সম্মানিত শরীয়ত উনার ফায়সালা মুতাবিক-
মহিলাদের জন্য মসজিদে গিয়ে জামায়াতে নামায আদায় করা নাজায়িজ
, ০৩ রবীউল আউওয়াল শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ১০ রবি , ১৩৯২ শামসী সন , ০৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রি:, ২৩ ভাদ্র , ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) মহিলাদের পাতা
প্রথম যুগে মহিলাদের মসজিদে যাওয়ার মূল কারণ
কেউ কেউ বলে থাকে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার যামানায় মহিলারা মসজিদে গিয়ে জামায়াতে নামায পড়তেন এবং এখনও পবিত্র মক্কা শরীফ ও পবিত্র মদীনা শরীফ উনাদের মহিলা উনারা জামায়াতে উপস্থিত হন, তবে এর ফায়ছালা কি?
এর ফায়ছালা হলো- সম্মানিত ইসলামী শরীয়ত উনার মধ্যে এমন অনেক বিষয়ই রয়েছে, যা সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক যামানায় ছিল না। কিন্তু হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের সময় তা উৎপত্তি লাভ করে। যেমন জুমুয়ার ছানী আযান”। এ ছানী আযান সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সময় ছিল না। আমীরুল মু’মিনীন, খলীফাতুল মুসলিমীন, হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি মুসলমান ও দ্বীন ইসলাম উনার বৃহত্তর স্বার্থে ইজতিহাদ করতঃ উক্ত ছানী আযান প্রবর্তন করেন এবং এর উপর সকল হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের ইজমা প্রতিষ্ঠিত হয়। সুবহানাল্লাহ!
অনুরূপভাবে যদিও প্রথম যুগে সম্মানিত ইসলাম ও মুসলমান উনাদের বৃহত্তর স্বার্থে মহিলাদের জামায়াতে উপস্থিত হওয়ার অনুমতি ছিল কিন্তু আমীরুল মু’মিনীন, খলীফাতুল মুসলিমীন, হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার খিলাফতকালে তা নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয় এবং পরবর্তীতে হযরত ইমাম-মুজতাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা মহিলাদের মসজিদে গিয়ে জামায়াতে নামায পড়া আম ফতওয়া মুতাবিক মাকরূহ্ তাহরীমী আর খাছ ফতওয়া মুতাবিক কুফরী ফতওয়া প্রদান করেন এবং এর উপর উম্মতের ইজমা প্রতিষ্ঠিত হয়।
উল্লেখ্য, প্রথম যুগে মহিলাদের জামায়াতে উপস্থিত হওয়ার অনুমতি দেয়ার কারণ সম্পর্কে কিতাবে উল্লেখ করা হয়,
حضرت امام طحاوی رحمۃ اللہ علیہ کھتے ھیں کہ یہ حکم ابتداء اسلام میں دشمنوں کی نظر میں مسلمانوں کی کثرت و شوکت کے اظھار کیلئے تھا- عینی رحمۃ اللہ علیہ کھتے ھیں کہ اس وقت فتنوں سے بھی امن تھا اب یہ بات نھیں رھیں
অর্থ : হযরত ইমাম ত্বহাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, সম্মানিত ইসলাম উনার প্রথম যুগে মহিলাদের জামায়াতে উপস্থিত হওয়ার অনুমতি প্রদান করার কারণ হলো, বেদ্বীনদের সম্মুখে মুসলমান উনাদের জনসংখ্যা ও জনশক্তি বৃদ্ধি করা। হযরত ইমাম বদরুদ্দীন আইনী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, (শুধু তাই নয়) সে যুগ ফিৎনা-ফাসাদ হতেও সম্পূর্ণ নিরাপদ ছিল, কিন্তু বর্তমানে তার কোন কারণই অবশিষ্ট নেই। (মায়ারিফে মাদানী)
উল্লেখ্য, শুরূহাতের (ব্যাখ্যার) অধিকাংশ কিতাবেই প্রথম যুগে মহিলাদের মসজিদে যাওয়ার অনুমতি দেয়ার কারণ হিসেবে তা’লীম বা ইলম অর্জন করাকেই উল্লেখ করা হয়েছে এবং তা আরো স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়, মুসলিম শরীফ উনার ১৯৩৩ নং পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার বর্ণনা দ্বারা।
এ পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে,
عَنْ حَضْرَتْ اُمِّ عَطِيَّةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهَا قَالَتْ كُنَّا نُؤْمَرُ بِالْـخُرُوْجِ فِي الْعِيْدَيْنِ وَالْمُخَبَّاَةُ وَالْبِكْرُ قَالَتِ الْـحُيَّضُ يَـخْرُجْنَ فَيَكُنَّ خَلْفَ النَّاسِ يُكَبِّرْنَ مَعَ النَّاسِ.
অর্থ : হযরত উম্মে আতিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ঈদের দিন আমাদেরকে বের হওয়ার আদেশ মুবারক দেয়া হতো, আমরা কুমারী মেয়েদেরকে, এমনকি স্বাভাবিক মাজূর মহিলাদেরকেও ঘর থেকে বের করতাম। অতঃপর পুরুষদের পেছনে থেকে তাদের তাকবীরের সাথে সাথে তাকবীর পড়তাম। (মুসলিম শরীফ : হাদীছ শরীফ নং ১৯৩৩)
এ পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে এবং আরো অনেক পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের মধ্যে স্পষ্টই উল্লেখ রয়েছে যে, অনেক মাজূর মহিলা উনারা ঈদগাহে উপস্থিত হতেন। অথচ সম্মানিত ইসলামী শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে মাজূর মহিলাদের জন্য নামায সম্পূর্ণ হারাম। সুতরাং উনাদের ঈদগাহে বা জামায়াতে উপস্থিত হওয়ার অনুমতি যদি শুধুমাত্র নামাযের জন্য হতো, তবে মাজূর মহিলা উনারা ঈদগাহে উপস্থিত হতেন না। মূলত প্রথম যুগে নামাযসহ সকল অনুষ্ঠানাদিতে মহিলাদের উপস্থিত হওয়ার মুল উদ্দেশ্য ছিল তা’লীম গ্রহণ করা। সুবহানাল্লাহ!
তদুপরি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি স্বয়ং উপস্থিত ছিলেন এবং সে সময় ফিৎনার আশংকা কল্পনাও করা যায় না। তথাপি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহিলাদেরকে সুসজ্জিতভাবে, সুগন্ধি ব্যবহার করে মসজিদে যেতে নিষেধ করেন।
এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ زَيْنَبَ الثَّقَفِيَّةِ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهَا اَنَّ نَبِيَّ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ اَيَّتُكُنَّ خَرَجَتْ اِلَى الْمَسْجِدِ فَلَا تَقْرَبَنَّ طِيْبًا.
অর্থ : হযরত যায়নাব সাকাফী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা উনার থেকে বর্ণিত। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আপনাদের মধ্যে যে মহিলা মসজিদে আসতে চান, তিনি যেন সুগন্ধির নিকটে না যান। (নাসায়ী শরীফ : হাদীছ শরীফ নং ৫১৩১)
শুধু তাই নয়, সাথে সাথে পর্দারও গুরুত্ব দিয়েছেন। তাই দেখা যায়, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ফজরের নামায এত অন্ধকার থাকতে শেষ করতেন যে, মহিলা উনারা নামায পড়ে যখন চলে যেতেন, তখনও উনাদেরকে স্পষ্টভাবে চেনা যেত না। সুবহানাল্লাহ!
কিন্তু বর্তমান যামানায় ঐরূপ ব্যবস্থা বা কঠোরতা কল্পনাও করা যায় না। আর এদিকে লক্ষ্য করেই সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি অসংখ্য পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন, মহিলাদের মসজিদে জামায়াতে নামায পড়ার চেয়ে গোপন প্রকোষ্ঠে নামায পড়া সর্বোত্তম। সুবহানাল্লাহ!
যেমন পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ اُمِّ الْـمُؤْمِنِيْنَ السَّادِسَةِ عَلَيْهَا السَّلَامُ قَالَتْ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ خَيْرُ مَسَاجِدِ النِّسَاءِ قَعْرُ بُيُوْتِـهِنَّ.
অর্থ : উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আস সাদিসা আলাইহাস সালাম উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, মহিলাদের জন্য উত্তম মসজিদ হলো তার ঘরের গোপন প্রকোষ্ঠ।
(সুনানুল কুবরা লিল বাইহাক্বী শরীফ ৩য় খ- ১৩১ পৃষ্ঠা : হাদীছ শরীফ নং ৫৫৬৬, মুসনাদে আহমদ শরীফ ৬ষ্ঠ খ- ২৯৭ পৃষ্ঠা : হাদীছ শরীফ নং ২৬৫৮৪, কানযুল উম্মাল শরীফ ৭ম খ- ৭৬৭ পৃষ্ঠা : হাদীছ শরীফ নং ২০৮৬৮, ইবনে খুজাইমাহ শরীফ ৩য় খ- ৯২ পৃষ্ঠা : হাদীছ শরীফ নং ১৬৮৩, মুস্তাদরিকে হাকিম শরীফ ১ম খ- ৩২৭ পৃষ্ঠা : হাদীছ শরীফ নং ৭৫৬)
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
হুব্বে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
০৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সর্বক্ষেত্রে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে প্রাধান্য দিতে হবে
০৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সৃষ্টির শুরুতেই মহান আল্লাহ পাক উনার কুদরত মুবারক উনার মধ্যে ছিলেন, আছেন এবং অনন্তকাল থাকবেন
০৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
মহান আল্লাহ পাক তিনি তওবাকারীকে পছন্দ করেন (২)
০৭ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
ক্বলবী যিকির জারী না থাকলে শয়তানের ওয়াসওয়াসা থেকে বেঁচে থাকা সম্ভব নয়
০৭ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
দোযখে বেপর্দা হওয়া নারীদের শাস্তির বর্ণনা (৯)
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
জামায়াতের জন্য মহিলাদের মসজিদে ও ঈদগাহে যাওয়া হারাম ও কুফরী (৩)
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সম্বোধন মুবারক করার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ আদব-শরাফত বজায় রাখতে হবে
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথেই হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের বিষয় উল্লেখ থাকা উচিত
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
মহাসম্মানিত সুন্নত মুবারক ছেড়ে দেয়া মানেই পথভ্রষ্ট হওয়া। নাউযুবিল্লাহ!
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব-কর্তব্য
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
খছম বা ঝগড়া কু-স্বভাবটি পরিহার করা অপরিহার্য কর্তব্য
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার)












