বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও চিকিৎসকরা লাভবান হলেও চিকিৎসার উচ্চ ব্যয় মেটাতে গিয়ে প্রতিবছর দারিদ্রসীমায় চলে যাচ্ছে অর্ধকোটি মানুষ চিকিৎসার সরকারি ব্যয় আগের তুলনায় বেড়েছে। তারপরও মানুষের চিকিৎসা ব্যয় বেড়েই চলেছে। যার বড় একটি কারণ চিকিৎসকদের একটি অংশের অনৈতিক সুবিধা গ্রহণ সরকারকে সত্ত্বর ব্যবস্থা নিতে হবে।
, ১৪ শাওওয়াল শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ২৫ হাদী আশার, ১৩৯১ শামসী সন , ২৪ এপ্রিল, ২০২৪ খ্রি:, ১১ বৈশাখ, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) মন্তব্য কলাম
দৈনিক আল-ইহসানের প্রতিবেদনে জানা গেছে, ডায়াগনস্টিক পরীক্ষার পেছনে খরচের তুলনায় বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে রোগীদের গুনতে হচ্ছে অন্তত পাঁচগুণ বেশি অর্থ। চিকিৎসকদের কমিশন দেওয়ায় খরচ বেড়ে যায় বলে জানিয়েছেন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা।
রাজধানীর ধানমন্ডির প্রথম সারির একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারের তথ্য বলছে, থাইরয়েড হরমোন টিএসএইচ পরীক্ষার ক্ষেত্রে ৬০ টাকার রিএজেন্ট, ৫০ টাকার সহায়ক ম্যাটেরিয়াল, জনবল ও লজিস্টিক বাবদ ৫০ টাকাসহ সর্বোচ্চ খরচ হয় ১৬০ টাকা। একইভাবে লিপিড প্রোফাইলে ২৭৭ টাকা এবং হেপাটাইটিস নির্ণয়ে খরচ ১৯০ টাকা। অথচ এসব পরীক্ষায় ডায়াগনস্টিক সেন্টারভেদে টিএসএইচ পরীক্ষয় ১৬০ টাকার বিপরীতে ৬০০-১১০০ টাকা, লিপিড প্রোফাইলে ৭৫০-১৫০০ টাকা এবং হেপাটাইটিসে ৪৫০-১২০০ টাকা নেওয়া হচ্ছে। ফলে একেকটি রোগ নির্ণয়ে রোগীদের পরিশোধ করতে হচ্ছে খরচের পাঁচ থেকে দশগুণ বেশি অর্থ।
রাজধানীর ধানমন্ডির ল্যাবএইড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে লিপিড প্রোফাইল পরীক্ষার মূল্য ১ হাজার ৩৯০ টাকা। একই মানের পপুলার ও ইবনে সিনায় তা ১০০০ ও ৮০৭ টাকা। একইভাবে টিএসএইচ পরীক্ষায় ল্যাবএইডে যেখানে ১ হাজার ৩০০ টাকা, পপুলারে তা ৯০০ এবং ইবনে সিনায় নেওয়া হচ্ছে ৬৫৭ টাকা। অর্থাৎ একই এলাকার প্রায় একই মানের ডায়াগনস্টিক সেন্টারে দামের পার্থক্য কয়েক ধরণের।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানান, ‘আমাদের এখানে প্রতি মাসে গড়ে লাখের বেশি প্যাথলজিক্যাল পরীক্ষা হয়ে থাকে। এসব পরীক্ষার বড় একটি অংশ আসে সরকারি হাসপাতালের চুক্তিবদ্ধ চিকিৎসকদের মাধ্যমে। ফলে ওই চিকিৎসকদের বড় একটি অংশকে কমিশন দিতে হয়। ’
দীর্ঘদিন ধরে কিডনি সমস্যায় ভুগতে থাকা আয়েশা বেগমকে (৪২) আনা হয় রাজধানীর জাতীয় কিডনি রোগ ও ইউরোলজি ইনস্টিটিউটে। প্রতিষ্ঠানটিতে সব ধরণের পরীক্ষার ব্যবস্থা থাকলেও দুই ধরণের প্রসাব পরীক্ষা করাতে রোগীর স্বজনকে পাশের পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পাঠান দায়িত্বরত চিকিৎসক।
আবার পেটব্যথা নিয়ে একই দিন দুপুর ১২টায় শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বহির্বিভাগে যান শামিমা সুলতানা (৩০)। পরে মেডিসিন থেকে সার্জারি বিভাগে পাঠানো হয়, ভর্তিও করানো হয় তাকে। এ হাসপাতালে এমআরআই ছাড়া প্রায় সব ধরণের পরীক্ষা হলেও সিটি স্কেন করতে পাশের ভিক্টোরিয়া হেলথ কেয়ারে পাঠান কর্তব্যরত চিকিৎসক।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল, হৃদরোগ ও কিডনি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসা নিতে আসা অনেক রোগীকে পাশের পপুলার, ভিক্টোরিয়া হেলথ কেয়ার, রয়্যাল ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মতো প্রতিষ্ঠানে পাঠানো হয়। এতে করে সরকারি হাসপাতালের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি দামে পরীক্ষা করাতে হচ্ছে রোগীদের।
দেশে প্রতিবছর চিকিৎসার পেছনে রোগীদের যত অর্থ ব্যয় হয়, তার বড় অংশই যায় রোগ নির্ণয়ে। এসব রোগ নির্ণয়ের (ডায়াগনসিস) সিংহভাগই হয় বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে, যেখানে সরকারি হাসপাতালের তুলনায় কয়েকগুণ বেশি অর্থ খরচ হয়। এ তথ্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিটের। আর এই অতিরিক্ত ব্যয়ের প্রধান কারণ হিসেবে দায়ী করা হচ্ছে বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে চিকিৎসকদের অনৈতিক সুবিধা গ্রহণকে। সরকারিভাবে সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি পাওয়ার পরও বর্তমানে দেশের ৮৫ ভাগ রোগী বেসরকারি চিকিৎসার ওপর নির্ভরশীল। এর পেছনের অন্যতম প্রধান কারণও এই অনৈতিক চর্চা। এ অবস্থায় বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও চিকিৎসকরা লাভবান হলেও চিকিৎসার উচ্চ ব্যয় মেটাতে গিয়ে প্রতিবছর দারিদ্র্যসীমায় চলে যাচ্ছে অর্ধকোটি মানুষ।
চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দেশের সরকারি হাসপাতালের ২০-২৫ শতাংশ চিকিৎসক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে রোগী পাঠিয়ে বিশেষ সুবিধা নেন। এই কাজে সবচেয়ে বেশি এগিয়ে কনস্যালট্যান্ট, সহযোগী ও সহকারী অধ্যাপকরা। তবে অধ্যাপক ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের অনেকে এড়িয়ে যান। দেখা গেছে, যত বড় নামকরা প্রতিষ্ঠান, চিকিৎসকদের কমিশন প্রদানের হার তার তত বেশি।
রাজধানীসহ সারাদেশে ব্যাঙ্গের ছাতার মতো গজিয়ে উঠেছে হাজার হাজার প্যাথলজিক্যাল ল্যাবরেটরি ও ডায়াগনষ্টিক সেন্টার। অভিযোগ রয়েছে হাতেগোনা কয়েক প্রতিষ্ঠান ছাড়া অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান মোটা অঙ্কের কমিশন (শতকরা ৩০ভাগ থেকে ৫০ভাগ) গোপন চুক্তিতে চিকিৎসকদের দিয়ে সুচিকিৎসার নামে বিভিন্ন ক্লিনিক্যাল ও প্যাথলজিক্যাল পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাচ্ছেন। ডাক্তারদের কমিশন বাণিজ্যের জন্য প্রাইভেট হাসপাতাল ও ক্লিনিকের নিয়োগকৃত দালাল রয়েছে। আবার অনেক চিকিৎসক নিজেই দালালদের হয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। দালালরা হাসপাতাল থেকে রোগী ভাগিয়ে নিয়ে প্রাইভেট ক্লিনিক, বেসরকারি হাসপাতাল, ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পাঠিয়ে রোগীদের বিড়ম্বনায় ফেলে। তাতে ডাক্তারের কমিশন বাণিজ্য একটু কম হয় বলেই এখন স্বয়ং ডাক্তাররাই সেই দালালদের ভূমিকায় অবতীর্ণ হচ্ছেন। যেমন কোনো মধ্যস্বত্বভোগী দালালের মাধ্যমে রোগীকে অন্যত্র পরীক্ষা নিরীক্ষা করালে মূল টাকার বিশ শতাংশ ডাক্তারের পকেটে আসে, সেক্ষেত্রে ডাক্তার নিজেই সরাসরি অন্যত্র নিয়ে গেলে বা পাঠালে মূল টাকার পঞ্চাশ থেকে ষাট শতাংশই পাওয়া যায়।
উল্লেখ্য চিকিৎসকদের কমিশন বাণিজ্য বিষয়টি অনৈতিক ও পেশাগত বিধিমালার পরিপন্থী। চিকিৎসা সেবায় সম্পৃক্ত ব্যক্তি প্রতিষ্ঠানের বাণিজ্যিক মনোভাবের কারণে চিকিৎসা ব্যয় বৃদ্ধি পায়। রোগীদের ভোগান্তি বাড়ে। চিকিৎসকদের কমিশন গ্রহণ একটি অন্যায় এবং অনৈতিক কাজ। এটি মোকবেলার জন্য উপযুক্ত আইন প্রণয়নের কাজও চলছে। এছাড়া এ ধরণের ঘটনা প্রতিরোধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি পেশাগত নীতিমালা রক্ষায় চিকিৎসক সমাজকে এগিয়ে আসতে হবে। এটি বন্ধ করতে সংশ্লিষ্ট সবাইসহ সরকারকেই সর্বাগ্রে এগিয়ে আসতে হবে।
-আল্লামা মুহম্মদ ওয়ালীউর রহমান।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
প্রসঙ্গ: মুসলিম দেশগুলোর সাথে সম্পর্ক জোরদারের আহবান প্রধানমন্ত্রীর। সামরিক ও অর্থনৈতিক শক্তিতে গোটা অমুসলিম বিশ্ব মুসলিম বিশ্বের মুখাপেক্ষী। সম্মানীত দ্বীন ইসলাম বিমুখ ও ভাতৃত্ববোধের অভাবে সম্রাজ্যবাদীরা প্রভাব বিস্তার করছে মুসলিম বিশ্বের উপর ভ্রাতৃত্ববোধে বলিয়ান হয়ে মুসলিম বিশ্ব একজোট হলে কাফির বিশ্ব পদানত হতে বাধ্য।
০৬ মে, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
পবিত্র দ্বীন ইসলাম অন্যান্য ধর্মের সাথে সমমর্যাদার ভিত্তিতে সহাবস্থানে থাকতে পারে না। পবিত্র দ্বীন ইসলাম কখনোই কথিত ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’র অধীন হতে পারে না।
০৫ মে, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম মদের বিরুদ্ধে দিয়েছে অসংখ্য সতর্কবাণী ও নির্দেশনা। অথচ বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম দেশে দেয়া হবে মদের লাইসেন্স! মদ-জুয়ার প্রসার মহান আল্লাহ পাক উনার চরম অসন্তুষ্টির কারণ। যার পরিণতি হতে পারে খোদায়ী গযব। নাউযুবিল্লাহ!
০৪ মে, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
অপারেশনের ওষুধের টাকা জোগাড় করতে করতে ক্লান্ত রোগীরা ওষুধ আর পরীক্ষার জন্য রোগী পাঠানো হয় বাইরে সব হাসপাতালে দালালচক্র সক্রিয়
০৩ মে, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
রাজধানীর সব ভবনে ছাদ বাগানের হাজারো কোটি টাকার উপরে আয় এবং অতিরিক্ত অক্সিজেন প্রাপ্তিসহ বহুবিধ সুফলের পাশাপাশি প্রয়োজনীয়তাও অনেক। রাজধানীবাসীর উচিত স্বতঃস্ফূর্তভাবে ছাদ বাগান কার্যক্রমে এগিয়ে আসা।
০১ মে, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
খাবারে এমনকী মায়ের দুধেও ঢুকছে প্লাষ্টিক কণা পাশাপাশি বাংলাদেশী বিজ্ঞানীর গবেষণায় জানা গেছে, মানুষের শ্বাসনালিতেও জমছে মাইক্রোপ্লাস্টিক স্থায়ী বিকলাঙ্গতা ও ক্যান্সার বৃদ্ধির শঙ্কায় দেশের জনগন। বিষয়টি ভয়াবহ- সত্ত্বর গুরুত্বের সাথে নজর দিন
৩০ এপ্রিল, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
নারীরা এখন প্রকাশ্যে সিগারেট থেকে সব ধরণের মাদক সেবন ও বিকি-কিনিতে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে গেছে। রক্ষা পেতে নারীদের জন্য সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল উমাম আলাইহাস সালাম উনার ছোহবত মুবারক ইখতিয়ার করার বিকল্প নেই
২৮ এপ্রিল, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
ভীনদেশী অ্যাপের ফাঁদে পড়ে বিপথে যাচ্ছে দেশের তরুণ প্রজন্ম বাড়ছে নারীপাচার, দেশে বাড়ছে অশ্লীলতা ও পর্ণোগ্রাফির প্রচার কিশোর-কিশোরীদের টার্গেট করেই একটি মহল এসব অপসংস্কৃতির প্রচার ও প্রসার ঘটাচ্ছে এসব অপসংস্কৃতি নির্মূলে দ্বীন ইসলামই একমাত্র সমাধান
২৭ এপ্রিল, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের অবহেলায় কৃষিতে ব্যবহৃত হচ্ছে মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশক ও রাসায়নিক; বাড়ছে ক্যান্সারের ঝুঁকি। বিলুপ্তির পথে ১৯২ জাতের উপকারী পোকা। সরকারের উচিত অবিলম্বে কীটনাশক ও রাসায়নিকের ব্যবহার নিয়ন্ত্রন করে জনস্বাস্থ্য রক্ষা ও কৃষিকে বিষমুক্ত করা।
২৬ এপ্রিল, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সন্ত্রাসবাদ নয়; জিহাদী যোগ্যতা অর্জন করা পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ অনুযায়ী ফরয। ৯৮ ভাগ মুসলমান অধ্যুষিত দেশে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় সব নাগরিকের জন্য সামরিক প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক করতে হবে।
২৫ এপ্রিল, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
খাবারের নামে আমরা কী খাচ্ছি? ভেজাল খাবারে দেশব্যাপী চলছে নীরব গণহত্যা। ভেজাল দমনে ইসলামী মূল্যবোধের প্রতিফলন ঘটাতে হবে।
২৩ এপ্রিল, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
রক্ত নিয়ে বাণিজ্য- মেশানো হচ্ছে স্যালাইন, লবণ পবিত্র দ্বীন ইসলামী মূল্যবোধের প্রসার ব্যতীত রক্ষা নেই
২২ এপ্রিল, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার)