সুওয়াল-জাওয়াব:
প্রসঙ্গ পারিবারিক সম্পত্তি বণ্টন
, ১৫ই রবিউছ ছানী শরীফ, ১৪৪৭ হিজরী সন, ০৯ খমীছ, ১৩৯৩ শামসী সন , ০৮ অক্টোবর, ২০২৫ খ্রি:, ২৪ আশ্বিন, ১৪৩২ ফসলী সন, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) শিক্ষামূলক জিজ্ঞাসা
সুওয়াল:
পিতার যৌথ সংসার থেকে বড় ছেলে কিছু সম্পদ তার নামে করে নিয়েছে এবং পিতার ওয়ারিশ সূত্রে সম্পদ থেকেও অর্ধেক সম্পদ নিয়েছে। পিতাও তাকে (বড় ছেলে) মহব্বত করে নয় কাঠা জমি দিয়েছে। এরূপ করা পিতা এবং বড় ছেলের জন্য ঠিক হয়েছে কি?
জাওয়াব:
এটা সম্পূর্ণরূপে নাজায়িয ও হারাম হবে। পিতা ও বড় ভাই উভয়ে কবীরা গুনাহে গুনাহগার হবে এবং পরকালে বড় ছেলে এবং পিতা উভয়কেই জাহান্নামের কঠিন শাস্তির সম্মুখীন হতে হবে। নাউযুবিল্লাহ!
এ প্রসঙ্গে পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
وَلَا تَأْكُلُوا أَمْوَالَكُمْ بَيْنَكُمْ بِالْبَاطِلِ
অর্থ: তোমরা অন্যায়ভাবে একে অপরের সম্পদ ভোগ করো না অর্থাৎ আত্মসাত করো না। (পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১৮৮)
আর পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ سَعِيدِ بْنِ زَيْدٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ أَخَذَ شِبْرًا مِنَ الأَرْضِ ظُلْمًا فَإِنَّهٗ يُطَوَّقُهٗ يَوْمَ الْقِيَامَةِ مِنْ سَبْعِ أَرَضِينَ.
অর্থ: হযরত সায়ীদ ইবনে যায়িদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যে ব্যক্তি কারো এক বিঘত যমীন যলুম করে দখল করবে, ক্বিয়ামতের দিন তার গলায় সাত তবক যমীন বেড়িরূপে পরিয়ে দেয়া হবে। (বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ)
আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ أَبِى حُرَّةَ الرَّقَاشِىِّ عَنْ عَمِّهِ أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: أَلاَ لاَ تَظْلِمُوا أَلاَ لاَ يَحِلُّ مَالُ امْرِئٍ إِلاَّ بِطِيبِ نَفْسٍ مِنْهُ،
অর্থ: তাবিয়ী হযরত আবু হুররা রাক্কাশী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার চাচা (ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু) উনার থেকে বর্ণনা করেন যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, সাবধান! যুলুম করো না। সাবধান কারো মাল তার মনের সন্তুষ্টি ব্যতীত নেয়া কারো জন্য হালাল নয়। (বাইহাক্বী, শুয়াবুল ঈমান, দারু কুতনী)
عَنْ حَضْرَتْ سَالِمٍ ، عَنْ أَبِيهِ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: مَنْ أَخَذَ مِنَ الأَرْضِ شَيْئًا بِغَيْرِ حَقِّهِ خُسِفَ بِهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ إِلَى سَبْعِ أَرَضِينَ.
অর্থ: বিশিষ্ট তাবিয়ী হযরত সালিম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার পিতা হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যে অন্যায়ভাবে কারো কোন যমীন নিয়েছে, ক্বিয়ামতের দিন তাকে সাত তবক যমীন পর্যন্ত ধ্বসিয়ে দেয়া হবে। (বুখারী শরীফ)
عَنْ حَضْرَتْ يَعْلَى بْنَ مُرَّةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: مَنْ أَخَذَ أَرْضًا بِغَيْرِ حَقِّهَا، كُلِّفَ أَنْ يَحْمِلَ تُرَابَهَا إِلَى الْمَحْشَرِ.
অর্থ: হযরত ইয়া’লা ইবনে মুররা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি অন্যায়ভাবে কারো কোন জমি দখল করেছে, তাকে তার মাটি (মাথায় করে) হাশরের মাঠে নিয়ে যেতে বাধ্য করা হবে। (আহমদ শরীফ)
عَنْ حَضْرَتْ يَعْلَى بْنَ مُرَّةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ أَيُّمَا رَجُلٍ ظَلَمَ شِبْرًا مِنَ الأَرْضِ كَلَّفَهُ اللهُ أَنْ يَحْفِرَهُ حَتَّى يَبْلُغَ آخِرَ سَبْعِ أَرَضِينَ، ثُمَّ يُطَوَّقَهُ إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ حَتَّى يَقْضَى بَيْنَ النَّاسِ.
অর্থ: হযরত ইয়া’লা ইবনে মুররা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, আমি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে বলতে শুনেছি, যে কোন ব্যক্তি অন্যায়ভাবে কারো এক বিঘত জমি দখল করে, তাকে মহান আল্লাহ পাক তিনি সাত তবকের শেষ পর্যন্ত খুঁড়তে বাধ্য করবেন। অতঃপর তার গলায় তা বেরীরূপে পরিয়ে দেয়া হবে, যতক্ষণ পর্যন্ত না ক্বিয়ামতের দিন মানুষের বিচার শেষ করা হয়। (আহমদ শরীফ)
কাজেই, কোন ছেলের জন্য যৌথ সংসার থেকে জমি বা টাকা-পয়সা নিজের নামে নেয়া যেরূপ জায়িয নয় তদ্রƒপ পিতা ও মাতার জন্যও কোন ছেলেকে বা মেয়েকে বেশি দেয়াটা জায়িয নয় বরং কবীরা গুনাহে গুনাহগার হবে। এবং পরকালে কঠিন আযাবের সম্মুখিন হবে। (দলীলসমূহ: তাফসীরে আহকামুল কুরআন, তাফসীরে কুরতুবী, তাফসীরে মাযহারী, তাফসীরে দুররে মানছূর, বুখারী শরীফ, বাইহাক্বী, শুয়াবুল ঈমান, দারু কুতনী, আহমদ শরীফ মিশকাত শরীফ, মিরকাত শরীফ, ফতওয়ায়ে আলমগীরী, শামী, আইনুল হিদায়া, বাহরুর রায়িক, ফতহুল ক্বাদির, দুরুরল মুখতার, বেনায়া ইত্যাদি)
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
প্রসঙ্গ: হজ্জের ফরজ আদায়ে হারাম ছবি তোলাকে সাময়িক বৈধতা প্রদান....
০২ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সুন্নতী কদমবুছি বিষয়ে কওমী মুখপত্রের শরীয়তের খেলাফ বক্তব্যের খন্ডনমূলক জাওয়াব
০১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
কথিত ট্রান্সজেন্ডার বিষয়ে শরঈ ফতওয়া (১৪)
৩০ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
প্রসঙ্গ: হজ্জের ফরজ আদায়ে হারাম ছবি তোলাকে সাময়িক বৈধতা প্রদান....
২৫ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
হযরত আদম আলাইহিস সালাম ও হযরত হাওয়া আলাইহাস সালাম উনাদেরকে ‘নাফরমান’ বলা চরম বেয়াদবী ও কুফরী (৬)
২৪ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
হযরত আদম আলাইহিস সালাম ও হযরত হাওওয়া আলাইহাস সালাম উনাদেরকে ‘নাফরমান’ বলা চরম বেয়াদবী ও কুফরী (৫)
১৭ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
প্রসঙ্গ: পুরুষ-মহিলা নামায আদায়ের ছহীহ পদ্ধতি
১১ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
হযরত আদম আলাইহিস সালাম ও হযরত হাওওয়া আলাইহাস সালাম উনাদেরকে ‘নাফরমান’ বলা চরম বেয়াদবী ও কুফরী (৪)
১০ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
প্রসঙ্গ: পবিত্র সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ পালন সম্পর্কে বাতিলদের মনগড়া বক্তব্য খন্ড
০৪ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
হযরত আদম আলাইহিস সালাম ও হযরত হাওওয়া আলাইহাস সালাম উনাদেরকে ‘নাফরমান’ বলা চরম বেয়াদবী ও কুফরী (৩)
০৩ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
কথিত ট্রান্সজেন্ডার বিষয়ে শরঈ ফতওয়া (১০)
০২ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
প্রসঙ্গ: পবিত্র সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ পালন সম্পর্কে বাতিলদের মনগড়া বক্তব্য খন্ডন
২৮ অক্টোবর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার)












