ঘটনা থেকে শিক্ষা
মহান আল্লাহ পাক উনাকে নিজের মধ্যে তালাশ করুন
, ১৬ই রবিউছ ছানী শরীফ, ১৪৪৭ হিজরী সন, ১০ খমীছ, ১৩৯৩ শামসী সন , ০৯ অক্টোবর, ২০২৫ খ্রি:, ২৫ আশ্বিন, ১৪৩২ ফসলী সন, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
কিতাবে একটি ওয়াকেয়া লেখা হয়, কোন এক সরাইখানায় এক জহুরী অবস্থান করছিলো, তার কাছে ছিলো বহুমূল্যবান একটি মুক্তা। যা সে একটি কৌটার মধ্যে রেখে সর্বদা নিজের কাছে পকেটে রাখতো, একদিন সে তার প্রিয় ওই কৌটাটি বের করে সবাইকে দেখালো এবং বললো, এর ভিতর এক মূল্যবান পাথর আছে যার মূল্য বাদশাহর ধনাগারেও নেই। দর্শকদের মধ্যে এক চোরও ছিলো। সে ওই কৌটাটি চুরি করার জন্য মনস্থির করে নিলো। সে জহুরীর সাথে বন্ধুত্বের ভাব দেখালো এবং তাকে জিজ্ঞাসা করলো, “আপনি এ সরাইখানা ত্যাগ করে কোথায় যাবেন?” জহুরী তার গন্তব্য স্থলের নাম বলার সাথে সাথে চোরও বললো “যাক ভালই হলো, আমিও তো ওখানে যাবো, এক সাথে যাওয়া যাবে। ” জহুরী বললো, “ঠিক আছে। আমরা থাকা খাওয়ার ব্যবস্থাও না হয় এক জায়গায় করে নিবো। ” চোর তো এটাই চাচ্ছিলো, সঙ্গে সঙ্গে রাজি হয়ে সে কৌশলে এটাও জেনে নিলো যে, জহুরী তার মূল্যবান মুক্তার কৌটাটি তার কোর্তার পকেটেই রেখে থাকে। এদিকে জহুরীও সন্দেহ করলো যে, হয়তো লোকটি চোর হতে পারে। এবং আমার এ কৌটার লিপ্সায় আমার সফরসঙ্গী হতে চাচ্ছে। যাই হোক উভয়ে রওয়ানা দিলো।
পরবর্তী শহরে পৌঁছে সরাইখানায় একটা কক্ষ উভয়ে ভাড়া নিলো। রাতে উভয়ে জামা কাপড় খুলে শুয়ে পড়লো। কিন্তু শোয়ার পূর্বেই জহুরী চোরের অজান্তে সেই কৌটাটি নিজ কোর্তার পকেট থেকে বের করে চোরের কোর্তার পকেটে রেখে দিলো। মধ্য রাতে চোরটি বিছানা ছেড়ে জহুরীর সমস্ত কাপড় বিছানাপত্র তন্ন তন্ন করে খুঁজলো, কিন্তু সেই কৌটা পেলো না। সে মনে করলো- হয়তোবা কৌটাটি জহুরীর পকেট থেকে পড়ে গেছে। সকালে জহুরী তার সেই কৌটাটি বের করে দেখালো। চোরটি মনে মনে বেশ আশ্চর্য হলো। সে মনে করলো, বোধ হয় তল্লাশী ঠিকমত হয়নি। পরদিন পুণরায় রওয়ানা করে অন্য এক শহরে গিয়ে সেখানকার এক সরাইখানায় দু’জনে অবস্থান নিলো। জহুরী আজও সেই একই কৌশল অবলম্বন করলো। সেই চোর আজও জহুরীর আচকান, কোর্তা ও অন্যান্য আসবাবপত্র বার বার তালাশ করলো কিন্তু কৌটা পেলো না। সে দৃঢ়ভাবে ধারণা করলো, আজ সেই কৌটা নিশ্চয়ই হারিয়ে গেছে। দিনের বেলা চোর সেই কৌটার কথা জিজ্ঞাসা করলে, জহুরী পকেট থেকে সেই কৌটা বের করে দেখালো, এবার চোর ভীষণ আশ্চর্য্য হয়ে গেলো। মোট কথা, এভাবে উভয়ে এক এক মঞ্জিল অতিক্রম করছিলো এবং এ লুকোচুরি চলছিলো, শেষ পর্যন্ত একদিন চোর প্রতিজ্ঞা করলো যে, আজ রাতে জহুরীকে খুব করে তালাশ করবে, এমনকি তল্লাশীর সময় জেগে গেলে তার থেকে কৌটা ছিনিয়ে নিতে হবে।
সিদ্ধান্ত অনুযায়ী রাতে চোর প্রথমে কাপড় চোপড় ভাল করে তালাশ করলো, এরপর জহুরীর বাক্স খুলে দেখলো, কোথাও কৌটা পেলো না, তখন জহুরীর কোমর তালাশ করলো তার মুখ হা করিয়ে দেখলো। এদিকে জহুরীও যথারীতি ঘুমের ভান করে শুয়ে রইলো এবং মনে মনে বললো যেভাবেই ইচ্ছা তালাশ করুক। চোর শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হয়ে নিশ্চিত ধারণা করলো, আজ নিশ্চয়ই সেটা হারিয়ে গেছে। কিন্তু সকালে জহুরীর পকেটে সেই কৌটা দেখে অবাক হয়ে গেলো। জহুরীর পা ধরে বললো, “আমি চুরিতে পাকা ওস্তাদ কিন্তু হিফাযতের দিক দিয়ে আপনি আমার ওস্তাদ। হে ওস্তাদ! আমি আমার সাধ্যমত পরিপূর্ণভাবে তল্লাশী চালিয়েছি। কিন্তু কৌটাটা খুঁজে পাইনি। অথচ একমাত্র সেটা চুরির নিয়তেই আপনার সফর সঙ্গী হয়েছিলাম, এবার বলুন! কৌটাটা আপনি রাতে কোথায় রাখতেন?” জহুরী বললো, তুমি কোথায় কোথায় তালাশ করেছো? চোর বললো, আপনার পরিধেয় কাপড়, বিছানা, বালিশের নীচে এমনকি সব জায়গায়, কিন্তু কোথাও কৌটাটি খুজে পাইনি। জহুরী বললো, তুমি সব জায়গা তালাশ করেছো খুব ভাল। কিন্তু নিজের পকেটে তালাশ করেছো কি? সে বললো, না। তখন সেই জহুরী বললো, কৌটা তোমার পকেটেই ছিলো। যদি নিজের পকেটে তালাশ করতে। তাহলে মুক্তা অবশ্যই পেয়ে যেতে।
একই ব্যাপার মহান আল্লাহ পাক উনাকে পাবার ক্ষেত্রেও। মহান আল্লাহ পাক উনাকে নিজের মধ্যে তালাশ করুন। স্বয়ং মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
وَفِىْ اَنْفُسِكُمْ اَفَلَا تُبْصِرُوْنَ.
(তোমাদের মধ্যেই আছে, তোমরা তো অনুধাবন করো না) এজন্যই বলা হয়,مَنْ عَرَفَ نَفْسَهٗ فَقَدْ عَرَفَ رَبَّهٗ. (যে নিজেকে চিনেছে সে তার রব তায়ালা উনাকেও চিনেছে)।
-০-
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে সালাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু (৩)
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
পবিত্র হাদীছ শরীফে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ইসলামী শরীয়ত মুতাবিক- ছবি তোলা হারাম
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র হাদীছ শরীফে ইরশাদ মুবারক করেন-
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে সালাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু (২)
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
যাকাত সম্পর্কিত আহকাম, মাসায়িল ও ফাযায়িল (২)
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পর্দা পালন করা পুরুষ-মহিলা সবার জন্য ফরজ
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
যিনি খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে মুহব্বত মুবারক করা সমস্ত জিন-ইনসান, তামাম কায়িনাতবাসীর জন্য ফরযে আইন
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের আলোকে ছিরাতুল মুস্তাক্বীম উনার ছহীহ তাফসীর- ০১
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার)












