ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা (২)
, ২৯ জুমাদাল ঊখরা শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ০৪ ছামিন, ১৩৯২ শামসী সন , ০১ জানুয়ারী, ২০২৫ খ্রি:, ১৬ পৌষ , ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
শয়তান যে মানুষকে নেক সুরতে ধোঁকা দেয়, এ বিষয়টি ভালভাবে অনুধাবন করেছিল শয়তানের অনুচর ইহুদী এবং খ্রিষ্টানরা। মুসলমানদের সোনালী যুগ এসেছিল শুধু ইসলামের পরিপূর্ণ অনুসরণের ফলে। শয়তানের চর ইহুদী খ্রিষ্টানরা বুঝতে পেরেছিল মুসলমানদের মধ্যে বিভেদ, অনৈক্য, সংঘাত সৃষ্টি করতে পারলেই ইসলামের জাগরণ এবং বিশ্বশক্তি হিসেবে মুসলমানদের উত্থান ঠেকানো যাবে। আর তা করতে হবে ইসলামের মধ্যে ইসলামের নামে নতুন মতবাদ প্রবেশ করিয়ে। শুরু হয় দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা; যার মূলে থাকে খ্রিষ্টীয় ব্রিটিশ সম্রাজ্যবাদ। জন্ম হয় ওহাবী মতবাদের। ওহাবী মতবাদ সৃষ্টির মূলে থাকে একজন ব্রিটিশ গুপ্তচর হেমপার। মিশর, ইরাক, ইরান, হেজাজ ও তুরস্কে তার গোয়েন্দা তৎপরতা চালায় মুসলমানদের বিভ্রান্ত করার জন্য “ঈড়হভবংংরড়হ ড়ভ ইৎরঃরংয ঝঢ়ু ধহফ ইৎরঃরংয বহসরঃু ধমধরহংঃ ওংষধস” গ্রন্থ হচ্ছে হেমপারের স্বীকারোক্তি মূলক রচনা। যা মূল গ্রন্থ থেকে ধারাবাহিকভাবে অনুবাদ প্রকাশ করা হবে। ইনশাআল্লাহ!
(সংশোধিত ও পূণ:প্রকাশিত)
হে আল্লাহ পাক আমাদের এমন কাজ থেকে রক্ষা করুন এবং এ ধরণের নিষ্ঠুর দোষারোপের জবাবে আমরা অনুসরণ করি সেই প্রচলিত নীতির যে কেউ যদি আঘাত করে উত্তরে তাকেও আঘাত করো এবং তাকে বলা যে তুমিও নিকৃষ্ট।
দ্বিতীয়তঃ খৃষ্টানরা আল্লাহ পাক ও উনার রসূল হাবীবুল্লাহ হুযূর ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি আক্রমনাত্মক ভাবে দোষারোপ করে থাকে। যেমন- তারা বলে ঈসা আলাইহিস সালাম মদ পান করতেন। নাঊযুবিল্লাহ! তিনি অভিশপ্ত ছিলেন, তাই ক্রুশ বিদ্ধ হন। নাঊযুবিল্লাহ!
আতঙ্কের সাথে আমি লোকটিকে বললাম যে, খ্রিষ্টানরা এমন কথা বলেনি। লোকটির উত্তর ছিল “তারা বলে এবং তুমি যা জানো না; বাইবেলে এমনটাই লেখা আছে। ” আমি নিরব হয়ে যাই কারণ, দ্বিতীয়টা না হোক প্রথমটায় সে ছিল সঠিক। আমি বিতর্কটিকে দীর্ঘক্ষণ চালাতে চাইনি। তা না হলে আমি ইসলামী লেবাস ধারণ করে থাকলেও তারা আমার ব্যাপারে সন্দেহপ্রবণ হতে পারে। ফলে আমি এ ধরণের বিতর্ক এড়িয়ে গিয়েছিলাম।
২। দ্বীন ইসলাম ছিল এক সময় শাসন ও কর্তৃত্বের দ্বীন, আর মুসলমানরা ছিলেন সম্মানিত। এ সকল সম্মানিত ব্যক্তিদের বলা এখন মুশকিল যে তারা এখন ক্রীতদাসের শামিল। তেমনি মুশকিল ইসলামের ইতিহাসকেও মিথ্যা প্রমাণ করা এবং মুসলমানদের এটা বলা যে, এক সময় তোমরা যে সম্মান ও শ্রদ্ধা অর্জন করেছিলে তার মূলে ছিল কিছু অনুকূল পরিবেশ। সেই সব দিন শেষ এবং আর কোন দিন ফিরে আসবে না।
৩। আমরা খুব আশংকা করছিলাম যে, অটোম্যান এবং ইরানীরা আমাদের চক্রান্ত বুঝে ফেলতে পারে এবং নস্যাৎ করে দিতে পারে। সত্য কথা বলতে গেলে এ দুটো দেশ যথেষ্ট পরিমাণ দূর্বল হয়ে পড়েছে কিন্তু আমরা তবু নিশ্চিত হতে পারিনি এ কারণে যে তাদের ছিল কেন্দ্রীয় সরকারের সাথে সম্পদ, অস্ত্র এবং ক্ষমতা।
৪। মুসলমান আলিমদের নিয়েও ছিল আমাদের চরম অস্বস্তি। ইস্তাম্বুল ও আল আজহারের আলিমরা এবং ইরাক ও দামেস্কের আলিমরা ছিলেন আমাদের উদ্দেশ্য সাধনের পাহাড় সমান বাঁধা। কারণ তারা ছিলেন এমনই সব ব্যক্তিত্ব যারা কখনই তাদের আদর্শের কাছে বিন্দুমাত্র আপোষ করেনি, কেননা তারা পৃথিবীর ক্ষণকালীন সুখ আর দুনিয়াবী সাজ-সজ্জা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলেন এবং তাদের দৃষ্টিকে নিবদ্ধ করেছিলেন কুরআনুল কারীম প্রতিশ্রুত বেহেশ্তের দিকে। মানুষ তাদেরই অনুসরণ করেছিল। এমনকি সুলতানও উনাদের ভয়ে ভীত ছিল। শিয়ারা যতটুকু শক্তভাবে তাদের আলিম ঘেষা ছিল সুন্নীরা ততটা শক্তভাবে আলিম ঘেষা ছিলো না। শিয়ারা কোন বই পড়তোনা তারা শুধু তাদের আলিমদের চিনত এবং সুলতানকে উপযুক্ত সম্মান প্রদর্শন করতো না। সুন্নীরা বিপরীতপক্ষে বই পড়তো এবং আলিম ও সুলতানকে সম্মান করতো। ফলে আমরা একটার পর একটা সভার আয়োজন করে যাচ্ছিলাম। তথাপি যতবার আমরা চেষ্টা করছিলাম, দারুণ হতাশা নিয়ে লক্ষ্য করছিলাম যে আমাদের জন্য ছিল সব দরজা বন্ধ। গুপ্তচরদের থেকে যে সকল রিপোর্ট পেতাম তার সবই ছিল হতাশায় ভরা এবং আমাদের সম্মেলন ব্যর্থ হয়ে যায়। তথাপি আমরা আশা ছাড়িনি। কারণ আমরা হলাম এমনি ধরণের মানুষ যারা অভ্যাসে পরিণত করেছিলাম গভীর নিঃশ্বাস টানা ও ধৈর্য্যধারণ করা।
মন্ত্রীসহ কয়েকজন উচ্চ পর্যায়ের যাজক এবং কয়েকজন বিশেষজ্ঞ একটি সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেছিলাম। আমরা সেখানে ছিলাম ২০ জন। আমাদের সম্মেলন চলেছিল তিন ঘণ্টা ধরে এবং শেষ অধিবেশন কোন সফল সিদ্ধান্তে না পৌঁছেই শেষ হয়ে যায়। তথাপি একজন যাজক বলেছিল “দুঃখ করো না। মসিহ এবং তার অনুসারীরা কর্তৃত্ব অর্জন করেছিল তিনশ বছর যন্ত্রণা ভোগের পর। আশা করা যায়, অজানা জগত থেকে তিনি আমাদের দিকে দৃষ্টি দেবেন এবং অবিশ্বাসীদের (এখানে মুসলমানদের) তাদের কেন্দ্র থেকে বিতাড়িত করতে সৌভাগ্যদান করবেন, যদিও আরও তিনশত বছর পর তারা বিতাড়িত হয়। মজবুত ঈমান আর দীর্ঘ মেয়াদী ধৈর্য্য ধারনের মাধ্যমে আমাদের বাহুকে অবশ্যই অস্ত্রসজ্জিত করতে হবে। কর্তৃত্ব দখলের জন্য আমাদের অবশ্যই প্রচার মাধ্যমগুলো দখলে আনতে হবে। সম্ভাব্য সব পন্থা অবলম্বন করতে হবে। মুসলমানদের মধ্যে অবশ্যই আমাদের খ্রীষ্ট ধর্মের প্রচার ঘটাতে হবে। আমাদের মূল উদ্দেশ্যটা (অটোমান সাম্রাজ্যকে ভেঙ্গে ফেলা) অনুধাবন করা মঙ্গলজনক হবে, যদিও তা এক শতাব্দী পরে হয়। কেননা বাপের কাজ তো ছেলেদের জন্য। ”
আরেকটি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল- যেখানে রাশিয়া, ফ্রান্স এবং ইংল্যান্ড থেকে কূটনৈতিক ব্যক্তিবর্গ এবং ধর্মীয় লোকজন যোগদান করেছিল। আমি ছিলাম খুব সৌভাগ্যবান কারণ আমার এবং মন্ত্রীর মধ্যে সু-সম্পর্কের কারণে আমিও সম্মেলনে উপস্থিত হয়েছিলাম। সম্মেলনে মুসলমানদের বিভিন্ন দলে বিভক্ত করা এবং তাদের দ্বীনী বিশ্বাস থেকে সরিয়ে আনা এবং স্পেনে যেমন করা হয়েছিল তেমনিভাবে মুসলমানদের খ্রীষ্টধর্মে বিশ্বাস করানো বা খ্রিষ্টান বানানোর ব্যাপারে বিশদ আলোচনা করা হয়। সম্মেলনে যে সব আলোচনা হয় তার সবই আমার (হেমপার) “ইল্লা মালেকুতুল মসিহ” গ্রন্থে লিপিবদ্ধ করেছি।
ভাষান্তর : আবুল বাশার।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের সম্মানিত ৩টি স্তর
২০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
আসমাউর রিজাল, জারাহ ওয়াত তা’দীল, উছুলে হাদীছ শরীফ উনার অপব্যাখ্যা করে অসংখ্য ছহীহ হাদীছ শরীফ উনাকে জাল বলছে ওহাবী সালাফীরা (৩)
২০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
পর্দা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া কবীরা গুনাহ
১৯ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৯ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
হযরত আব্বাস ইবনে মিরদাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
যাকাত সম্পর্কিত আহকাম, মাসায়িল ও ফাযায়িল (৪)
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
প্রাণীর ছবি তোলা হারাম ও নাফরমানীমূলক কাজ
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
অ্যান্টার্কটিকা নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় বিজ্ঞানীরা
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত আব্বাস ইবনে আবদুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম (৪)
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা অবশ্যই সত্যের মাপকাঠি; অস্বীকারকারীরা কাট্টা কাফির (১)
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পর্দা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া হারাম
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার)












