ইলমে তাছাওউফ
কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে ইলমে তাছাউফ অর্জন করার গুরুত্ব
, ২৫ শাবান শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ০৮ আশির, ১৩৯১ শামসী সন , ০৭ মার্চ, ২০২৪ খ্রি:, ২৩ ফাল্গুন, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) ইলমে তাছাউফ
رَبَّنَا وَابْعَثْ فِيْهِمْ رَسُوْلًا مِّنْهُمْ يَتْلُوْ عَلَيْهِمْ اٰيَاتِكَ وَيُعَلِّمُهُمُ الْكِتَابَ وَالْحِكْمَةَ وَيُزَكِّيْهِمْ إِنَّكَ أَنْتَ الْعَزِيْزُ الْحَكِيْمُ
কিতাব শিক্ষা দিবেন, হিকমত শিক্ষা দিবেন এবং তাদেরকে ইছলাহ করবেন। তাযকিয়া, তাযকিয়াতুন নফস এবং তাযকিয়াতুল ক্বলব যিনি করবেন এমন একজন রসূল পাঠান।
إِنَّكَ أَنْتَ الْعَزِيْزُ الْحَكِيْمُ
যে নিশ্চয়ই আপনি জ্ঞানী এবং পরাক্রমশীল। অর্থাৎ হে বারে ইলাহী! আপনার পক্ষে সমস্ত কিছুই সম্ভব। কাজেই আপনি এমন একজন রসূল পাঠান আপনার বান্দাদের মধ্যে যিনি তাদেরকে আপনার আয়াতসমূহ শোনাবেন, কিতাব পাঠ করে শোনাবেন হিকমত শিক্ষা দিবেন এবং তাদের মূল যে বিষয়
يُزَكِّيْهِمْ
তাদেরকে তাযকিয়া করবেন। যার মাধ্যম দিয়ে যার উসীলায় তারা তাযকিয়া লাভ করে আপনার সাথে তায়াল্লুক সম্পর্ক স্থাপন করবে। যে বলা হয়েছে ইলমুল ইহসান অর্থাৎ ইলমুত তাছাওউফ ও ইলমুত তাযকিয়া এমন এক ইলিম যেটা ব্যতীত কোন মানুষের পক্ষে ইনসানে কামিল অর্থাৎ পরিপূর্ণ মানুষ হওয়া কখনোই সম্ভব নয়। পরিপূর্ণ মানুষ হওয়া কখনোই সম্ভব নয়।
যে ইলমুত তাছাওউফ বা ইলমুত তাযকিয়া অর্জন করবে তার পক্ষেই ইনসানে কামিল বা পরিপূর্ণ মানুষ মু’মিনে কামিল হওয়া সম্ভব। এর ব্যাখ্যায় হাদীছ শরীফে উল্লেখ করা হয়েছে-
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرٍو رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ الله صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْعِلْمُ ثَلَاثَةٌ اٰيَةٌ مُـحْكَمَةٌ أَوْ سُنَّةٌ قَائِمَةٌ أَوْ فَرِيْضَةٌ عَادِلَةٌ وَمَا كَانَ سِوَى ذٰلِكَ فَهُوَ فَضْلٌ
হযরত আব্দুল্লাহ বিন আমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, ইলিম হচ্ছে তিন প্রকার। প্রথম হচ্ছে-
اٰيَةٌ مُّـحْكَمَةٌ
অর্থাৎ যা মুহকাম আয়াতের দ্বারা সর্বশিক্ত হয়েছে। যা খ্বালিক মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার তরফ থেকে যা নির্দিষ্ট করা হয়েছে।
سُنَّةٌ قَائِمَةٌ
যা সুন্নত অর্থাৎ প্রথমটা হচ্ছে যা ফরয করে দেয়া হয়েছে।
اٰيَةٌ مُـحْكَمَةٌ
যার ফরয বলে সাব্যস্ত হয়েছে। দ্বিতীয়টা হচ্ছে যা সুন্নত অর্থাৎ সুন্নতে মুয়াক্কাদা বলে যা সাব্যস্ত করা হয়েছে।
أَوْ فَرِيْضَةٌ عَادِلَةٌ
তৃতীয় হচ্ছে অতিরিক্ত ফরয। ফরয, ওয়াজিব, সুন্নত, সুন্নতে মুয়াক্কাদা এটা সাব্যস্ত করা হয়েছে। এর পরেও فَرِيْضَةٌ عَادِلَةٌ অতিরিক্ত ফরয অর্থাৎ যেটা হচ্ছে মাযহাব মানা ফরয, ইলমুত তাছাওউফ অর্জন করা ফরয ইত্যাদি অতিরিক্ত ফরয এখানে বলা হয়েছে।
وَمَا كَانَ سِوَى ذٰلِكَ فَهُوَ فَضْلٌ
এছাড়া অতিরিক্ত যা কিছু রয়েছে সেটা হচ্ছে হুনর। যার মাধ্যম দিয়ে মানুষ তার দুনিয়াবী যিন্দেগীতে বসবাস করার জন্য, জীবন যাপন করার জন্য তার যা চাহিদা রয়েছে, চাকরি-বাকরী, ব্যবসা-বাণিজ্য ইত্যাদি করে থাকে, সেটা হচ্ছে হুনর। ইলিম হচ্ছে তিন প্রকার। অর্থাৎ একটা হচ্ছে ফরয, একটা সুন্নতে মুয়াক্কাদা। আরেকটা হচ্ছে অতিরিক্ত ফরয। আর এর অতিরিক্ত যা রয়েছে সেটা অতিরিক্ত অর্থাৎ সেটা ক্ষেত্রবিশেষে ফরয হবে, সুন্নত হবে, নফল হবে ইত্যাদি, মুস্তাহাব হবে।
فَرِيْضَةٌ عَادِلَةٌ
অর্থাৎ অতিরিক্ত যা ফরয রয়েছে, তারমধ্যে একটা হচ্ছে ইলমুত তাছাওউফ অর্জন করা ফরয, পীর ছাহিব গ্রহন করা ফরয। এবং পীর ছাহিবের হাতে বাইয়াত হওয়া ফরয। যে বলা হয়েছে ইলমুত তাছাওউফ এমন ইলিম যেটা সূক্ষ্ম। ইলমুল ফিক্বাহ ওযু, গোসল, নামায, রোযা, হজ্জ, যাকাত ইত্যাদি আলিম উলামাদের কাছে জিজ্ঞাসা করে মাদরাসায় পড়ে সহজেই জানা যায়। কিন্তু ইলমুত তাছাওউফ এমন এক ইলিম যে সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম। খুব যিকির-ফিকির, রিয়াযত-মাশাক্কাত ইত্যাদির মাধ্যম দিয়ে সেটা অর্জন করতে হয়। যেটা বলা হয়েছে ইলমুত তাছাওউফ এবং তার সংশ্লিষ্ট যা বিষয় রয়েছে প্রত্যেকটাই সূক্ষ্ম।
হযরত কারামত আলী জৈনপুরী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সাওয়ানেহ উমরীতে উল্লেখ রয়েছে উনি হযরত আমীরুল মু’মিনীন সাইয়্যিদ আহমদ বেরেলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বিশিষ্ট খলীফা। তিনি উনার পীর ছাহিবের ছোহবতে ছিলেন মোট ১৮ দিন। উনার আক্বল সমঝ তীক্ষ্মতা ইলিম ইত্যাদি সব দিক থেকে যোগ্যতা থাকার কারণে উনি মাত্র ৮ দিনে ৪টা ত্বরিকায় তাকমীলে পৌঁছেন। যখন উনার ত্বরীকা মশক শেষ হয়ে গেল হযরত কারামত আলী জৈনপুরী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সম্মানিত শায়েখ হযরত আমীরুল মু’মিনীন সাইয়্যিদ আহমদ বেরেলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার কাছে বিদায় নেয়ার জন্য আসলেন, তখন উনি বললেন, হে কারামত আলী জৈনপুরী! তুমি সুলূক শেষ করেছো, ইলমে তাছাওউফের যে সুলূক রয়েছে অর্থাৎ এর যে তর্জ-তরীক্বা বা আদব রয়েছে সেটাতো শিক্ষা করা হয়নি। কিতাবে বর্ণিত রয়েছে, সে আদব কায়দা শিখতে উনার ১০ দিন সময় ব্যায় হয়েছিল। উনি ইলমে তাছাওউফের ৪টা ত্বরীক্বার সুলূক শেষ করেছিলেন মাত্র ৮ দিনে। আর সে ইলমে তাছাওউফের যে আদব কায়দা রয়েছে, সেটা শিক্ষা করতে উনার ব্যায় হয়েছিল ১০ দিন। ১৮ দিনে উনি উনার সে মনজিলে মকসুদে পৌঁছেন। সেটাই তাছাওউফের কিতাবে উল্লেখ করা হয় যে ইলমুল ফিক্বাহ ইলমুত তাছাওউফ যে দুটাই ফরয পরিমাণ শিক্ষা করা জরুরত আন্দাজ শিক্ষা করা প্রত্যেকের জন্যই ফরয। কিন্তু ইলমুত তাছাওউফের যে সুলক রয়েছে সেটা তো শেষ করবেই। এর সাথে সাথে তার সংশ্লিষ্ট যে ইলম রয়েছে, তর্জ-তরিকা নিয়ম কানুন আদব-কায়দা যা রয়েছে, সেটাও সম্পন্ন করবে।
-০-
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
একজন কামিল মুর্শিদ বা শায়েখ আলাইহিস সালাম উনার নিকট বাইয়াত হওয়া ফরয (২)
০২ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (৩১)
৩০ আগস্ট, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
খিলাফত, খলীফা, পীর বা মুর্শিদ, গদীনশীন পীর বা মুর্শিদ পরিভাষার ব্যাখ্যা
২৯ আগস্ট, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
ইলমে ফিক্বাহ ও ইলমে তাছাওউফ উনাদের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা
২৮ আগস্ট, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
একজন কামিল মুর্শিদ বা শায়েখ আলাইহিস সালাম উনার নিকট বাইয়াত হওয়া ফরয
২৬ আগস্ট, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (৩০)
২০ আগস্ট, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (৩০)
২০ আগস্ট, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
ক্বলবে পবিত্র যিকির জারি হওয়া প্রসঙ্গে
১৯ আগস্ট, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
ক্বলবে পবিত্র যিকির জারি হওয়া প্রসঙ্গে
১৯ আগস্ট, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
ক্বলবে পবিত্র যিকির জারি হওয়া প্রসঙ্গে
১৯ আগস্ট, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
ক্বলবে পবিত্র যিকির জারি হওয়া প্রসঙ্গে
১৯ আগস্ট, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
ক্বলবে পবিত্র যিকির জারি হওয়া প্রসঙ্গে
১৯ আগস্ট, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার)