কোন অবস্থাতেই কাফির-মুশরিকদের অনুসরণ করা যাবে না। যারা তাদের পূজায় যাবে, তাদের অনুসরণ করবে তারা তাদের-ই অন্তর্ভুক্ত হবে।
, ২৮ রবীউল আউওয়াল শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ০৪ খ্বমিস , ১৩৯২ শামসী সন , ০২ অক্টোবর , ২০২৪ খ্রি:, ১৭ আশ্বিন, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “আসমান, যমীন এবং তার মধ্যে যা কিছু রয়েছে, ইচ্ছায় এবং অনিচ্ছায় সবকিছু আমার দিকে রুজু হয়ে গেছে। অথচ তোমরা কি অন্য ধর্ম তালাশ কর? অন্য দ্বীন তালাশ কর? কিন্তু তালাশ করলে বা আমল করলে, তা গ্রহণ করা হবেনা। ”
পবিত্র দ্বীন ইসলাম অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক উনার মনোনীত মত মুবারক এবং পথ মুবারক অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক উনার মতে মত, মহান আল্লাহ পাক উনার মহাসম্মানিত রসূল, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পথে পথ ছাড়া যে কোন মত, যে কোন পথ, যদি কেউ গ্রহণ করে, তাহলে সে ক্ষতিগ্রস্থের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে।
এই প্রসঙ্গে কিতাবে একটি ওয়াক্বেয়া উল্লেখ করা হয়, এই হিন্দুস্থানের মধ্যে এক বুযুর্গ ব্যক্তি ছিলেন। তিনি যখন ইন্তেকাল করলেন, ইন্তেকাল করার পরে আরেকজন দ্বীনদার, পরহেজগার আল্লাহওয়ালা লোক সেই বুযুর্গ ব্যক্তিকে স্বপে¦ দেখলেন। স্বপে¦ দেখে জিজ্ঞেস করলেন, হে মহান আল্লাহ পাক উনার ওলী কেমন আছেন? তিনি বললেন, আপাততঃ ভালই আছি। কিন্তু আমার উপর দিয়ে একটা কঠিন সময় অতিবাহিত হয়েছে।
আমি যখন ইন্তেকাল করলাম, আমাকে সরাসরি নিয়ে মহান আল্লাহ পাক উনার কাছে পেশ করা হলো। তখন মহান আল্লাহ পাক তিনি বললেন, “হে হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম! তোমরা কেন তাকে এখানে নিয়ে এসেছ?
হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা বললেন, আয় মহান আল্লাহ পাক! এই ব্যক্তি আপনার অনুগত ছিল। আপনার মতে মত ও আপনার মহাসম্মানিত রসূল, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পথে পথ তিনি চলার জন্য কোশেশ করতেন। সেজন্য নিয়ে এসেছি আপনার মহাসম্মানিত সাক্ষাৎ মুবারকের জন্য।
মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, “তাকে নিয়ে যাও এখান থেকে। তার হাশর, তার নশর, তার সবকিছু হবে হিন্দুদের সাথে। আমার এখানে তার কোন স্থান নেই। ” সেই বুযুর্গ ব্যক্তি বলেন, আমি যখন এটা শুনলাম, আমার সমস্ত শরীর ভয়ে থরথর করে কাঁপতে লাগলো।
আমি কিছুক্ষণ পরে বললাম, আয় মহান আল্লাহ পাক রব্বুল আ’লামীন! আমি এমন কি অপরাধ করেছি যে, আমার হাশর-নশর হিন্দুদের সাথে হবে? আমি তো কোনদিন পূজা করিনি। আমি কোনদিন মন্দিরে যাইনি। আমার কেন হাশর-নশর হিন্দুদের সাথে হবে?
মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, “তুমি স্মরণ করে দেখ, তুমি পূজা করেছিলে। ” সেই বুযুর্গ ব্যক্তি বলেন, আয় মহান আল্লাহ পাক আমি তো পূজা করিনি, আমি তো মন্দিরেও যাইনি। মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, “সেই হোলি পূজার দিনের ঘটনার কথা কি তোমার স্মরণ আছে?”
হিন্দুস্থানে একদিন হোলি পূজা হচ্ছিল, হোলি পূজা মানে রং ছিটাছিটি, এটাতো অনেক জায়গায়ই হয়ে থাকে, আজকাল সারা দেশে, সারা দুনিয়ায়। এটা নাজায়িয/হারাম-কুফরী তরীক্বাহ। এটা স্কুল-কলেজ, মাদরাসা, ইউনিভার্সিটিসহ সমস্ত জায়গায় হয়ে থাকে। যেকোন প্রতিষ্ঠানেই রং ছিটাছিটি হয়। মনে রাখবেন- এটা হারাম এবং জায়গা বিশেষে কুফরী-শেরেকীর অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে এই রং ছিটাছিটি।
সেই বুযুর্গ ব্যক্তিকে মহান আল্লাহ পাক তিনি বললেন, “তোমার কি সেই হোলি পূজার দিনের কথা স্মরণ আছে? তুমি একদিন হিন্দুস্থানের রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলে। সেইদিন ছিল হিন্দুদের হোলি পূজা, রং ছিটার দিন ছিল। সমস্ত গাছ-পালা, তরুলতা, পশু-পাখী সবকিছুর মধ্যে রং দেওয়া হয়েছিল। তোমার সামনে দিয়ে একটা গাধা ছিলো, তার শরীরে কোন রং ছিল না। অথচ অন্যান্য সমস্ত পশুর গায়ে রং ছিল। তখন তুমি পান চিবাচ্ছিলে, পান খাচ্ছিলে। তুমি বলেছিলে, হে গর্দভ, তোমার গায়ে তো কেউ রং দেয়নি। আমি একটু রং দিয়ে দেই। তুমি এক চিপটি পানের পিক দিয়েছিলে সেই গাধার গায়ে। এটা কি হোলি পুঁজা হয়নি?”
যখন একথা মহান আল্লাহ পাক রব্বুল আ’লামিন তিনি বললেন, সেই বুযুর্গ ব্যক্তি বললেন- আমি লা-জাওয়াব হয়ে গেলাম, আমি চুপ হয়ে গেলাম। আমার শরীর আরো থরথর করে কাঁপতে লাগলো। সত্যিইতো আমার ভুল হয়ে গেছে। আমি বললাম- আয় মহান আল্লাহ পাক! আমিতো বুঝি নাই, এটা করলে যে হোলি পূজা হয়ে যাবে।
কেননা পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم مَنْ تَشَبَّهَ بِقَوْمٍ فَهُوَ مِنْهُمْ.
অর্থ: নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যে যেই সম্প্রদায়ের সাথে মিল রাখে, তার হাশর-নশর তাদের সাথে হবে। (আবূ দাউদ শরীফ)
তখন সে ব্যক্তি বললো, আমি এটা বুঝতে পারিনি মহান আল্লাহ পাক। মহান আল্লাহ পাক তিনি বললেন, “কোথায় তুমি আমার মতে রইলে? আমার মহাসম্মানিত রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পথে রইলে?”
وَمَن يَبْتَغِ غَيْرَ الْإِسْلَامِ دِينًا فَلَن يُقْبَلَ مِنْهُ وَهُوَ فِي الْآخِرَةِ مِنَ الْخَاسِرِينَ .
অর্থ: “যে ব্যক্তি সম্মানিত দ্বীন ইসলাম ছাড়া অন্য কোন দ্বীন তালাশ করে, অনুসরণ অনুকরণ করে, তার থেকে সেটা গ্রহণ করা হবে না। সে অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যাবে। (পবিত্র সূরা আলে ইমরান শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ: ৮৫)
কাজেই, তোমার অবস্থা কঠিন। তোমার তো হাশর-নশর হিন্দুদের সাথে হওয়া উচিত। ” সে ব্যক্তি অর্থাৎ বুযুর্গ ব্যক্তি তিনি বললেন, আমি খুব কম্পিত অবস্থায় ছিলাম। কিছুক্ষন পরে মহান আল্লাহ পাক উনার রহমত মুবারক হলো, দয়া মুবারক হলো। মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, “হে ব্যক্তি আমি তোমাকে অন্যান্য আমলের কারণে ক্ষমা করেছি। আর না হলে আমি তোমাকে ক্ষমা করতাম না। তুমি এটা হয়তো বুঝতে পারনি, তাই তোমার অন্যান্য আমল থাকার কারণে আমি তোমাকে ক্ষমা করে দিলাম। ”
অত্যন্ত ফিকিরের বিষয়, পানের পিক দেয়ার কারণে যদি হিন্দুদের সাথে তাশাব্বুহ হয়ে যায় এবং সে কারণে তাদের সাথে হাশর-নশর হয়; তাহলে যারা মুসলমান হওয়া সত্ত্বেও মুশরিকদের পূজায় যায়, পূজার খাবার খায়, তাদের সাথে মুহব্বত রাখে, বন্ধুত্ব করে, তাহলে তাদের কি ফায়সালা?? তারা কি মুসলমান থাকতে পারবে?? তারা কি জান্নাত লাভ করবে?? কখনোই নয়; অবশ্যই তারাও কাফির-মুশরিকে পরিণত হয়ে যাবে। নাউযুবিল্লাহ!
অত্যন্ত সূক্ষভাবে কাফের- মুশরিকদের থেকে হিফাযত থাকতে হবে। তাদের সাথে কোন ধরণের মিল-মুহব্বত, বন্ধুত্ব রাখা যাবেনা।
এক কথায়, সর্বক্ষেত্রে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অনুসরণ-অনুকরণ মুবারক করতে হবে। কোন অবস্থাতেই কাফির-মুশরিকদের অনুসরণ করা যাবে না।
মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদেরকে সর্বক্ষেত্রে মহাসম্মানিত সুন্নত মুবারক উনার ইত্তেবা করার তাওফীক্ব দান করুন। আমীন!
-আহমদ হুসাইন
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
পবিত্র ‘ছলাতুল জুমুয়াহ’ উনার পূর্বে ৪ রাকায়াত সুন্নত নামায অর্থাৎ পবিত্র ‘ক্বাবলাল জুমুয়াহ’ নামায নিয়ে বাতিলপন্থিদের বিভ্রান্ত্রিকর ও মিথ্যা বক্তব্যের দলীলভিত্তিক জাওয়াব (৮)
২১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
কাফির মুশরিকদের থেকে দূরে থাকতে এবং তাদেরকেও দূরে রাখার ব্যাপারে নির্দেশ মুবারক
২০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সম্মানিত ইসলামী শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে- ফুটবল-ক্রিকেটসহ সর্বপ্রকার খেলাধুলা করা, সমর্থন করা হারাম ও নাজায়িয (২)
২০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
যেখানে প্রাণীর ছবি থাকে, সেখানে রহমতের ফেরেশতা প্রবেশ করেন না
২০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের সম্মানিত ৩টি স্তর
২০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
আসমাউর রিজাল, জারাহ ওয়াত তা’দীল, উছুলে হাদীছ শরীফ উনার অপব্যাখ্যা করে অসংখ্য ছহীহ হাদীছ শরীফ উনাকে জাল বলছে ওহাবী সালাফীরা (৩)
২০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
পর্দা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া কবীরা গুনাহ
১৯ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৯ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
হযরত আব্বাস ইবনে মিরদাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
যাকাত সম্পর্কিত আহকাম, মাসায়িল ও ফাযায়িল (৪)
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার)












