ফতওয়া
খাছ সুন্নতী টুপি ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (২০)
গবেষণা কেন্দ্র : মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ
, ০২ জুমাদাল ঊখরা শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ১৭ সাবি’ ১৩৯১ শামসী সন , ১৬ ডিসেম্বর, ২০২৩ খ্রি:, ৩০ অগ্রহায়ণ, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
البرنس، وہ لمبی ٹوپی جو آغاز اسلام میں پھنی جاتی تھی
অর্থ: “বুরনুস ঐ লম্বা টুপিকে বলে, যা দ্বীন ইসলামের প্রাথমিক যুগে পরিধান করা হতো।” শুধু তাই নয়, কিতাবসমূহে “বুরনুস” টুপিকে বেদ্বীন-বদদ্বীন, বিশেষ করে খৃষ্টানদের টুপি হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। যেমন- ছহীহ নাসাঈ শরীফের ২য় খ- ৭ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-
البرنس، بالضم- کلاہ دراز کہ ترسایار می پوشند
অর্থ: বা-অক্ষরের উপর পেশ দিয়ে ‘বুরনুস’ শব্দের অর্থ হলো- লম্বা টুপি, যা অগ্নি উপাসকরা পরিধান করে।” বিশ্ববিখ্যাত ফার্সী লোগাত ‘লোগাতে সাঈদী’তে উল্লেখ আছে-
برنس، ایک قسم کی ٹوپی جو آتش پرست استعمال کرتے ھیں
অর্থ: “বুরনুস এক প্রকার টুপি, যা অগ্নি উপাসকরা ব্যবহার করে।’
অনুরূপ ফার্সী মশহূর লোগাত ‘লোগাতে হীরা ও কিশ্ওয়ারী’তে উল্লেখ আছে-
برنس، لمبی ٹوپی جو راھب پھنتے ھیں
অর্থ: “বুরনুস হলো- লম্বাটুপি, যা খৃষ্টান রাহিব বা পাদ্রীরা পরিধান করে।”
আর বিখ্যাত লোগাত ‘গিয়াছুল লোগাত’ ৭৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-
البرنس، ....... بمعنی کلاہ دراز کہ کشیشاں می پوشند
অর্থ: “বুরনুস ..... অর্থ লম্বা টুপি, যা খৃষ্টান পাদ্রী বা মূর্তি পুজকরা পরিধান করে থাকে।”
আর লোগাতুল হাদীছ ১ম খ- ৫৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-
برنس- ھر وہ کپرا حبس میں ٹوپی لگی ھو جبہ ھو یا قمیص یا باران کوٹ و غیرہ بعضوں نے کھا لمبی ٹوپی جسن کو لوگ شروع زمانہ اسلام میں پھنا کرتے تھے .......... مجمع البرین میں ھے برنس نصاری کی ٹوپی جو وہ سرپر رکھتے ھیں
অর্থ: ‘বুরনুস’- প্রত্যেক ঐ কাপড়, যার সাথে টুপি সংযুক্ত থাকে, জুব্বা হোক অথবা কামীছ হোক অথবা রেইন কোর্ট ইত্যাদি হোক। কেউ কেউ বলেন, বুরনুস হচ্ছে- লম্বা টুপি, যা লোকেরা দ্বীন ইসলামের শুরু যুগে পরিধান করতো।
............ “মাজ্মাউল বাহরাইন” নামক কিতাবে উল্লেখ আছে, ‘বুরনুস’ নাছারাদের টুপি, যা তারা মাথায় দিয়ে থাকে।
উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা অকাট্যভাবেই প্রমাণিত হলো যে, ‘বুরনুস” টুপি ইসলামের প্রথম যুগে পরিধান করা হতো, যা বর্তমানে বেদ্বীন-বদদ্বীন তথা খৃষ্টানদের খাছ টুপি।
আর সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম, হযরত ইমাম-মুজতাহিদ ও আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা সর্বদাই গোল টুপি ব্যবহার করতেন, যা সবদিক থেকে মাথার সাথে ভালভাবে লেগে থাকতো বা মাথা হতে কিঞ্চিৎ পরিমানও উঁচু হয়ে থাকতো না। যার ফলে সকলে গোল টুপিকেই সুন্নত বলে ফতওয়া দিয়েছেন। যার প্রমাণ আমরা দেখতে পাই, তিরমিযী, মিশকাত, দিমিয়াত্বী, মাওয়াহেব, শরহে মাওয়াহেব, নেহায়া ইবনুল আছীর, মিরকাত, আশআতুল লুমআত, তা’লীকুছ ছবীহ্, শরহুত্ ত্বীবী, মুযাহিরে হক্ব, মাদারেজুন নুবুওওয়াত, সীরাতুন নবী, ফতওয়ায়ে আমীনিয়া, গুলজারে সুন্নত, আনীসুল আরওয়াহ্, দলীলুল আরেফীন, ইসরারুল আওলিয়া, রাহাতুল কুলূব, রাহাতুল মুহিব্বীন ইত্যাদি কিতাবসমূহে।
উল্লেখিত কিতাবসমূহে উল্লেখ আছে যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ও হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের টুপি মুবারক ছিল- সাদা, গোল, চার টুকরা বিশিষ্ট, যা সবদিক থেকে মাথার সাথে লেগে থাকতো, কখনো মাথা হতে উঁচু হয়ে থাকতো না। উল্লেখ্য, সম্মানিত দ্বীন ইসলামে এমন অনেক আমলই রয়েছে, যা সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি প্রথম দিকে করেছেন কিন্তু পরবর্তীতে তা পরিহার করেছেন। যেমন- মাগরিব নামাযের ফরযের পূর্বে দু’রাকাআত সুন্নত নামায, যা তিনি প্রথম দিকে পড়েছেন, কিন্তু পরবর্তীতে তা পরিহার করেছেন।
এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
صَلُّوْا قَبْلَ صَلَاةِ الْمَغْرِبِ رَكْعَتَيْنِ
অর্থ: “তোমরা মাগরিবের (ফরযের) পূর্বে দু’রাকায়াত নামায আদায় করো।”
উক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফের ব্যাখ্যায় মিশকাত শরীফের ১০৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-
مَحْمُوْلٌ عَلَى الْاِبْتِدَاءِ
অর্থ: “উক্ত আমল প্রথম যুগের জন্য প্রযোজ্য ছিল।”
আর মিশকাত শরীফের ব্যাখ্যাগ্রন্থ “তানযীমুল আশতাত” ১ম খ- ৪০৭ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-
يه حكم ابتداء اسلام ميى
অর্থ: “(মাগরিবের পূর্বে দু’রাকায়াত সুন্নত পড়ার) এই হুকুম ইসলামের প্রাথমিক যুগে ছিল।”
অনুরূপ ‘বুরনুস’ টুপি সর্ম্পকে বর্ণিত হয়েছে-
يَلْبَسُونَهَا فِىْ صَدْرِ الْاِسْلَامِ
‘উক্ত টুপি ইসলামের প্রাথমিক যুগে পরিধান করা হতো’। যা ইতিপূর্বে বিশ্ববিখ্যাত কিতাবসমূহের ইবারতের বা বর্ণনা দ্বারা সুস্পষ্ট ও অকাট্যভাবে প্রমাণিত হয়েছে।
মূলকথা হলো- “বুরনুস” টুপি বেদ্বীন-বদদ্বীন তথা খৃষ্টানদের খাছ টুপি, যা খৃষ্টানরা এখনো পরিধান করে থাকে। আর কিস্তি বা দোপাট্টা টুপি হচ্ছে- হিন্দু মারওয়ারীদের খাছ টুপি, যা হিন্দুরা তাদের বিশেষ বিশেষ অনুষ্ঠানে পরিধান করে থাকে। বুরনুস টুপি উপরের দিকে কমপক্ষে একহাত পরিমাণ লম্বা। আর কিস্তি টুপি দোপাট্টা ও আড়াআড়িভাবে লম্বা। আর যে সকল বর্ণনায় বুরনুস টুপি পরিধানের প্রমাণ পাওয়া যায়, তা দ্বীন ইসলামের প্রথম যুগের আমল। কাজেই বুরনুস টুপির উপর ভিত্তি করে কিস্তি টুপিকে সুন্নত বলা ও প্রথম যুগের আমলকে দলীল হিসেবে গ্রহণ করে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা ‘বুরনুস’ তথা কিস্তি টুপি পরিধান করেছেন বলে বক্তব্য পেশ করা ডাহা মিথ্যা, জিহালত ও কুফরী বৈ কিছুই নয়।
-০-
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
পবিত্র কুরবানী শরীফ নিয়ে সুওয়াল-জাওয়াব
১৮ মে, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
ছহিবু সাইয়্যিদি সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ, আস সাফফাহ, আল জাব্বারিউল আউওয়াল, আল ক্বউইউল আউওয়াল, হাবীবুল্লাহ, আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, মাওলানা মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ পবিত্র হজ্জ ও পবিত্র উমরা সম্পর্কে (২০)
১৮ মে, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
নেক কাজে সাহায্য করতে হবে, পাপ কাজে সাহায্য করা যাবে না
১৮ মে, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের ছোহবত মুবারক ইখতিয়ার করেছেন
১৮ মে, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
ধর্মব্যবসায়ীদের জন্য জাহান্নাম
১৮ মে, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
বিশিষ্ট তাবেয়ী হযরত আমির বিন আবদিল্লাহ বিন আবদিল ক্বায়েস আল-আনবারী রহমতুল্লাহি আলাইহি (৫)
১৮ মে, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আস সাবি’য়াহ আলাইহাস সালাম উনার সাওয়ানেহ মুবারক
১৭ মে, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সুওয়াল: পবিত্র কুরবানীর পশুর গোশত বণ্টনের কোন পদ্ধতি আছে কি?
১৭ মে, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
হে মুসলিম! কাফির-মুশরিকদের ষড়যন্ত্রের বিষয়ে সতর্ক-সাবধান!
১৭ মে, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
নিয়ামত হাছিল করতে হলে যিনি মালিক উনার মতের সাথে মত মিলিয়ে দিতে হয়
১৭ মে, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সারাবিশ্বে একই দিনে ঈদ পালন ও রোযা শুরু করার কথা বলার উদ্দেশ্য পবিত্র ঈদ ও পবিত্র রোযাকে নষ্ট করা, যা মূলত মুনাফিকদের একটি ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত (৩৬)
১৭ মে, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
বিশিষ্ট তাবেয়ী হযরত আমির বিন আবদিল্লাহ বিন আবদিল ক্বায়েস আল-আনবারী রহমতুল্লাহি আলাইহি (৪)
১৭ মে, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার)