দ্বীনি তা’লীম:
পুরুষ ও মহিলাদের নামাযে পদ্ধতিগত পার্থক্য (৩)
, ২৫ মে, ২০২৫ ১২:০০:০০ এএম ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) মহিলাদের পাতা
হাত বাঁধায় পার্থক্য:
পুরুষরা তাকবীরে তাহরিমার পর নাভীর নীচে হাত বাঁধবে, আর নদারীরা বুকের উপর হাত বাঁধবে।
হযরত আসিম আহওয়াল রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, ‘আমি হাফছাহ বিনতে সিরীন রহমতুল্লাহি আলাইহা উনাকে নামাযের তাকবীর দিতে দেখেছি। এবং তিনি বুকের উপর হাত রাখার প্রতি ইঙ্গিত করলেন। ’ (মুছান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীছ শরীফ: ২৪৭৫)
হযরত ইবনে জুরাইজ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, ‘আমি হযরত আতা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে জিজ্ঞেস করলাম, “নারীরা তাকবীরের সময় পুরুষদের মতো হাত কি উঠাবেন?”
উত্তরে তিনি বলেন, নারীরা পুরুষদের মতো হাত উঠাবেন না, এবং তিনি ইশারায় দেখালেন, তাতে উনার হস্তদ্বয় অনেক নিচু করলেন এবং শরীরের সঙ্গে হাতকে একেবারে মিলিয়ে নিলেন এবং বললেন, নারীদের শরীরের গঠন পুরুষদের মতো নয়। ’ (মুছান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীছ শরীফ: ২৪৭৪)
উক্ত বর্ণনা থেকে স্পষ্ট হয় যে, নারীদের শারীরিক গঠনের দিকে লক্ষ করে নারী ও পুরুষের হাত ওঠানো ও বাঁধার স্থান ভিন্ন ভিন্ন হওয়াটাই সমীচীন। বিভিন্ন হাদীছ শরীফ থেকেও এটা প্রতিভাত হয় যে, নারীদের বেলায় সর্বাধিক সতর হওয়ার দিকটি বিবেচ্য ও প্রণিধানযোগ্য। এতে বোঝা যায়, নামাযের সব রুকনে নারীদের শরীর যে পদ্ধতিতে বেশি ঢাকা যায় সেই পদ্ধতি গ্রহণের নির্দেশ। যেহেতু নারীরা বুকে হাত বাঁধলে তাদের স্পর্শকাতর অঙ্গগুলো বেশি ঢাকে, তাই নারীরা বুকে হাত বাঁধবে। পক্ষান্তরে পুরুষ হাত বাঁধবে নাভীর নিচে। এটাই ছহীহ হাদীছ শরীফ দ্বারা প্রমাণিত।
হযরত ওয়াইল বিন হুজর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, ‘আমি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে নামাযে ডান হাত বাম হাতের উপর রেখে নাভী মুবারকের নিচে রাখতে দেখেছি। (মুছান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীছ শরীফ: ৩৯৫৯)
কোনো কোনো বর্ণনায় পুরুষের বেলায় বুকে হাত বাঁধার কথা পাওয়া গেলেও হাদীছ শরীফ বিশারদগণ সেসব বর্ণনাকে অতি দুর্বল ও অগ্রহণযোগ্য হিসেবে সাব্যস্ত করেছেন।
রুকু অবস্থায় পার্থক্য:
১. পুরুষরা রুকু অবস্থায় এই পরিমাণ ঝুঁকবে, যেন কোমরের নিম্নাংশ সোজা হয়ে যায় এবং মাথা ও নিতম্ব বরাবর হয়ে যায়। আর নারীরা এই পরিমাণ ঝুঁকবে, যেন উভয় হাত শুধু হাঁটু পর্যন্ত পৌঁছে।
হযরত আয়েশা বিনতে সা’দ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা উনার সূত্রে বর্ণিত, তিনি রুকুতে খুব বেশি ঝুঁকতেন, যা দৃষ্টিকটু। তাই হযরত সা’দ ইবনে আবী ওয়াক্কাছ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি উনাকে বলেন, ‘আপনার দুই হাত হাঁটুতে রাখলেই আপনার জন্য যথেষ্ট হয়ে যাবে। ’ (মুছান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীছ শরীফ: ২৫৭৭)
২. পুরুষরা রুকুতে হাতের আঙ্গুল খোলা রেখে হাঁটু শক্ত করে ধরবে। আর নারীরা শুধু আঙুল মিলিয়ে হাঁটুর উপর রাখবে। (মারাকিল ফালাহ: ১৪১ পৃষ্ঠা)
৩. পুরুষরা রুকুতে বাহু বগল থেকে পৃথক রাখবে। আর নারীরা বাহু বগলের সঙ্গে মিলিয়ে রাখবে।
তাবেয়ী হযরত আতা রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, নারীরা রুকু অবস্থায় যথাসম্ভব শরীর গুটিয়ে রাখবে।
মহিলাদের সিজদা:
পবিত্র হাদীছ শরীফে বর্ণিত রয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ يَزِيدَ بْنِ أَبِى حَبِيبٍ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ: أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَرَّ عَلَى اِمْرَأَتَيْنِ تُصَلِّيَانِ فَقَالَ: إِذَا سَجَدْتُمَا فَضُمَّا بَعْضَ اللَّحْمِ إِلَى الأَرْضِ، فَإِنَّ الْمَرْأَةَ لَيْسَتْ فِى ذَلِكَ كَالرَّجُلِ
অর্থ: বিশিষ্ট তাবেয়ী হযরত ইয়াযীদ বিন আবী হাবীব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, একবার নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি দুইজন মহিলার পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তখন উনাদেরকে (সংশোধনের উদ্দেশ্যে) বললেন, “আপনারা যখন সিজদা করবেন তখন শরীর যমীনের সাথে মিলিয়ে দিবেন। কেননা মহিলারা এক্ষেত্রে পুরুষদের মত নয়। (সুনানুল বায়হাকী, হাদীছ শরীফ নং-৩০১৬, কিতাবুল মারাসিল লি ইমাম আবু দাউদ-৫৫, হাদীছ শরীফ নং- ৮০)
বিশিষ্ট মুহাদ্দিছ মুহম্মদ ইবনে ইসমাঈল আমীর ইয়ামানী রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি “সুবুলুস সালাম” শরহু বুলুগিল মারাম” গ্রন্থে (১/৩৫১-৩৫২) এই হাদীছ শরীফকে দলীল হিসেবে গ্রহণ করে পুরুষ ও মহিলার সিজদার পার্থক্য নির্ণয় করেছেন।
-আল্লামা সাইয়্যিদ মুহম্মদ আব্দুল হালিম।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
হযরত উম্মে সুরাইকা দাওসিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহা
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
মহাসম্মানিত মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনারা বেমেছাল ফযীলত মুবারকের অধিকারী
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সর্বক্ষেত্রে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে প্রাধান্য দিতে হবে
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সৃষ্টির শুরুতেই মহান আল্লাহ পাক উনার কুদরত মুবারক উনার মধ্যে ছিলেন, আছেন এবং অনন্তকাল থাকবেন
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
মহান আল্লাহ পাক তিনি তওবাকারীকে পছন্দ করেন (৩)
১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
ক্বলবী যিকির জারী না থাকলে শয়তানের ওয়াসওয়াসা থেকে বেঁচে থাকা সম্ভব নয়
১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
দোযখে বেপর্দা হওয়া নারীদের শাস্তির বর্ণনা (১০)
১৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
জামায়াতের জন্য মহিলাদের মসজিদে ও ঈদগাহে যাওয়া হারাম ও কুফরী (৪)
১৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সম্বোধন মুবারক করার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ আদব-শরাফত বজায় রাখতে হবে
১৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব-কর্তব্য
১১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
তিন ধরনের লোক বেহেশতে প্রবেশ করবে না
১১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সর্বাবস্থায় আজল বা তাড়াহুড়া না করে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত
১০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার)












