ত্বাহারাতের ইস্তিব্রা ও ইস্তিন্ক্বার আহকাম
, ০১ যিলক্বদ শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ১১ ছানী আশার, ১৩৯১ শামসী সন , ১০, মে, ২০২৪ খ্রি:, ৩১ বৈশাখ, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
ইস্তিন্জার কারণে ক্ববরের আযাব:
বিশেষ করে ছোট ইস্তিন্জা (প্রস্রাব) থেকে পবিত্রতার বিষয়ে হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে অত্যাধিক গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। যেমন, পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ اِسْتَنْزِهُوْا عَنِ الْبَوْلِ فَإِنَّ عَامَّةَ عَذَابِ الْقَبْرِ مِنْهُ.
অর্থ: “হযরত আবূ হুরাইরাহ্্ রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। নিশ্চয়ই নূরে মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ্্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, তোমরা ইস্তিন্জা থেকে (প্রস্রাব থেকে) বিরত থাকো (বেঁচে থাকো)। কেননা ইস্তিন্জার কারণে (প্রস্রাবের কারণে) অধিকাংশ ক্ববরের আযাব হবে”। (দেরায়া শরহে হেদায়া)
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
إِنَّ عَامَّةَ عَذَابِ الْقَبْرِ فِيْ الْبَوْلِ، فَتَنَزَّهُوْا مِنَ الْبَوْلِ.
অর্থ: “নিশ্চয়ই ইস্তিন্জার কারণে (প্রস্রাবের কারণে) অধিকাংশ ক্ববরের আযাব হবে”। তাই তোমরা ইস্তিন্জা থেকে (প্রস্রাব থেকে) বেঁচে থাক। (মুসতাদরেকে হাকেম)
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
اِتَّقُوْا الْبَوْلَ، فَإِنَّهٗ أَوَّلُ مَا يُحَاسَبُ بِهِ الْعَبْدُ فِيْ الْقَبْرِ.
অর্থ:“তোমরা ইস্তিন্জা থেকে (প্রস্রাব থেকে) বেঁচে থাকো। কারণ বান্দাকে ক্ববরে সর্বপ্রথম ইস্তিন্জা সম্পর্কে (প্রস্রাব সম্পর্কে) হিসাব নেয়া হবে”। (পবিত্র ত্বাবারানী শরীফ)
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالَى عَنْهُمَا، قَالَ مَرَّ النَّبِىُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِقَبْرَيْنِ فَقَالَ اِنَّهُمَا يُعَذَّبَانِ وَمَا يُعَذَّبَانِ فِي كَبِيرٍ، اَمَّا أَحَدُهُمَا فَكَانَ لَايَسْتَتِرُ مِنَ الْبَوْلِ، وَفِىْ رِوَايَةٍ لِمُسْلِمٍ لَايَسْتَنْزِهُ مِنَ الْبَوْلِ وَاَمَّا الْاٰخِرُ فَكَانَ يَمْشِيْ بِالنَّمِيْمَةِ، ......
অর্থ: “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহুমা উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন একদা নূরে মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ্্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি দুইটি ক্ববরের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। এমন সময় ইরশাদ মুবারক করলেন- তাদের উভয়কে শাস্তি দেয়া হচ্ছে। কিন্তু এমন বড় কোনো কারণে আযাব দেওয়া হচ্ছে না (যা থেকে বেঁচে থাকা খুব কঠিন)। এরপর ইরশাদ মুবারক করলেন, হাঁ, (তবে নিশ্চয়ই উহা অবশ্যই বড় গুনাহ) ইহাদের একজন ছোট ইস্তিন্জা করার সময় (প্রস্রাব করার সময়) আড়াল করতো না। মুসলিম শরীফের অপর বর্ণনায় রয়েছে, ছোট ইস্তিন্জা থেকে (প্রস্রাব থেকে) উত্তমরূপে পবিত্রতা লাভ করতো না অর্থাৎ ছোট ইস্তিন্জা থেকে (প্রস্রাব থেকে) ইস্তিব্রা করতো না অর্থাৎ স্বাভাবিক ছোট ইস্তিন্জা (প্রস্রাব) বের হওয়ার পর অবশিষ্ট ছোট ইস্তিন্জা (প্রস্রাব) বের করার কেশেশ করতো না। আর অপরজন একজনের কথা অপরজনের কাছে বলে বেড়াতো অর্থাৎ পরনিন্দা করতো”। (পবিত্র মিশকাত শরীফ)
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
اَمَّا كَانَ أَحَدُهُمَا لَا يَسْتَبْرِئُ مِنْ بَوْلِهِ
অর্থ: “...তাদের একজন ছোট ইস্তিন্জা (প্রস্রাব) করার সময় ছোট ইস্তিন্জা থেকে (প্রস্রাব থেকে) ইস্তিব্রা করতো না। অর্থাৎ স্বাভাবিক ছোট ইস্তিন্জা (প্রস্রাব) বের হওয়ার পর অবশিষ্ট ছোট ইস্তিন্জা (প্রস্রাব) বের করার কেশেশ করতো না”। (পবিত্র নাসায়ী শরীফ, পবিত্র বুখারী শরীফ, পবিত্র মুসলিম শরীফ)
ইমাম নববী রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, উক্ত হাদীছ শরীফখানা :- لَايَسْتَتِرُ لَايَسْتَنْزِهُ ও لَايَسْتَبْرِئُ তিনটি মুবারক লফযে বা মুবারক শব্দে বর্ণিত হয়েছে। এরপর তিনি বলেন,
وهذه الثالثة في البخاري وغيره، وكلها صحيحة.
لَايَسْتَبْرِئُ ইস্তিব্রা করতো না অর্থাৎ স্বাভাবিক ছোট ইস্তিন্জা (প্রস্রাব) বের হওয়ার পর অবশিষ্ট ছোট ইস্তিন্জা (প্রস্রাব) বের করার কেশেশ করতো না”। এ তৃতীয় মুবারক শব্দটি পবিত্র বুখারী শরীফে ও অন্যান্য পবিত্র হাদীছ শরীফের কিতাবে বর্ণিত হয়েছে। আর প্রত্যেকটি বর্ণনাই ছহীহ্। (আইনী ১ম খ- ৮৩ পৃষ্ঠা)
আরো উল্লেখ্য যে,
أن ألفاظ الروايات الصحيحة "لَايَسْتَتِرُ" و"لَايَسْتَبْرِئُ" و"لَايَتَنَزَّهُ " وكلها بمعنى واحد
অর্থ: “নিশ্চয় ছহীহ রেওয়াতে لَايَسْتَتِرُ لَايَتَنَزَّهُ -- لَايَسْتَبْرِئُ এই মুবারক শব্দ গুলোর প্রত্যেকটার একই অর্থ”। (ফতওয়ায়ে ইসলাম ১ম খ- ৫২৩৯ পৃষ্টা)
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
رَوَىَ الْبُخَارِيُّ وَاِبْنُ حَبَّانَ فِيْ صَحِيْحِهِ : أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ سَمِعَ صَوْتَ إِنْسَانَيْنَ يُعَذَّبَانِ فِيْ قُبُوْرِهِمَا فَقَالَ" إِنَّهُمَا لَيُعَذَّبَانِ وَمَا يُعَذَّبَانِ فِي كَبِيرٍ، ثُمَّ قَالَ: بَلَى كَانَ أَحَدُهُمَا لَايَسْتَبْرِئُ مِنْ بَوْلِهِ، وَكَانَ الْآخَرُ يَمْشِي بِالنَّمِيْمَةِ؛"
অর্থ: “ইমাম বুখারী ও ইবনে হাব্বান রহমাতুল্লাহি আলাইহিমা উনারা উনাদের ছহীহ কিতাবে বর্ণনা করেছেন, নিশ্চয়ই একদা নূরে মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ্্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি দু’জন ব্যক্তির চিৎকার শুনতে পেলেন, যাদের দু’জনকেই তাদের কবরে শাস্তি দেয়া হচ্ছে। এরপর ইরশাদ মুবারক করলেন, কিন্তু এমন বড় কোনো কারণে আযাব দেওয়া হচ্ছে না (যা থেকে বেঁচে থাকা খুব কঠিন)। অত:পর ইরশাদ মুবারক করলেন, হাঁ, (তবে নিশ্চয়ই উহা অবশ্যই বড় গুনাহ) তাদের একজন ছোট ইস্তিন্জা করার সময় (প্রস্রাব করার সময়) ছোট ইস্তিন্জা থেকে (প্রস্রাব থেকে) ইস্তিব্রা করতো না। অর্থাৎ স্বাভাবিক ছোট ইস্তিন্জা (প্রস্রাব) বের হওয়ার পর অবশিষ্ট ছোট ইস্তিন্জা (প্রস্রাব) বের করার কেশেশ করতো না”। আর অপরজন একজনের কথা অপরজনের কাছে বলে বেড়াতো অর্থাৎ পরনিন্দা করতো”। (লাওয়াক্বিউল আনওয়ার ১ম খ- ২৭৯ পৃষ্ঠা)
“ফিক্বহুল ইসলাম” কিতাবের ১ম খ-ের ৯৭ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-
(لَا يَسْتَبْرِئُ مِنْ بَوْلِهِ،) أَيْ لَا يَسْتَفْرِغُ الْبَوْلَ جَهْدَهُ بَعْدَ فَرَاغِهِ مِنْهُ، فَيَخْرُجُ بَعْدَ وُضُوئِهِ. فَيُصَلِّى غَيْرَ مُطَهَّرٍ.
অর্থ: “(যাদের দু’জনকেই তাদের কবরে শাস্তি দেয়া হচ্ছে। ইহাদের একজন ছোট ইস্তিন্জা (প্রস্রাব) করার সময় ছোট ইস্তিন্জা থেকে (প্রস্রাব থেকে) ইস্তিব্রা করতো না। ) অর্থাৎ ছোট ইস্তিন্জা (প্রস্রাব) করার পর অবশিষ্ট ছোট ইস্তিন্জা (প্রস্রাব) পুরুষলিঙ্গ থেকে কোশেশ করে বের করতো না। তাই অযু করার পর ছোট ইস্তিন্জা (প্রস্রাব) বের হতো”। অত:পর সে এই অপবিত্র অবস্থায় নামায আদায় করতো।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
আখেরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
১২ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
পবিত্র ছোহবত মুবারক গ্রহণের ফাযায়িল-ফযীলত, গুরুত্ব-তাৎপর্য ও আবশ্যকতা:
১২ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১২ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
যে নিজে পর্দা করে না ও অধীনস্থদের পর্দা করায় না সে দাইয়ূছ
১২ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
হাক্বীক্বী মৃত্যুকে স্মরণ করার মধ্যেই শহীদী দরজা মিলে
১২ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
শরীয়তের দৃষ্টিতে কোন রোগই ছোঁয়াচে নয়, ছোঁয়াচে বিশ্বাস করা কুফরী
১২ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
মূর্তি, প্রতিমা, ভাস্কর্য, ম্যানিকিন ও ছবি নাজায়িয ও হারাম
১১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
হযরত আব্বাদ ইবনে বিশর ইবনে ওয়াকাশ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু (২)
১১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
যাকাত সম্পর্কিত আহকাম, মাসায়িল ও ফাযায়িল (৩)
১১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
প্রাণীর ছবি তোলা কবীরা গুনাহ ও অসন্তুষ্টির কারণ
১১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সর্বক্ষেত্রে ফায়সালাকারী হিসেবে মেনে নেয়াই ঈমানদারের পরিচয়
১১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার)












