গরীবের পাতে ইলিশ ফিরবে কবে? (১)
এডমিন, ০৫ জুমাদাল উলা শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ২২ সাদিস ১৩৯১ শামসী সন , ২০ নভেম্বর, ২০২৩ খ্রি:, ০৪ অগ্রহায়ণ কার্তিক, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) আপনাদের মতামত

বর্তমানে বছরে ৩ বার মানে ১২ মাসের মধ্যে ৫ মাসই নদী বা সমুদ্রে ইলিশসহ সকল মাছ ধরা বন্ধ থাকে। যেমন-
১) ১ মার্চ থেকে ৩০ এপ্রিল ২ মাস। নদীতে ইলিশসহ সবধরনের মাছ ধরা বন্ধ।
২) ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই ৬৫ দিন। সমুদ্রে ইলিশসহ সকল মাছ বন্ধ ধরা বন্ধ।
৩) ১১ অক্টোবর থেকে ২ নভেম্বর ২২ দিন। নদী-সমুদ্রে ইলিশসহ সব মাছ ধরা বন্ধ।
প্রশ্ন হচ্ছে, গত কয়েক বছর যাবত নদ নদী ও সমুদ্রে প্রায় অর্ধেক সময় মাছ ধরা বন্ধ করে মাছের প্রাপ্তি কী বেড়েছে?
হয়ত বলতে পারেন, কাগজে কলমে তো বেড়েছে।
কিন্তু আমি বলবো- কাজীর গরু কিতাবে থাকলে তো আর হবে না, গোয়ালে থাকতে হবে।
নদী সমুদ্রে মাছ ধরা বন্ধ করে যদি সত্যি মাছের পরিমাণ বাড়তো, তবে সেই মাছ মধ্যবিত্তের পাত উপচে গরীবের পাতে আসতো। কিন্তু মাছ যখন ধনীর পাত ছেড়ে আর বের হচ্ছে না, তখন বুঝতে হবে, এই সব আজগুবি নিয়ম করে মাছের প্রাপ্তি বৃদ্ধি নয়, বরং কমে গেছে।
লক্ষ্য করুণ- প্রথমত, বাজারে গত জুলাই থেকে ৩ মাস যাবত ইলিশ এসেছে, কিন্তু গত ১১ই অক্টোবর ২০২৩ তারিখে সেই ইলিশ ধরা বন্ধ করে দেয়া হলো ২২ দিনের জন্য। বলা হচ্ছে, এর মাধ্যমে মা ইলিশ রক্ষা পাবে, ইলিশ ডিম পাড়বে। প্রশ্ন হচ্ছে, ইলিশ কি নির্ধারিত তারিখ দেখে ডিম পাড়ে? যারা এ সময় ইলিশ কিনেছে তারা জানে, অধিকাংশ ইলিশের পেটে ডিম ছিলো। মা ইলিশ রক্ষা করা যদি মূল উদ্দেশ্য হয়, তবে গত ৩ মাস যে হারে মা ইলিশ নিধন চলেছে তাতে তো ইলিশের বংশ নির্বংশ হওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু তা তো হচ্ছে না।
দ্বিতীয়ত, ৬৫ দিন নিষেধাজ্ঞার পর জুলাই মাসে যখন ইলিশ আহরণ শুরু হয়, তখন প্রথম প্রথম ইলিশ পাওয়া যায় না, কিন্তু কয়েকদিন পর ইলিশ পাওয়া শুরু হয়। এবং ধীরে ধীরে তার পরিমাণ বাড়তে থাকে। কিন্তু তাদের সূত্র অনুসারে ৬৫ দিন মাছ ধরা বন্ধ থাকার পর তো নদী বা সমুদ্রে মাছ গিজগিজ হওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু তা তো হয় না। কিন্তু যখনই জাল ফেলে মাছ ধরা শুরু হয়, তখন ধীরে ধীরে কেন মাছ প্রাপ্তি বাড়ে। এর ব্যাখ্যা কি?
এর ব্যাখ্যাটা আমার কাছে অনেকটা কুয়ার পানির মত মনে হয়। কুয়া থেকে যত পানি তুলবেন, তত চারপাশ থেকে পানি এসে কুয়াকে পুনরায় ভরে দিবে। অর্থাৎ কুয়াতে পানি তুলে আপনি যে খালি জায়গা তৈরী করছেন, সেখানে চারপাশ থেকে পানি এসে জমা হচ্ছে। অর্থাৎ কোন এলাকায় যখন ইলিশ বা অন্য কোন মাছের ঝাক বিচরণ করে, তখন ঐ এলাকায় নতুন ঝাক আসে না। কিন্তু যখন আপনি জাল দিয়ে মাছ তুলে নিচ্ছেন, তখন মাছের ভ্যাকুয়াম তৈরী হচ্ছে, আর তারা ঝাকে ঝাকে সেই ভ্যাকুয়ামে আসার জন্য আসছে, পুরো ভারত মহাসাগর থেকে সেই ঝাকের মুখ আমাদের সীমানায় আসছে। আর আমরা সেই মাছগুলো জাল দিয়ে তুলে নিচ্ছি। যদি আমরা সেখান থেকে মাছ না নিতাম, তবে আমাদের সীমানা মাছের ঝাক পূর্ণ হয়ে যায়, ফলে নতুন মাছ সেখানে আসে না। নতুন মাছ মুখ ঘুরিয়ে অন্য এলাকায় চলে যায়।
-এস হাবীব।