হিলাল
নতুন চাঁদ তালাশের গুরুত্ব ও শরয়ী তরতীব (৩)
, ১৭ মুহররমুল হারাম শরীফ, ১৪৪৭ হিজরী সন, ১৪ ছানী, ১৩৯৩ শামসী সন , ১৩ জুলাই, ২০২৫ খ্রি:, ২৯ আষাঢ়, ১৪৩২ ফসলী সন, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) আন্তর্জাতিক মাজলিসু রুইয়াতিল হিলাল
যখন উদয়স্থলের পার্থক্য গ্রহণযোগ্য: স্বপক্ষে হাদীছ শরীফ:
নিজ নিজ অঞ্চলে বা দেশে চাঁদ দেখে মাস শুরু করার পক্ষে নীচে হাদীছ শরীফ উনার দলীল দেয়া হলো-
হযরত কুরাইব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে শাম দেশে (বর্তমানে সিরিয়া) হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার নিকট কোন প্রয়োজনে প্রেরণ করা হলো। তিনি বললেন, “অতঃপর আমি আমার প্রয়োজন সমাধা করলাম এবং আমি শাম দেশে থাকা অবস্থায় পবিত্র রমাদ্বান শরীফ উনার চাঁদ উদিত হয়। আমি জুমুয়ার (বৃহস্পতিবার দিবাগত) রাতে চাঁদ দেখলাম। অতঃপর পবিত্র রমাদ্বান শরীফ মাস উনার শেষ দিকে পবিত্র মদীনা শরীফ আসলাম। তখন হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি আমাকে পবিত্র রমাদ্বান শরীফ মাস উনার চাঁদ সম্পর্কে প্রশ্ন করলেন যে আমরা শামে কখন চাঁদ দেখেছি। তখন আমি বললাম, আমরা চাঁদ দেখেছি জুমুয়ার রাতে। তখন তিনি আবার প্রশ্ন করলেন, আপনি কি চাঁদ দেখেছেন? আমি বললাম হ্যাঁ; আমি চাঁদ দেখেছি। মানুষেরাও চাঁদ দেখেছে এবং রোযা রেখেছে। হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনিও রোযা রেখেছেন।
অতঃপর হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেন, কিন্তু আমরাতো চাঁদ দেখেছি শনিবার রাতে (জুমুয়াবার সন্ধ্যায়)। অতএব আমরা ৩০ দিন পূর্ণ হওয়া পর্যন্ত অথবা শাওওয়ালের চাঁদ দেখা পর্যন্ত রোযা রাখবো। তখন আমি (কুরাইব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু) বললাম, হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার চাঁদ দেখা ও উনার রোযা রাখা আপনার জন্য যথেষ্ট নয়? হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেন, না; আমাদেরকে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এমনই নির্দেশ মুবারক করেছেন।
এখান থেকে আমরা পাই-
এক দেশের দেখা অন্য দেশে গ্রহণযোগ্য হয়নি।
এক দেশ বা অঞ্চল থেকে অন্য দেশের বা অঞ্চলের দূরত্ব ছিলো প্রায় ১ মাসের রাস্তা। ৫৪০ মাইলের অনেক অনেক বেশী
দেখার পার্থক্য ছিলো ১ দিন।
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার নির্দেশ মুবারক ছিলো চাঁদ দেখে মাস শুরু করা।
চাঁদ বিষয়ে আমাদের যা জানা জরুরী:
১) অমাবস্যা কি? অমাবস্যায় কি চাঁদ দেখা যায়?
নিচের ছবিটি দেখুন। ছবিতে চাঁদ মাঝে। পৃথিবী তার ডানে এবং সূর্য চাঁদের বামে। চাঁদ এখন সূর্য ও পৃথিবীর মাঝে অবস্থান করছে।
চাঁদের যে অংশ সূর্যের দিকে সেখানে সূর্যের আলো পড়াতে সেই অর্ধেক অংশ আলোকিত। কিন্তু পৃথিবীর দিকের অংশ অন্ধকার। এ সময় পৃথিবী থেকে চাঁদের অন্ধকার অংশ দেখা যায় না। এ অবস্থাকেই বলে অমাবস্যা।
২) নিউ মুন নয় জিরো মুন
৩) চাঁদের যে ইলম সংক্ষেপে আমাদের জানা প্রয়োজন।
নিউ মুন (New Moon) নয় জিরো মুন (Zero Moon)
নিউ মুন অর্থ নতুন চাঁদ অথচ এ চাঁদ দৃশ্যমান হয় না। তাকে অমাবস্যা বলে। জিরো মুন অর্থ চাঁদের বয়স ০ ঘণ্টা ০ মিনিট। তারপর একটি নির্দিষ্ট বয়সে পৌঁছলে চাঁদ দৃশ্যমান হয়।
Crescent Moon বা বাঁকা চাঁদ: New Moon এরপর চাঁদ যখন দেখা যাওয়ার আকৃতিতে আকাশে উদয় হয় তখন তাকে ইংরেজীতে Crescent Moon এবং বাংলায় বাঁকা চাঁদ বলে। হিলাল বা বাঁকা চাঁদ কোন চন্দ্রমাস ২৯ দিন পূর্ণ হবার পর পশ্চিম আকাশে প্রথম দেখা যায় অথবা চন্দ্রমাস ৩০ দিন পূর্ণ হবার পর দেখা যায়।
বাঁকা চাঁদ বা হিলাল দেখার শর্তসমূহ কি কি?
চাঁদের বয়স: যখন অমাবস্যা সংঘটিত হয় তখন চাঁদের বয়স হয় শূন্য মিনিট। অমাবস্যার পর থেকেই চাঁদের বয়স বাড়তে থাকে এবং এক সময় দিগন্তরেখায় আমরা চাঁদকে দেখতে পাই। তাহলে চাঁদের সে বয়সটা কত? এখান থেকে আমরা একটা বিষয় নিশ্চিত যে ২৪ ঘন্টা বা ১ দিনের কম চাঁদের বয়স ঠিক কত হলে চাঁদ আকাশে প্রথম দেখা যাবে তা বলা মুশকিল। সাধারণভাবে চাঁদ দেখতে পাওয়ার সর্বনিম্ন বয়স ১৭ ঘণ্টা এবং সর্বোচ্চ ২৩/২৪ ঘণ্টা। আর সে কারণেই চাঁদ দেখতে পাবার জন্যে অন্যান্য অনেক শর্তসমূহের মধ্যে চাঁদের বয়স মাত্র একটি শর্ত।
চন্দ্র-সূর্যের কৌণিক দূরত্ব: অমাবস্যার সময় চাঁদ-সূর্যের কৌণিক ব্যবধান শুন্য ডিগ্রি। অমাবস্যার সময় চাঁদ যত সরে আসতে থাকে সূর্যের সাথে তার কৌণিক ব্যবধানও বাড়তে থাকে। বর্তমানে বায়ুমন্ডলের দূষণ, আলোর দূষণ এবং ধূলাবালির কারণে চাঁদ সূর্য থেকে ৯-১২ ডিগ্রী পর্যন্ত সরে আসলে তারপর চাঁদ দৃশ্যমান হয়। এই পরিমাণ কোণ তৈরী করতে চাঁদের লাগে প্রায় ১৭ থেকে ২৩ ঘণ্টা।
চাঁদের উচ্চতা: আমরা যখন খোলা মাঠের দিকে তাকাই, যেখানে আকাশটা যমীনের সাথে মিশে গেছে বলে মনে হয়, সে স্থানটিকে দিগন্তরেখা বা উদয় রেখা বলে। সাধারণত; যে চাঁদ সূর্যাস্তের সময় দৃশ্যমান হবে, সেই চাঁদকে ১০ ডিগ্রী উচ্চতায় বা তার চেয়েও অধিক উচ্চতায় অবস্থান করতে হয়। সূর্যাস্তের সময় চাঁদ দিগন্তরেখার উপর ১০ ডিগ্রীর উপর অবস্থান করলে ধীরে ধীরে চাঁদ নীচের দিকে নামতে থাকে এবং কেবলমাত্র ভূমি থেকে ৪-৫ ডিগ্রী উপরে থাকে তখন ২৯ দিনের চাঁদকে দেখা যায়।
চাঁদ ও সূর্যের অস্ত যাওয়ার সময়ের পার্থক্য: চন্দ্র ও সূর্যের অস্ত যাওয়ার সময়ের পার্থক্য হয় যদি ৪০ মিনিট তবে প্রথম ১০ মিনিট এবং শেষ ১০ মিনিট চাঁদ দেখা যায় না। মাঝের ২০ মিনিটের মধ্যে শেষ ১০ মিনিটের মধ্যে চাঁদ দেখার সম্ভাবনা থাকে। সুতরাং যখন চন্দ্রাস্ত এবং সূর্যাস্তের সময়ের পার্থক্য ৪০ থেকে ৪২ মিনিটের মধ্যে হয় তবে সময়কে ৪ ভাগ করে তৃতীয় ভাগে চাঁদ খোঁজার জন্য সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে। সুতরাং শেষ সময়ের দিকে চাঁদ দেখার জন্য সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে।
☀ বাঁকা চাঁদ দেখার জন্য সাধারণত ১৫-৩৫ মিনিট ধৈর্য ধরতে হয়।
☀ একবার দেখে ফেলে চোখ সরিয়ে নিয়ে আবার তা দেখতে হবে।
☀ সব সময় না হলেও সচরাচর ২৯ দিনের চাঁদ হয় চিকন এবং অবস্থান করে দিগন্ত রেখার খুব কাছে এবং
☀ ৩০ দিনের পুরনো চাঁদ হয় তুলনায় বড় এবং অবস্থান করে উচ্চাকাশে।
-আল হিলাল।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
পবিত্র জুমাদাল ঊলা শরীফ মাস উনার চাঁদ দেখা যায়নি
২৩ অক্টোবর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
আজ পবিত্র জুমাদাল ঊলা শরীফ মাস উনার চাঁদ তালাশ বিষয়ে মাজলিসু রুইয়াতিল হিলাল উনার সভা
২২ অক্টোবর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সাইয়্যিদুশ শুহূর, শাহরুল আ’যম, মহাসম্মানিত রবীউল আউওয়াল শরীফ মাস উনার চাঁদ দেখা যায়নি
২৫ আগস্ট, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
আজ সাইয়্যিদুশ শুহূর, শাহরুল আ’যম শরীফ মাস উনার চাঁদ তালাশ বিষয়ে ‘মাজলিসু রুইয়াতিল হিলাল’ উনার সভা
২৪ আগস্ট, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
নতুন চাঁদ তালাশের গুরুত্ব ও শরয়ী তরতীব (৪)
২০ জুলাই, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
নতুন চাঁদ তালাশের গুরুত্ব ও শরয়ী তরতীব (২)
২৯ জুন, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
‘মাজলিসু রুইয়াতিল হিলাল মজলিস’ সংবাদ: পবিত্র মুহররমুল হারাম শরীফ উনার চাঁদ দেখা গেছে
২৭ জুন, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
আজ মুহররমুল হারাম শরীফ উনার চাঁদ তালাশ বিষয়ে ‘মাজলিসু রুইয়াতিল হিলাল’ উনার সভা
২৬ জুন, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
এ বছরেও (১৪৪৬ হিজরী) পবিত্র হজ্জ বাতিল হতে যাচ্ছে
৩১ মে, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
পবিত্র রবীউছ ছানী মাস উনার চাঁদ দেখা যায়নি
০৪ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
চাঁদ এবং ইসলামী মাস নির্ধারণে সউদী ওহাবী ইহুদীদের ষড়যন্ত্র চক্রান্ত (১৫)
০৭ মার্চ, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
খোদ সউদী গণমাধ্যমেই চাঁদ নিয়ে ষড়যন্ত্রের তথ্য উপস্থাপন
২৩ নভেম্বর, ২০২২ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার)












