পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের আলোকে বৈবাহিক জীবনের রূপরেখা
, ০৮ যিলক্বদ শরীফ, ১৪৪৪ হিজরী সন, ২৯ ছানী ‘আশার, ১৩৯০ শামসী সন , ২৯ মে, ২০২৩ খ্রি:, ১৬ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) মহিলাদের পাতা
মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
وَاللهُ وَرَسُوْلُهٗۤ أَحَقُّ أَنْ يُّرْضُوْهُ إِنْ كَانُوْا مُؤْمِنِيْنَ
অর্থ: তারা যদি মু’মিন হয়ে থাকে তাহলে তাদের দায়িত্ব-কর্তব্য হচ্ছে মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার সম্মানিত রসূল নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদেরকে সন্তুষ্ট করা। কেননা উনারাই সন্তুষ্টি-রেযামন্দি পাওয়ার সর্বাধিক হক্বদার। (পবিত্র সূরা তওবা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৭৬)
মহান আল্লাহ পাক তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন-
رِضْوَانٌ مِّنَ اللهِ أَكْبَرُ
অর্থ: মহান আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টি মুবারকই হচ্ছেন সবচেয়ে বড় অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক উনার এবং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের সন্তুষ্টি রেযামন্দি হচ্ছে সর্বাপেক্ষা শ্রেষ্ঠতম নিয়ামত মুবারক। (পবিত্র সূরা তওবা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৭২)
কাজেই বিবাহের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টির ক্ষেত্রে মহান আল্লাহ পাক উনার এবং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের সন্তুষ্টি-রেযামন্দিকে প্রাধান্য দেয়া আবশ্যক। সেক্ষেত্রে নিজের মতকে, নিজের নফসানিয়াতকে প্রাধান্য দেয়া উচিত নয়।
এ প্রসঙ্গে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিশেষ কুরবত-নৈকট্য সন্তুষ্টিপ্রাপ্ত ছাহাবী হযরত জুলাইবিব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার বিবাহের বিষয়টি বিশেষভাবে প্রণিধানযোগ্য।
উল্লেখ্য যে, কোন হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের মানহানিকর তথা সম্মান-মর্যাদার খিলাফ কথা-বার্তা বলা, শুনা সম্মানিত ঈমান উনার খিলাফ। যারা মানহানীকর কথা-বার্তা বলবে ও শুনবে কিংবা সমর্থন করবে তারা কেউই ঈমানদার থাকতে পারবে না। উনাদের উত্তম বিষয়গুলো আলোচিত হবে। অপ্রিয় বা সাধারণের বোধগম্য নয় এমন বিষয়গুলো আলোচনা করা থেকে বিরত থাকতে হবে। এটাই আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদা বা বিশ্বাস। কাজেই আমরা শুধুমাত্র ইবরত-নছীহত গ্রহণ করার জন্য উনার সাওয়ানেহ উমরী মুবারক থেকে কিছু আলোচনা করবো। মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদেরকে ক্ষমা করুন।
সাইয়্যিদুনা হযরত জুলাইবিব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি ছূরত লম্বা ও বর্ণের দিক থেকে কিছু ব্যতিক্রম ছিলেন। আর সমাজে উনার প্রভাব-প্রতিপত্তি না থাকার কারণে সাধারণ মানুষের সাথে উনার তেমন কোন সম্পর্ক ছিলো না।
কিন্তু মহান আল্লাহ পাক তিনি এবং উনার মহাসম্মানিত রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারা উনাকে অত্যধিক মুহব্বত করতেন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনাকে উনার পরিবারভুক্ত করে নিয়েছেন। সুবহানাল্লাহ! তিনি ইরশাদ মুবারক করেছেন, সাইয়্যিদুনা হযরত জুলাইবিব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি আমার থেকে এবং আমি উনার থেকে।
সাইয়্যিদুনা হযরত জুলাইবিব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু সবসময় নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছোহবত মুবারক ইখতিয়ার করতেন।
একসময় নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র মদীনা শরীফে তাশরীফ মুবারক নিলেন। সাইয়্যিদুনা হযরত জুলাইবিব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্রতম ছোহবত মুবারক ইখতিয়ার করতে বিলম্ব করেননি। তিনি প্রতিদিনই উনার পবিত্রতম ছোহবত মুবারক ইখতিয়ার করেন। খিদমত মুবারকের আঞ্জাম দেন এমনভাবে যেন, তিনি হযরত আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের সদস্য।
একদিন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, হযরত জুলাইবিব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু! আপনি কেমন আছেন?
সাইয়্যিদুনা হযরত জুলাইবিব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনার বরকতময় ছোহবত মুবারক ইখতিয়ার করতে পারি। আপনার খিদমত মুবারক উনার আঞ্জাম দিতে পারি এর চেয়ে অধিক সৌভাগ্য আর কি হতে পারে?
ইয়া রসূলাল্লাহ ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমার জীবনসঙ্গিণী যে নারী আছেন তা কি জান্নাতের হূর? নাকি দুনিয়াতে কোন নারী আছেন? নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনাকে আশ্বস্ত করে বললেন, হযরত জুলাইবিব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু! আপনি চিন্তা করবেন না। আপনি দুনিয়া এবং আখিরাতে উভয় জগতে আপনার জীবনসঙ্গিণী পাবেন। সাইয়্যিদুনা হযরত জুলাইবিব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি লজ্জাবনত কণ্ঠে বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমাকে কে মেয়ে দিবেন?
একদিন এক আনছারী ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র খিদমত মুবারকে হাজির হলেন। আরয করলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমার একজন বিবাহযোগ্য মেয়ে আছেন। উনার জন্য একজন উপযুক্ত ছেলে প্রয়োজন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, আমি আপনার মেয়ের বিবাহের প্রস্তাব দিচ্ছি। সেই হযরত ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি অত্যন্ত খুশি হলেন। বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! ইহা আমাদের সৌভাগ্য। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, তবে আমার জন্য নয়। তিনি বললেন, তাহলে কার জন্য?
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, সাইয়্যিদুনা হযরত জুলাইবিব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার জন্য। একথা শুনে সেই ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! মেয়ের মায়ের সাথে পরামর্শ করার অনুমতি প্রার্থনা করছি।
সেই হযরত ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ইজাযত মুবারক পেয়ে মেয়ের মায়ের নিকট বললেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আমাদের মেয়ের বিবাহের প্রস্তাব দিয়েছেন। সুবহানাল্লাহ! উনার আহলিয়া বললেন, এর চেয়ে খুশির সংবাদ আর কি হতে পারে? সেটা আমাদের পরম সৌভাগ্য। আনছারী ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বললেন, তবে তা উনার নিজের জন্য নয়। সাইয়্যিদুনা হযরত জুলাইবিব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার জন্য। মহিলা ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা চিন্তা-ফিকির করা শুরু করলেন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে কি জাওয়াব দিবেন। স্বয়ং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নিজেই প্রস্তাব দিয়েছেন। ইতিপূর্বে কত প্রভাব-প্রতিপত্তি, সম্পদশালী, বীর মুজাহিদ ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনারা প্রস্তাব দিয়েছেন। তাদের কারো প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়নি। আনছারী ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার সম্মানিতা মেয়ে অদূরে দাঁড়িয়ে বাবা-মায়ের কথোপকথন শুনছিলেন। উনাদের সিদ্ধান্ত নিতে বিলম্ব হওয়ায় তিনি উনাদের নিকটবর্তী হয়ে বললেন, আব্বাজান! নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি স্বয়ং নিজেই সাইয়্যিদুনা হযরত জুলাইবিব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার জন্য প্রস্তাব দিয়েছেন। আপনারা তা গ্রহণ করতে বিলম্ব করছেন কেন? ইহা তো অত্যন্ত সৌভাগ্যের বিষয়। এতে আমার কোনই দ্বিমত নেই। তিনি আমাদের জন্য যা কল্যাণকর তাই করে থাকেন। আমি অত্যন্ত সন্তুষ্টচিত্তে এই প্রস্তাবে রাজি আছি। আপনি আমাকে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট নিয়ে চলুন। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সাইয়্যিদুনা হযরত জুলাইবিব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার সাথে আনছারী ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার সম্মানিতা মেয়ে উনার পবিত্র নিসবাতুল আযীমাহ শরীফ (বিবাহ) সুসম্পন্ন করেন। সুবহানাল্লাহ! (চলবে)
-আল্লামা সাইয়্যিদ মুহম্মদ আব্দুল হালীম
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
প্রসঙ্গ: অপ্রয়োজনীয় কথা না বলে চুপ থাকা
২৬ এপ্রিল, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
মহিলাদের জন্য সুন্নতী লিবাস, অলংকার ও সাজ-সজ্জা (৯)
২৬ এপ্রিল, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
পবিত্র আরবী হরফ উনার পরিচয় (১১)
২৫ এপ্রিল, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
মানবীয় সম্পদের গুরুত্ব কতটুকু
২৪ এপ্রিল, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
মহিলারা নিজেরাই জানে না, দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে মহিলাদের মর্যাদা ও অধিকার কতবেশি
২৪ এপ্রিল, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
হযরত উম্মুল ফদ্বল বিনতুল হারিছ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা (২)
২৩ এপ্রিল, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
মার্কিন খ্রিস্ট ধর্ম প্রচারক ‘আমিনা অ্যাসিলিমি’র দ্বীন ইসলাম গ্রহণ
২১ এপ্রিল, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
প্রসঙ্গ: বিয়ের পর মা-বাবার প্রতি মেয়ের দায়িত্ব
২১ এপ্রিল, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
আরবী বারো মাসের নাম
২০ এপ্রিল, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
পর্দা পালন করা মূলত অন্তরের পবিত্রতারই বহিঃপ্রকাশ
২০ এপ্রিল, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
ইযার তথা নিতাক্ব পরিধান করাও সুন্নত মুবারক
১৯ এপ্রিল, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
পবিত্র হাদীছ শরীফ সংরক্ষণ, চর্চা ও তালীম দানে মহিলাগণের অবদান (২)
১৯ এপ্রিল, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার)