পবিত্র কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফ উনাদের আলোকে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র দান করা সুন্নত, হালাল হওয়া ফরয (২)
, ২৭ রবিউছ ছানী শরীফ, ১৪৪৭ হিজরী সন, ২১ খমীছ, ১৩৯৩ শামসী সন , ২০ অক্টোবর, ২০২৫ খ্রি:, ০৪ কার্তিক, ১৪৩২ ফসলী সন, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
দানে সম্পদ বৃদ্ধি হয়:
পবিত্র হাদীছ শরীফে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ تَعَالَى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ تَصَدَّقَ بِعَدْلٍ ثَمَرَةٍ مِنْ كَسْبٍ طَيِّبٍ وَ لَا يَقْبَلُ اللَّهُ إِلَّا الطَّيِّبَ فَإِنَّ اللَّهَ يَتَقَبَّلُهَا بِيَمِينِهِ ثُمَّ يُرَبِّيْهَا لِصَاحِبِهَا كَمَا يُرَبِّي أَحَدُكُمْ فَلُوَّهُ حَتَّى تَكُونَ مِثْلَ الْجَبَلِ. (متفق عليه)
অর্থ: হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, মহান আল্লাহ পাক তিনি হালাল ব্যতীত (দান) কবুল করেন না। অতএব, যে ব্যক্তি হালাল উপার্জন থেকে একটি খেজুর পরিমাণ দান করবে; মহান আল্লাহ পাক তিনি স্বীয় (কুদরতী) ডান হাত মুবারকে তা কবুল করবেন। অতঃপর মহান আল্লাহ পাক তিনি উক্ত দান, দাতার জন্য পাহাড় পরিমাণ হওয়া পর্যন্ত লালন-পালন করবেন যেমনিভাবে তোমাদের কেউ ঘোড়ার বাচ্চাকে লালন-পালন করে। সুবহানাল্লাহ! (বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ)
উল্লেখ্য, যে ব্যক্তি হালাল উপার্জন থেকে মহান আল্লাহ পাক উনার পথে খরচ করবে মহান আল্লাহ পাক তিনি অবশ্যই তাকে সমৃদ্ধশীল করবেন এবং পরকালে তার জন্য অশেষ নিয়ামত জমা করে রাখবেন। সুবহানাল্লাহ!
দান ছদকা করলে হায়াতও বৃদ্ধি পায়:
এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে একটি মশহুর ওয়াক্বেয়া উল্লেখ করা হয়েছে- একবার হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমত মুবারকে উপস্থিত হয়ে বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! অমুক ছাহাবী উনার হায়াত মুবারক আর একদিন বাকী রয়েছে (কাজেই উনার যদি কোন ইচ্ছা থেকে থাকে তিনি যেন তা পূরণ করেন)। অতঃপর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উক্ত ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে ডেকে জিজ্ঞাসা করলেন, আপনার কি কোন ইচ্ছা আছে? তখন উক্ত ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু যেহেতু শাদী (বিবাহ) করেননি তাই তিনি বললেন, উনার ইচ্ছা হচ্ছে- বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে আহলিয়ার হাতে তৈরীকৃত হালুয়া রুটি খাওয়া।
অতঃপর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে উদ্দেশ্য করে বললেন, আপনাদের মধ্যে কে আছেন, যিনি নিজ মেয়েকে একদিনের জন্য শাদী দিবেন? অতঃপর একজন ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি উনার মেয়েকে একদিনের জন্য শাদী দেয়ার ইচ্ছা পোষণ করলেন, অতঃপর উনাদের শাদী মুবারক সম্পাদন হলো এবং উনার আহলিয়া হালুয়া রুটি তৈরী করলেন, তারপর যখন খাওয়ার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করলেন, এমন সময় একজন ভিক্ষুক এসে কিছু সাহায্য প্রার্থনা করলো, তখন উক্ত ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি সেই হালুয়া রুটি নিজে না খেয়ে সম্পূর্ণটাই ভিক্ষুককে দান করে দিলেন। অতঃপর উনারা ঘুমিয়ে গেলেন।
পরদিন ফজরের সময় উক্ত ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি ফজরের নামায আদায় করার জন্য মসজিদে নববী শরীফে উপস্থিত হলেন। এদিকে তিনি যখন মসজিদে নববী শরীফে প্রবেশ করলেন, তখন হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনিও নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমত মুবারকে হাযির হয়ে বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমি লওহে মাহফুযে উক্ত ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার হায়াত মুবারক একদিনই লিখা দেখেছিলাম। কিন্তু এর সাথে আরো কিছু লিখা ছিলো যা কোনো কারণে আমার দেখা হয়নি। সেখানে লিখা ছিলো, উক্ত ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার হায়াত মুবারক আর মাত্র একদিন বাকী আছে, অতঃপর আরো লিখা ছিলো, তবে যদি তিনি দান করেন তাহলে উনার হায়াত মুবারক বৃদ্ধি পাবে। আর তিনি যেহেতু কাল রাতে দান করেছিলেন তাই উনার পরিবর্তে অন্য একটি প্রাণীর প্রাণ নিয়ে উনার হায়াত মুবারক বৃদ্ধি করে দেয়া হয়েছে। সুবহানাল্লাহ!
কাজেই কেউ যদি বেশী বেশী দান ছদকা করে মহান আল্লাহ পাক তিনি দয়া করে তার হায়াত বৃদ্ধি করে দিবেন। সুবহানাল্লাহ!
হালাল থেকে দান করা ফরয:
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করা হয়েছে-
لَا يَقْبَلُ اللَّهُ إِلَّا الطَّيِّبَ
অর্থ: নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, মহান আল্লাহ পাক তিনি হালাল ব্যতীত (দান) কবুল করেন না। (বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ)
কাজেই, যার সম্পদ হালাল নয়; সে যেন দান ছদকা না করে। মহান আল্লাহ পাক উনার রাস্তায় দান করার সময় অত্যন্ত সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। (অসমাপ্ত)
-মুহম্মদ হুসাইন নাফে’।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে সালাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু (৩)
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
পবিত্র হাদীছ শরীফে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ইসলামী শরীয়ত মুতাবিক- ছবি তোলা হারাম
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র হাদীছ শরীফে ইরশাদ মুবারক করেন-
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে সালাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু (২)
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
যাকাত সম্পর্কিত আহকাম, মাসায়িল ও ফাযায়িল (২)
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পর্দা পালন করা পুরুষ-মহিলা সবার জন্য ফরজ
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
যিনি খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে মুহব্বত মুবারক করা সমস্ত জিন-ইনসান, তামাম কায়িনাতবাসীর জন্য ফরযে আইন
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের আলোকে ছিরাতুল মুস্তাক্বীম উনার ছহীহ তাফসীর- ০১
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার)












