ইলমে তাছাউফ
কামিল শায়েখ উনার ছোহবত মুবারকের গুরুত্ব ও ফযীলত (৭)
, ২১ রবীউল আউওয়াল শরীফ, ১৪৪৭ হিজরী সন, ১৭ রবি’, ১৩৯৩ শামসী সন , ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ খ্রি:, ০১ আশ্বিন, ১৪৩২ ফসলী সন, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) ইলমে তাছাউফ
আমরা কার ছোহবত মুবারক ইখতিয়ার করবো?”
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, একবার নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা আরজু করলেন, “ইয়া রসূলাল্লাহ ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! কোন সঙ্গী উত্তম? আপনার পরে আমরা কার ছোহবত মুবারক ইখতিয়ার করবো?”
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন-
من ذكركم الله رؤيته وزاد فى علمكم منطقه وذكركم بالاخرة عمله
অর্থ: “যাকে দেখলে মহান আল্লাহ পাক উনার কথা স্মরণ হয়, যাঁর কথা শুনলে দ্বীনি ইলম বৃদ্ধি হয়ে থাকে। যাঁর আমল দেখলে পরকালের আমল করতে ইচ্ছে হয়। ” (মুসনাদে আহমদ, ক্ববাসুম মিন নূরে মুহম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
এই পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে তিনটি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করা হয়েছে। এই তিনটি গুণ যার মধ্যে থাকবে তিনি অবশ্যই মহান আল্লাহ পাক উনার খালিছ ওলী।
উক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার ব্যাখ্যায় বিশিষ্ট তাবেয়ী ইমামুশ শরীয়ত ওয়াত তরীক্বত হযরত ইমাম হাসান বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন-
انما الفقيه الزاهد فى الدنيا والراغب الى الاخرة والبصير بذنبه والمداوم على عبادة ربه والوارع والكاف عن اعراض المسلمين والعفيف عن اموالهم والناصح لجماعتهم.
অর্থ: “ফক্বীহ বা আল্লাহওয়ালা ওই ব্যক্তি, (যার মধ্যে ৮টি বিষয় পরিলক্ষিত হবে) ১. দুনিয়া বিরাগী (যিনি দুনিয়া হতে বিমুখ থাকেন) ২. পরকালমুখি (যিনি পরকালের প্রতি ঝুঁকে আছেন) ৩. যিনি সর্বদা গুনাহের প্রতি সতর্ক থাকেন, ৪. যিনি সদা-সর্বদা মহান আল্লাহ পাক উনার ইবাদত-বন্দেগীতে মশগুল থাকেন, ৫. পরহেজগার (যিনি সম্মানিত সুন্নত মুবারক উনার পরিপূর্ণ পাবন্দ বা অনুসরণ-অনুকরণ করেন) ৬. যিনি মুসলমানের মান-সম্মান নষ্ট করেন না, ৭. যিনি মুসলমানদের সম্পদের প্রতি লোভ করেন না, ৮. এবং যিনি উনার অধীনস্তদেরকে সব সময় নছীহত মুবারক করেন। ” (হিলইয়াতুল আওলিয়া)
এই ৮টি বিষয় যেই সম্মানিত ব্যক্তি উনার মধ্যে পাওয়া যাবে, তিনিই হচ্ছেন ফক্বীহ বা আল্লাহওয়ালা। আর উনাদের ছোহবত মুবারক গ্রহণ করার ব্যাপারেই উক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনিও ইরশাদ মুবারক করেন-
وَاصْبِرْ نَفْسَكَ مَعَ الَّذِينَ يَدْعُونَ رَبَّهُم بِالْغَدَاةِ وَالْعَشِيِّ يُرِيدُونَ وَجْهَهُ ۖ وَلَا تَعْدُ عَيْنَاكَ عَنْهُمْ تُرِيدُ زِينَةَ الْحَيَاةِ الدُّنْيَا
অর্থ: “ওই সমস্ত লোকদের ছোহবত মুবারক ইখতিয়ার করো, লাযেম করে নাও, যারা সকাল-সন্ধ্যা অর্থাৎ দায়িমীভাবে খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টি মুবারক উনার জন্য যিকির-ফিকির করে থাকেন। দুনিয়ার চাকচিক্য দেখে বা দুনিয়ার মোহে মোহগ্রস্ত হয়ে উনাদের থেকে তোমাদের দৃষ্টি ফিরিয়ে নিয়ো না। ” (পবিত্র সূরা কাহফ শরীফ, পবিত্র আয়াত শরীফ ২৮)
এ পবিত্র আয়াত শরীফ উনার তাফসীরে হযরত আবূ ইউসুফ হামদানী রহমতুল্লাহি আলাইহি যিনি নকশবন্দিয়ায়ে মুজাদ্দিদিয়া তরীক্বা উনার বিশিষ্ট বুযূর্গ যিনি হুজ্জাতুল ইসলাম হযরত ইমাম গাজ্জালী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার পীরভাই ছিলেন তিনি বর্ণনা করেন, তিনি একদিন নছীহত মুবারক করছিলেন। উনার যারা মুরীদ-মু’তাক্বিদ ছিলেন উনাদেরকে। তিনি বললেন দেখো, মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র আয়াত শরীফ নাযিল করেছেন, তোমাদেরকে বলা হয়েছে, যে সমস্ত লোক সকাল-সন্ধ্যা মহান আল্লাহ পাক উনার পবিত্র যিকিরে মশগুল থাকেন মহান আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টি মুবারক হাছিলের লক্ষ্যে, তোমরা উনাদের ছোহবত মুবারক ইখতিয়ার করবে। প্রতিদিন উনাদের ছোহবত মুবারক ইখতিয়ার করবে।
তখন সেখানে একজন লোক ছিলেন ব্যবসায়ী। যিনি সারাবিশ্বে অর্থাৎ নানান দেশে ঘুরে ঘুরে ব্যবসা করতেন। সে ব্যক্তি আদবের সাথে দাঁড়িয়ে বললেন, হে আমার শায়েখ! আপনি যে বলেছেন, প্রতিদিন মহান আল্লাহ পাক উনার ওলী উনাদের ছোহবত মুবারক ইখতিয়ার করার জন্য। আপনি দলীলও পেশ করেছেন। আমরা অবশ্যই সেটা মেনে নিয়েছি। তারপরেও আমার একটা কথা রয়েছে। কি কথা রয়েছে? আমি দেশ বিদেশে ঘুরে থাকি। আর সব স্থানে তো মহান আল্লাহ পাক উনার ওলী পাওয়া সম্ভব নয়। আর যদি থেকেও থাকেন আমার সেটা জানা থাকে না। তাহলে কি করে আমি প্রতিদিন মহান আল্লাহ পাক উনার ওলী উনাদের ছোহবত মুবারক ইখতিয়ার করবো?
তখন মহান আল্লাহ পাক উনার খালিছ ওলী হযরত আবূ ইউসুফ হামদানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বললেন, যদি তোমাদের এমন হয়, প্রতিদিন মহান আল্লাহ পাক উনার ওলী উনাদের ছোহবত মুবারক ইখতিয়ার করতে না পারো, তাহলে আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের জীবনী মুবারক, সাওয়ানেহ উমরী মুবারক থেকে কমপক্ষে ৮ পৃষ্ঠা করে পাঠ করবে। প্রতিদিন ৮ পৃষ্ঠা হযরত আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের জীবনী মুবারক থেকে, তাযকিরাতুল আউলিয়া থেকে পাঠ করলে ছোহবত মুবারক উনার যে নিয়ামত তা হাছিল হয়ে যাবে। সুবহানাল্লাহ! (চলবে)
-মুহম্মদ হুসাইন নাফে’।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (৪৬)
৩০ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (৪৫)
২৯ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
পবিত্র ছোহবত মুবারক গ্রহণের ফাযায়িল-ফযীলত, গুরুত্ব-তাৎপর্য ও আবশ্যকতা:
২৮ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (৪৪)
২৬ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (৪৩) শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা যখন যা আদেশ করবেন তখন তা পালন করাই মুরীদের জন্য সন্তুষ্টি লাভের কারণ
২৫ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
ইলমে তাছাউফ
১৪ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
পবিত্র ছোহবত মুবারক গ্রহণের ফাযায়িল-ফযীলত, গুরুত্ব-তাৎপর্য ও আবশ্যকতা:
০৭ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
পবিত্র নক্শবন্দিয়ায়ে মুজাদ্দিদিয়া তরীক্বার শাজরা শরীফ
০৭ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
পবিত্র ছোহবত মুবারক গ্রহণের ফাযায়িল-ফযীলত, গুরুত্ব-তাৎপর্য ও আবশ্যকতা:
৩১ অক্টোবর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
যামানার মূল নায়িবে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে তায়াল্লুক-নিসবত ব্যতীত খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের সাথে তায়াল্লুক-নিসবত মুবারক রাখার দাবি বাতুলতার নামান্তর:
২৪ অক্টোবর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
পবিত্র ক্বাদিরিয়া তরীক্বার শাজরা শরীফ
২৪ অক্টোবর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ইলমে তাছাউফ
১৭ অক্টোবর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার)












