ইলমুত তাযকিয়্যাহ:
দুনিয়ার মুহব্বত এর পরিণাম খুবই নিকৃষ্ট
, ০১লা রবিউছ ছানী শরীফ, ১৪৪৭ হিজরী সন, ২৬ রবি’, ১৩৯৩ শামসী সন , ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ খ্রি:, ১০ আশ্বিন, ১৪৩২ ফসলী সন, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
দুনিয়ার মুহব্বত মানুষকে খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার স্মরণ থেকে গাফিল করে রাখে। কাজেই প্রত্যেক মুসলমান নর-নারীর উচিত দুনিয়ার মুহব্বত অন্তর থেকে দূর করে দেয়া। দুনিয়ার নিকৃষ্টতা সম্পর্কে পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
وَمَا الْـحَيَاةُ الدُّنْيَا اِلَّا مَتَاعُ الْغُرُوْرِ
অর্থ : দুনিয়া অর্থাৎ পার্থিব জীবন ধোঁকা বা প্রতারণার উপকরণ ব্যতীত কিছু নয়। (পবিত্র সূরা হাদীদ : আয়াত শরীফ ২১)
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
حب الدنيا رأس كل خطيئة وترك الدنيا رأس كل اطاعة
অর্থ : দুনিয়ার মুহব্বত হচ্ছে সমস্ত গুনাহর মূল আর দুনিয়ার মুহব্বত ত্যাগ করা সমস্ত ইবাদতের মূল।
বর্র্ণিত রয়েছে, মহান আল্লাহ পাক উনার নবী ও রসূল হযরত ঈসা রূহুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি একবার কোথাও হেঁটে যাচ্ছিলেন, যাওয়ার সময় তিনি দুনিয়াকে মহিলার ছূরতে দেখলেন। তার একটি হাত সামনে এবং আরেকটি হাত পিছনে। সামনের হাতটি রঙিন, চাকচিক্যময়। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, হে দুনিয়া! তোমার এই ছূরত কেন, তোমার একটি হাত সামনে এবং একটি হাত পিছনে? তোমার পিছনের হাতটি দেখাওতো। সে তার পিছনের হাতটি দেখালো। দেখা গেল, তার পিছনের হাতের মধ্যে একটা ছুরি, তা থেকে রক্ত ঝরছে।
তিনি বললেন, এটার কি হাক্বীক্বত? দুনিয়া বললো, আমার সামনের যে হাতটি রঙিন, চাকচিক্যময়, এটা দিয়ে আমি মানুষকে ধোঁকা দেই, এর রঙিন, চাকচিক্যময় দেখে মানুষ দুনিয়ার মোহে মোহগ্রস্ত হয়ে দুনিয়াতে গরক হয়ে যায়। আর পিছনের যে হাতটি দেখছেন, তাতে ছুরি রয়েছে, রক্ত ঝরছে, আমি সেই হাতটি দিয়ে তাকে দুনিয়ায় মোহগ্রস্ত করে হত্যা করে ফেলি অর্থাৎ দুনিয়ার মোহের মধ্যে রেখে তাকে মৃত্যু পর্যন্ত পৌঁছে দেই। ফলে দুনিয়ার মোহ নিয়ে সে মৃত্যুবরণ করে জাহান্নামে চলে যায়। নাঊযুবিল্লাহ!
কাজেই, দুনিয়ার মুহব্বতে গরক না হয়ে মহান আল্লাহ পাক উনার মুহব্বতে গরক হয়ে যেতে হবে; তবেই বান্দা-বান্দীর জন্য নাজাত ও কামিয়াবী রয়েছে। অথচ দেখা যায়, দুনিয়াতে মানুষ এমনভাবে গরক হয়ে যায়, তার ব্যস্ততার শেষ থাকে না, তার অনেক কাজ, কোন সময়ই সে পায় না, সে ওযূ-গোসল করার সময় পায় না, নামায-কালাম, যিকির-ফিকির করার সময় পায় না। এমনকি সে খাওয়া-দাওয়া করারও সময় পায় না। কিন্তু সে যখন মৃত্যুবরণ করে তখন তার যত দায়িত্ব ছিল সমস্ত দায়িত্ব থেকে ঠিকই সে অবসর পেয়ে যায়। আর তার দায়িত্ব বা কাজগুলো কিন্তু কোনটিই আটকে থাকে না। বরং তার অনুপস্থিতিতে ক্ষেত্র বিশেষে আরো উত্তমভাবে কাজগুলো পরিচালিত বা সমাধা হয়ে থাকে। তাহলে দুনিয়ার মুহব্বতে গরক হয়ে যাওয়ার কি মানে থাকতে পারে?
কিতাবে উল্লেখ রয়েছে-
جگہ جی لگانے دنیا نھیں +یہ عبرت کی جاھےتماشہ نھیں.
অর্থাৎ দুনিয়া অন্তর লাগানোর জায়গা নয়, দুনিয়া হচ্ছে ইবরত-নছীহত গ্রহণ করার জায়গা। খেল-তামাশা, ক্রীড়া-কৌতুক করে সময় অতিবাহিত করার জায়গা দুনিয়া নয়। বরং এখানে মহান আল্লাহ পাক এবং উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের মুহব্বত-মা’রিফাত, সন্তুষ্টি-রেযামন্দী অর্জন করার জন্য কোশেশ করে যেতে হবে।
অতএব, দুনিয়ার মুহব্বত অন্তর থেকে দূর করে দিতে হবে। আর দুনিয়ার মুহব্বত অন্তর থেকে দূর করতে হলে মহান আল্লাহ পাক উনার মুহব্বত অন্তরে প্রবেশ করাতে হবে। যখন মহান আল্লাহ পাক উনার মুহব্বত অন্তরে প্রবেশ করবে তখন দুনিয়ার মুহব্বত আপসে আপ অন্তর থেকে দূর হয়ে যাবে।
মহান আল্লাহ পাক উনার মুহব্বত হাছিল করতে হলে, অন্তরে পয়দা করতে হলে যাঁরা আল্লাহওয়ালা উনাদের ছোহবতে যেতে হবে। কেননা মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
يَا اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا اتَّقُوا اللهَ وَكُوْنُوْا مَعَ الصَّادِقِيْنَ ◌
অর্থ : হে ঈমানদারগণ! মহান আল্লাহ পাক উনাকে তোমরা ভয় করো এবং ছাদিক্বীন বা আল্লাহওয়ালা উনাদের তোমরা সঙ্গী হয়ে যাও। (পবিত্র সূরা তওবা : আয়াত শরীফ ১১৯)
পবিত্র আয়াত শরীফ উনার ব্যাখ্যায় পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা আরজ করলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমাদের মধ্যে উত্তম সঙ্গী কে? অর্থাৎ আমরা কার ছোহবত ইখতিয়ার করবো? নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন-
من ذكركم الله رؤيته وزاد فى علمكم منطقه وذكركم بالاخرة عمله
অর্থ : যাঁকে দেখলে মহান আল্লাহ পাক উনার কথা স্মরণ হয়, যাঁর কথা বা নছীহত শুনলে দ্বীনি ইল্ম বৃদ্ধি হয় এবং যার আমল দেখলে পরকালের আমল করার জন্য আগ্রহ পয়দা হয়।
বলার অপেক্ষা রাখে না, বর্তমানে এসব গুণাবলীর পরিপূর্ণ মিছদাক্ব হলেন যামানার লক্ষ্যস্থল ওলীআল্লাহ, মুজাদ্দিদ আ’যম, আখাচ্ছুল খাছ আহলে বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, সাইয়্যিদুনা ইমাম রাজারবাগ শরীফ উনার হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম তিনি। সুবহানাল্লাহ! (সংকলিত)
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নূরে মুজাসসাম এবং উনার নূর মুবারকই সর্বপ্রথম সৃষ্টি
১১ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পবিত্র ক্বাবলাল জুমুআহ্, বা’দাল জুমুআহ্ এবং সুন্নাতুল ওয়াক্ত নামায উনার শরঈ আহকাম (১)
১১ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
প্রাণীর ছবি তোলা শক্ত হারাম, রয়েছে কঠিন শাস্তি
১১ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১১ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
ক্বমীছ বা জামা নিছফে সাক্ব পর্যন্ত প্রলম্বিত হওয়া সম্মানিত সুন্নত মুবারক
১১ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পবিত্র কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফ উনাদের আলোকে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র দু‘আ বা মুনাজাত (৮ম অংশ)
১১ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
হযরত ছাহাবায়ে কিরামগণ উনাদের মর্যাদা উম্মতের মাঝে সর্বোচ্চ ও সর্বোত্তম স্থানে
১০ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের বেমেছাল ফযীলত মুবারক (১ম পর্ব)
১০ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
পর্দা সর্বপ্রকার বিপদ-আপদ থেকে হিফাজত হওয়ার মাধ্যম
১০ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১০ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
কদমবুছী করা খাছ সুন্নত মুবারক
১০ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সম্মানিত জিহাদ মুসলমানদের একটি বিশেষ ফরয ইবাদত
০৯ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার)












