মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেছেন, “হে মুমিন মহিলাগণ! তোমরা নিজ গৃহে অবস্থান করবে এবং আইয়্যামে জাহেলী যুগের ন্যায় নিজেদেরকে প্রদর্শন করে বের হবেনা। (পবিত্র সূরা আহযাব শরীফ-পবিত্র আয়াত শরীফ নং ৩৩)

মুসলমানরা যখন পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার উক্ত আদেশ মুবারক পালন করতে চান পশ্চিমা দোসর নারীবাদীরা তখন বিভিন্ন ধরণের কটূক্তি, হয়রানী এমনকি বোরকা নিষিদ্ধেরও দৃষ্টতা প্রদর্শন করে। বিভিন্নভাবে সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার বিরুদ্ধাচরণ করে, মানহানী করে। যেন তাদের বল্গাহারা, উন্মুক্ত দর্শনই শ্রেষ্ট! অথচ প্রমাণিত যে, সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার বিরোধী নারীবাদী দর্শন প্রচার ও পৃষ্ঠপোষকতা করায় পশ্চিমা বিশ্বের সমাজ ব্যবস্থা আজ ধ্বংস হয়ে গিয়েছে।

বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গিয়েছে, ইউরোপ-আমেরিকার এসব দেশে সবচেয়ে বেশী নারী স্বাধীনতা হরণ করা হচ্ছে। নারী অধিকার লংঘিত হচ্ছে ভয়াবহভাবে। সম্ভ্রমহরণের অপরাধে বিশ্বের ১ম ১০টির মধ্যে ৭টিই পশ্চিমা দেশ। এক নম্বরে রয়েছে, আমেরিকা। ২০০৯ সালে সেদেশে বিয়ে বহির্ভূত কুমারী মায়ের সংখ্যা ছিল ৪১ শতাংশ। প্রতি মিনিটে অন্তত ২৪ জন লোক (নারী বা পুরুষ) সম্ভ্রমহরণ বা অন্যান্যভাবে যৌন নির্যাতনের শিকার হয় আমেরিকায়। অন্তত ২০ ভাগ নারী জীবনে ধর্ষিত বা ধর্ষণ প্রচেষ্টার শিকার হয়েছে।

মার্কিন সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল’র (সিডিসি), ন্যাশনাল ইন্টিমেট পার্টনার অ্যান্ড সেক্সুয়াল ভাইয়োলেন্স সার্ভে এবং মার্কিন বিচার বিভাগের ‘সেন্টার ফর সেক্স অফেন্ডার ম্যানেজমেন্ট প্রকল্পের গবেষণায় এরকম ভয়াবহ তথ্য উঠে এসেছে।

একজন গবেষক তার বইয়ে পশ্চিমা অমুসলিম বিশ্ব বিবাহ, সংসার ও পারিবারিক জীবন সংক্রান্ত ব্যাপারে এরকম চরম অধঃপতনে পৌঁছানোর পেছনে কতিপয় কারণ তুলে ধরেছেন, তার মধ্যে একটি বিষয় নিয়ে এখানে আলোকপাত করা হলো-



...বস্তুবাদী কাফিররা পৃথিবীকে তাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী নাস্তিকবাদে আচ্ছন্ন করার প্রকল্প হাতে নেয়ার অনেক পরে, এই সেদিন, ১৮৭০ - গধৎৎরবফ ডড়সবহ'ং চৎড়ঢ়বৎঃু অপঃ-এর মাধ্যমে, ব্রিটেন যখন প্রথম মেয়েদেরকে সম্পত্তির মালিকানার সীমিত অধিকার দান করে আইন পাশ করলো, তখন পশ্চিমা কাফির বিশ্বের কথিত গুণিরা মানিসক ধাক্কা খায় এবং ঘটনাকে বেশ ন্যাক্কারজনক বলে নাক সিটকায়। আমেরিকান মুসলিমাহ আমিনা আস্ সিলমিহ্ ১৯৯২ সালে এমএসএ আয়োজিত এক বিতর্কে বলেন, যে মাত্র এক বছর আগে (অর্থাৎ ১৯৯১ সালে) যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়ায় এক মহিলা তাকে তার সমস্যার কথা বলতে গিয়ে বলেছিলো যে, অর্থের জন্য তার বাড়ীখানা বিক্রি করা খুবই প্রয়োজন অথচ তিনি তা করতে পারছিলেন না কারণ, আঞ্চলিক আইন অনুযায়ী তার পরিবারের কোন না কোন পুরুষ সদস্যের দস্তখত অপরিহার্য- অথচ তার পরিবারের কোন সদস্য জীবিত ছিলো না। এই সেদিন পর্যন্ত পশ্চিমা জগতে মেয়েরা কোনো সম্পত্তির মালিক হতে পারতো না। নিজের নামে লিখতে বা সাহিত্য প্রকাশ করতে পারতো না। পারতো না নিজ নামে, অন্যের উপর নির্ভর না করে, কোন ব্যবসায় বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান চালাতে।

আজ যারা ‘মধ্যযুগীয়’ বলে পরিচিত, তাদের বিশ্বে গত প্রায় দেড় হাজার বছর ধরে নারীরা এই সকল অধিকার ভোগ করে আসছে বলে, আমরা হয়তো মনে করি সারা বিশ্ব সবসময়ই এমনই ছিল বুঝি।

উল্লিখিত কারণ সমূহের দ্বারা সৃষ্ট পরিবেশ ও প্রতিবেশে, বর্তমানে পৃথিবীর মানচিত্রে আমরা যে সব অঞ্চলকে পশ্চিমা-বস্তুবাদী-কাফির সভ্যতার ভূখন্ড বলে চিহ্নিত করি, মূলত খ্রিস্টান ছাড়া ঐ সমস্ত দেশে নারীর প্রতি শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে চলে আসা দুর্ব্যবহারের প্রতিক্রিয়া হিসেবে, নারীবাদের উর্বর ক্ষেত্র হিসেবে প্রস্তুত হয়। (বাংলাদেশের মুসলিম সমাজে বিবাহ ও নারীবাদ)

-আহমদ মুবাশশ্বিরা।