পবিত্র মীলাদ শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াম শরীফ বিষয়ক “আন নি’মাতুল কুবরা আলাল আলাম বি মাওলিদি সাইয়্যিদি বানী আদাম” কিতাব নিয়ে বাতিলপন্থী ওহাবী ফিরকার মিথ্যাচারিতা ও ষড়যন্ত্রের মুখোশ উন্মোচন-পর্ব-২
, ৩০ শা’বান শরীফ, ১৪৪৪ হিজরী সন, ২৩ ‘আশির, ১৩৯০ শামসী সন , ২৩ মার্চ, ২০২৩ খ্রি:, ০৯ চৈত্র, ১৪২৯ ফসলী সন, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) মহিলাদের পাতা
عَن حضرت أَبي هُرَيْرَةَ رضي الله تعالي عنه قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَكُونُ فِى آخِرِ الزَّمَانِ دَجَّالُونَ كَذَّابُونَ يَأْتُونَكُمْ مِنَ الأَحَادِيثِ بِمَا لَمْ تَسْمَعُوا أَنْتُمْ وَلاَ آبَاؤُكُمْ فَإِيَّاكُمْ وَإِيَّاهُمْ لاَ يُضِلُّونَكُمْ وَلاَ يَفْتِنُونَكُمْ )مسلم)
অর্থ: হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন- নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আখিরী যামানায় অনেক মিথ্যাবাদী দাজ্জালের চেলা বের হবে, তারা এমন সব কথা বানিয়ে বানিয়ে বলবে যা কোনোদিন তোমরাও শুননি, তোমাদের বাপ দাদারাও শুনেনি, তোমরা তাদের থেকে দূরে থাকো আর তাদেরকেও তোমাদের থেকে দূরে রাখো, তাহলে তারা তোমাদেরকে গোমরাহও করতে পারবেনা, তোমাদেরকে ফিতনায়ও ফেলতে পারবেনা। (মুসলিম শরীফ, মিশকাত শরীফ)
এই পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার পূর্ণ মিছদাক মিথ্যাবাদী দাজ্জালের চেলা ঐসকল লোকেরা যারা “নি’মাতুল কুবরা আলাল আলাম” মূল কিতাবটিকে জাল প্রমাণ করার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে, এর জন্য ইবারত কারচুপী, জাল পান্ডুলিপি রচনাসহ বিভিন্ন মিথ্যা তথ্য দিয়ে বই পুস্তক লিখছে এবং তারা বলছে যে,“মাওলিদুন্নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম” কিতাবখানা হচ্ছে “ইতমামু নি’মাতুল কুবরা আলাল আলাম” কিতাবের সংক্ষিপ্ত রূপ।
মূলত: “ইতমামু নি’মাতুল কুবরা আলাল আলাম” إتمام النعمة الكبري علي العالـم কিতাবটি এই সকল দাজ্জালের চেলারা নিজেরা লিখে বিখ্যাত মুহাদ্দিছ হযরত ইমাম ইবনে হাজার হায়তামী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার নামে চালিয়ে দিয়ে সাধারণ মানুষকে গোমরাহ করছে। বইয়ের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত অসংখ্য যায়গায় পরিবর্তন করাসহ বিভিন্নভাবে অসংখ্য ওহাবী মতবাদ ঢুকানো হয়েছে।
বিশেষভাবে লক্ষনীয় বিষয় হলো ওহাবীদের লিখিত ষড়যন্ত্রমূলক জাল কিতাবের নাম দিয়েছে- إتمام النعمة الكبري علي العالـم (ইতমামু নি’মাতুল কুবরা আলাল আলাম)। এখানেই চোর চুরি করতে এসে তার আলামত রেখে গেছে। আর তা হলো- إتمام ‘ইতমাম’ শব্দটির অর্থ হচ্ছে - চূড়ান্ত, পরিপূর্ণ, পূর্ণকরণ ইত্যাদি। আর নি’মাতুল কুবরা হলো অন্য আরেকটি কিতাবের নাম। তাহলে ইতমামু নি’মাতুল কুবরা শব্দের অর্থ হলো নি’মাতুল কুবরা কিতাবকে পূর্ণতা দানকারী অন্য একটি কিতাব। অর্থাৎ নি’মাতুল কুবরা একটি কিতাব আর ইতমাম নাম সংযুক্ত করে দিয়ে উক্ত কিতাবের পূর্ণতা দান করে আরেকটি ভিন্ন কিতাব লিখা হয়েছে। সুতরাং ইতমামু নি’মাতুল কুবরা কিতাবের নাম দ্বারাই বুঝা যাচ্ছে যে, নি’মাতুল কুবরা কিতাবটি পূর্ব থেকেই ছিল, কিন্তু ইতমাম নামক কিতাব লিখে তার পূর্ণতা দান করা হয়েছে। আর এ কাজটিই ষড়যন্ত্রমূলকভাবে ওহাবীরা করেছে।
উল্লেখ্য যে, আমাদের হাতে হযরত ইমাম ইবনে হাজার হায়তামী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার লিখিত “মাওলিদুন্নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম” নামক কিতাবের তিনটি পা-ুলিপি আছে। প্রতিটি নুসখাতেই হযরত ইমাম ইবনে হাজার হায়তামী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার এই বক্তব্য রয়েছে-
كما جـمعت ذلك في كتاب سميته النعمة الكبري علي العالـم بـمولد سيد بني ادم
অর্থ: ঐ সমস্ত বিষয়গুলো আমি একটি কিতাবে জমা করেছি, যে কিতাবের নাম আমি রেখেছি “আন নি’মাতুল কুবরা আলাল আলাম বি মাওলিদি সাইয়্যিদি বানী আদাম”।
অথচ আব্দুল ওয়াহাব হাওয়াশ ‘মাওলিদে ইবনে হাজার মুখতাছারু মিন কিতাবি ইতমামু নি’মাতুল কুবরা আলাল আলাম বিমাওলিদে সাইয়্যিদি উলদী আদাম’ নামক এই বানোয়াট ও জাল কিতাবে এই ইবারতে ইচ্ছাকৃত ও উদ্দেশ্যপ্রনোদিতভাবে খেয়ানত ও কারচুপি করে লিখেছে-
كما جـمعت ذلك في كتاب سميته إتمام النعمة الكبري علي العالـم بـمولد سيد ولد ادم
লক্ষ্য করুন, এখানে إتمام ‘ইতমাম’ শব্দটি ঢুকানো হয়েছে। যা হযরত ইমাম ইবনে হাজার হায়তামী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ‘মাওলিদুন্নবী’ কিতাবের কোন একটি পা-ুলিপিতে নেই। তাহলে এই إتمام ‘ইতমাম’ শব্দটি কেন ঢুকানো হলো?
প্রকৃতপক্ষে এর কারণ খুবই পরিষ্কার। মূলত: আশিকে রসূলগণ পবিত্র মীলাদ শরীফ বিষয়ে হযরত খুলাফায়ে রাশেদীন আলাইহিমুস সালাম উনাদের কর্তৃক বর্ণিত যেসকল মাওকূফ হাদীছ শরীফ ও অন্যান্য আউলিয়ায়ে কিরামগণের ক্বওল শরীফ দলীল হিসাবে পেশ করে থাকেন তা হযরত ইমাম ইবনে হাজার হায়তামী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার লিখিত মূল কিতাব النعمة الكبري علي العالـم আন নি’মাতুল কুবরা আলাল আলাম বি মাওলিদে সাইয়্যিদি বানী আদম’ নামক কিতাবে রয়েছে।
আর এই মূল কিতাবকে যদি মেনে নেয়াই হয় তাহলে (১) পবিত্র মীলাদ শরীফকেই মেনে নিতে হবে। আবার এই মূল কিতাবকে যদি মেনে নেয়াই হয় তাহলে (২) “পবিত্র মীলাদ শরীফ খইরুল কুরূনে ছিল” সে বিষয়টিও মেনে নিতে হবে এবং (৩) পবিত্র মীলাদ শরীফকে বিদয়াত বলার অপচেষ্টা ও কুটকৌশল ব্যর্থ হবে। (চলবে)
-হাফিজুল হাদীছ মুহম্মদ ফজলুল হক
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব-কর্তব্য
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
খছম বা ঝগড়া কু-স্বভাবটি পরিহার করা অপরিহার্য কর্তব্য
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
যে ৪ শ্রেণীর লোকদের জন্য ক্বিয়ামতের দিন সুপারিশ ওয়াজিব হবে
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
মুসলমান পুরুষ ও মহিলা সকলের জন্যই ফরযে আইন হচ্ছে- যথাযথভাবে ৫ ওয়াক্ত নামায তারতীব অনুযায়ী যথাসময়ে আদায় করে নেয়া
০২ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
মহাসম্মানিত মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনারা বেমেছাল ফযীলত মুবারকের অধিকারী
০২ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
হুব্বে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
০১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-
০১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সৃষ্টির শুরুতেই মহান আল্লাহ পাক উনার কুদরত মুবারক উনার মধ্যে ছিলেন, আছেন এবং অনন্তকাল থাকবেন
০১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
মহান আল্লাহ পাক তিনি তওবাকারীকে পছন্দ করেন (১)
৩০ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
ক্বলবী যিকির জারী না থাকলে শয়তানের ওয়াসওয়াসা থেকে বেঁচে থাকা সম্ভব নয়
৩০ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব-কর্তব্য
২৭ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ মেহমানদারী করার মাধ্যমে উদযাপনে শাফায়াত মুবারক লাভ
২৭ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার)












