নছীহতে কায়িম মাকামে উম্মাহাতুল মু’মীনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল উমাম আলাইহাস সালাম
মহান আল্লাহ পাক উনার আনুগত্যের মাধ্যমেই কুদরতি রিযিক পাওয়া যাবে-৫
, ১১ জুমাদাল উলা শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ২৮ সাদিস ১৩৯১ শামসী সন , ২৬ নভেম্বর, ২০২৩ খ্রি:, ১০ অগ্রহায়ণ, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) মহিলাদের পাতা
পবিত্র হাদীছ শরীফে বর্ণিত রয়েছে ,
عَنْ أَبـِـيْ ذَرٍّ رَضِىَ اللّٰهُ تَـعَالٰـى عَنْهُ اَنَّ رَسُوْلَ اللّٰهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ إِنِّـيْ لَأَعْلَمُ آيَةً لَوْ أَخَذَ النَّاسُ بِـهَا لَكَفَتْـهُمْ وَمَنْ يَــتَّـقِ اللّٰهَ يَـجْـعَلْ لَهٗ مَـخْرَجًا وَيَــرْزُقْـهُ مِنْ حَـيْثُ لَا يَـحْـتَسِبُ وَمَنْ يَــتَـوَكَّلْ عَلَى اللّٰـهِ فَـهُوَ حَسْبُهٗ. (رواه احـمد و ابن ماجه و الدارمى)
বিশিষ্ট ছাহাবী হযরত আবূ যর গিফারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন: সাইয়্যিদুল আম্বিয়া ওয়াল মুরসালীন, খতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, পবিত্র কুরআন শরীফের এমন একখানা আয়াত শরীফ আমি জানি, যদি লোকেরা সেই আয়াত শরীফ [সূরা ত্বলাক্ব শরীফ : ২,৩] এর উপর আমল করতো, তাহলে তাদের জন্য ইহাই যথেষ্ট হতো। (পবিত্র সেই আয়াত শরীফখানার অর্থ হচ্ছে) যে ব্যক্তি মহান আল্লাহ পাক উনাকে ভয় করে, মহান আল্লাহ পাক তিনি তাকে গাইরুল্লাহ থেকে বের করেন এবং এমন স্থান থেকে রিযিক দান করেন যে, সে কল্পনাও করতে পারে না। আর যে ব্যক্তি মহান আল্লাহ পাক উনার প্রতি তাওয়াক্কুল করবে মহান আল্লাহ পাক তিনিই তার জন্য যথেষ্ট হবেন। সুবহানাল্লাহ!
[আহমাদ শরীফ, ইবনে মাজাহ শরীফ, দারেমী শরীফ]
অন্য আয়াত শরীফে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
وَلَوْ أَنَّ أَهْلَ الْقُرٰى آمَنُـوْا وَاتَّــقَوْا لَـفَتَحْنَا عَلَـيْهِمْ بَــرَكَاتٍ مِّنَ السَّمَاءِ وَالْأَرْضِ وَلٰكِنْ كَذَّبُـوْا فَأَخَذْنَاهُمْ بِـمَا كَانُـوْا يَكْسِـبُـوْنَ ﴿৯৬﴾ سورة الأعراف
যমীনবাসী যদি ঈমান আনতো এবং তাক্বওয়া হাছিল করতো, অবশ্যই আমি তাদের জন্য আসমান এবং যমীনের বরকতসমূহ খুলে দিতাম। বরং তারা মিথ্যারোপ করেছে। আমি তাদের কৃতকর্মের কারণে তাদেরকে পাকড়াও করেছি। [সূরা আরাফ শরীফ: ৯৬]
পবিত্র হাদীছ শরীফে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
عَنْ أَبـِيْ هُرَيْـرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ قَالَ رَبُّكُمْ عَزَّ وَجَلَّ لَوْ أَنَّ عَبِـيْدِيْ أَطَاعُوْنِـيْ لَأَسْقَـيْـتُـهُمُ الْمَطَرَ بِاللَّيْلِ وَأَطْلَعْتُ عَلَـيْهِمُ الشَّمْسَ بِالنَّـهَارِ وَلَـمْ أُسْـمِعْهُمْ صَوْتَ الرَّعْدِ. (رواه أحـمد)
হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। নিশ্চয়ই সাইয়্যিদুল আম্বিয়া ওয়াল মুরসালীন, খতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আপনাদের রব মহান আল্লাহ পাক তিনি বলেন, যদি আমার বান্দারা আমার আনুগত্য করতো, অবশ্যই আমি তাদের জন্য রাতে বৃষ্টি বর্ষণ করতাম, তাদের জন্য দিনে সূর্যের কিরণ ছড়িয়ে দিতাম এবং তাদেরকে মেঘের গর্জন শুনাতাম না। সুবহানাল্লাহ!
[আহমাদ শরীফ]
মূল বিষয় হলো, বান্দা-বান্দী যদি মহান আল্লাহ পাক উনার আনুগত্য করে, উনার প্রতি তাওয়াক্কুল করে, উনার শোকরগুজারী করে এবং তাক্বওয়া অবলম্বন করে, তাহলে মহান আল্লাহ পাক তিনি তাদেরকে এমন কুদরতী রিযিক দান করবেন, যা সে কল্পনাও করতে পারবে না। শুধু তাই নয় রিযিকে বরকত দান করে ইতমিনান করে দিবেন।
কিন্তু বান্দা মহান আল্লাহ পাক উনাকে হাক্বীক্বীভাবে বিশ্বাস করে না এবং উনার প্রতি তাওয়াক্কুলও করে না। তারা মনে করে যে, মহান আল্লাহ পাক তিনি দিবেন, কিন্তু আমাদেরকেই রিযিক অন্বেষণ করতে হবে। মহান আল্লাহ পাক বলেন, ঠিক আছে! তোমরা তোমাদের রিযিক খুঁজে নাও।
কারণ পবিত্র হাদীছ শরীফে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
عَنْ أَبـِيْ هُرَيْـرَةَ رَضِىَ اللهُ تَـعَالٰـى عَنْهُ أنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ يَـقُوْلُ اللهُ تَـعَالٰـى أَنَا عِنْدَ ظَنِّ عَـبْدِيْ بـِـيْ. (متفق عليه)
হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, নিশ্চয়ই আমি বান্দার ধারণা অনুযায়ী।
[বুখারী ও মুসলিম শরীফ]
অর্থাৎ বান্দা মহান আল্লাহ পাক উনাকে যেভাবে ধারণা করবে সেভাবেই সে মহান আল্লাহ পাক উনাকে পাবে। বান্দা যদি এমন ধারণা বা বিশ্বাস রাখে যে, মহান আল্লাহ পাক উনার আনুগত্য করলে, তাক্বওয়া (আল্লাহভীতি) অবলম্বন করলে, মহান আল্লাহ পাক তিনি তাকে কুদরতী রিযিক দিবেন। তাহলে ঠিকই সে সেভাবে রিযিক পাবে। প্রকৃতপক্ষে বান্দা এই বিষয়টি বিশ্বাস করতে পারে না বলেই সে ইবাদত-বন্দেগী, আনুগত্যতার মাধ্যমে কুদরতি রিযিক পায় না।
পক্ষান্তরে, বান্দা যদি এ ধারণা করে যে, চাকরিবাকরির মাধ্যমে রিযিক পাবে; তাহলে মহান আল্লাহ পাক তিনি তাকে সেভাবেই রিযিক দিবেন।
মূলত ধারণা অনুযায়ী বান্দা দুইভাবে রিযিক পায়। (১) মহান আল্লাহ পাক উনার আনুগত্যতার মাধ্যমে সরাসরি কুদরতী রিযিক লাভ করে। (২) উসীলার মাধ্যমে রিযিক লাভ করে। যেমন চাকরিবাকরি, ব্যবসা-বাণিজ্য ইত্যাদি বিভিন্ন কাজকর্মের মাধ্যমে প্রাপ্ত রিযিক।
এক্ষেত্রে মহান আল্লাহ পাক তিনি বান্দাকে যে কোনো একটি বেছে নেয়ার এখতিয়ার দান করেছেন। তিনি বান্দাকে পরীক্ষা করবেন যে, বান্দা কোনটাকে গ্রহণ করে। এই দুটোর মধ্যে হাক্বীক্বীভাবে তাওয়াক্কুল করে ইবাদত-বন্দেগী, আনুগত্যতায় মশগুল থাকাই মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট অধিক পছন্দনীয়। সুবহানআল্লাহ।
ইনশাআল্লাহ চলবে।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
দোযখে বেপর্দা হওয়া নারীদের শাস্তির বর্ণনা (১০)
১৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
জামায়াতের জন্য মহিলাদের মসজিদে ও ঈদগাহে যাওয়া হারাম ও কুফরী (৪)
১৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সম্বোধন মুবারক করার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ আদব-শরাফত বজায় রাখতে হবে
১৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব-কর্তব্য
১১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
তিন ধরনের লোক বেহেশতে প্রবেশ করবে না
১১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সর্বাবস্থায় আজল বা তাড়াহুড়া না করে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত
১০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
যে ৪ শ্রেণীর লোকদের জন্য ক্বিয়ামতের দিন সুপারিশ ওয়াজিব হবে
১০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
হাশরের ময়দানে যে ৫টি প্রশ্নের উত্তর প্রত্যেককেই দিতে হবে
০৯ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
মহাসম্মানিত মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনারা বেমেছাল ফযীলত মুবারকের অধিকারী
০৯ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
হুব্বে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
০৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সর্বক্ষেত্রে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে প্রাধান্য দিতে হবে
০৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সৃষ্টির শুরুতেই মহান আল্লাহ পাক উনার কুদরত মুবারক উনার মধ্যে ছিলেন, আছেন এবং অনন্তকাল থাকবেন
০৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার)












