শিশুদের জন্য নছীহত মুবারক! (২৯)
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুহব্বতে বেমেছাল মেহমানদারী
, ১৯ ফেব্রুয়ারী, ২০২৩ ১২:০০:০০ এএম ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) মহিলাদের পাতা
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্নাবিয়্যিন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত দরবার শরীফ উনার মধ্যে কেউ মেহমান এলে, হযরত ছাহাবায়ে ক্বিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা ভাগাভাগি করে আপ্যায়নের জন্য উনাদেরকে নিয়ে যেতেন। একদিন একজন মেহমান এলে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত ছাহাবায়ে ক্বিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে বললেন, এক রাতের জন্য কে এই মেহমানের মেহমানদারি করতে পারে?
এক আনছার ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি দাঁড়িয়ে বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমি উনার মেহমানদারির ব্যবস্থা করব।
যেসব ছাহাবায়ে ক্বিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সঙ্গে পবিত্র মক্কা শরীফ থেকে পবিত্র মদিনা শরীফ উনার মধ্যে হিজরত করে গিয়েছিলেন, উনাদেরকে বলা হয় মুহাজির ছাহাবী। আর এই মুহাজির ছাহাবায়ে ক্বিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে পবিত্র মদিনা শরীফ উনার যেসব ছাহাবায়ে ক্বিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম বিভিন্নভাবে সাহায্য করেছিলেন, উনাদেরকে বলা হয় আনছার ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম।
এরপর ওই আনছার ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি উনাকে নিজ ঘরে গিয়ে গেলেন। উনার আহলিয়া বা স্ত্রীকে বললেন, তিনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মেহমান। উনার সেবা-যতেœর যেন কোনো ত্রুটি না হয়।
আহলিয়া বললেন, মহান আল্লাহ পাক উনার কসম! বাচ্চাদের জন্য সামান্য কিছু ছাড়া ঘরে আর কোনো খাবার নেই।
আনছার ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেন- আচ্ছা, ছেলে-মেয়েদেরকে সান্ত¡না দিয়ে আপনি ঘুম পাড়িয়ে দিন। এরপর আমি যখন মেহমানকে নিয়ে খেতে বসব, আপনি বাতি ঠিক করার বাহানা করে ওটা নিভিয়ে দিবেন। আমরা খাওয়ার ভান করে শুধু মুখ নাড়াব। আর মেহমানকে পেট ভরে খাওয়াব।
আহাল বা স্বামীর উপদেশ মতো আহলিয়া তাই করলেন। সেই রাতটি আহাল-আহলিয়া, ছেলে-মেয়ে সবাই না খেয়ে কাটিয়ে দিলেন। শুধু মেহমানকেই যতœ করে খাওয়ালেন।
ফজরের নামাজ পড়ার জন্য উনারা মসজিদে এলে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আনছার ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে বললেন, আপনি মেহমানের সঙ্গে গত রাতে যে ব্যবহার করেছেন, সে সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক তিনি এই পবিত্র আয়াত শরীফ নাযিল করেছেন, ‘উনারা অপরের চাহিদাকে নিজেদের চেয়ে বড় করে দেখেন, যদিও উনারা অসহ্য ক্ষুধার জ্বালা সহ্য করেন।’
মুবারক নছীহত:
যে বেমেছাল মেহমানদারী নিয়ে মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র আয়াত শরীফ নাযিল করলেন, সেই মেহমান আসলে কার মেহমান ছিলেন, কে পাঠিয়েছেন কেন উনারা নিজে না খেয়ে ক্ষুধার জ্বালা সহ্য করলেন? মূলত হযরত ছাহাবায়ে ক্বিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা সবসময় সবকিছুর চেয়ে এমনকি উনাদের নিজের জানের চেয়েও নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সবচেয়ে বেশী মুহব্বত করতেন সেই বেমেছাল মুহব্বত মুবারকের কারণেই আলোচ্য আনছার ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার কাছে নিজ পরিবার পরিজনের ক্ষুধার জ্বালা কিছুই মনে হয়নি। আর উনার এমন বেমেছাল মুহব্বত মুবারকের কারণেই স্বয়ং মহান আল্লাহ পাক তিনি খুশি হয়ে পবিত্র আয়াত শরীফ নাযিল করেছেন।
গায়েবী মদদ
সাইয়্যিদুনা হযরত সাহাব ইবনে মিনজার রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, আমরা জিহাদ করতে আলা ইবনে হারজামি রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার সঙ্গে রওনা হলাম। আমরা ‘দারান’ নামক স্থানে পৌঁছে গেলাম। সামনে শত্রুদের দেখা যাচ্ছে। আমাদের ও শত্রুদের মাঝে একটি সাগর। সাগরের ওপাড়ে শত্রুরা। আমাদের কাছে সাগর পার হওয়ার মতো নৌকা নেই। তখন আলা ইবনে হারজামি রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু সাগরের পাড়ে দাঁড়িয়ে দোয়া করতে লাগলেন, ‘আয় বারে ইলাহী মহান আল্লাহ পাক! আপনি সব কিছু জানেন। আপনি মহাশক্তির অধিকারী। আপনি অতি মহান। আমি আপনার নগন্য বান্দা।
আমরা সাগরের এপাড়ে আটকা পড়ে আছি। আর সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার শত্রুরা ওপাড়ে অবস্থান করছে। সাগর পার হওয়ার মতো কোনো নৌকা বা জাহাজ আমাদের কাছে নেই। আয় মহান আল্লাহ পাক! তাদেরকে পরাজিত করে সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার পথে আনার জন্য তাদের কাছে যাওয়ার ব্যবস্থা করে দিন...।’
এই দোয়া করার পর তিনি আমাদেরকে সাগরে ঝাঁপ দেওয়ার নির্দেশ দিলেন। উনার নির্দেশে আমরা সাগরে ঝাঁপিয়ে পড়লাম। কিন্তু একি! সাগরের পানি আমাদের ঘোড়াগুলোর বুক সমানও নয়! আমরা নিরাপদে সাগর পার হয়ে শত্রুদের কাছে পৌঁছে গেলাম।
পারস্য সম্রাটের গভর্নর যখন এই দৃশ্য দেখল, তখন তাদের সেনাপতিকে বলল, আমরা কখনো এমন সাহসী মুজাহিদদের সঙ্গে যুদ্ধ করে পারব না। তাদের সঙ্গে কুলিয়ে ওঠার শক্তি আমাদের নেই। তখন তারা ভয় পেয়ে যুদ্ধ না করেই পালিয়ে গেল। সুবহানাল্লাহ!
মুবারক নছীহত:
মহান আল্লাহ পাক উনার আদেশ নির্দেশ মুবারক উনার প্রতি দৃঢ় ইস্তিকামত থাকতে পারলে মহান আল্লাহ পাক তিনি গায়েবী মদদ করেন। যেকোন পরিস্থিতিতে মহান আল্লাহ পাক তিনি শত্রুর উপর বিজয় দান করেন। সুবহানাল্লাহ!
-উম্মু মুদ্দাসসির
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব-কর্তব্য
২৩ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পাহাড়ে উপজাতি সন্ত্রাসবাদ : জেএসএস (১)
২২ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা সব কিছুতেই রয়েছে পর্দার গুরুত্ব
২১ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সুন্নতী খাবার পরিচিতি
২০ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
শিশুর ওজন বৃদ্ধি বা হ্রাসের যে বিষয়গুলো খেয়াল রাখবেন
১৯ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
মহিলাদের জামায়াতের জন্য মসজিদে ও ঈদগাহে যাওয়া হারাম ও কুফরী (৪)
১৮ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের বেমেছাল দানশীলতা মুবারক (১০)
১৮ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
নিষিদ্ধ মহিলা জামায়াত নিয়ে ধর্মব্যবসায়ী উলামায়ে ছু’দের বিভ্রান্তিকর ও জিহালতী বক্তব্যের জবাব (২)
১৭ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব-কর্তব্য
১৬ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সর্বোচ্চ সম্মানিত ভাষায় সম্বোধন মুবারক করতে হবে
১৬ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সুলত্বানুল হিন্দ, গরীবে নেওয়াজ, হযরত খাজা ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি পবিত্র সুন্নত যিন্দাকারী অর্থাৎ মুহ্ইউস সুন্নাহ
১৫ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সুন্নতী খাবার পরিচিতি
১৩ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার)