বদ নযর বা কুদৃষ্টি এবং তার শরয়ী আহকাম (২)
, ১৬ ছফর শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ২৪ ছালিছ, ১৩৯২ শামসী সন , ২২ আগষ্ট, ২০২৪ খ্রি:, ০৭ ভাদ্র , ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
বদ নযর কি? বদ নযর কাকে বলে?
পবিত্র হাদীছ শরীফে আরো বর্ণিত আছে-
عَنْ حَضْرَتْ اُمِّ الْمُؤْمِنِيْنَ السَّادِسَةِ اُمِّ سَلَمَةَ عَلَيْهَا السَّلَامُ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ رَأَى فِي بَيْتِهَا جَارِيَةً فِي وَجْهِهَا سَفْعَةٌ فَقَالَ اسْتَرْقُوا لَهَا فَإِنَّ بِهَا النَّظْرَةَ.
অর্থ: হযরত উম্মুল মু’মিনীন আস সাদিসাহ আলাইহাস সালাম তিনি বর্ণনা করেন, একদিন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার পবিত্র হুজরা শরীফে তাশরীফ মুবারক নিলেন। একজন বালিকা দেখলেন, যার চেহারায় জ্বিনের বদ নযরের আলামত ছিলো। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, এই বালিকাকে রুকইয়া বা ঝাড়-ফুঁক করুন। কারণ উনার বদ নযর লেগেছে। (বুখারী শরীফ-৫৪০৭, মুসলিম শরীফ-৪০৭৪)
পবিত্র হাদীছ শরীফে আরো বর্ণিত আছে-
عَنْ حَضْرَتْ اُمِّ الْمُؤْمِنِيْنَ الثَّالِثَةِ عَائِشَةَ عَلَيْهَا السَّلَامُ قَالَتْ قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى الله عَليْهِ وَسَلَّمَ :اِسْتَعِيذُوْا بِاللهِ فَإِنَّ الْعَيْنَ حَقٌّ.
অর্থ: হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম তিনি বর্ণনা করেন, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, তোমরা মহান আল্লাহ পাক উনার কাছে বদ নযর থেকে পানাহ চাও। কেননা বদ নযর সত্য তথা তার বদ তা’ছীর রয়েছে। (ইবনু মাজাহ শরীফ- ৩৫০৮,রুকইয়াহ-৭২)
বদ নযরের বদ তা’ছীর বা খারাপ প্রভাব:
বদ নযরের বদ প্রভাব মারাত্মক। ইহা অতি দ্রুত প্রভাব বিস্তার করে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি খুবই তাড়াতাড়ি অসুস্থ হতে পারে। এমনকি বদ নযরে আক্রান্ত ব্যক্তির মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। পশু-পাখির ক্ষেত্রেও একই অবস্থা প্রযোজ্য। ক্ষেত-খামার, গাছ-পালার উপর বদ দৃষ্টি পড়ে গেলে ফল-ফসল নষ্ট হয়ে যেতে পারে। পবিত্র হাদীছ শরীফে বর্ণিত আছে-
عَنْ حَضْرَتْ جَابِرٍ رَضِيَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِنَّ الْعَيْنَ لَتُدْخِلُ الرَّجُلَ الْقَبْرَ، وَتُدْخِلُ الْجَمَلَ الْقِدْرَ.
অর্থ: হযরত জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, বদ নযর মানুষকে কবর পর্যন্ত নিয়ে যায়। আর উটকে নিয়ে যায় রান্নার পাতিলে। অর্থাৎ কারো উপর বদ নযর বা কুদৃষ্টি পড়ে গেলে সে রোগাক্রান্ত হয়ে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। আর পশু-পাখির উপর পড়ে গেলে তারাও রান্নার উপযোগী তথা অস্তিত্ব বিলীন হতে পারে। (মুসনাদে শিহাব-৯৯০, রুকইয়াহ-৭২)
পবিত্র হাদীছ শরীফে আরো বর্ণিত আছে-
عَنْ حَضْرَتْ اِبْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ عَنِ النَّبِىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ اَلْعَيْنُ حَقٌّ وَلَوْ كَانَ شَىْءٌ سَابَقَ الْقَدَرَ سَبَقَتْهُ الْعَيْنُ وَإِذَا اسْتُغْسِلْتُمْ فَاغْسِلُوا.
অর্থ: রঈসুল মুফাসসিরীন হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, বদ নযর বা কুদৃষ্টি সত্য। তার প্রভাব আছে। তাকদীরের চেয়ে অগ্রগামী যদি কিছু থাকতো তাহলে অবশ্যই সেটা হতো বদ নযর বা কুদৃষ্টি। কাজেই যদি তোমাদের কাউকে বদ নযর থেকে সুস্থতার জন্য গোসল করতে বলা হলে সে যেন গোসল করে। (মুসলিম শরীফ ৪০৬৫)
পবিত্র হাদীছ শরীফে আরো বর্ণিত আছে-
عَنْ حَضْرَتْ عَبْدِ الرَّحْمٰنِ بْنِ جَابِرٍ رَضِيَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ عَنْ أَبِيهِ أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ جُلُّ مَنْ يَمُّوتُ مِنْ أُمَّتِي بَعْدَ قَضَاءِ اللهِ وَكِتَابِهِ وَقَدَرِهِ بِالأَنْفُسِ يَعْنِي بِالْعَيْنِ.
অর্থ: হযরত আব্দুর রহমান ইবনে জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার পিতা থেকে বর্ণনা করেন, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, মহান আল্লাহ পাক উনার ফায়ছালা ও তাকদীরের পর আমার উম্মতের সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হবে বদ নযরের কারণে। (মুসনাদে আবূ দাউদ ত্বয়ালিসী ১৮৫৮)
পবিত্র হাদীছ শরীফে আরো বর্ণিত আছে-
عَنْ حَضْرَتْ اِبْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْعَيْنُ حَقٌّ تَسْتَنْزِلُ الْحَالِقَ.
অর্থ: হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন- বদ নযর মানুষকে যেন উঁচু থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয় অর্থাৎ অতি দ্রুত প্রভাব বিস্তার করে। (মুসনাদে আহমদ-২৪৭৩,মুসতাদরাকে হাকিম-৭৫৭৩)
কাজেই, বদ নযর বা কুদৃষ্টি থেকে বেঁচে থাকা ফরয।
-আল্লামা সাইয়্যিদ মুহম্মদ আব্দুল হালীম।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
পবিত্র ‘ছলাতুল জুমুয়াহ’ উনার পূর্বে ৪ রাকায়াত সুন্নত নামায অর্থাৎ পবিত্র ‘ক্বাবলাল জুমুয়াহ’ নামায নিয়ে বাতিলপন্থিদের বিভ্রান্ত্রিকর ও মিথ্যা বক্তব্যের দলীলভিত্তিক জাওয়াব (৮)
২১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
কাফির মুশরিকদের থেকে দূরে থাকতে এবং তাদেরকেও দূরে রাখার ব্যাপারে নির্দেশ মুবারক
২০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সম্মানিত ইসলামী শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে- ফুটবল-ক্রিকেটসহ সর্বপ্রকার খেলাধুলা করা, সমর্থন করা হারাম ও নাজায়িয (২)
২০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
যেখানে প্রাণীর ছবি থাকে, সেখানে রহমতের ফেরেশতা প্রবেশ করেন না
২০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের সম্মানিত ৩টি স্তর
২০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
আসমাউর রিজাল, জারাহ ওয়াত তা’দীল, উছুলে হাদীছ শরীফ উনার অপব্যাখ্যা করে অসংখ্য ছহীহ হাদীছ শরীফ উনাকে জাল বলছে ওহাবী সালাফীরা (৩)
২০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
পর্দা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া কবীরা গুনাহ
১৯ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৯ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
হযরত আব্বাস ইবনে মিরদাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
যাকাত সম্পর্কিত আহকাম, মাসায়িল ও ফাযায়িল (৪)
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার)












