ইলমুত তাযকিয়্যাহ:
চোগলখোরের খারাবী ও লাঞ্ছিত পরিণতি
, ৩০ জুলাই, ২০২৫ ১২:০০:০০ এএম ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) মহিলাদের পাতা
দু’ব্যক্তি বা দু’দলের নিকট দু’ধরনের কথা বলে কলহ বা ফ্যাসাদ সৃষ্টি করাকে চোগলখোরি বলা হয়।
চোগলখোরের খারাবী ও লাঞ্ছনা সম্পর্কে অনেক আয়াত শরীফ ও হাদীছ শরীফ ইরশাদ মুবারক হয়েছে।
পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
وَلَا تُطِعْ كُلَّ حَلَّافٍ مَّهِينٍ ◌ هَـمَّازٍ مَّشَّاءٍ بِنَمِيْمٍ ◌ مَّنَّاعٍ لِّلْخَيْرِ مُعْتَدٍ اَثِيْمٍ ◌ عُتُلٍّ بَعْدَ ذٰلِكَ زَنِيْمٍ ◌
অর্থ : এরূপ ব্যক্তির কথা মান্য করো না যে বহু শপথকারী, লাঞ্ছিত, নিন্দুক, চোগলখুরির উদ্দেশ্যে ভ্রমণকারী, নেক কাজে বাধাদানকারী, সীমালঙ্ঘনকারী, পাপী, কঠোর প্রকৃতির, অতঃপর অবৈধ সন্তান। (পবিত্র সূরা কলম : আয়াত শরীফ ১০-১৩)
এ পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি মিথ্যা তোহমত দানকারী কাট্টা মুশরিক ও কাফির ওলীদ বিন মুগীরার অনেকগুলো বদ খাছলতের কথা প্রকাশিত হয়েছে তার মধ্যে চোগলখোরির কথাও ব্যক্ত হয়েছে। নাঊযুবিল্লাহ!
ছহীহ মুসলিম শরীফ উনার মধ্যে বর্র্ণিত রয়েছে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
عَنْ حَضْرَتْ حُذَيْفَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ اَنَّهُ بَلَغَهُ اَنَّ رَجُلاً يَـنِمُّ الْـحَدِيْثَ فَقَالَ حُذَيْفَةُ سَـمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُوْلُ لَا يَدْخُلُ الْـجَنَّةَ نَـمَّامٌ.
অর্থ : হযরত হুজাইফা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্র্ণিত। ...... নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, চোগলখোর বেহেশতে প্রবেশ করবে না। (মুসলিম শরীফ : কিতাবুল ঈমান, বাবু বাইয়ানি গিলাজিত তাহরীমিন নামীমাত, হাদীছ শরীফ নং ১০৫)
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন-
شِرَارُ عِبَادِ اللهِ الْمَشَّاؤُونَ بِالنَّمِيمَةِ الْمُفَرِّقُونَ بَيْنَ الأَحِبَّةِ الْبَاغُونَ الْبُرَآءَ الْعَنَتَ
অর্থ : বান্দাদের মধ্যে সবেচেয়ে নিকৃষ্টতম তারা- যারা চোগলখোরি করে বেড়ায়, প্রিয়জনদের মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটায় এবং নির্দোষ লোকদেরকে দোষারোপ করে। (আহমদ, বায়হাক্বী)
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন-
مَنْ كَانَ ذَا وَجْهَيْنِ فِى الدُّنْيَا كَانَ لَهُ لِسَانَانِ مِنْ نَارٍ يَوْمَ الْقِيَامَةِ
অর্থ : যে ব্যক্তি দুনিয়াতে দু’মুখ বিশিষ্ট হবে অর্থাৎ চোগলখোর হবে ক্বিয়ামতের দিন তার জন্য আগুনের দুটি জিহ্বা হবে। (দারিমী শরীফ)
পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
وَالْفِتْنَةُ اَشَدُّ مِنَ الْقَتْلِ ۚ
অর্থ : ফিতনা-ফ্যাসাদ হত্যা করা অপেক্ষা কঠিন গুনাহ। (পবিত্র সূরা বাক্বারা : আয়াত শরীফ ১৯১)
আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
وَيُفْسِدُوْنَ فِي الْاَرْضِ ۙ اُولٰئِكَ لَـهُمُ اللَّعْنَةُ وَلَـهُمْ سُوْءُ الدَّارِ
অর্থ : যারা যমীনে ফ্যাসাদ সৃষ্টি করে তাদের জন্য লা’নত-অভিসম্পাত এবং তাদের জন্য মন্দ গৃহ- জাহান্নাম রয়েছে। (পবিত্র সূরা রা’দ : আয়াত শরীফ ২৫)
আর এই ফিতনা-ফ্যাসাদ সংঘটিত হওয়ার প্রধান কারণই হচ্ছে চোগলখোরি। নাঊযুবিল্লাহ!
কাজেই, প্রত্যেক মুসলমান পুরুষ-মহিলা, জিন-ইনসানের জন্য ফরয হলো চোগলখোরি থেকে নিজেকে হিফাযত করা।
বর্র্ণিত রয়েছে, মহান আল্লাহ পাক উনার জলীলুল ক্বদর নবী ও রসূল হযরত কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি অনাবৃষ্টিতে দেশে দুর্ভিক্ষ হওয়ায় বনী-ইসরাঈলদের সম্ভ্রান্ত, নেককার লোকদেরকে নিয়ে বৃষ্টি বর্ষণের জন্য চার দিন লাগাতার দোয়া করলেন। কিন্তু দোয়া কবুল হওয়ার কোন আলামত প্রকাশিত না হওয়ায় তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট বলতে লাগলেন, আয় বারে ইলাহী! চারদিন লাগাতার আপনার কাছে বৃষ্টির জন্য দোয়া করছি, তথাপি দোয়া কবুল না হওয়ার কি কারণ, দয়া করে অবহিত করুন। মহান আল্লাহ পাক তিনি ওহী মুবারক করে জানালেন যে, আপনি যদি ৪০ দিন পর্যন্ত দোয়া করেন তবুও তা কবুল হবেনা। কারণ আপনার সম্প্রদায়ের মধ্যে একজন চোগলখোর আছে, তার বদ আমলের কারণে দোয়া কবুল হচ্ছে না। হযরত কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, আয় বারে ইলাহী! আমাকে জানিয়ে দিন, সেই চোগলখোর ব্যক্তিটি কে? তাহলে আমি তাকে তওবা করাতে পারি। মহান আল্লাহ পাক তিনি বললেন, আমি চোগলখোরিকে অপছন্দ করি। কাজেই নিজেই তাকে কি করে চিনিয়ে দিই? আপনি এক কাজ করুন, উপস্থিত সমস্ত লোকদেরকে চোগলখোরি থেকে তওবা করতে বলুন, তাহলে অন্যান্য সকলের সাথে সেই চোগলখোর ব্যক্তিও তওবা করবে। তখন মহান আল্লাহ পাক উনার নবী ও রসূল, হযরত কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি সকলকে তওবা করতে বললেন, এতে সকলেই তওবা করলো, অমনি মেঘ হতে প্রবল বৃষ্টি বর্ষণ শুরু হলো। সুবহানাল্লাহ!
(সংকলিত)
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
হযরত উম্মে সুরাইকা দাওসিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহা
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
মহাসম্মানিত মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনারা বেমেছাল ফযীলত মুবারকের অধিকারী
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সর্বক্ষেত্রে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে প্রাধান্য দিতে হবে
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সৃষ্টির শুরুতেই মহান আল্লাহ পাক উনার কুদরত মুবারক উনার মধ্যে ছিলেন, আছেন এবং অনন্তকাল থাকবেন
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
মহান আল্লাহ পাক তিনি তওবাকারীকে পছন্দ করেন (৩)
১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
ক্বলবী যিকির জারী না থাকলে শয়তানের ওয়াসওয়াসা থেকে বেঁচে থাকা সম্ভব নয়
১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
দোযখে বেপর্দা হওয়া নারীদের শাস্তির বর্ণনা (১০)
১৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
জামায়াতের জন্য মহিলাদের মসজিদে ও ঈদগাহে যাওয়া হারাম ও কুফরী (৪)
১৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সম্বোধন মুবারক করার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ আদব-শরাফত বজায় রাখতে হবে
১৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব-কর্তব্য
১১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
তিন ধরনের লোক বেহেশতে প্রবেশ করবে না
১১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সর্বাবস্থায় আজল বা তাড়াহুড়া না করে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত
১০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার)












