তা’লীমুল মাসায়িল (১২)
, ১১ই রবিউছ ছানী শরীফ, ১৪৪৭ হিজরী সন, ০৫ খমীছ, ১৩৯৩ শামসী সন , ০৪ অক্টোবর, ২০২৫ খ্রি:, ২০ আশ্বিন, ১৪৩২ ফসলী সন, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
কূপের মাসায়িল
সাধারণতঃ কূপের পানি পাক। কিন্তু কূপে যখন কোনো প্রকার নাপাক জিনিস পতিত হয়, তা কম হোক কিংবা বেশি হোক অথবা কোনো প্রাণী মরে কূপে পতিত হয়, তখন তার সমস্ত পানি উঠিয়ে না ফেলে দেয়া পর্যন্ত উক্ত কূপ ও তার পানি পাক হবে না। এ অবস্থায় সমস্ত পানি উঠিয়ে ফেললে, কূপের পানি, কূপের ভিতরের চতুর্দিকস্থ দেয়াল, যে বালতি বা ডোল দিয়ে পানি উঠানো হয়েছে, সে বালতি বা ডোল এবং তার রশি (দড়ি) সবকিছুই পাক হয়ে যাবে। সমস্ত পানি উঠানোর অর্থ হলো- পানি তুলতে তুলতে যখন এরূপ হয় যে, বালতির অর্ধেক আর পূর্ণ হয় না, তখনই বুঝতে হবে কূপের সমস্ত পানি উঠানো হয়েছে।
কূপে মানুষ, গরু, ছাগল, কুকুর ইত্যাদি জাতীয় প্রাণীর প্রশ্রাব-পায়খানা এবং হাঁস-মুরগির মল (পায়খানা) পতিত হলে সমস্ত পানি উঠিয়ে ফেলতে হবে। কিন্তু কবুতর, বাবুই, চড়ুঁই এবং এ জাতীয় পাখীর মল কূপে পড়লে পানি নাপাক হবে না।
কূপে মানুষ, গরু, ছাগল, কুকুর ইত্যাদি জাতীয় প্রাণী মারা গেলে কিংবা বাইরে মরে পতিত হলে কূপের সমস্ত পানি তুলে ফেলতে হবে।
স্থলচর প্রাণী ছোট হোক বা বড় হোক, কূপে মরে ফুলে গেলে, পঁচে গেলে ও ফেটে গেলে সমস্ত পানি তুলে ফেলতে হবে।
অতএব, যদি চড়ুঁই, বাবুই ও ইঁদুর সমতুল্য কোনো প্রাণী কূপে পড়ে মরে ফুলে যায়, পঁচে যায় বা ফেটে যায়, তবে সমস্ত পানি তুলে ফেলতে হবে। আর যদি এ জাতীয় প্রাণী ফুলে, পঁচে ও ফেটে যাবার পূর্বে তুলে ফেলা হয়, তাহলে কমপক্ষে বিশ বালতি পানি তুলে ফেলা ওয়াজিব। এর বেশি অর্থাৎ ত্রিশ বালতি উঠানো আফযল বা উত্তম।
কবুতর, মুরগি, বিড়াল বা এ ধরনের অন্য কোনো প্রাণী কূপে পড়ে মরে গেলে এবং তা যদি ফুলে, পঁচে কিংবা ফেটে না গিয়ে থাকে, তবে কমপক্ষে চল্লিশ বালতি পানি তুলে ফেলা ওয়াজিব, পঞ্চাশ কিংবা ষাট বালতি উঠানো আফযল বা উত্তম।
কারো গোসলের হাজত হয়েছে, সে বালতি উঠানোর জন্য কূপে নেমেছে কিন্তু তার শরীরে বা কাপড়ে কোনো নাপাকী লাগেনি, তবে তাতে কূপ নাপাক হবে না। এমনকি যদি কোনো বিধর্মী (কাফির-মুশরিক ইত্যাদি) কূপে নামে, আর তার শরীরে বা কাপড়ে কোনো নাপাকী লেগে না থাকে, তবুও কূপ নাপাক হবে না। আর যদি শরীরে বা কাপড়ে নাপাকী লেগে থাকে, তবে কূপ নাপাক হয়ে যাবে এবং সমস্ত পানি তুলে ফেলতে হবে।
আর নাপাকী সম্বন্ধে সন্দেহ থাকলে, শুধু সন্দেহের কারণে কূপ নাপাক হবে না। তবে এক্ষেত্রে বিশ কিংবা ত্রিশ বালতি পানি তুলে ফেলা আফযল বা উত্তম।
যেসব জিনিস পড়ায় কূপ নাপাক হয়েছে, শত চেষ্টা করেও তা যদি বের করা না যায়, তবে যে পর্যন্ত এ ইয়াক্বীন (বিশ্বাস) না হবে যে, ওই জিনিস পঁচে, গলে সম্পূর্ণ মাটি হয়ে গেছে, সে পর্যন্ত ওই কূপ পাক হবে না। আর যখন উক্ত ইয়াক্বীন হবে, তখন সমস্ত পানি উঠিয়ে ফেললেই কূপ পাক হয়ে যাবে। আর যদি পতিত জিনিস এরূপ হয় যে, সেটা নিজে পাক কিন্তু সেটাতে অন্য নাপাক জিনিস লেগে গিয়েছিলো, যেমন নাপাক কাপড়, নাপাক জুতা-সে-েল ইত্যাদি, এমতাবস্থায় শুধু কূপের সমস্ত পানি বের করে ফেললেই কূপ পাক হয়ে যাবে।
যেসব প্রাণীর ঝুটা নাপাক, যেমন শূকর, কুকুর ইত্যাদি, তা যদি কূপে পড়ার পর জীবিতাবস্থায় উঠানো হয়, তথাপিও কূপ নাপাক হবে এবং তার সমস্ত পানি তুলে ফেলতে হবে। আর যেসব প্রাণীর ঝুটা মাশকূক বা সন্দেহযুক্ত, যেমন- পালিত গাধা ইত্যাদি, এক্ষেত্রেও সমস্ত পানিই তুলতে হবে। আর যেসব প্রাণীর ঝুটা মাকরূহ, যেমন বিড়াল, মুরগী ইত্যাদি এক্ষেত্রে দশ বালতি পানি উঠিয়ে ফেলা ইহতিয়াত (তাক্বওয়া)।
আর প্রাণীর ঝুটা পাক হলে, তা কূপে পড়ার পরে জীবিতাবস্থায় উঠিয়ে ফেললে কূপ নাপাক হবে না এবং তার পানিও উঠাতে হবে না।
জানা আবশ্যক যে, প্রথমে মৃত প্রাণীকে (নাপাকী) কূপ থেকে উঠিয়ে ফেলতে হবে অতঃপর পানি উঠাতে হবে। কারণ মৃত প্রাণীকে বের না করে পানি তুলে ফেলার মধ্যে কোনোই স্বার্থকতা নেই।
অতএব, যদি মৃত প্রাণীকে বের করার পূর্বে পানি উঠাতে শুরু করে থাকে, তবে তার হিসাব মৃত প্রাণী বের করার পর হতে ধরতে হবে। ওটা বের করার পূর্বে যত বালতি বের করা হয়েছে, তা হিসাবে গণ্য হবে না।
কোনো কূপে যে বালতি বা ডোল ব্যবহার করা হয়, উক্ত কূপের জন্য সে বালতিরই হিসাব ধরা হবে। আর যদি অনেক বড় বালতির দ্বারা পানি বের করা হয়, তবে নিত্যকার ব্যবহৃত বালতির পরিমাণে হিসাব করে নিবে। যদি কূপ এমন হয় যে, সর্বদা তার নিচ থেকে পানি প্রবাহিত হতেই থাকে, কিছুতেই পানি শেষ করা যায় না, তবে সমস্ত পানি বের করার ক্ষেত্রে অনুমান করবে- যে পরিমাণ পানি প্রথমে ছিলো সে পরিমাণ পানি বের করতে হবে। আর যদি অনুমান করে সম্ভব না হয়, তবে কমপক্ষে তিনশত বালতি পানি বের করতে হবে। কূপ হতে যে পরিমাণ পানি বের করার হুকুম, তা একবারে বের করুক কিংবা অল্প অল্প করে বের করুক (হুকুমের পরিমাণ পানি বের করা হলে) কূপ পাক হয়ে যাবে।
কূপে মৃত ইঁদুর বা অন্য কিছু মৃত দেখা গেলে, সেটা ফুলেও যায়নি, ফেটেও যায়নি এবং নাপাকী হলে তা যদি অদৃশ্য না হয়, আর পতিত হবার সময়ও জানা নেই, এমতাবস্থায় যারা ওই কূপের পানি দ্বারা অজু করে নামায পড়েছে, তাদের সেটা দেখার সময় হতে একদিন এক রাতের নামায দোহরাতে হবে এবং এর মধ্যে কাপড় ধৌত করে থাকলে তা পুনরায় ধৌত করতে হবে। আর যদি মৃত প্রাণী ফুলে ফেটে যায়, তবে তিন দিন, তিন রাতের নামায দোহরাতে হবে।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে সালাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু (৩)
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
পবিত্র হাদীছ শরীফে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ইসলামী শরীয়ত মুতাবিক- ছবি তোলা হারাম
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র হাদীছ শরীফে ইরশাদ মুবারক করেন-
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে সালাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু (২)
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
যাকাত সম্পর্কিত আহকাম, মাসায়িল ও ফাযায়িল (২)
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পর্দা পালন করা পুরুষ-মহিলা সবার জন্য ফরজ
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
যিনি খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে মুহব্বত মুবারক করা সমস্ত জিন-ইনসান, তামাম কায়িনাতবাসীর জন্য ফরযে আইন
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের আলোকে ছিরাতুল মুস্তাক্বীম উনার ছহীহ তাফসীর- ০১
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার)












