মহিলাদের জন্য মসজিদে গিয়ে জামায়াতে নামায পড়া জায়িয নয় (পর্ব-২১)
, ১২ই রজবুল হারাম শরীফ, ১৪৪৪ হিজরী সন, ০৬ তাসি, ১৩৯০ শামসী সন, ৪ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ খ্রি:, ২১ই মাঘ, ১৪২৯ ফসলী সন, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) মহিলাদের পাতা
অনুসরণীয় ইমাম, মুজতাহিদগণ উনারা পর্দার গুরুত্ব, মহিলাদের ঘরে নামায পড়ার ব্যাপারে উৎসাহ ও তাদের ঘরে নামায পড়া সংক্রান্ত ফযীলতপূর্ণ পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার বর্ণনা এবং আমীরুল মু’মিনীন হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার নিষেধাজ্ঞা ও হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ ছিদ্দীক্বাহ আলাইহাস সালাম উনার সমর্থন বা সত্যায়ন মুবারকের ভিত্তিতে ইজতিহাদ করতঃ কেউ কেউ বিনা শর্তে মাকরূহ্ তাহরীমী ফতওয়া দেন, আর কেউ কেউ শর্ত সাপেক্ষে মাকরূহ্ তাহরীমী ফতওয়া দেন। তবে হানাফী মাযহাবের সকল ইমামগণ উনারা বিনা শর্তে মাকরূহ্ তাহরীমী ফতওয়া দেন এবং উক্ত ফতওয়ার উপর উম্মতের ইজমা বা ঐক্যমত প্রতিষ্ঠা লাভ করে। যেমন কিতাবে উল্লেখ করা হয়-
قد اجمعت الامة على كراهة خروج النساء الى الجماعة. امداد الاحكام
অর্থ: “মহিলাদের জামায়াতের জন্য মসজিদে যাওয়া মাকরূহ্ তাহরীমী হওয়ার ব্যাপারে উম্মতের ইজমা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।” (ইমদাদুল আহকাম)
কাজেই যেখানে বিশ্বের অনুসরণীয় সমস্ত ইমাম, মুজতাহিদ উনারা মহিলাদের মসজিদে যাওয়া নাজায়েয অর্থাৎ মাকরূহ্ তাহরীমী ফতওয়া দেন, সেখানে এর বিরোধিতা করে এটাকে জায়েয বলা গোমরাহী ছাড়া কিছুই নয়। আর এসব বিরোধী লোকদের ব্যাপারে মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-
وَمَنْ يُشَاقِقِ الرَّسُولَ مِنْ بَعْدِ مَا تَبَيَّنَ لَهُ الْهُدَى وَيَتَّبِعْ غَيْرَ سَبِيلِ الْمُؤْمِنِينَ نُوَلِّهِ مَا تَوَلَّى وَنُصْلِهِ جَهَنَّمَ وَسَاءَتْ مَصِيرًا
অর্থ: “কারো নিকট হেদায়েত প্রকাশিত হওয়ার পর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার যে ব্যক্তি বিরুদ্ধাচরণ করবে এবং মু’মিনদের পথ রেখে ভিন্ন পথের অনুসরণ করবে, আমি তাকে সেদিকেই ফিরাবো যেদিকে সে ফিরেছে। এবং আমি তাকে জাহান্নামে পৌঁছাব। আর তা কতইনা নিকৃষ্ট প্রত্যাবর্তন স্থল।” (পবিত্র সূরা নিসা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১১৫)
হযরত শায়েখ আহমদ ইবনে আবু সাঈদ মোল্লাজিউন রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার তাফসীর বা ব্যখ্যায় উল্লেখ করেছেন-
فجعلت مخالفة المؤمنين مثل مخالفة الرسول فيكرن اجماعهم كخبر الرسول حجة قطعية
অর্থ: “এই পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে মু’মিনদের বিরোধিতাকে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিরোধিতা হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। অতএব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মতো উম্মতের পবিত্র ইজমা শরীফও অকাট্য এবং প্রামাণ্য দলীল হিসেবে পরিগণিত হবে। (নূরুল আনোয়ার)
উপরোক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ ও উনার তাফসীর মুবারক দ্বারা এটাই প্রমাণিত যে, ইমাম মুজতাহিদগণ উনাদের মতের বিরোধিতা করার অর্থ হলো, মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার মহাসম্মানিত রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিরোধিতা করা, যা স্পষ্টই গোমরাহী। আর এটাও জেনে রাখা দরকার যে, হযরত ইমাম-মুজতাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ উনারা যে ফতওয়া দিয়েছেন, তা পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনার বিপরীত নয় বরং পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ সম্মত। তাই ইমামে আ’যম হযরত ইমাম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেছেন, “আমার কোন কথা যদি তোমরা পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের খেলাফ পাও, তবে তা প্রাচীরে ছুড়ে ফেলে দিও। এর অর্থ হলো- উনার কোন কথাই পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের খেলাফ ছিলনা। কারণ তিনি ছিলেন হাকিমে হাদীছ অর্থাৎ সমস্ত পবিত্র হাদীছ শরীফই উনার জানা ছিল। কাজেই উনার মাসয়ালা বা ফতওয়া ভুল হওয়ার প্রশ্নই উঠেনা। তাই দেখা যায়, পৃথিবীর অগণিত ইমাম-মুজতাহিদ, আলেম, মুহাদ্দিছ, মুফাস্সির, মুহাক্কিক, মুদাক্কিক এবং অধিকাংশ মানুষ যুগ যুগ ধরে সর্বশ্রেষ্ঠ মাযহাব হানাফী মাযহাবের অনুসরণ করে আসছেন এবং অনেকেই হানাফী মাযহাবের অর্ন্তভুক্ত হতে পেরে মহান আল্লাহ পাক উনার দরবারে অশেষ শুকরিয়া জ্ঞাপন করেছেন।
কিতাবে আরো উল্লেখ রয়েছে, হযরত ঈসা রূহুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি যখন পুনরায় পৃথিবীতে তাশরীফ আনবেন তখন তিনি ইজতেহাদ করে চলবেন। উনার সেই ইজতেহাদকৃত মাসয়ালাগুলো হানাফী মাযহাবের মাসয়ালার সাথে হুবহু মিলে যাবে। সুবহানাল্লাহ!
এবার চিন্তা করে দেখুন, হযরত ইমাম আ’যম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ইজতিহাদ কত সুক্ষ্ম। আর হযরত ইমাম আ’যম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সম্পর্কে হযরত ইমাম শাফেয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন-
الناس كلهم عيال ابى حنيفة فى الفقه.
অর্থ: “সমস্ত মানুষ ইলমে ফিক্বাহর দিক থেকে হযরত ইমাম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার নিকট সন্তানতুল্য।” (তারিখে বাগদাদ, মানাকেবে আবু হানীফা, ই’কদুস সুনান)
কাজেই পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ উনাদের আলোকে সঠিকভাবে পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, হযরত ইমাম-মুজতাহিদগণ উনাদের কোন মাসয়ালার বিরোধিতা করা (সেটা যে কোন মাযহাবেরই হোক না কেন) মূলতঃ পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদেরই বিরোধিতা করা।
মূলকথা হচ্ছে, মহিলাদের মসজিদে যাওয়া মাকরূহ্ তাহরীমী হওয়ার উপর উম্মতের ইজমা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এবং যুগ যুগ ধরে সারা বিশ্বে তা অনুসৃত হয়ে আসছে। আর পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ যেহেতু পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদেরই সমর্থিত ও অর্ন্তভুক্ত, সেহেতু উক্ত ইজমাকে অস্বীকার করা বা মু’মিনদের প্রচলিত পথের বিরোধিতা করা পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার বিধানকেই অস্বীকার করার শামিল। যা প্রকাশ্য গোমরাহী ও কুফরী। (চলবে)
-আল্লামা সাইয়্যিদ আহমদ শুয়াইব।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
নিকাহ বা বিবাহের ফযীলত (১)
২০ মে, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সুন্নতি খাবারের সাথে পরিচিত হই (৭)
২০ মে, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
অমুসলিম মহিলাদের দ্বীন ইসলাম গ্রহণের ঈমানদীপ্ত ঘটনা: গবেষণা করতে যেয়ে সম্মানিত দ্বীন ইসলাম গ্রহণ জার্মান নও-মুসলিম নারী ‘ক্যাথেরিন হুফার’র
১৯ মে, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
দাম্পত্য জীবন সুখময় করার কতিপয় সুন্নত মুবারক
১৯ মে, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
মহিলাদের জন্য মসজিদে গিয়ে জামায়াতে নামায পড়া জায়িয নয়
১৮ মে, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
হাকীকী মু’মিনা মুসলিমা হতে হলে বর্তমানে প্রচলিত এই সমস্ত ফিতনা হতে নারীদেরকে খালেছ তওবা করে দ্বীন ইসলামী আহকামে ফিরে আসতেই হবে
১৭ মে, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
মহিলাদের সুন্নতী লিবাস, অলংকার ও সাজ-সজ্জা (১১)
১৭ মে, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
১৬ মে, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব-কর্তব্য (২)
১৬ মে, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
মহিলা ছাহাবী উনাদের জীবনী মুবারক:
১৪ মে, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পারিবারিক তা’লীমের ব্যবস্থা করা অত্যন্ত জরুরী একটি বিষয়
১৩ মে, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
পবিত্র কুরআন শরীফ নিয়ে গবেষণা করে সম্মানিত দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করেন জাপানি নও-মুসলিম নারী
১২ মে, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার)