সুওয়াল-জাওয়াব:
প্রসঙ্গ গণতন্ত্র বিষয়ে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি মনগড়া মিথ্যা অপবাদ (১)
, ১৪ রবীউল আউওয়াল শরীফ, ১৪৪৭ হিজরী সন, ১০ রবি’, ১৩৯৩ শামসী সন , ০৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ খ্রি:, ২৩ ভাদ্র, ১৪৩২ ফসলী সন, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) শিক্ষামূলক জিজ্ঞাসা
সুওয়াল:
অনেক পাঠ্যবইয়ে লেখা হয়ে থাকে যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করে রাজনৈতিক নেতৃত্বের অসাধারণ দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করেছেন। রাষ্ট্র পরিচালনায় আল কুরআনের সর্বজনীন গণতান্ত্রিক নীতি অনুসরণ করেন। ... দেশ পরিচালনায় জনগণের মতামতের স্বীকৃতি দেন। যা গণতন্ত্রের মূল কথা। ” নাউযুবিল্লাহ! এ লেখাটি কতটুকু শরীয়তসম্মত?
সুওয়ালে উল্লেখিত লেখা থেকে যেসব প্রশ্ন উত্থাপিত হয় তা হচ্ছে-
১. নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন? ২. তিনি কি রাজনৈতিক নেতৃত্বের অসাধারণ দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন? ৩. তিনি কি রাষ্ট্র পরিচালনা করেছিলেন? ৪. তিনি কি গণতান্ত্রিক নীতি অনুসরণ করেছিলেন? ৫. পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে কি গণতান্ত্রিক নীতি সম্পর্কে বর্ণিত রয়েছে? ৬. তিনি কি জনগণের মতামতের স্বীকৃতি দিয়েছিলেন? নাউযুবিল্লাহ!
জাওয়াব: (১ম অংশ)
জাওয়াব:
সুওয়ালে উল্লেখিত লেখাটি সম্পূর্ণরূপে সম্মানিত কুরআন শরীফ ও সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনাদের খিলাফ হয়েছে। অর্থাৎ কাট্টা কুফরী হয়েছে। প্রথমত নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শান মুবারক উনার খিলাফ হয়েছে। কারণ তিনি কখনো রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেননি এবং রাজনীতি করেননি আর নেতৃত্বও দেননি।
আর সুওয়ালে উল্লেখিত লেখা থেকে যেসব প্রশ্ন উত্থাপিত হয় তার জাওয়াব ধারাবাহিকভাবে নিম্নে দেয়া হলো:
প্রশ্ন নং: ১. নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন?
উক্ত ১নং প্রশ্নের জাওয়াবে বলতে হয় যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কখনো রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেননি। বরং তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার সম্মানিত ওহী মুবারক দ্বারা নাযিলকৃত সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার আহকাম প্রচার ও প্রতিষ্ঠা করেন।
আর সম্মানিত দ্বীন ইসলাম আর রাষ্ট্র একই বিষয় নয়। সম্পূর্ণ বিপরীতধর্মী বা বিপরীতমুখী বিষয়। সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার সাথে রাষ্ট্রের কোনই সম্পর্ক নেই। রাষ্ট্র পরিচালনা ও প্রতিষ্ঠার বিষয়টি কেবলমাত্র মানুষের সাথে সম্পর্কযুক্ত। তা পুরুষ-মহিলা, ফাসিক-ফুজ্জার, কাফির-মুশরিক, জাহিল-মূর্খ যে কেউ করতে পারে। কিন্তু সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার প্রতিষ্ঠার বিষয়টি মহান আল্লাহ পাক উনার সাথে সম্পর্কযুক্ত। উনার তরফ থেকে নাযিলকৃত সম্মানিত ওহী মুবারক উনার সাথে সম্পর্কযুক্ত। উনার সম্মানিত, মনোনীত ও শ্রেষ্ঠতম রসূল, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে সম্পর্কযুক্ত এবং উনার মনোনীত খলীফা ও নায়িব হযরত খুলাফায়ে রাশিদীন আলাইহিমুস সালাম উনাদের সাথে এবং হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের সাথে সম্পর্কযুক্ত এবং হযরত তাবিয়ীনে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম এবং হযরত ইমাম মুজতাহিদ আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের সাথে সম্পর্কযুক্ত।
উল্লেখ্য, সম্মানিত দ্বীন ইসলাম রাষ্ট্রকে সমর্থন বা স্বীকার করেনা। কেননা সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার পরিধি হচ্ছে সারা বা সমস্ত বিশ্বব্যাপী কিন্তু রাষ্ট্রের পরিধি সীমিত। রাষ্ট্রের সংজ্ঞা সম্পর্কে রাষ্ট্র বিজ্ঞানীরা বলে থাকে, রাষ্ট্রের কয়েকটি উপাদান থাকা আবশ্যক। (১) সার্বভৌমত্ব (২) জনসমষ্টি (৩) নির্দিষ্ট ভৌগোলিক সীমারেখা (৪) সরকার ইত্যাদি।
অথচ সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উপরোক্ত বৈশিষ্ট্যধারী কোনো রাষ্ট্রকে সমর্থন করে না। কারণ রাষ্ট্র পরিচালনা করলে তা হবে হয় রাজতন্ত্র, নয় গণতন্ত্র অথবা মানব রচিত অন্য কিছু যার সাথে সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার কোনো সম্পর্ক নেই। কেননা রাষ্ট্র পরিচালনাকারীকে প্রধানমন্ত্রী অথবা প্রেসিডেন্ট বা রাষ্ট্রপ্রধান ইত্যাদি বলে।
কাজেই, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন মর্মে যে বক্তব্য লেখা হয়েছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা যা উনার পবিত্র শান মুবারক উনার চরম খিলাফ হওয়ার কারণে কুফরী হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে যে, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
اتَّقُوا الْحَدِيثَ عَنِّى إِلاَّ مَا عَلِمْتُمْ فَمَنْ كَذَبَ عَلَىَّ مُتَعَمِّدًا فَلْيَتَبَوَّأْ مَقْعَدَهُ مِنَ النَّارِ
অর্থ: “তোমরা যা জান, তা ব্যতীত আমার থেকে পবিত্র হাদীছ শরীফ বর্ণনা করার ব্যাপারে ভয় করো। কেননা যে ব্যক্তি স্বেচ্ছায় আমার প্রতি মিথ্যারোপ করবে, সে যেন দুনিয়ায় থাকতেই তার স্থান জাহান্নামে নির্ধারণ করে নিলো। ” (তিরমিযী শরীফ, ইবনে মাজাহ শরীফ)
মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র সূরা আলে ইমরান শরীফ উনার ১৯ নং পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-
إِنَّ الدِّينَ عِنْدَ اللَّهِ الْإِسْلَامُ
অর্থ: “নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট একমাত্র মনোনীত পবিত্র দ্বীন হচ্ছে ইসলাম। ”
আবার একই পবিত্র সূরা শরীফ উনার ৮৫ নং পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
وَمَنْ يَبْتَغِ غَيْرَ الْإِسْلَامِ دِينًا فَلَنْ يُقْبَلَ مِنْهُ وَهُوَ فِي الْآخِرَةِ مِنَ الْخَاسِرِينَ
অর্থ: “যে পবিত্র দ্বীন ইসলাম ব্যতীত অন্য কোনো ধর্ম বা মতবাদের নিয়ম-নীতি গ্রহণ করবে সেটা তার থেকে কবুল করা হবে না এবং সে পরকালে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে অর্থাৎ জাহান্নামী হবে। ” নাউযুবিল্লাহ!
মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ উনার অন্যত্র ইরশাদ মুবারক করেন-
هُوَ الَّذِي أَرْسَلَ رَسُولَهُ بِالْهُدَى وَدِينِ الْحَقِّ لِيُظْهِرَهُ عَلَى الدِّينِ كُلِّهِ وَكَفَى بِاللَّهِ شَهِيدًا
অর্থ: মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার শ্রেষ্ঠতম রসূল নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সত্য দ্বীন এবং হিদায়েতসহ পাঠিয়েছেন অতীতের সমস্ত দ্বীনের উপর এবং অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যত মানব রচিত সমস্ত মতবাদের উপর প্রাধান্য দিয়ে, যার সাক্ষী স্বয়ং মহান আল্লাহ পাক তিনি নিজেই। (পবিত্র সূরা ফাতাহ শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ২৮)
উপরোক্ত পবিত্র আয়াত শরীফসমূহ দ্বারা স্পষ্ট হয়ে গেছে যে, পবিত্র দ্বীন ইসলাম ব্যতীত অন্য তর্জ-তরীক্বা, মতবাদ (যেমন- গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, রাজতন্ত্র) সম্পূর্ণরূপে হারাম। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-
مَنْ تَشَبَّهَ بِقَوْمٍ فَهُوَ مِنْهُمْ
“যে ব্যক্তি যে সম্প্রদায়ের সাথে মিল রাখবে, তার হাশর-নশর তাদের সাথেই হবে। ” (মুসনাদে আহমদ শরীফ, আবু দাউদ শরীফ)
তাহলে এ কথা কি করে বলা সম্ভব যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি রাষ্ট্রপ্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তাই অতিশীঘ্রই এই কুফরীমূলক বক্তব্য পাঠ্যবই থেকে অপসারণ করতে হবে।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
প্রসঙ্গ: হজ্জের ফরজ আদায়ে হারাম ছবি তোলাকে সাময়িক বৈধতা প্রদান....
০২ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সুন্নতী কদমবুছি বিষয়ে কওমী মুখপত্রের শরীয়তের খেলাফ বক্তব্যের খন্ডনমূলক জাওয়াব
০১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
কথিত ট্রান্সজেন্ডার বিষয়ে শরঈ ফতওয়া (১৪)
৩০ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
প্রসঙ্গ: হজ্জের ফরজ আদায়ে হারাম ছবি তোলাকে সাময়িক বৈধতা প্রদান....
২৫ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
হযরত আদম আলাইহিস সালাম ও হযরত হাওয়া আলাইহাস সালাম উনাদেরকে ‘নাফরমান’ বলা চরম বেয়াদবী ও কুফরী (৬)
২৪ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
হযরত আদম আলাইহিস সালাম ও হযরত হাওওয়া আলাইহাস সালাম উনাদেরকে ‘নাফরমান’ বলা চরম বেয়াদবী ও কুফরী (৫)
১৭ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
প্রসঙ্গ: পুরুষ-মহিলা নামায আদায়ের ছহীহ পদ্ধতি
১১ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
হযরত আদম আলাইহিস সালাম ও হযরত হাওওয়া আলাইহাস সালাম উনাদেরকে ‘নাফরমান’ বলা চরম বেয়াদবী ও কুফরী (৪)
১০ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
প্রসঙ্গ: পবিত্র সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ পালন সম্পর্কে বাতিলদের মনগড়া বক্তব্য খন্ড
০৪ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
হযরত আদম আলাইহিস সালাম ও হযরত হাওওয়া আলাইহাস সালাম উনাদেরকে ‘নাফরমান’ বলা চরম বেয়াদবী ও কুফরী (৩)
০৩ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
কথিত ট্রান্সজেন্ডার বিষয়ে শরঈ ফতওয়া (১০)
০২ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
প্রসঙ্গ: পবিত্র সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ পালন সম্পর্কে বাতিলদের মনগড়া বক্তব্য খন্ডন
২৮ অক্টোবর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার)












