থেসালোনিকা বিজয়: যার মাধ্যমে এজিয়ান সাগরে শক্তিশালী হয় মুসলমানরা
এডমিন, ১৮ মুহররমুল হারাম শরীফ, ১৪৪৪ হিজরী সন, ০৭ ছালিছ, ১৩৯১ শামসী সন , ০৬ আগস্ট, ২০২৩ খ্রি:, ২২ শ্রাবণ, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) ইতিহাস

আব্বাসীয় সালতানাতের আমলে মুসলমানদের বিজয়াভিযানে চরমভাবে পর্যদুস্থ হয়েছিলো বাইজেন্টাইনরা। ৯০৪ সালে আব্বাসীয় সালতানাতের হাতে পরিসমাপ্তি ঘটে বাইজান্টাইনের থেসালোনিকা নগরের। ঐতিহাসিকদের মতে, কনস্টান্টিনোপলের (মুসলিম বিজয়ের পর ইসলামবুল) পর এই শহরকেই দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ শহর বলে ভাবা হতো সে সময়। যে সময়টার কথা বলা হচ্ছে, ততদিনে অনেকটাই দুর্বল হয়ে পড়েছিলো আব্বাসীয়রা। তবে এই দুর্বল অবস্থাতেও মুসলিম শাসনের ভূমি বিস্তৃত করতে পিছপা হননি মুসলমানরা। নবম শতকের মাঝামাঝির দিকে মুসলিম সালতানাতগুলো নজর দিল ভূমধ্যসাগরের দিকে।
এরই ধারাবাহিকতায় ৮৯৮ সালের এক যুদ্ধে মুসলিম নৌ অ্যাডমিরাল মুহম্মদ রাগিবের নেতৃত্বে বাইজান্টাইন নৌবাহিনী শোচনীয়ভাবে পরাজিত হয় মুসলিম বাহিনীর হাতে, বন্দি হয় তাদের ৩ হাজার নাবিক। এই যুদ্ধে বিজয়ই মুসলিমদের এজিয়ান সাগরে অবাধ বিচরণের পথ উন্মুক্ত করে দেয়।
এর পর আসে ৯০৪ সাল। মুসলিম কমান্ডার রাশিক আল ওয়ারদামির নেতৃত্বে রওয়ানা দেয় মুসলিম নৌবাহিনী, সঙ্গে ছিল ৫৪টি জাহাজ। উল্লেখ্য, মুসলিম ইতিহাসে এই অভিযানের কমান্ডার রাশিক আল ওয়ারদামি নামে পরিচিত হলেও বিভিন্ন ইতিহাসের বইয়ে উনাকে লিও অফ ত্রিপোলি নামে অভিহিত করা হয়। কারণ, এই অভিযানের অল্প কিছুদিন আগে তিনি খ্রিষ্টান থেকে সম্মানিত দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন।
উনার সুযোগ্য নেতৃত্বে এগিয়ে যেতে লাগল মুসলিম বাহিনী। সবাই জানতো, দলটি যাচ্ছে কনস্টান্টিনোপলের দিকে। সেই অনুযায়ীই খবর গিয়েছিল বাইজান্টাইন সাম্রাজ্যে। কিন্তু হুট করেই সিদ্ধান্ত বদলে থেসালোনিকা নগরকে বেছে নেন রাশিক আল ওয়ারদামি, জাহাজগুলো এগোতে থাকে নতুন গন্তব্যের উদ্দেশ্যেই। এই পরিবর্তিত সিদ্ধান্তের কথা জানতে পেরে চরমভাবে ভীত হয়ে পড়ে বাইজান্টাইন শাসকরা।
কারণ এত অল্প সময়ের মধ্যে মুসলমান বাহিনীকে রুখে দেয়ার মতো অবস্থা তাদের নৌবাহিনীর ছিল না। ওদিকে এই শহরের সমুদ্রের দিককার প্রতিরক্ষা দেওয়ালও ছিল বেশ নিচু, যার ফলে সেদিকে থেকে আক্রমণ আসলে টিকে থাকা সম্ভব ছিল না তাদের পক্ষে।
আর বাইজান্টাইন শাসকরা চিন্তাও করেনি যে, ওদিক দিয়ে কেউ হামলা চালাতে পারে। আব্বাসীয় সালতানাতের আসন্ন অভিযানের কথা জানাজানি হলে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে পুরো নগরজুড়ে। বাইজেন্টাইন পক্ষ থেকে চেষ্টা করা হয়েছিল পানির নিচে প্রতিবন্ধক স্থাপনের মাধ্যমে জাহাজগুলোর অগ্রযাত্রা রোধ করতে; কিন্তু সেটা আর হয়ে ওঠেনি। মাত্র চারদিনের অবরোধ শেষেই শহরটি বিজয় করেন আব্বাসীয় জেনারেল রাশিক আল ওয়ারদামির নেতৃত্বাধীন মুসলিম বাহিনী।
এক সপ্তাহ পরই পূর্ব ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে নিজেদের সেনা ছাউনির উদ্দেশে যাত্রা করে রাশিক আল ওয়ারদামির বাহিনী। যাওয়ার সময় ৪ হাজার মুসলিম বন্দিকে উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়া হয়, আরও নেন ৬০টি জাহাজ ও ২২ হাজার যুদ্ধবন্দিকে। পাশাপাশি ধ্বংসও করে দিয়ে যান বাইজেন্টাইনদের আরও ৬০টি জাহাজ। যুদ্ধে অংশ নেওয়া প্রত্যেক মুসলিম নাবিকই ১ হাজার স্বর্ণমুদ্রা লাভ করেন গনিমতের মাল হিসেবে। ইতিহাসবিদ আল-তাবারির মতে, এই যুদ্ধ চলাকালে বাইজান্টাইন পক্ষের নিহতের সংখ্যা দাঁড়ায় ৫ হাজারে।