দ্বীনি তা’লীম:
পুরুষ ও মহিলাদের নামাযে পদ্ধতিগত পার্থক্য (৬)
, ০৪ যিলহজ্জ শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ০২ আউওয়াল, ১৩৯৩ শামসী সন , ০১ জুন, ২০২৫ খ্রি:, ১৯ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ ফসলী সন, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) মহিলাদের পাতা
চার মাযহাবের ইমাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের
ফিক্বাহ্ শাস্ত্রের আলোকে মহিলাদের নামাযের পার্থক্য:
১) ফিক্বহে হানাফী:
قَالَ حَضْرَتْ مُحَمَّدٌ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ: أَحَبُّ إِلَيْنَا أَنْ تَجْمَعَ رِجْلَيْهَا فِي جَانِبٍ، وَلَا تَنْتَصِبَ انْتِصَابَ الرَّجُلِ
অর্থ: ইমামে আ’যম হযরত ইমাম আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার অন্যতম ছাত্র হযরত ইমাম মুহম্মদ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, “আমাদের নিকট পছন্দনীয় হলো, মহিলারা নামাযে বসার সময় উভয় পা একপাশে মিলিয়ে রাখবেন। পুরুষের মত এক পা দাঁড় করিয়ে রাখবেন না। {কিতাবুল আসার, ইমাম মুহম্মদ রহমতুল্লাহি আলাইহি-১/৬০৯}
رَوَى اِمَامُنَا الْأَعْظَمُ عَنْ نَافِعٍ عَنْ اِبْنِ عُمَرَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُمَا أَنَّهُ سُئِلَ كَيْفَ كَانَ النِّسَاءُ يُصَلِّينَ عَلَى عَهْدِ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ؟ قَالَ كُنَّ يَتَرَبَّعْنَ ثُمَّ أُمِرْنَ أَنْ يَّحْتَفِزْنَ،
অর্থ: আমাদের ইমামে আ’যম আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি হযরত ইমাম নাফে’ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিলো; নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার যুগে মহিলারা কিভাবে নামায পড়তেন?”
তিনি বললেন, “আগে উনারা চারজানু হয়ে বসতেন, পরে উনাদেরকে জড়সড় হয়ে বসতে বলা হয়েছে”। (জামেউল মাসানিদ-১/৪০০, কিতাবুল আসার এর টিকা-১/৬০, বাদায়িউস সানায়ে-১/৪৬৬, হিদায়া-১/১০০-১১০, আল মাবসূত লিস সারাখসী-১/৪৬৬, ফতওয়ায়ে শামী-১/৫০৪, ফতওয়ায়ে আলমগীরী-১/৭৩-৭৫)
২-ফিক্বহে শাফেয়ী:
(قَالَ الشافعي) وقد أَدَّبَ اللَّهُ تَعَالَى النِّسَاءَ بِالاِسْتِتَارِ وَأَدَّبَهُنَّ بِذَلِكَ رَسُولُهُ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَأُحِبُّ لِلْمَرْأَةِ في السُّجُودِ أَنْ تَضُمَّ بَعْضَهَا إلَى بَعْضٍ وَتُلْصِقَ بَطْنَهَا بِفَخِذَيْهَا وَتَسْجُدَ كَأَسْتَرِ ما يَكُونُ لها وَهَكَذَا أُحِبُّ لها في الرُّكُوعِ وَالْجُلُوسِ وَجَمِيعِ الصَّلاَةِ أَنْ تَكُونَ فيها كَأَسْتَرِ ما يَكُونُ لَهَا (كِتَابُ الْأُم، بَابُ الذِّكْرِ فِي السُّجُودِ)
অর্থ: ইমাম শাফেয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, “মহান আল্লাহ পাক তিনি মহিলাদেরকে পুরোপুরি আবৃত থাকার শিক্ষা দিয়েছেন। একইভাবে মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনিও অনুরূপ শিক্ষা দিয়েছেন। তাই আমার নিকট পছন্দনীয় হলো, সিজদা অবস্থায় মহিলারা এক অঙ্গের সাথে অপর অঙ্গ মিলিয়ে রাখবেন। পেট উরুর সাথে মিলিয়ে রাখবেন। আর সিজদা এমনভাবে করবেন যাতে সতরের চূড়ান্ত হিফাযত হয়। অনুরূপ রুকু, বৈঠক ও গোটা নামাযে এমনভাবে থাকবেন যাতে সতরের পুরোপুরি হিফাযত হয়। {কিতাবুল উম্ম-১/১৩৮)
৩-ফিক্বহে মালেকী:
মালেকী মাযহাবের প্রসিদ্ধ ফক্বীহ ইমাম আবুল আব্বাস আল কারাফী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি হযরত ইমাম মালিক রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মত উল্লেখ করেন-
وَأَمَّا مُسَاوَاةُ النِّسَاءِ لِلرِّجَالِ فَفِي النَّوَادِرِ عَنْ مَالِكٍ تَضَعُ فَخِذَهَا الْيُمْنَى عَلَى الْيُسْرَى وَتَنْضَمُّ قَدْرَ طَاقَتِهَا وَلَا تُفَرِّجُ فِي رُكُوعٍ وَلَا سُجُودٍ وَلَا جُلُوسٍ بِخِلَافِ الرَّجُلِ
অর্থ: নামাযে মহিলারা পুরুষের মত কি-না? এ বিষয়ে ইমাম মালিক রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে বর্ণিত। মহিলারা ডান উরু বাম উরুর উপর রাখবেন এবং যথাসম্ভব জড়সড় হয়ে বসবেন। রুকু, সিজদা ও বৈঠকে কোন সময়ই ফাঁক ফাঁক হয়ে বসবেন না। পক্ষান্তরে পুরুষের পদ্ধতি হলো ভিন্ন। {আয যাখীরা-২/১৯৩}
৪-ফিক্বহে হাম্বলী:
হযরত ইমাম আহমদ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ফতওয়ায় উল্লেখ আছে। হযরত ইমাম ইবনে কুদামা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার আল মুগীনী কিতাবে উল্লেখ রয়েছে-
فَأَمَّا الْمَرْأَةُ فَذَكَرَ الْقَاضِي فِيهَا رِوَايَتَيْنِ عَنْ أَحْمَدَ إحْدَاهُمَا، تَرْفَعُ؛ لِمَا رَوَى الْخَلَّالُ، بِإِسْنَادِهِ عَنْ أُمِّ الدَّرْدَاءِ، وَحَفْصَةَ بِنْتِ سِيرِينَ أَنَّهُمَا كَانَتَا تَرْفَعَانِ أَيْدِيَهُمَا. وَهُوَ قَوْلُ طَاوُسٍ، وَلِأَنَّ مَنْ شُرِعَ فِي حَقِّهِ التَّكْبِيرُ شُرِعَ فِي حَقِّهِ الرَّفْعُ كَالرَّجُلِ، فَعَلَى هَذَا تَرْفَعُ قَلِيلًا. قَالَ أَحْمَدُ: رَفْعٌ دُونَ الرَّفْعِ. وَالثَّانِيَةُ: لَا يُشْرَعُ؛ لِأَنَّهُ فِي مَعْنَى التَّجَافِي، وَلَا يُشْرَعُ ذَلِكَ لَهَا، بَلْ تَجْمَعُ نَفْسَهَا فِي الرُّكُوعِ وَالسُّجُودِ وَسَائِرِ صَلَاتِهَا.
অর্থ: তাকবীরের সময় মহিলারা হাত উঠাবে, কি উঠাবে না? এ বিষয়ে কাজী [আবু ইয়ায] ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে দু’টি মত উল্লেখ করেছেন। প্রথম মত হলো, হাত উঠাবে। কেননা খল্লাল হযরত উম্মে দারদা এবং হযরত হাফছাহ বিনতে সীরীন থেকে সনদসহ বর্ণনা করেন যে, উনারা হাত উঠাতেন। ইমাম তাউসের বক্তব্যও তাই। উপরন্তু যার ব্যাপারে তাকবীর বলার নির্দেশ রয়েছে তার ব্যাপারে হাত উঠানোরও নির্দেশ রয়েছে। যেমন পুরুষ করে থাকে। এ হিসেবে মহিলারাও হাত উঠাবে। তবে সামান্য।
হযরত আহমদ রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, “তুলনামূলক কম উঠাবে”।
দ্বিতীয় মত হলো, “মহিলাদের জন্য হাত উঠানোরই হুকুম নাই। কেননা হাত উঠালে কোন অঙ্গকে ফাঁক করতেই হয়, অথচ মহিলাদের জন্য এর বিধান দেওয়া হয়নি। বরং তাদের জন্য নিয়ম হলো, রুকু-সিজদাসহ পুরো নামাযে নিজেদেরকে গুটিয়ে রাখবে। {আল মুগনী-২/১৩৯}
পবিত্র হাদীছ শরীফ, আছারে ছাহাবা, তাবেয়ীন ও চার মাযহাবের ইমামদের ঐক্যমতের প্রমাণ পেশ করার পর আলোচনার এই পর্যায়ে গায়রে মুকাল্লিদরা মহিলাদের নামাযের ভিন্ন বিষয়টিকে উপেক্ষা করে এবং পুরুষ ও মহিলার নামাযের অভিন্ন পদ্ধতির পক্ষে কথা বলে, তাদের আলেমরা এ বিষয়ে কি বলে এবং তারা কি ফতওয়া দিয়েছে? তা নিম্নে আলোচনা করা হলো।
-আল্লামা সাইয়্যিদ মুহম্মদ আব্দুল হালিম।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
হযরত উম্মে সুরাইকা দাওসিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহা
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
মহাসম্মানিত মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনারা বেমেছাল ফযীলত মুবারকের অধিকারী
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সর্বক্ষেত্রে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে প্রাধান্য দিতে হবে
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সৃষ্টির শুরুতেই মহান আল্লাহ পাক উনার কুদরত মুবারক উনার মধ্যে ছিলেন, আছেন এবং অনন্তকাল থাকবেন
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
মহান আল্লাহ পাক তিনি তওবাকারীকে পছন্দ করেন (৩)
১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
ক্বলবী যিকির জারী না থাকলে শয়তানের ওয়াসওয়াসা থেকে বেঁচে থাকা সম্ভব নয়
১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
দোযখে বেপর্দা হওয়া নারীদের শাস্তির বর্ণনা (১০)
১৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
জামায়াতের জন্য মহিলাদের মসজিদে ও ঈদগাহে যাওয়া হারাম ও কুফরী (৪)
১৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সম্বোধন মুবারক করার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ আদব-শরাফত বজায় রাখতে হবে
১৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব-কর্তব্য
১১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
তিন ধরনের লোক বেহেশতে প্রবেশ করবে না
১১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সর্বাবস্থায় আজল বা তাড়াহুড়া না করে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত
১০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার)












