খলীফাতুল্লাহ, খলীফাতু রসূলিল্লাহ, মুজাদ্দিদে আ’যম, আহলু বাইতে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল উমাম আলাইহিস সালাম উনার কতিপয় কারামত মুবারক
, ১২ রবীউল আউওয়াল শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ১৯ রবি , ১৩৯২ শামসী সন , ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রি:, ০১ আশ্বিন, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
কারামত মুবারক (১)
১৯৯৩ সালের কথা। কুড়িগ্রাম জেলার উলিপুর উপজেলা। উলিপুর এম.এস.এম. উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে ওয়াজ ও দোয়ার মাহফিল। প্রধান অতিথি ছিলেন- মুজাদ্দিদে আ’যম, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল উমাম আলাইহিস সালাম। তিনি যথাসময়ে মাহফিল মুবারকে তাশরীফ নেয়ার জন্য রওয়ানা হলেন। মাহফিলের নিকটবর্তীও হলেন। কিন্তু প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করলো দুটি বিল্ডিং এবং একটি পুকুর। দুই বিল্ডিংয়ের মধ্য দিয়ে সংকীর্ণ রাস্তা পার হয়ে ষ্টেজে পৌঁছা সম্ভব নয়।
ড্রাইভার সাহেব থমকে দাঁড়ালেন। কারণ, এতো সংকীর্ণ রাস্তা দিয়ে চধলবৎড় ঔববঢ় কখনো ভিতরে প্রবেশ করতে পারবে না। আর ইতোপূর্বে এতবড় গাড়ী কখনো প্রবেশও করেনি। তাহলে কি হেঁটে যেতে হবে? কিন্তু না। তিনি তো মহান আল্লাহ পাক উনার ওলী বা পরম বন্ধু। সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল উমাম আলাইহিস সালাম তিনি ড্রাইভারকে উদ্দেশ্য করে বললেন, দাঁড়ালে কেন? যাও। ড্রাইভার বললেন, মুর্শিদ ক্বিবলা! বেয়াদবী ক্ষমা চাই। রাস্তাটি ছোট। গাড়ী ভিতরে প্রবেশ করতে পারছে না।
সাইয়্যিদুনা মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি উনাকে আবারো বললেন, যাও। সামনে বাড়াও। এবারো ড্রাইভার অক্ষমতা প্রকাশ করলেন। তখন মহান মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি একটু জালালিয়াতের সাথে বললেন, তোমাকে যেতে বলছি। তুমি সামনে অগ্রসর হও। কোন দিকে তাকাবে না। আর ইতোমধ্যে অনেক লোক চতুর্দিকে দাঁড়িয়ে গেলো। তারা ব্যাপারটা পর্যবেক্ষণ করছে। এতো ছোট রাস্তা দিয়ে গাড়ীটি কি ভিতরে প্রবেশ করবে? দেখার জন্য সবাই কৌতুহলী হয়ে রয়েছে। এবার ড্রাইভার কোন কথা না বাড়িয়ে গাড়ী স্টার্ট করলেন। আর অনায়াসে গাড়িটি গন্তব্য স্থান- মাহফিল স্টেজের নিকটে যথাস্থানে এসে দাঁড়ালো। সুবহানাল্লাহ! উপস্থিত সবাই একবার রাস্তার দিকে দেখছে! আর একবার গাড়ীর দিকে তাকাচ্ছে। আর ভাবছে কিভাবে গাড়ীটি এতো সংকীর্ণ রাস্তা দিয়ে প্রবেশ করলো। কেউ কেউ বলতেছিলেন উনার মতো ওলীআল্লাহ উনার জন্য ব্যাপারটি একেবারে মামুলী। কেউ বলছে একেই বলে কারামত মুবারক। ওলীআল্লাহগণ উনাদের কারামত মুবারক যে সত্য ইহা তারই বহিঃপ্রকাশ। সুবহানাল্লাহ!
কারামত মুবারক (২)
১৯৯৭ সালের কথা। কামিল তাফসীর বিভাগের পরীক্ষা চলছিল। পরীক্ষা চলাকালীন দিনগুলোতে পর পর দুই দিন বন্ধ। তাই আলিয়া মাদরাসার ক্যাম্পাসে, সহপাঠি পরীক্ষার্থীদের সাথে দেখা-সাক্ষাত করতে গেলাম। উদ্দেশ্য তাদের কুশলাদী বিনিময়, তাদের অবস্থান জানা।
আমাদেরকে ক্যাম্পাসে দেখে ছাত্ররা কৌতুহলী হলো। তাদের সাথে আমাদের সালাম-কালাম বিনিময় হলো। এরই মধ্যে একজন ছাত্র আমাকে উদ্দেশ্য করে বললো, আপনাদের মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি অনেক বড় ওলীআল্লাহ। তিনি এ যুগের মহান মুজাদ্দিদ তাতে কোন সন্দেহ নেই। অপর একজন ছাত্র বললো, তুমি কিভাবে তা বুঝতে পারলে? তখন সে বললো, ভুরুঙ্গামারী উপজেলার জয়মনিরহাট হাই স্কুল মাঠে উনার মাহফিল ছিল। সেই মাহফিলে আমি গিয়েছিলাম। আমার উদ্দেশ্য ছিলো রাজারবাগ শরীফ উনার মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার ছবি তুলবো। উনি ছবির বিরুদ্ধে ফতওয়া দেন। যেমন পরিকল্পনা তেমনি কাজ। অনেক আগে থেকে প্রস্তুতি নিলাম। খুবই পাওয়ারফুল একটি ক্যামেরা সাথে নিলাম। ফিল্ম ভরলাম। টেস্ট করলাম। অতি সংগোপনে প্রস্তুতির কাজ সুসম্পন্ন করলাম।
মাহফিলে গিয়ে খুবই সাবধানতার সাথে গোপনে কাউকে না জানিয়ে উনার অনেকগুলো ছবি তুললাম। ছবি তোলা শেষ হলে বিলম্ব না করে চলে এলাম। কিন্তু পরে দেখলাম আমার ক্যামেরায় একটি ছবিও নেই। সুবহানাল্লাহ!
সেই থেকে আমি জেনেছি যে, উনি অনেক বড় ওলীআল্লাহ। সুবহানাল্লাহ!
আমি সেই ছেলের নাম, ঠিকানা সবই নিলাম। কিন্তু তাকে বুঝতে দিলাম না যে, এই ঘটনা আমি জানি। কিন্তু সেই যুবকই যে, এই যুবক তা জানতাম না। তবে সে একটি বিষয় এড়িয়ে গেছে। তা হলো- উক্ত মাহফিলে আমাদের পীরভাইদের কাছে সে ছেলে ধরা পড়ে যায়। ফিল্মসহ সেই ক্যামেরা জব্দ করেন আমাদের পীর ভাইগণ। তারা পরে দেখলেন সেই ফিল্মে কোন ছবিই নেই। সুবহানাল্লাহ! এক পর্যায়ে ফিল্ম রেখে দিয়ে ক্যামেরা তাকে ফেরত দেয়া হলো।
কারামত মুবারক (৩)
আমাদের একজন গণ্য-মান্য পীর ভাই। তিনি ছোহবত মুবারক ইখতিয়ার করার জন্য দরবার শরীফে আসেন। ৭/৮ দিন দরবার শরীফে অবস্থান করেন। অতঃপর একদিন বাড়ীর দিকে রওয়ানা হন। বাস যোগে বাড়ীতে ফিরছিলেন। উনার পাশের সীটে একজন ভদ্রলোক বসা ছিলেন। তার সাথে আমাদের সেই পীর ভাই কথা-বার্তা বললেন। এক পর্যায়ে তাকে পবিত্র দরবার শরীফের কথা বললেন। পবিত্র জুমুয়ার নামায যেন দরবার শরীফে আদায় করেন, সে কথা বললেন।
সেই পীর ভাই বলেন- আমি যখন তাকে দরবার শরীফ আসার দাওয়াত দিলাম তখন সে লোক বললো, হ্যাঁ; আমি আপনাদের দরবার শরীফে যাবো। কিছু দিন পূর্বেও একদিন গিয়েছিলাম। কিন্তু উদ্দেশ্য ভালো ছিল না। উদ্দেশ্য খারাপ ছিল। তবে সে উদ্দেশ্য সফল হয়নি। আসলে আপনাদের হুযূর ক্বিবলা তিনি একজন খাছ ওলীআল্লাহ। মানুষ যে যাই বলুক, আমি বিশ্বাস করি যে, উনি সাধারণ ওলীআল্লাহ নন। উনার অনেক মর্যাদা। আমি সেটা সেদিনই বুঝতে পেরেছি। আর সেদিনই আমি খালিছ তাওবা করেছি। আমি বললাম- আপনি কি উদ্দেশ্যে সেখানে গিয়েছিলেন। তিনি বললেন- মূলতঃ আমি আপনাদের হুযূর ক্বিবলা উনাকে শহীদ করার জন্যই গিয়েছিলাম। নাউযুবিল্লাহ! গুলি করে উনাকে শহীদ করবো- এই উদ্দেশ্যে গিয়েছিলাম। নাউযুবিল্লাহ!
পূর্বে পরিকল্পনা মুতাবিক পিস্তলে গুলি ভরে আমি আপনাদের দরবার শরীফে উপস্থিত হলাম। যখন গুলি করার জন্য নিকটবর্তী হলাম তখন দেখতে পেলাম, বেশ কয়েক জন লোক। সবাই আপনাদের হুযূর ক্বিবলার মত। কে আমার উদ্দেশ্য ব্যক্তিত্ব উনাকে শনাক্ত করতে পারছি না। এটা দেখে চিন্তায় পড়ে গেলাম। কে আমার প্রকৃত উদ্দেশ্য ব্যক্তিত্ব? কাকে আমি গুলি করবো? এই দৃশ্য দেখে আমি ভড়কে গেলাম, ভয় পেলাম। কাজেই কিছুক্ষণ অপেক্ষা করলাম। কিছুক্ষণ পর অবস্থা স্বাভাবিক হলো। আমি আবারো প্রস্তুত হলাম। আর যখনই গুলি করবো, ঠিক তখনই আবারো পূর্ব অবস্থা পুনরাবৃত্তি হলো। তখন আমার ভীষণ ভয় হলো। শরীর কাঁপতে লাগলো। আমি আমার উদ্দেশ্য থেকে সরে দাঁড়ালাম। সিদ্ধান্ত নিলাম, আমার পক্ষে এ ঘৃণ্য কাজ করা ঠিক হবে না। আমি মনে মনে তওবা-ইস্তিগফার করলাম। শুধু আমিই নই। আমার পূর্বেও দুইজন ব্যক্তি দুইদিন সেই একই উদ্দেশ্যে দরবার শরীফে গিয়েছিল। তারাও তাদের কাজ সম্পন্ন করতে পারেনি। সুবহানাল্লাহ!
কারামত মুবারক (৪)
ওলীয়ে মাদারজাদ, আমাদের সম্মানিত দাদা হুযূর ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি একবার মারিদ্বী শান মুবারক প্রকাশ করলেন। সেই মারিদ্বী শান মুবারক বেড়ে গেল। এমন মনে হলো, যেন উনার বিদায়ের সময় ঘনিয়ে এলো।
মুজাদ্দিদে আ’যম, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল উমাম আলাইহিস সালাম তিনি সেখানে তাশরীফ মুবারক আনলেন। অনতিবিলম্বে মালাকুল মউতও আসলেন। উনার আগমনের উদ্দেশ্য ব্যক্ত করলেন। তখন মুজাদ্দিদে আ’যম, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল উমাম আলাইহিস সালাম তিনি উনাকে বললেন, উনার তো হায়াত মুবারক আছে। উনার বিছালী শান মুবারক প্রকাশের সময় হয়নি। একথা মুবারক শুনে হযরত আজরাঈল আলাইহিস সালাম তিনি কোন প্রতিউত্তর না করে ফিরে গেলেন। কুতুবুয যামান সাইয়্যিদুনা হযরত দাদা হুযূর ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি সেদিন থেকে ছিহহাতী শান মুবারক জাহির করা শুরু করলেন। কয়েকদিনের মধ্যে পরিপূর্ণ ছিহহাতী শান মুবারক জাহির করলেন। সুবহানাল্লাহ!
ছিহহাতী শান মুবারক পরিপূর্ণ রূপে জাহির হওয়ার পর একদিন তিনি মুজাদ্দিদে আ’যম, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল উমাম আলাইহিস সালাম উনাকে বললেন, “আপনি আমাকে রেখে দিলেন কেন? আমারতো বয়স মুবারক অনেক হয়েছে। আমার কি চলে যাওয়াই ভালো ছিল না?”
মুজাদ্দিদে আ’যম, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল উমাম আলাইহিস সালাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন- জি না; আপনার প্রয়োজন আছে। আপনাকে কিছুদিন থাকতে হবে। সুবহানাল্লাহ! হযরত দাদা হুযূর ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি এরপর আরও অনেক দিন দুনিয়ার জমিনে অবস্থান মুবারক গ্রহণ করেছিলেন। সুবহানাল্লাহ!
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে হালাল ও হারাম উভয়ের গুরুত্ব সম্পর্কে (৭)
০৯ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে হালাল ও হারাম উভয়ের গুরুত্ব সম্পর্কে (৭)
০৯ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে হালাল ও হারাম উভয়ের গুরুত্ব সম্পর্কে (৭)
০৯ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে হালাল ও হারাম উভয়ের গুরুত্ব সম্পর্কে (৭)
০৯ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ছবি তোলা শক্ত হারাম, রয়েছে কঠিন শাস্তি
০৯ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ছবি তোলা শক্ত হারাম, রয়েছে কঠিন শাস্তি
০৯ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
০৯ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
হযরত ছাহাবায়ে কিরামগণ উনাদের প্রতি আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টি মুবারক পবিত্র কুরআন শরীফ দ্বারা প্রমাণিত
০৯ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
মসজিদে ইবাদত করতে বাধা দেয়া বা মসজিদ উচ্ছেদ করা কুফরী
০৯ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা অবশ্যই সত্যের মাপকাঠি; অস্বীকারকারীরা কাট্টা কাফির (১৪)
০৮ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা অবশ্যই সত্যের মাপকাঠি; অস্বীকারকারীরা কাট্টা কাফির (১৪)
০৮ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা অবশ্যই সত্যের মাপকাঠি; অস্বীকারকারীরা কাট্টা কাফির (১৪)
০৮ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার)