পবিত্র কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফ উনাদের আলোকে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র দান করা সুন্নত, হালাল হওয়া ফরয (৩)
, ০৪ জুমাদাল ঊলা শরীফ, ১৪৪৭ হিজরী সন, ২৮ খমীছ, ১৩৯৩ শামসী সন , ২৭ অক্টোবর, ২০২৫ খ্রি:, ১১ কার্তিক, ১৪৩২ ফসলী সন, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
ছদকা বালা-মুছীবত দূর করে:
দেখা যায়, যারা দান-ছদকা করে না তারা সবসময় বিভিন্ন রকম বিপদ-আপদে পর্যুদস্ত থাকে। তাদের অর্থ-সম্পদ, আয়-রোজগারে কোনো বরকত থাকে না। যারা পরকালের জন্য মাল-সম্পদ খরচ না করে জমা করে রাখে তাদের সম্পর্কে পবিত্র হাদীছ শরীফে বর্ণিত রয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ تَعَالَى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَكُوْنُ كَنْزُ أَحَدِكُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ شُجَاعًا أَفْرَعَ يَفِرُّ مِنْهُ صَاحِبُهُ وَهُوَ يَطْلُبُه حَتَّى يُلْقِمَهُ أَصَابِعَة. (رواه أحمد)
অর্থ: হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, তোমাদের কারও সংরক্ষিত মাল-সম্পদ কিয়ামতের দিন কেশবিহীন বিষাক্ত সাপ হবে এবং তা হতে মাল-সম্পদের মালিক পলায়ন করতে চাবে; কিন্তু ওই বিষধর সাপ তাকে অনুসন্ধান করতে থাকবে, এমনকি তার অঙ্গুলিসমূহ (খাদ্যরূপে) গিলে ফেলবে। নাঊযুবিল্লাহ! (মুসনাদে আহমদ শরীফ)
অন্যত্র আরো বর্ণিত হয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ تَعَالَى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ آتَاهُ اللهُ مَالًا فَلَمْ يُؤَدِّ زَكَاتَهُ مُثْلَ لَهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ شُجَاعًا أَقْرَعَ لَهُ زَيْبَتَانِ يُطَوَّقُهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ يَأْخُذُ بِلِهْزِمَتَيْهِ يَعْنِي شِدْقَيْهِ ثُمَّ يَقُوْلُ أَنَا مَالُكَ أَنَا كَنْرُكَ ثُمَّ تَلَا وَلَا يَحْسَبَنَّ الَّذِيْنَ يَبْخَلُونَ الآيَةَ وَلَا يَحْسَبَنَّ الَّذِيْنَ يَبْخَلُوْنَ بِمَا آتَاهُمُ اللَّهُ مِنْ فَضْلِهِ هُوَ خَيْرًا لَّهُمْ بَلْ هُوَ شَرٌّ لَّهُمْ سَيُطَوَّقُوْنَ مَا بَخِلُوا بِهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ. وَلِلَّهِ مِيْرَاثُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ ، وَاللَّهُ بِمَا تَعْمَلُوْنَ خَبِيرٌ. (رواه بخاری(
অর্থ: হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, মহান আল্লাহ পাক তিনি যাকে মাল-সম্পদ দান করেছেন, অথচ সে ঐ সম্পদের যাকাত আদায় করেনি, কিয়ামতের দিন তার মাল-সম্পদকে তার জন্য একটি কেশবিহীন বিষধর সাপে পরিণত হবে, যার চক্ষুর উপর দুটি কালো দাগ থাকবে (অর্থাৎ অতি বিষাক্ত হবে) তাকে তার গলার বেড়ীস্বরূপ পড়ানো হবে। তা তার মুখের দুদিকে দংশন করতে থাকবে এবং বলবে- আমি তোমার মাল, আমি তোমার সংরক্ষিত অর্থ। অতঃপর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি (উনার সমর্থনে) এ পবিত্র আয়াত শরীফ পাঠ করলেন- “মহান আল্লাহ পাক তিনি যাদেরকে স্বীয় অনুগ্রহে যা কিছু দান করেছেন, তারা তা নিয়ে কৃপণতা করে, তবে তারা যেন মনে না করে যে, তা তাদের জন্যে ভাল বা বরকতের কারণ। বরং তা তাদের জন্য ক্ষতির কারণ। অতি শীঘ্রই কিয়ামতের দিন সে সমস্ত ধন-সম্পদকে তাদের ঘাড়ে শিকলরূপে পরিয়ে দেয়া হবে, যা নিয়ে তারা কৃপণতা করেছে। আর মহান আল্লাহ পাক তিনি হচ্ছেন আসমান ও যমীনের পরম সত্ত্বাধিকারী। আর যা কিছু তারা করে থাকে; মহান আল্লাহ পাক তিনি সে সম্পর্কে জানেন। নাঊযুবিল্লাহ! [বুখারী শরীফ]
মহান আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টি হাছিলের লক্ষ্যেই দান করতে হবে:
মূলকথা হলো, একজন মুসলমানের জন্য নিজ পরিবারের হক্ব আদায় করার মধ্যে যেমন ফযীলত রয়েছে তেমনিভাবে মহান আল্লাহ পাক উনার পথে খরচ করার মধ্যেও ফযীলত রয়েছে। মহান আল্লাহ পাক তিনি যেভাবে করতে আদেশ মুবারক করেছেন সেভাবে করার মধ্যে ফযীলত বরকত রয়েছে। মনগড়াভাবে দান-ছদকা করার মধ্যে কোনো ফযীলত নেই বরং এরূপ করলে পরকালে জবাবদিহি করতে হবে। বলাবাহুল্য যে, বান্দার হক্ব নষ্ট হলে মহান আল্লাহ পাক তিনি তা ক্ষমা করবেন না বলে সতর্ক করেছেন। তাই আমাদেরকে হক্কুল্লাহ ও হক্কুল ইবাদ উভয়টির প্রতিই সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে যেন একটি আদায় করতে গিয়ে আরেকটি তরক না হয়।
একজন বান্দা উপরোল্লিখিত বিভিন্ন রকম শয়তানের সূক্ষ্ম ধোঁকা থেকে বেঁচে থেকে দান-ছদকা করতে পারলে সেটাই হবে হাক্বীক্বীভাবে মহান আল্লাহ পাক উনার পথে খরচ করা। আর এটা তখনই সম্ভব হবে যখন বান্দা মহান আল্লাহ পাক ও উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের দিকে রুজু হবে, উনাদের মুহব্বত মুবারক অন্তরে পয়দা হবে। আর এই মুহব্বত মুবারক অর্জন করতে হলে মহান আল্লাহ পাক এবং উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের মুহব্বতে ফানা-বাক্বা ওলীআল্লাহগণ উনাদের নেক ছোহবত মুবারক ইখতিয়ার করা বাঞ্ছণীয়।
কাজেই মহান আল্লাহ পাক তিনি যেন আমাদের সকলকে মন্দ স্বভাব হতে বেঁচে থেকে মহান আল্লাহ পাক উনার পথে বেশি বেশি খরচ করে সাখাওয়াতি বা দানশীলতার গুণ অর্জন করার এবং বখীলি থেকে মুক্ত থাকার তাওফীক দান করেন। (আমীন) (সমাপ্ত)
-মুহম্মদ হুসাইন নাফে’।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে সালাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু (৩)
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
পবিত্র হাদীছ শরীফে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ইসলামী শরীয়ত মুতাবিক- ছবি তোলা হারাম
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র হাদীছ শরীফে ইরশাদ মুবারক করেন-
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে সালাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু (২)
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
যাকাত সম্পর্কিত আহকাম, মাসায়িল ও ফাযায়িল (২)
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পর্দা পালন করা পুরুষ-মহিলা সবার জন্য ফরজ
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
যিনি খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে মুহব্বত মুবারক করা সমস্ত জিন-ইনসান, তামাম কায়িনাতবাসীর জন্য ফরযে আইন
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের আলোকে ছিরাতুল মুস্তাক্বীম উনার ছহীহ তাফসীর- ০১
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার)












