মহিলাদের সম্মানিত সুন্নতী লিবাস মুবারক, অলংকার ও সাজ-সজ্জা-১১
, ১৭ শা’বান শরীফ, ১৪৪৪ হিজরী সন, ১০ ‘আশির, ১৩৯০ শামসী সন , ১০ মার্চ, ২০২৩ খ্রি:, ২৪ ফাল্গুন, ১৪২৯ ফসলী সন, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) মহিলাদের পাতা
পবিত্র দ্বীন ইসলাম একটি পরিপূর্ণ জীবন ব্যবস্থা, যার মধ্যে পুরুষ-মহিলা উভয়ের জন্যই পবিত্র সুন্নতী লিবাস-পোশাকসহ মানব জীবনের সকল সমস্যার সুস্পষ্ট সমাধান দেয়া হয়েছে। অনেক আমল-ই মানুষ ইচ্ছায়-অনিচ্ছায় করে থাকে। উক্ত আমল সমূহের মধ্যে কিছু আমল রয়েছে মূলতঃ পবিত্র সুন্নতী নেক-আমল মুবারক। কিন্তু পবিত্র সুন্নত মুবারক পালনের নিয়তে উক্ত আমলগুলি আদায় না করার কারণে মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের রিদ্বামন্দি-সন্তুষ্টি থেকেও বঞ্চিত হয়। ঐ সকল আমল মুবারক উনার মধ্যে একটি হলো মহিলাদের সম্মানিত সুন্নতী লিবাস মুবারক, অলঙ্কার ও সাজ-সজ্জাসহ সংশ্লিষ্ট বিষয়সমূহ।
উক্ত বিষয়সমূহ সম্পর্কে নিম্নে ধারাবাহিকভাবে আলোচনা করা হলোÑ
পূর্বে প্রকাশিতের পর...
নিতাক্ব বা ইযার পরিধান করা সম্মানিত সুন্নত মুবারক
মহিলাদের জন্য স্যালোয়ার পরিধান করাই উত্তম এবং পবিত্র সুন্নত মুবারক উনার অন্তর্ভুক্ত। মহাসম্মানিত হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহিলাদের জন্য স্যালোয়ার পরিধান করাই পছন্দ মুবারক করতেন। এবং স্যালোয়ার পরিধানকারিণীগণ উনাদের জন্য খাছভাবে তিনি পবিত্র দোয়া মুবারকও করেছেন। তবে, কারো প্রয়োজন হলে সুন্নত পালনের খেয়ালে নিতাক্ব বা ইযার বা দোপাট্টা ব্যবহার করতে পারে।
নিহায়া কিতাবের মধ্যে রয়েছে: মিনত্বাক্ক নিতাক্বকে বলা হয়। মিনত্বাক্ব একবচন, বহুবচনে মানাত্বীক্ব।
তুহফাতুল আহওয়াজী ৫ম খ- ৪০৭ পৃষ্ঠায় রয়েছে-
فِي الْقَامُوسِ النِّطَاقُ كَكِتَابٍ شُقَّةٌ تَلْبَسُهَا الْمَرْأَةُ تَشُدُّ وَسَطَهَا فَتُرْسِلُ الْأَعْلَى عَلَى الْأَسْفَلِ إِلَى الْأَرْضِ وَالْأَسْفَلُ يَنْجَرُّ عَلَى الْأَرْضِ-
অর্থ: ক্বামূছ নামক অভিধানে রয়েছে যে, নিত্বাক্ব শব্দটি ওজনে কিতাব শব্দের মত। নিত্বাক্ব বলা হয়, এমন পরিধেয় বস্ত্রের অংশ বিশেষ যাকে মহিলারা তাদের কোমরে ফিতার মাধ্যমে বেঁধে তার ঝুলকে যমীন পর্যন্ত ছেড়ে দেয়। এবং উহার ঝুলটি মাটির মধ্যে গড়াতে থাকে।
فِي النِّهَايَةِ تَفْعَلُهُ عِنْدَ مُعَانَاةِ الْأَشْغَالِ لِئَلَّا تَعْثُرَ فِي ذَيْلِهَا-
অর্থ: নেহায়া কিতাবে রয়েছে, এটাকে প্রথমে তারা কোমরে বাঁধে। তারপর উপরের অংশটি নীচের দিকে ছেড়ে দেয়। যাতে সহজে কাজকর্ম করতে পারে এবং পা পিছলে না যায়। (ত্বরহুত তাছরীব ফী শরহিত তাকরীব)
মহাসম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ أُمِّ الْحَسَنِ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهَا أَنَّ سَيِّدَتنَا حَضْرَت اُمّ الْمؤْمِنِيْنَ السّادِسَة عَلَيْهَا السَّلَام حَدَّثَتْهُمْ أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ شَبَّرَ شَبَّرَ لحَضْرَتْ سَيِّدَةِ النِّسَاءِ اَهْلِ الْجَنَّةِ زَهْرَاء عَلَيْه السَّلَامُ شِبْرًا مِنْ نِطَاقِهَا-
অর্থ: হযরত উম্মে হাসান রহমতুল্লাহি আলাইহা উনার থেকে বর্ণিত: তিনি বলেন, নিশ্চয়ই সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আস সাদিসাহ আলাইহাস সালাম তিনি বলেন, নিশ্চয়ই মহাসম্মানিত হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সাইয়্যিদাতুনা হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত নিত্বাক্ব মুবারক উনার ঝুলকে এক বিঘত পরিমাণ নির্ধারিত করে দিয়েছেন। (মুসনাদে আহমদ ইবনে হাম্বল)
قَالَ حَضْرَتْ النَّوَوِيُّ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْه أَجْمَعُوا عَلَى جَوَازِ الْجَرِّ لِلنِّسَاءِ-
অর্থ: হযরত ইমাম নববী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, মহিলাদের পরিধেয় বস্ত্রের ঝুল মাটিতে হেচরানো জায়েয হওয়ার বিষয়ে হযরত উলামায়ে কিরামগণ উনারা ইজমা করেছেন। (তুহফাতুল আহওয়াজী ৫ম খ- ৪০৭ পৃষ্ঠায়)
সর্বপ্রথম হযরত ইসমাঈল যবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার মহাসম্মানিতা আম্মাজান তিনি কোমর বন্ধ বা নিতাক্ব পরিধান করেছেন। এটা এমন এক কাপড় যা মহিলারা জামার (কোর্তা) নীচে ইযার বা দোপাট্টা হিসেবে পরিধান করে থাকে।
যাতুন নিত্বাক্বাইন হযরত আসমা বিনতে আবী বকর আলাইহিমাস সালাম উনার সম্মানিত লক্বব মুবারক। কেননা তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনাদের হিজরত মুবারক উনার সময় উনার কোমর বন্ধকে দু’ টুকরা করে এক টুকরা দ্বারা মশক এবং অপর খ- দ্বারা খাদ্যদ্রব্য বেঁধে দিয়েছিলেন।
এ বিষয়ে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ أَسْمَاءَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا قَالَتْ صَنَعْتُ سُفْرَةَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي بَيْتِ حَضْرَتْ صِدِّيْق اَكْبَر عَلَيْه السَّلَام حِينَ أَرَادَ أَنْ يُهَاجِرَ إِلَى المَدِينَةِ. قَالَتْ فَلَمْ نَجِدْ لِسُفْرَتِهِ وَلاَ لِسِقَائِهِ مَا نَرْبِطُهُمَا بِهِ فَقُلْتُ لِحَضْرَتْ صِدِّيْق اَكْبَر عَلَيْه السَّلَام وَاللَّهِ مَا أَجِدُ شَيْئًا أَرْبِطُ بِهِ إِلَّا نِطَاقِي قَالَ: فَشُقِّيهِ بِاثْنَيْنِ فَارْبِطِيهِ بِوَاحِدٍ السِّقَاءَ وَبِالْآخَرِ السُّفْرَةَ فَفَعَلْتُ فَلِذَلِكَ سُمِّيَت ذَات النِّطَاقَيْنِ-
অর্থ: সাইয়্যিদাতুনা হযরত আসমা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা উনার থেকে বর্ণিত: তিনি বলেন, আমি আফদ্বালুন নাস বা’দাল আম্বিয়া সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনার গৃহে মহাপবিত্র হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পাথেয় গুছিয়ে দিয়েছিলাম। যখন তিনি পবিত্র মদীনা শরীফ উনাতে হিজরত মুবারক করার ইচ্ছা মুবারক করলেন, আমি তখন খাদ্য-দ্রব্য এবং পানির মশক বাঁধার জন্য কিছুই পাচ্ছিলাম না। তখন সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনাকে বললাম, মহান আল্লাহ পাক উনার শপথ! আমি আমার কোমর বন্ধনী ব্যতীত বাঁধার কিছুই পাচ্ছি না। সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি তখন বললেন, একে দ্বিখ-িত করুন। এক খ- দ্বারা মশক এবং অপর খ- দ্বারা খাদ্য-দ্রব্য বেঁধে দিন। আমি তাই করলাম। এজন্যই আমাকে বলা হত যাতুন নিত্বাক্বাইন অর্থাৎ দু’কোমর বন্ধনীর অধিকারিণী। (বুখারী শরীফ)
মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ اُمِّ الْمَؤمِنِيْنَ الثَّالِثَةِ الصِدِّيْقَةِ عَلَيْهَا السَّلَامُ قَالَتْ يَرْحَمُ اللَّهُ نِسَاءَ الـمُهَاجِرَاتِ الأُوَلَى لَمَّا أَنْزَلَ اللَّهُ وَلْيَضْرِبْنَ بِخُمُرِهِنَّ عَلَى جُيُوبِهِنَّ شَقَّقْنَ مُرُوطَهُنَّ فَاخْتَمَرْنَ بِهَا-
অর্থ: সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ আলাইহাস সালাম তিনি বলেন, প্রথম হিজরতকারিণী সম্মানিতা হযরত মহিলা ছাহাবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুন্নাগণ উনাদের প্রতি মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার খাছ রহমত মুবারক বর্ষণ করুন। কেননা, পবিত্র সূরা নূর শরীফ উনার পবিত্র আয়াত শরীফ
وَلْيَضْرِبْنَ بِخُمُرِهِنَّ عَلَىٰ جُيُوبِهِنَّ-
অর্থ: মহিলার যেন তাদের গলা ও বক্ষদেশ উড়না দ্বারা ঢেকে নেয়।
যখন এই সম্মানিত পবিত্র আয়াত শরীফ নাযিল হলো, তখন প্রথম হিজরতকারিণী সম্মানিতা হযরত মহিলা ছাহাবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুন্নাগণ উনারা উনাদের ইযারকে দু’ টুকরা করে এক টুকরা দ্বারা উনারা ইযার হিসেবে ব্যবহার করেন এবং অন্য টুকরা দ্বারা উনারা উনাদের ওড়না হিসেবে ব্যবহার করতে শুরু করে দেন। সুবহানাল্লাহ। (বুখারী শরীফ) (চলবে)
-মুহম্মদ মুফীদ্বুর রহমান
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব-কর্তব্য
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
খছম বা ঝগড়া কু-স্বভাবটি পরিহার করা অপরিহার্য কর্তব্য
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
যে ৪ শ্রেণীর লোকদের জন্য ক্বিয়ামতের দিন সুপারিশ ওয়াজিব হবে
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
মুসলমান পুরুষ ও মহিলা সকলের জন্যই ফরযে আইন হচ্ছে- যথাযথভাবে ৫ ওয়াক্ত নামায তারতীব অনুযায়ী যথাসময়ে আদায় করে নেয়া
০২ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
মহাসম্মানিত মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনারা বেমেছাল ফযীলত মুবারকের অধিকারী
০২ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
হুব্বে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
০১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-
০১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সৃষ্টির শুরুতেই মহান আল্লাহ পাক উনার কুদরত মুবারক উনার মধ্যে ছিলেন, আছেন এবং অনন্তকাল থাকবেন
০১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
মহান আল্লাহ পাক তিনি তওবাকারীকে পছন্দ করেন (১)
৩০ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
ক্বলবী যিকির জারী না থাকলে শয়তানের ওয়াসওয়াসা থেকে বেঁচে থাকা সম্ভব নয়
৩০ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব-কর্তব্য
২৭ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ মেহমানদারী করার মাধ্যমে উদযাপনে শাফায়াত মুবারক লাভ
২৭ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার)












