পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব-কর্তব্য
(রাজারবাগ শরীফ উনার সম্মানিত মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার ওয়াজ শরীফ থেকে সংকলিত)
, ২৬ জুমাদাল ঊখরা শরীফ, ১৪৪৭ হিজরী সন, ১৯ সাবি’, ১৩৯৩ শামসী সন , ১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রি:, ০৩ পৌষ অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ ফসলী সন, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) মহিলাদের পাতা
(ধারাবাহিক)
সন্তানের হক্ব যে কত? সন্তান যদি পিতা মাতার সহিত সদ্ব্যবহার করে, তবে মহান আল্লাহ পাক তিনি তার জাযা-খায়ের যে কতটুকু দান করেন, এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফে উল্লেখ করা হয়-
عَنْ حَضْرَتْ أَبِى سَعِيدٍ الْخُدْرِىِّ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ: أَنَّ رَجُلاً هَاجَرَ إِلَى رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِنَ الْيَمَنِ فَقَالَ: هَلْ لَكَ أَحَدٌ بِالْيَمَنِ. قَالَ: أَبَوَاىَ. قَالَ: أَذِنَا لَكَ. قَالَ: لاَ.قَالَ: اِرْجِعْ إِلَيْهِمَا فَاسْتَأْذِنْهُمَا فَإِنْ أَذِنَا لَكَ فَجَاهِدْ وَإِلاَّ فَبِرَّهُمَا
অর্থ : হযরত আবু সাঈদ খুদরী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, এক ব্যক্তি ইয়েমেন থেকে হিজরত করে আসলেন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কাছে। আসার পর
فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: هَلْ لَكَ أَحَدٌ بِالْيَمَنِ
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনাকে বললেন, ‘ইয়েমেনে কি আপনার জন্য কেউ রয়েছেন? অর্থাৎ আপনি যে হিজরত করে এলেন, সেখানে আপনার কে রয়েছেন?
قَالَ: أَبَوَاىَ.
তিনি বললেন, ‘আমার পিতা-মাতা সেখানে রয়েছেন।’
যখন সে ব্যক্তি এ কথা বললেন, তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন-
أَذِنَا لَكَ.
‘আপনার কি অনুমতি রয়েছে? আপনার কি অনুমতি রয়েছে আপনার পিতা-মাতার তরফ থেকে?’
قَالَ: لاَ.قَالَ: اِرْجِعْ إِلَيْهِمَا فَاسْتَأْذِنْهُمَا فَإِنْ أَذِنَا لَكَ فَجَاهِدْ وَإِلاَّ فَبِرَّهُمَا
সে ব্যক্তি বললেন, ‘আমার মাতা-পিতার তো অনুমতি আমি নেইনি।’
তাহলে অনুমতি যদি না নিয়ে থাকেন আপনি ফিরে যান,
اِرْجِعْ إِلَيْهِمَا فَاسْتَأْذِنْهُمَا فَإِنْ أَذِنَا لَكَ فَجَاهِدْ وَإِلاَّ فَبِرَّهُمَا
আপনি ফিরে যান পিতা-মাতার কাছে। যদি উনারা আপনাকে অনুমতি দেন তাহলে আপনি জিহাদে আসবেন, হিজরত করবেন অন্যথায় আপনি আপনার পিতা-মাতার সহিত সদ্ব্যবহার করবেন, তাতে মহান আল্লাহ পাক তিনি আপনাকে জাযা-খায়ের দান করবেন।
‘যেহেতু সে ব্যক্তি ছাড়া উনার পিতা-মাতার খেদমত করার মত আর কোন লোক ছিল না।’ আপনার অনুপস্থিতিতে আপনার পিতা-মাতা সদ্ব্যবহার পাওয়ার মতো অর্থাৎ খেদমত পাওয়ার মতো আর কোন লোক নেই। কাজেই আপনি হিজরত না করে, এখানে না এসে, আপনি আপনার পিতা-মাতার খেদমতে চলে যান। সেখানে মহান আল্লাহ পাক আপনাকে জাযা-খায়ের দান করবেন।’
কাজেই প্রত্যেক সন্তানের দায়িত্ব তার পিতা-মাতার প্রতি সদ্ব্যবহার করা। যেটা ইহ্সান সেটা তাকে অবশ্যই করতে হবে। যতটুকু তার দায়িত্ব রয়েছে ঠিক ততটুকু সে করবে। যদি কেউ তার পিতা-মাতার সহিত সদ্ব্যবহার না করে; তার জন্য কঠিন শাস্তি, কঠিন পরিণতিও রয়েছে।
যেটা হাদীছ শরীফে রয়েছে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন-
عَنْ حَضْرَتْ أَبِي بَكْرَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
অর্থ: হযরত আবু বাকরাহ্ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, উনার থেকে দু’টা হাদীছ শরীফ রেওয়ায়েত রয়েছে, একটা বায়হাক্বী শরীফে, একটা মুসতাদরাকে হাকেমের মধ্যে। দু’টার মধ্যে কিছু ব্যতিক্রম রয়েছে। সেটা হচ্ছে যে, মহান আল্লাহ পাক তিনি ঐ সমস্ত সন্তানদেরকে অর্থাৎ যারা পিতা-মাতার সহিত সদ্ব্যবহার করে না, তাদের সহিত অসদাচরণ করার কারণে, পিতা-মাতার সহিত খারাপ ব্যবহার করার কারণে বা পিতা-মাতাকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করার কারণে অথবা খাওয়া-পরার জরুরত থাকলে, খাওয়া-পরা না দেয়ার কারণে তাদেরকে যে শাস্তি দিবেন সে শাস্তিটা কিছু তার জমিনে হবে অর্থাৎ কিছু তার দুনিয়াতে বা হায়াতে হবে আর কিছুটা তার পরকালে হবে।
যেটা হাদীছ শরীফে উল্লেখ করা হয়েছে-
كُلُّ الذُّنُوبِ يُؤَخِّرُ اللهُ مَا شَاءَ مِنْهَا إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ إِلاَّ عُقُوقَ الْوَالِدَيْنِ
প্রত্যেক গুণাহ যা সন্তান বা মানুষ করে থাকে, সে গুণাহ্র শাস্তি দানে মহান আল্লাহ পাক তিনি দেরী করবেন না।
مَا شَاءَ مِنْهَا
অর্থাৎ সে গুণাহ্ থেকে যেটা ইচ্ছা মহান আল্লাহ পাক তিনি সেটা ক্ষমা করবেন বা ছেড়ে দিবেন, আর যেটা মহান আল্লাহ পাক তিনি বিশেষ করে-
عُقُوقَ الْوَالِدَيْنِ
পিতা-মাতার হক্ব সেটার বদলা দানে ক্বিয়ামত পর্যন্ত তাকে সুযোগ দান করবেন না। অর্থাৎ ক্বিয়ামত পর্যন্ত দেরী হবে তাকে শাস্তি দেয়ার জন্য, সে রকম নয়।
عُقُوقَ الْوَالِدَيْنِ فَإِنَّ اللهَ تَعَالَى يُعَجِّلُهُ لِصَاحِبِهِ فِي الْحَيَاةِ قَبْلَ الْمَمَاتِ
কিন্তু পিতা-মাতার সহিত যে সে সদ্ব্যবহার করে নাই, অসদ্ব্যবহার করেছে, তার জন্য যে শাস্তিটা রয়েছে তা ক্বিয়ামত পর্যন্ত দেরী করা হবে তা নয়। বরং দেখা যায় তার হায়াতে, তার জিন্দেগীতে বা তার মৃত্যুর সাথে সাথে সেটা হচ্ছে।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
তিন ধরনের লোক বেহেশতে প্রবেশ করবে না
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
হযরত উম্মে সুরাইকা দাওসিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহা
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
মহাসম্মানিত মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনারা বেমেছাল ফযীলত মুবারকের অধিকারী
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সর্বক্ষেত্রে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে প্রাধান্য দিতে হবে
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সৃষ্টির শুরুতেই মহান আল্লাহ পাক উনার কুদরত মুবারক উনার মধ্যে ছিলেন, আছেন এবং অনন্তকাল থাকবেন
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
মহান আল্লাহ পাক তিনি তওবাকারীকে পছন্দ করেন (৩)
১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
ক্বলবী যিকির জারী না থাকলে শয়তানের ওয়াসওয়াসা থেকে বেঁচে থাকা সম্ভব নয়
১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
দোযখে বেপর্দা হওয়া নারীদের শাস্তির বর্ণনা (১০)
১৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
জামায়াতের জন্য মহিলাদের মসজিদে ও ঈদগাহে যাওয়া হারাম ও কুফরী (৪)
১৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সম্বোধন মুবারক করার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ আদব-শরাফত বজায় রাখতে হবে
১৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব-কর্তব্য
১১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
তিন ধরনের লোক বেহেশতে প্রবেশ করবে না
১১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার)












