পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের আলোকে সম্মানিত যাকাত উনার আহকাম, মাসায়িল ও ফাযায়িল
, ০৬ রবীউল আউওয়াল শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ২৪ রবি’ ১৩৯১ শামসী সন , ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ খ্রি:, ০৭ আশ্বিন, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
নিছাব পরিমাণ মাল অর্থাৎ ৫২.৫ তোলা রৌপ্য অথবা ৭.৫ তোলা স্বর্ণ অথবা তার সমমূল্যের টাকা যদি কোন ব্যক্তির নিকট এক বছর পূর্ণ মালিকানাধীন থাকে তাহলে তার উপর যাকাত ফরয হবে। তখন উক্ত ছাহেবে নিছাবকে তার টাকার শতকরা আড়াই টাকা যাকাত দেয়া ফরয।
আর যাকাত আদায়ের জন্যে শর্ত হচ্ছে যাকাতের মাল গরীব-মিসকীন বা দরিদ্রকে মালিক করে দেয়া। কিন্তু মালিক না করে যদি যাকাতের নিয়তে খেতে দেয়া হয়, তাতে যাকাত আদায় হবে না। কেননা তা মালিক করে দেয়া হয়নি শুধুমাত্র তা খেতে দেয়া হয়েছে।
উদাহরণস্বরূপ কোন পাওনাদার যদি তার ফরয যাকাত আদায়ের সময় এই নিয়ত করে যে, আমি ওমুক ব্যক্তির নিকট ৫০ হাজার টাকা পাওনা আছি সেখান থেকে তাকে যাকাত বাবদ মাফ করে দিলাম। এতে যাকাত কস্মিনকালেও আদায় হবে না।
দেনাদারের কাছে যে টাকা বাকী বা পাওনা আছে সেই টাকা যাকাত বাবদ কেটে দিলে যাকাত আদায় হবে না। তবে যে সকল দেনাদার দরিদ্র অর্থাৎ যাকাতের হক্বদার, তার কাছে যাকাতদাতা পাওনাদার। যাকাতের মাল থেকে যেই পরিমাণ টাকা পাওনা আছে সেই পরিমাণ টাকা তাকে মালিক করে দিয়ে বলবে যে, এ টাকা তুমি পাওনা বাবদ আমাকে ফিরিয়ে দাও। যেমন- কোন মালিকে নিছাব ব্যবসায়ীর কাছে কোন খরিদদার ১০ হাজার টাকা পরিশোধ করতে পারছে না। এখন উক্ত ব্যবসায়ী তার মালের যাকাত থেকে ১০ হাজার টাকা খরিদদারকে মালিক করে দিয়ে বলবে, আমি তোমার কাছে যেই ১০ হাজার টাকা পাওনা ছিলাম তা তুমি এ টাকা দ্বারা পরিশোধ করে দাও। এতে খরিদদারও দেনা থেকে মুক্তি পেল আর ব্যবসায়ীর যাকাতও আদায় হল এবং তার পাওনা টাকাও সে বুঝে পেল। আর দেনাদার যদি দরিদ্র না হয়, তাকে যাকাতের মালিক করে দিলে যাকাত আদায় হবেনা। এতে যাকাত দাতা ও গ্রহিতা উভয়ে গোনাহ্গার হয়ে যাবে। এ অবস্থায় যাকাতদাতাকে তার সঞ্চিত টাকা থেকেই যাকাতের টাকা অন্য দরিদ্রকে মালিক করার মাধ্যমে আদায় করতে হবে। আর যে টাকা দেনাদারের কাছে পাওনা আছে সেই পাওনা টাকা বা যে মাল কর্জ হিসাবে দেয়া হয়েছে, তার যাকাত কখন ফরয হয় এবং কখন, কিভাবে আদায় করতে হবে, সে সম্পর্কে তিনটি ছুরত বর্ণিত আছে-
১. دَيْنٌ قَوٖىٌّ (দাইনে ক্বউয়ী) অর্থাৎ শক্ত বা প্রথম নম্বরের ঋণ। যা ব্যবসার মালের মূল্য খরিদদারের কাছে পাওনা রয়েছে অথবা কর্জে হাসানা যা দেনাদারের কাছে পাওনা রয়েছে ইত্যদি প্রকার ঋণকে “দাইনে ক্বউয়ী” বলে। এই “দাইনে ক্বউয়ী” যদি নিছাব পরিমাণ হয় আর তা যদি দেনাদার ও করজদারের কাছে বছরব্যাপী পড়ে থাকে, এ অবস্থায় পাওনাদারের উপর যাকাত আদায় করা তখনই ফরয হবে যখন কমপক্ষে নিছাবের পঞ্চমাংশ টাকা তার হস্তগত হবে। তখন পূর্ববর্তী বছরের অর্থাৎ যখন থেকে যাকাত ফরয হয়েছে তখন থেকে হিসাব করে বর্তমান সময় পর্যন্ত এই এক পঞ্চমাংশেরই যাকাত আদায় করা পাওনাদারের উপর ফরয। এভাবে পর্যায়ক্রমে বাকী টাকারও যাকাত আদায় করবে।
২. دَيْنٌ مُتَوَسَّطٌ অর্থাৎ মধ্যম বা দ্বিতীয় নম্বরের ঋণ হলো ব্যবসাবিহীন মালের বদল। যথা খোরাকীর শস্য অথবা সওয়ারীর ঘোড়া বা খিদমতের গোলাম এবং অন্য কোন বস্তু যা তার আছলী হাজতের (প্রয়োজনের) অন্তর্ভুক্ত ইত্যাদি বিক্রি করলে তার মূল্য ক্রয়কারীর নিকট বাকি আছে, যা নিছাব পরিমাণ। এই অবস্থায় যাকাত দেয়া তখনই ফরয হবে, যখন নিছাব পরিমাণ টাকা হস্তগত হবে। তখন পুর্ববর্তী বছরের অর্থাৎ যখন থেকে যাকাত ফরয হয়েছে তখন থেকেই হিসাব করে বর্তমান সময় পর্যন্ত যাকাত দিতে হবে।
৩. دَيْنٌ ضَعِيْفٌ অর্থাৎ দুর্বল বা তৃতীয় নম্বরের ঋণ। যা মাল ছাড়া অন্য কোন বস্তুর পরিবর্তে হবে, যথা- আহলিয়ার মোহর, খোলার বদল অথবা ঘর বা দোকান যা ব্যবসার নিয়তে ক্রয় করেনি, উহার কেরায়া (ভাড়া) কেরায়াদারের নিকট বাকী রয়েছে। তা যদি নিছাব পরিমাণ হয় তহলে উক্ত টাকা হস্তগত হওয়ার পর থেকে বছর গণনা করতে হবে। অর্থাৎ হস্তগত হওয়ার পর এক বছর অতিবাহিত না হওয়া পর্যন্ত যাকাত ফরয হবেনা। (দুররুল মুখতার, রদ্দুল মুহতার, আলমগীরী, শামী, শরহে বেকায়া, কুদুরী, বাহরুর রায়েক, হেদায়া, আইনুল হেদায়া, এনায়া, ও কাজীখান ইত্যাদি)
আরেকটি বিধান হলো কোন ব্যক্তি কাউকে কোন কিছু কেনার জন্যে টাকা দিলো। টাকা গ্রহীতা যদি উক্ত বস্তু বা টাকা ফেরত দেয় উক্ত যাকাত আদায়ের নিয়ম নিম্নরূপ হবে-
উদাহরণস্বরূপ কোন ব্যক্তি টাকা গ্রহীতাকে একটি জমি ক্রয়ের জন্যে কিছু টাকা দিলো। এমতাবস্থায় বাসস্থানের উদ্দেশ্যে অথবা চাষাবাদ করার উদ্দেশ্যে যদি জমি কেনার জন্যে টাকা দিয়ে থাকে তাহলে সে টাকার যাকাত দিতে হবে না।
এখন, টাকা গ্রহীতা যদি জমি না দিয়ে টাকা ফেরত দেয়; আর সে টাকা যদি নিছাব পরিমাণ হয় এবং বছর পূর্ণ হয় তাহলে সে টাকারও যাকাত দিতে হবে। আর যদি ব্যবসার উদ্দেশ্যে জমি কেনার জন্যে টাকা দিয়ে থাকে তাহলে সে টাকার অবশ্যই যাকাত আদায় করতে হবে। জমিদাতা যদি জমি না দিয়ে টাকা আটকে রাখে তবে টাকা দাতা ইচ্ছা করলে তখনও যাকাত আদায় করতে পারে অথবা যখন জমি অথবা টাকা পাওয়া যাবে তখন যত বছর এ অবস্থায় অতিবাহিত হয়েছে ততো বছরেরই যাকাত অবশ্যই আদায় করতে পারবে।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
কাফির মুশরিকদের থেকে দূরে থাকতে এবং তাদেরকেও দূরে রাখার ব্যাপারে নির্দেশ মুবারক
২০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সম্মানিত ইসলামী শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে- ফুটবল-ক্রিকেটসহ সর্বপ্রকার খেলাধুলা করা, সমর্থন করা হারাম ও নাজায়িয (২)
২০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
যেখানে প্রাণীর ছবি থাকে, সেখানে রহমতের ফেরেশতা প্রবেশ করেন না
২০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের সম্মানিত ৩টি স্তর
২০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
আসমাউর রিজাল, জারাহ ওয়াত তা’দীল, উছুলে হাদীছ শরীফ উনার অপব্যাখ্যা করে অসংখ্য ছহীহ হাদীছ শরীফ উনাকে জাল বলছে ওহাবী সালাফীরা (৩)
২০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
পর্দা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া কবীরা গুনাহ
১৯ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৯ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
হযরত আব্বাস ইবনে মিরদাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
যাকাত সম্পর্কিত আহকাম, মাসায়িল ও ফাযায়িল (৪)
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
প্রাণীর ছবি তোলা হারাম ও নাফরমানীমূলক কাজ
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার)












