁটা যদি দুনিয়ার কোন পাহাড়-পর্বতের উপর ফেলা হয় তাহলে সে পাহাড়-পর্বত উত্তপ্ততার কারণে গলে যাবে। আর সে পানি যখন জাহান্নামীরা অর্থাৎ বদকাররা পান করবে তখন তাদের নাড়ি-ভুঁড়ি ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। তারপর তারা ক্ষুধায় কাতর হয়ে খাদ্য খাদ্য বলে চিৎকার করতে থাকবে তখন তাদেরকে এক প্রকার কাঁটাযুক্ত শুষ্ক ঘাস যা মাকাল ফল অপেক্ষা অধিক তিক্ত, গলিত মৃত দেহ অপেক্ষা অধিক দুর্গন্ধযুক্ত এবং অগ্নি অপেক্ষা অধিক উত্তপ্ত তা খেতে দেয়া হবে। তারপর ৭০ হাজার ফেরেশতা ৭০ হাজার শিকল দিয়ে আবদ্ধ করে সম্মানিত আরশ উনার বাম পার্শ্বে উপস্থিত করবেন।
আর জাহান্নামের অগ্নিস্ফুলিঙ্গগুলো এমনভাবে প্রজ্জ্বলিত হতে থাকবে এবং জাহান্নাম এমন ভয়ংকর শব্দ করতে থাকবে যা দুই’শ বৎসরের দূরের পথ থেকেও তার অগ্নিস্ফুলিঙ্গগুলো দেখা যাবে এবং শব্দও শোনা যাবে। এটা শুনে ও দেখে তারা তাদের বদ আমলের কারণে আফসুস করে বলতে থাকবে যে, হায়! আমরা যদি দুনিয়াতে থাকতে নছীহত গ্রহণ করতাম! আয় আল্লাহ পাক! আমাদেরকে যমীনে পুনরায় প্রেরণ করুন। আমরা আপনার আদেশ-নিষেধ মুবারক পালন করে নেককার হয়ে আসবো। কিন্তু তাদের এই আরজু কোন কাজে আসবে না।
মূলত: মহান আল্লাহ পাক তিনি সবকিছুই জানিয়ে দিয়েছেন। তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “তোমরা কোন অবস্থাতেই মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের নাফরমানী করোনা। কেননা ক্বিয়ামত অবশ্যই সংঘটিত হবে এবং তোমাদেরকে মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট জবাবদিহিও করতে হবে।” (পবিত্র সূরা ফজর শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ২১)
প্রিয় পাঠক! আমাদেরকে কোন অবস্থাতেই দুনিয়ার মোহে মোহগ্রস্ত হওয়া যাবে না এবং দুনিয়াকে মুহব্বত করা যাবে না। তা পরিপূর্ণভাবে ত্যাগ করতে হবে। কারণ: দুনিয়া ক্ষণস্থায়ী আর পরকাল স্থায়ী ও উত্তম। সেখানে মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের সন্তুষ্টি মুবারক রয়েছে। আর এই সন্তুষ্টি মুবারক পেতে হলে, আযাব থেকে মুক্তি পেতে হলে রুহানী কুওওয়াত হাছিল করতে হবে। আর তা হাছিল করতে হলে একজন হক্কানী, রব্বানী কামিল শায়খ বা মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার নিকট বাইয়াত গ্রহণ করে, ছোহবত মুবারক ইখতিয়ার করে, সবক্ব নিয়ে, যিকির-ফিকির ঠিকমতো করে ফায়েজ-তাওয়াজ্জুহ হাছিল করতে হবে। মহান আল্লাহ পাক তিনি যেন আমাদের সকলকে সেই তাওফীক্ব দান করেন। আমীন!
-আহমদ কানিজ ফাতিমা আঁখি।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
আরবী বারো মাসের নাম
২০ এপ্রিল, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
পর্দা পালন করা মূলত অন্তরের পবিত্রতারই বহিঃপ্রকাশ
২০ এপ্রিল, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
ইযার তথা নিতাক্ব পরিধান করাও সুন্নত মুবারক
১৯ এপ্রিল, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
পবিত্র হাদীছ শরীফ সংরক্ষণ, চর্চা ও তালীম দানে মহিলাগণের অবদান (২)
১৯ এপ্রিল, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
নারীবাদ থেকেই বাড়ছে নারী নির্যাতন:
১৮ এপ্রিল, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, সাইয়্যিদাতু নিসায়ি আহলিল জান্নাহ, উম্মু আবীহা, আন নূরুর রবি‘য়াহ সাইয়্যিদাতুনা হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত জীবনী মুবারক-২৩
১৭ এপ্রিল, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
গৃহসম্পদের উপযোগিতা বৃদ্ধির উপায়
১৭ এপ্রিল, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সুশৃঙ্খল ব্যবস্থাপনা ও সময়ানুবর্তিতা
১৭ এপ্রিল, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ওজন কমাতে সতর্কতা
১৬ এপ্রিল, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
হযরত উম্মুল ফদ্বল বিনতুল হারিছ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা (১)
১৬ এপ্রিল, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
হযরত উম্মে সুলাইম বিনতু মিলহান বিন খালিদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা (৪)
১০ এপ্রিল, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
মহিলাদের জন্য মসজিদে জামায়াতে নামায আদায় করা নাজায়িজ
০৬ এপ্রিল, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার)