ঘটনা থেকে শিক্ষা
দুনিয়ার হাক্বীক্বী ছূরত!
, ১৯ রবীউল আউওয়াল শরীফ, ১৪৪৭ হিজরী সন, ১৫ রবি’, ১৩৯৩ শামসী সন , ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ খ্রি:, ২৮ ভাদ্র, ১৪৩২ ফসলী সন, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
মহান আল্লাহ পাক উনার নবী, জলীলুল ক্বদর রসূল, যিনি উলুল আযম মিনার রসূল, হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম তিনি বর্ণনা করেছেন যে, একস্থানে তিনি একবার রাস্তা দিয়ে কোথাও হেঁটে যাচ্ছিলেন, হঠাৎ দেখলেন তিনি দুনিয়াকে। তার ছূরত হচ্ছে- মহিলার ছূরত। তার প্রতি লক্ষ্য করে দেখলেন যে, তার একটা হাত সামনে, একটা হাত পিছনে। সামনেরটা খুব রঙ্গীন, চাকচিক্যময়। তিনি দুনিয়াকে দেখে জিজ্ঞেস করলেন, “হে দুনিয়া! তোমার এই ছূরত কেন? তোমার একটা হাত সামনে, একটা হাত পিছনে। তোমার পিছনের হাতটা আমাকে দেখাও। ” যখন মহান আল্লাহ পাক উনার নবী হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম তিনি বললেন একথা, তখন সে পিছনের হাতটা দেখালো। দেখা গেলো তার পিছনের হাতের মধ্যে একটা ছুরি, তা থেকে রক্ত ঝরছে। তিনি তাকে বললেন, এটার কি হাক্বীক্বত রয়েছে?
দুনিয়া বললো, হে মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম! মূলতঃ আমার সামনে যে হাতটা আপনি দেখছেন রঙ্গীন, চাকচিক্যময়, এটা দিয়ে আমি মানুষকে ভুলিয়ে ফেলি, ধোঁকা দেই। আর মানুষ এই রঙ্গীন-চাকচিক্যময় এসব দেখে দুনিয়ার মোহে মোহগ্রস্ত হয়ে তারা দুনিয়াতে গরক হয়ে যায়। আর আমার পিছনের যে হাতটা দেখছেন, তাতে ছুরি রয়েছে, রক্ত ঝরছে, আমি সেই হাতটা দিয়ে দুনিয়ায় তাকে মোহগ্রস্ত করে হত্যা করে ফেলি। দুনিয়ার মোহের মধ্যে রেখে তার মৃত্যু পর্যন্ত পৌঁছিয়ে দেই। সেই রক্তই আমার এই ছুরি থেকে ঝরছে। সেই বান্দারা দুনিয়ার মোহে মোহগ্রস্ত হয়ে যায় এবং সে অবস্থায় সে ইন্তেকাল করে। যার ফলশ্রুতিতে সে জান্নাতে না গিয়ে জাহান্নামে যায়।
মূলত দুনিয়া সেটাই চায়। দুনিয়া মানুষকে মোহগ্রস্ত করে মহান আল্লাহ পাক উনার থেকে গাফেল করে দিয়ে গায়রুল্লাহর মধ্যে মশগুল করে মৃত্যু পর্যন্ত পৌঁছিয়ে দেয়। যার ফলশ্রুতিতে সেই বান্দা, সেই ব্যক্তি নাজাত না পেয়ে জাহান্নামে গিয়ে পৌঁছে। প্রত্যেক ব্যক্তিকে সেটা মনে রাখতে হবে যে, দুনিয়ার মুহব্বত থেকে দূরে থাকাই হচ্ছে মহান আল্লাহ পাক উনার মুহব্বতে গরক থাকা, সেটাই তার জন্য কামিয়াবী। কারণ ইচ্ছায় হোক, অনিচ্ছায় হোক, জানতে হোক, অজান্তে হোক, খেয়ালে হোক, বেখেয়ালে হোক আমরা যেহেতু জমিনে বসবাস করি, সেহেতু জমিনের একটা তাছীর আমাদের মধ্যে পড়বেই। সেই তাছীর থেকে বেঁচে থাকা কঠিন এবং দূরূহ ব্যাপার। সেই তাছীর থেকে বেঁচে থাকার জন্য, মহান আল্লাহ পাক উনার মতে মত হওয়ার জন্য, মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পথে পথ হওয়ার জন্য যতটুকু সম্ভব আমাদেরকে কোশেশ করে যেতে হবে।
কারণ একটা লোক যতদিন সে হায়াতে থাকে, তার মৃত্যু পর্যন্ত অনেক ব্যস্ততা, অনেক কাজ, কোন সময় নেই, এমনকি খাওয়ারও সময় নেই। ওযু-গোসলের সময় পাওয়া যায় না, নামাজের সময় পাওয়া যায় না, অনেক কাজের সময় পাওয়া যায় না। এত ব্যস্ততা রয়েছে। কিন্তু এই লোকটাই যখন মৃত্যুবরণ করে, তখন তার যত দায়িত্ব ছিলো, সকল দায়িত্ব থেকে সে অবসর পেয়ে যায়। সে দায়িত্বগুলি কিন্তু আটকে থাকে না। তার অনুপস্থিতিতে ক্ষেত্র বিশেষে তার চেয়ে আরো উত্তমভাবে কাজগুলি পরিচালিত হয়ে থাকে। সমাধা হয়ে থাকে। তাতে বুঝা যায়, তার অভাবে কাজের জন্য কোন অসুবিধা হবে না। সে যদি দুনিয়ায় থাকতেই সময় করে নিতো- তার নামাযে, তার কালামে, তার জিকিরে, তার ফিকিরে, তার ইবাদত, তার বন্দেগীর, তার মহান আল্লাহ পাক উনার মতে মত হওয়ার জন্য, মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পথে পথ হওয়ার জন্য, তাতে কোন অসুবিধা হতো না। কিন্তু সে মনে করে আমি ব্যতীত এটা সম্ভব নয় এবং আসলেও। মহান আল্লাহ পাক তিনি বলেছেন পবিত্র হাদীছে কুদসী শরীফ উনার মধ্যে-
اَنَا عِنْدَ ظَنِّ عَبْدِىْ بِىْ.
“বান্দা আমাকে যেমন ধারণা করে, আমি তার সাথে তদ্রুপ ব্যবহার করে থাকি। ”
যেহেতু সে ধারণা করেছে, সেহেতু মহান আল্লাহ পাক তিনি তাকে ঐ অবস্থায় রাখেন। সে ব্যতীত সেই কাজটা সমাধা হয় না এবং যার ফলশ্রুতিতে সে পর্যায়ক্রমে দুনিয়ায় মোহগ্রস্থ হয়ে দুনিয়াদার হয়ে দুনিয়া থেকে বিদায় নেয়। নাঊযুবিল্লাহ!
-০-
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে সালাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু (৩)
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
পবিত্র হাদীছ শরীফে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ইসলামী শরীয়ত মুতাবিক- ছবি তোলা হারাম
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র হাদীছ শরীফে ইরশাদ মুবারক করেন-
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে সালাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু (২)
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
যাকাত সম্পর্কিত আহকাম, মাসায়িল ও ফাযায়িল (২)
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পর্দা পালন করা পুরুষ-মহিলা সবার জন্য ফরজ
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
যিনি খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে মুহব্বত মুবারক করা সমস্ত জিন-ইনসান, তামাম কায়িনাতবাসীর জন্য ফরযে আইন
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের আলোকে ছিরাতুল মুস্তাক্বীম উনার ছহীহ তাফসীর- ০১
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার)












