কিতাব: ১০০ টি চমৎকার ঘটনা
, ২৯ শা’বান শরীফ, ১৪৪৪ হিজরী সন, ২২ ‘আশির, ১৩৯০ শামসী সন , ২২ মার্চ, ২০২৩ খ্রি:, ০৮ চৈত্র, ১৪২৯ ফসলী সন, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) মহিলাদের পাতা
“অবশ্যই এই ঘটনাসমূহের মধ্যে রয়েছে জ্ঞানীদের জন্য নছীহত।” (পবিত্র সূরা ইউসুফ শরীফ, পবিত্র আয়াত শরীফ নং ১১১)
“পূর্ববর্তীদের ঘটনাসমূহ পরবর্তীদের জন্য নছীহতস্বরূপ”
ঘটনা-৩৫: হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করার কুফল
হিজরী নয়শ শতকে এক বুযুর্গ ব্যক্তি ছিলেন ইয়েমেনে। তিনি প্রায় প্রতি বছরই পবিত্র হজ্জ করতে যেতেন। একবছর হজ্জ করে পবিত্র রওযা শরীফ যিয়ারত করে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি ছলাত সালাম মুবারক পেশ করলেন। তারপর পাশে যে সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম এবং সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম, উনাদের রওযা শরীফ ছিল, উনাদের প্রতিও ছলাত সালাম মুবারক পাঠ করলেন। সেখানে একটা রাফেযি লোক ছিল। সেই লোক এটা দেখে বের হয়ে আসলো। তার ভিতর একটা দুষ্ট বুদ্ধি কাজ করছিল। সে নিজের বাড়িতে বুযুর্গ ব্যক্তিকে দাওয়াত দিল। বুযুর্গ ব্যক্তি চিন্তা করলেন, লোকটি যেহেতু মদীনা শরীফ উনার অধিবাসী, সেহেতু সে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতিবেশি। তার একটা হক্ব রয়েছে। তাই তিনি দাওয়াত কবুল করলেন। রাফেযি লোকটি মোটামুটি সম্পদশালী ছিল। বুযুর্গ ব্যক্তি তার বাড়িতে প্রবেশ করা মাত্র, লোকটা তার দুই জন হাবশী গোলামকে বললো, ‘এই বুযুর্গ ব্যক্তির জিভ কেটে দাও।’ নাঊযুবিল্লাহ! হাবশী গোলামদ্বয় মনিবের আদেশ পালন করলো। লোকটা কাটা জিভটা বুযুর্গ ব্যক্তির হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললো, ‘আপনি যে সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম এবং সাইয়্যিদুনা হযরত ফারুক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনাদের ছানা-ছিফত করছিলেন; এখন উনাদের কাছে এই কাটা জিভটা নিয়ে যান। উনারা আপনার জিভ জোড়া লাগিয়ে দিবেন।’
বুযুর্গ ব্যক্তি অত্যন্ত কষ্ট পেলেন এবং কাঁদতে কাঁদতে কাটা জিভটি নিয়ে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ¦তামুন নাবিয়্যীন, রহমতুল্লিল আলামীন, রউফুর রহীম, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার রওযা মুবারকে গেলেন। উনার জিভ কাটা ছিল বলে তিনি কথা বলতে পারছিলেন না। তাই তিনি অন্তর দিয়ে উনার কষ্টের কথা সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ¦তামুন নাবিয়্যীন, রহমতুল্লিল আলামীন, রউফুর রহীম, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমত মুবারকে পেশ করলেন। এ অবস্থায় একসময় উনার তন্দ্রা এসে গেল। ঘুমের মধ্যে তিনি স্বপ্নে দেখলেন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি, সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম এবং সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনাদেরকে সাথে নিয়ে সেখানে তাশরীফ মুবারক এনেছেন। আখিরী রসূল নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কাটা জিভটা উনার নিজ নূরুল মাগফিরাত মুবারকে (হাত মুবারকে) নিয়ে সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম এবং সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনাদেরকে লক্ষ্য করে বললেন, ‘দেখুন আপনাদের ছানা-ছিফত করার কারণে, অমুক রাফেযি লোকটা তার হাবশী গোলাম দিয়ে এই ব্যক্তির জিভ কেটে দিয়েছে। এটা জোড়া লাগিয়ে দেয়া হোক।’ এই বলে, তিনি নিজেই জিভটা বুযুর্গ ব্যক্তির মুখের ভিতর লাগিয়ে দিলেন।
যখন জিভটা লাগিয়ে দেয়া হলো, তখন বুযুর্গ ব্যক্তির তন্দ্রা ভেঙ্গে গেল। তিনি দেখতে পেলেন উনার জিভটা যথাস্থানে লেগে আছে, তিনি সুস্থ হয়ে গেছেন। সুবহানাল্লাহ! বুযুর্গ ব্যক্তি মহান আল্লাহ পাক উনার শুকরিয়া আদায় করলেন, এবং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শুকরিয়া আদায় করলেন এবং সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম এবং সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনাদেরও শুকরিয়া আদায় করে, ছলাত-সালাম মুবারক পাঠ করে সেবারের মত দেশে ফিরে গেলেন।
পরের বছর আবার তিনি হজ্জ করতে আসলেন এবং পূর্বের মতই পবিত্র রওযা শরীফ যিয়ারত করে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি ছলাত সালাম পেশ করে সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম এবং সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনাদের প্রতিও ছলাত সালাম মুবারক পাঠ করলেন। একটা যুবক বুযুর্গ ব্যক্তিকে লক্ষ্য করছিল। তিনি রওযা মুবারক যিয়ারত শেষে যখন বের হয়ে আসলেন, তখন সেই যুবক উনাকে নিজের বাসায় দাওয়াত করলো। বুযুর্গ ব্যক্তি মনে মনে ফিকির করলেন, আগের বার তো এক বৃদ্ধ লোকের দাওয়াত কবুল করে তিনি কষ্ট পেয়েছিলেন, এবারও তেমন কিছু হয় কিনা! কিন্তু যেহেতু যুবকটি মদীনা শরীফের অধিবাসী, সুতরাং আদবের দিকে লক্ষ্য করে তিনি এবারও দাওয়াত কবুল করলেন।
তিনি যখন যুবকটির বাড়িতে গেলেন, তখন বাড়িটি দেখে উনার কাছে পরিচিত মনে হচ্ছিলো। যুবকটি উনাকে বললো, ‘আপনি চিন্তা করবেন না। এই বাড়িতেই আপনি এর আগের বছর এসেছিলেন। গতবার যে ঘটনা ঘটেছিল, এবার আর তেমন কিছু ঘটবে না। আপনি নিশ্চিন্তে বাড়িতে প্রবেশ করুন।’ বুযুর্গ ব্যক্তি বাড়িতে প্রবেশ করলে উনাকে যথেষ্ট তা’যীম-তাকরীম করা হলো, মেহমানদারী করা হলো। তারপর যুবক বললো, আমি আপনাকে একটি জিনিস দেখাবো। উনাকে একটি কামরার সামনে নিয়ে যাওয়া হলো। দরজার তালা খোলার পর দেখা গেল, ঘরের কোণে গলায় শিকল বাঁধা একটি বানর রয়েছে। যুবকটি বললো, ‘এই বানরটিকে কি আপনি চিনেন?’ বুযুর্গ ব্যক্তি বললেন, “আমি বানরকে চিনবো কিভাবে?” যুবকটি বললো, ‘এই বানরটি হলো আমার পিতা।’ আফদ্বালুন নাস বা’দাল আম্বিয়া সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম ছুম্মা সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনাদের ছানা-ছিফত করার কারণে সে আপনাকে গতবছর দাওয়াত দিয়ে আপনার জিভ কেটে দিয়েছিল। এই নিকৃষ্ট কাজের জন্য মহান আল্লাহ পাক উনার গযব নাযিল হয়ে সে মানুষ থেকে বানরে পরিণত হয়েছে।’
তখন বুযুর্গ ব্যক্তি ঐ বাড়ি থেকে বের হয়ে আসলেন এবং মহান আল্লাহ পাক উনার শুকরিয়া আদায় করলেন, মহাসম্মানিত হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শুকরিয়া আদায় করলেন এবং হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহ তা’য়ালা আনহুম উনাদের শুকরিয়া আদায় করলেন। সুবহানাল্লাহ!
* উল্লেখ্য, যারা হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে থাকে তাদেরকে রাফেযি বলা হয়।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব-কর্তব্য
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
খছম বা ঝগড়া কু-স্বভাবটি পরিহার করা অপরিহার্য কর্তব্য
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
যে ৪ শ্রেণীর লোকদের জন্য ক্বিয়ামতের দিন সুপারিশ ওয়াজিব হবে
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
মুসলমান পুরুষ ও মহিলা সকলের জন্যই ফরযে আইন হচ্ছে- যথাযথভাবে ৫ ওয়াক্ত নামায তারতীব অনুযায়ী যথাসময়ে আদায় করে নেয়া
০২ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
মহাসম্মানিত মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনারা বেমেছাল ফযীলত মুবারকের অধিকারী
০২ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
হুব্বে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
০১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-
০১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সৃষ্টির শুরুতেই মহান আল্লাহ পাক উনার কুদরত মুবারক উনার মধ্যে ছিলেন, আছেন এবং অনন্তকাল থাকবেন
০১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
মহান আল্লাহ পাক তিনি তওবাকারীকে পছন্দ করেন (১)
৩০ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
ক্বলবী যিকির জারী না থাকলে শয়তানের ওয়াসওয়াসা থেকে বেঁচে থাকা সম্ভব নয়
৩০ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব-কর্তব্য
২৭ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ মেহমানদারী করার মাধ্যমে উদযাপনে শাফায়াত মুবারক লাভ
২৭ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার)












