মহিলাদের সুন্নতী লিবাস, অলংকার ও সাজ-সজ্জা (১৬)
বোরকা পরিধান করে হাত ও মুখ খোলা রেখে ঘর থেকে বের হওয়া জায়েয নেই
, ১৯ মুহররমুল হারাম শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ২৮ ছানী, ১৩৯২ শামসী সন , ২৬ জুলাই, ২০২৪ খ্রি:, ১১ শ্রাবণ, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) মহিলাদের পাতা
হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-
عَنْ حَضْرَت الْحَسَنِ الْبَصْرِيِّ رَحْمَة اللهِ عَلَيْهِ بَلَغَنِي أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ لَعَنَ اللَّهُ النَّاظِرَ وَالْمَنْظُورَ إِلَيْهِ-
অর্থ: হযরত হাসান বসরী রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, আমার নিকট উক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে পৌছেছে। নিশ্চয়ই তিনি বলেন, মহান আল্লাহ পাক তিনি তাদের প্রতি লা’নত বর্ষন করুন যে দৃষ্টি দেয় এবং যার প্রতি দৃষ্টি দেয়া হয়। (মিরকাতুল মাফাতীহ শরহু মিশকাতিল মাছাবীহ-৫/২০৫৯, কানযুল উম্মাল, শুয়াবুল ঈমান-৬/১৬২, আস-সুনানুল কুবরা লিল-বাইহাক্বী-৭/১৫৯, আল-মাহইয়াউ ফী কাশফি আসরারিল মুয়াত্বা-৪/৩০০, লুময়াতুত তানক্বীহ-৬/৩২)
হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো বর্ণিত রয়েছে-
قَالَ رَسُول اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ زِنَا الْعَيْنِ النَّظَرُ-
অর্থ: হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, পর-নারীর প্রতি দৃষ্টি দেয়া চোখের যিনা। (মুসনাদে বাযার শরীফ-১৪/১১৬, কানযুল উম্মাল-৫/৩২৬, কাওকাবুদ দুররী-২/১১, মাউসূয়া’তুত তাখরীজ-পৃ: ২০২৭৩, আল-আহাদ ওয়াল মাছানী-২/২৭১, ছুলাছিয়্যাতুন নবভিয়্যাহ-১/৩৯)
উক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ দ্বারা দিবালোকের ন্যায় সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয় যে, মুখ ও হাত খোলা রেখে ঘর থেকে বের হওয়া বা পর-পুরুষের সামনে যাওয়া হারাম। জায়িয মনে করা কুফরী।
কেননা, ধরে নিলাম দৃষ্টি দানকারী দৃষ্টিদিয়ে অন্যায় করার কারণে সে অভিশপ্ত হবে, তাহলে যার প্রতি দৃষ্টি দিবে সেই মহিলাটি অভিশপ্ত হওয়ার একমাত্র কারণ হলো: সে দৃষ্টি দেয়ার ক্ষেত্র তথা মুখ খোলা রেখে বের হয়েছে, সে কারণে সে অভিশপ্ত হয়েছে। মুখ খোলা রাখা জায়িয থাকলে সেই মহিলা কখনো অভিশপ্ত হতোনা। কারো প্রতি আকর্ষিত হওয়া বা কাউকে পছন্দ অথবা অপছন্দ করা তথা সৌন্দর্যের মূল কেন্দ্রবিন্দু হলো মুখ। তদ্রুপ যিনা হওয়ার কারণটিও মুখ খোলে বের হওয়া।
তাই বলতে হয়, যেটার দিকে নজর করা হারাম হয়, সেটা খোলা রাখা কি করে জায়িয হয়? সেটা নফসের পূজারীরা মানতে চায় না। কারণ এটা তাদের নফসের খোরাক। তাই যারা দৃষ্টি দেয়ার ক্ষেত্র তথা চেহারাকে খোলা রেখে ঘর থেকে বের হওয়া জায়িয় ফাতওয়া দেয়, তারা দৃষ্টি দানকারী ও দৃষ্টির স্থানকারীর চাইতেও হাজারগুন বেশী অভিশপ্ত। কেননা, পবিত্র ক্বুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের মিথ্যা অর্থ ও অপব্যাখ্যা করে হারামকে জায়িয বলার কারণে তারা নিঃসন্দেহে মুরতাদ-কাফিরের অন্তর্ভুক্ত।
তারা যে সমস্ত পবিত্র হাদীছ শরীফকে অপব্যাখ্যা করে মুখ ও হাত খোলা রেখে বের হওয়াকে জায়িয বলে। ঐ সমস্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের কোনটি সম্মানিত পর্দার আয়াত শরীফ নাযিল হওয়ার পূর্বের বিষয়। কোনটি এমন মহিলাদের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে, যাদেরকে পবিত্র কুরআন শরীফে ক্বাওয়ায়িদু মিনান্নিসা তথা এমন বৃদ্ধা নারী যারা বিবাহের আশা রাখেনা, তাদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। কোনটি মাহরামদের সাথে দেখা সাক্ষাতের বিষয়ে বলা হয়েছে, কোনটি পবিত্র ছলাত আদায়কালে হাত ও মুখ খোলার কথা বলা হয়েছে।
অথবা কোথাও চলতে গিয়ে কোন সমস্যার কারণে বা বাহনের দুর্ঘটনার শিকার হওয়ার কারণে যদি অনিচ্ছা সত্ত্বেও কিছু প্রকাশ হয়ে পরে, বা সম্পূর্ণ শরীর ঢাকার পরেও পর্দার উপর দিয়ে যতটুকু অনুভব করা যায়, তাহলে তা ক্ষমাযোগ্য বা ভিন্ন বিষয়। সেই বিষয়ের ইঙ্গিত করে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
وَلَا يُبْدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا مَا ظَهَرَ مِنْهَا
অর্থ: তারা যেন তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে। তবে যা (কোন কারণ বশতঃ) এমনিতেই প্রকাশ হয়ে পরে, তা ভিন্ন বিষয়।
উল্লেখ্য যে, প্রথমত: مَا ظَهَرَ শব্দের অর্থ হলো যা প্রকাশ হয়ে পরে। অর্থাৎ নিজে প্রকাশ করবেনা বরং অন্য কোন কারণে প্রকাশ হয়ে পরে। আর اَظْهَرَ مَا শব্দের অর্থ যা স্বয়ং নিজেই প্রকাশ করে দেয়। অর্থাৎ নিজেই প্রকাশ করে বের হয়।
দ্বিতীয়ত: إِلَّا مَا ظَهَرَ مِنْهَا অর্থ: যা প্রকাশ হয়ে পরে তা ব্যতীত। এখানে প্রকাশ হওয়ার বিষয়টি অনির্দিষ্টভাবে বলা হয়েছে যে, যা প্রকাশ হয়ে পরে। অর্থাৎ হাত, পা, কান, পীঠ, চুল ইত্যাদিসহ একজন মহিলার সমস্ত শরীরের যে কোন অংশ উদ্দেশ্য। সুতরাং নির্দিষ্ট করে মুখ খোলার অর্থ করা এটা তাদের উদ্দেশ্যমূলক নফসের পূজা।
-মুহম্মদ মুফীদ্বুর রহমান।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
বিশ্বের বেশিরভাগ দেশের নাগরিকরা ফিঙ্গারপ্রিন্ট পদ্ধতির আওতাভুক্ত অথচ বাংলাদেশের মুসলমানগণ ছবিযুক্ত, ত্রুটিপূর্ণ হারাম পদ্ধতির শিকার
১০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
নিকাহ বা বিবাহের ফযীলত (১৩)
০৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
দোযখে বেপর্দা হওয়া নারীদের শাস্তির বর্ণনা (৫)
০৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
অন্যের ঘরে প্রবেশে অনুমতি নেয়ার তারতীব
০৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
মহিলাদের জন্য মসজিদে গিয়ে জামায়াতে নামায আদায় করা নাজায়িজ
০৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
নারীর মৌলিক অধিকার ‘পর্দা পালনের অধিকার’ কেড়ে নেয়া হচ্ছে কেন?
০৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
মহিলাদের সুন্নতী লিবাস, অলংকার ও সাজ-সজ্জা (২২)
০৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
তথাকথিত নারীবাদীরা কী মানুষ হিসেবে গণ্য হতে চায় না?
০৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব-কর্তব্য (১৩)
০৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের কর্তব্য
০৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
পিতা-মাতা হিসেবে সন্তানের প্রতি দায়বদ্ধতা
০৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
আখিরী চাহার শোম্বাহ শরীফ: ‘তারিখ’ হিসেবে পালিত না হয়ে ‘বার’ হিসেবে পালিত হওয়ার হাক্বীক্বত
০৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার)