নছীহত মুবারক
মানুষ মূর্খতার কারণে এমন কিছু চেয়ে বসে যেটা সে পরবর্তীতে বরদাশত করতে পারে না
, ২৯ শা’বান শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ২ আশির, ১৩৯২ শামসী সন , ১ মার্চ, ২০২৫ খ্রি:, ১৫ ফালগুন, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
মহান আল্লাহ পাক তিনি কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-
وَعَسَىٰ أَن تَكْرَهُوا شَيْئًا وَهُوَ خَيْرٌ لَّكُمْ ۖ وَعَسَىٰ أَن تُحِبُّوا شَيْئًا وَهُوَ شَرٌّ لَّكُمْ
অর্থ: “তোমরা যেটা অপছন্দ করো, সেটা তোমাদের জন্য উত্তম এবং যেটা পছন্দ করো সেটা তোমাদের জন্য খারাপ। ” (পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ, পবিত্র আয়াত শরীফ ২১৬)
এখানে বান্দার জন্য কোন বিষয়টি উত্তম সে বিষয়টি একমাত্র মহান আল্লাহ পাক তিনিই ভালো জানেন। অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক তিনি যাকে যে অবস্থায় রাখেন তাকে সে অবস্থায় সন্তুষ্ট থাকতে হবে। কিন্তু বান্দার আক্বল-সমঝ কম থাকার কারণে সে মহান আল্লাহ পাক উনার কাছে এমন কিছু চেয়ে থাকে, যার কারণে তাকে লাঞ্চিত হতে হয়। এ প্রসঙ্গে মহাসম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, হযরত আবূ হুযাইফা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, কোন মু’মিনের জন্য উচিত হবে না, নিজেকে লাঞ্চিত করা। হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহুম উনারা বললেন: কিভাবে নিজেকে লাঞ্চিত করে? তখন তিনি বললেন, এমন বিপদ চেয়ে বসে যা সে বরদাশত করতে পারবে না। (বাইহাক্বী শরীফ, তিরমিযী, ইবনে মাজাহ শরীফ)
দেখা যায় অনেকে বিপদে পড়লে বিপদ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য আজীবন রোযা রাখার মানত করে। কিন্তু সে নিয়ত করার সময় ফিকির করেনা যে, আজীবন রোযা রেখে মানত পূর্ণ করতে পারবে কিনা। অথচ মানত পূর্ণ করা ওয়াজিব। আর মানত পূণর্ না করলে কাফফারা আদায় করাও ওয়াজিব।
অনেক সময় দেখা যায় যে, একজনের অসুখ হলে তার অসুখ দেখে অন্য আরেকজন দোয়া করে যে, মহান আল্লাহ পাক তিনি যেন অসুস্থ ব্যক্তির অসুস্থতা তাকে দিয়ে অসুস্থ ব্যক্তিকে সুস্থ করে দেন। তার এই দোয়ার ফলে দেখা যায় যে, অসুস্থ ব্যক্তি সুস্থ হয়ে যায়। আর তখন সে নিজেই অসুস্থ হয়ে পড়ে ফলে সেটা আর সহ্য করতে পারে না। এভাবেই মানুষ নিজেদের জিহালতী ও মূর্খতার কারণে নিজেদেরকে লাঞ্চিত ও অপমানিত করে।
জিহালতিপূর্ণ আরেকটি বিষয়, যেটা বর্তমান সমাজে ব্যাপকভাবে বিস্তার লাভ করছে, তা হল- যদি কোন পরিবারে সন্তান জন্মগ্রহণ না করে, তখন সেই পরিবারের আহলিয়াকেই সাধারণত দোষারোপ করা হয় এবং কটু কথা বলে অপমানিত করা হয়।
সন্তান জন্মগ্রহণ করার বিষয়টা সম্পূর্ণ মহান আল্লাহ পাক উনার কুদরত তথা তাকদীরের বিষয় কিন্তু মানুষ এটা বিশ্বাস করে না এবং মেনেও নিতে চায়না। যার ফলে মানুষ আল্লাহ পাক উনার রহমত মুবারক তথা নিয়ামত মুবারক থেকে মাহরূম থাকে। নাউযুবিল্লাহ!
মূলত মানুষ বুঝতে পারে না, সন্তান থাকা বা না থাকা উভয় অবস্থায়ই মহান আল্লাহ পাক উনার নিয়ামত মুবারক তথা রেযামন্দি সন্তুষ্টি হাছিলের কারণ। কেননা, কোন ব্যক্তির যদি সন্তান থাকে আর সেই সন্তান যদি ওলীআল্লাহ বা দ্বীনের ফক্বীহ বানাতে পারে, তাহলে সেই সন্তানই তার জন্য নাযাতের কারণ এবং একটা উত্তম ছদক্বায়ে জারিয়াহ্। সুবহানাল্লাহ! আর যদি সন্তানকে আল্লাহওয়ালা বানাতে না পারে, তাহলে সেই সন্তানই তার ধ্বংস ও জাহান্নামী হওয়ার কারণ। নাউযুবিল্লাহ! আর সন্তান না থাকাটা ও যে নিয়ামত বিষয়টি ফিকির করলে সহজেই বুঝা যায় এবং ইতমিনান লাভেরও কারণ হয়। যেমন- যদি কারো সন্তান না থাকে, তখন তার মনে একটা কষ্ট থাকার কারণে মহান আল্লাহ পাক উনার দিকে সহজেই রুজু হতে পারেন। অপরদিকে তার মাল-সম্পদ ও মহান আল্লাহ পাক উনার পথে খরচ করার সুযোগ লাভ করে। সুবহানাল্লাহ!
উল্লেখ্য যে, সন্তান না থাকা বা সন্তান না হওয়াটাও একটা সুন্নত। যদি হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের দিকে লক্ষ্য কর, তাহলে আমরা দেখতে পাই, দু’জন মহা সম্মানিতা উম্মুল মু’মিনীন আলাইহিমাস সালাম ব্যতীত অন্যান্য উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের কোন সম্মানিত আওলাদ ছিলেন না। অথচ উনারা হচ্ছেন মহান আল্লাহ পাক উনার যমীনে সর্বশ্রেষ্ঠ সুমহান ব্যক্তিত্বা মুবারক। সুবহানাল্লাহ! সুতরাং যাদের সন্তান হয় না, তারা যদি উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের দিকে লক্ষ্য করে, তাহলে তাদেরও আর কোন আফসুস থাকার কথা নয়।
আবার অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় যাদের সন্তান হয় না, তারা সন্তান লাভের আশায় ২য় আরেকটা বিবাহ করতে চায়। বিষয়টি ফিকিরের, যেই মহান আল্লাহ পাক তিনি ২য় স্ত্রীর ঘরে সন্তান দিতে পারেন, সেই মহান আল্লাহ পাক তিনি তো ১ম স্ত্রীর ঘরেই সন্তান দিতে পারেন। মূলত, মানুষ তকদীর বিশ্বাস করে না। যার ফলে সন্তানও লাভ করতে পারে না। বিষয়টি আরো উপলব্ধির জন্য হযরত যাকারিয়া আলাইহাস সালাম উনার সম্পর্কে একটি ঘটনা তুলে ধরা হলো: হযরত যাকারিয়া আলাইহাস সালাম উনার কোন সন্তান ছিলেন না। হযরত উম্মু রূহিল্লাহ আলাইহাস সালাম উনাকে দেখাশুনা করতেন। উনার হুজরা শরীফে যেখানে তিনি অবস্থান করতেন তথা মেহরাবে হযরত যাকারিয়া আলাইহাস সালাম তিনি ব্যতীত কেউই সেখানে প্রবেশ করতে পারত না। ওখানে প্রবেশ করে বিভিন্ন ধরণের ফলমুল দেখতে পেতেন যা সিজনাল বা মৌসুমি ফল ছিল না। তা দেখে হযরত যাকারিয়া আলাইহাস সালাম তিনি উম্মু রূহিল্লাহ আলাইহাস সালাম উনাকে জিজ্ঞেস করতেন, এই ফলমুল কোথা থেকে পেলেন। উম্মু রূহিল্লাহ আলাইহাস সালাম তিনি বলতেন এগুলো মহান আল্লাহ পাক উনার তরফ থেকে। এটা শুনে হযরত যাকারিয়া আলাইহাস সালাম তিনি ভাবলেন, যেই মহান আল্লাহ পাক তিনি মৌসুম ছাড়া ফলমুল দিতে পারেন, সেই মহান আল্লাহ পাক তিনি সন্তান ও দিতে পারেন। তাই তিনি সেই মেহরাবে দাঁড়িয়ে দোয়া করতেন, আল্লাহ পাক উনার দোয়া কবুল করলেন।
অতএব, প্রত্যেকের উচিত এই বিষয়টি থেকে ইবরত নসীহত গ্রহণ করা, যাদের সন্তান রয়েছে আর যাদের সন্তান নেই উভয় অবস্থাতেই শুকরিয়া আদায় করে তকদীরের উপর সন্তুষ্ট থাকা।
-০-
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
পবিত্র ‘ছলাতুল জুমুয়াহ’ উনার পূর্বে ৪ রাকায়াত সুন্নত নামায অর্থাৎ পবিত্র ‘ক্বাবলাল জুমুয়াহ’ নামায নিয়ে বাতিলপন্থিদের বিভ্রান্ত্রিকর ও মিথ্যা বক্তব্যের দলীলভিত্তিক জাওয়াব (৮)
২১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
কাফির মুশরিকদের থেকে দূরে থাকতে এবং তাদেরকেও দূরে রাখার ব্যাপারে নির্দেশ মুবারক
২০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সম্মানিত ইসলামী শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে- ফুটবল-ক্রিকেটসহ সর্বপ্রকার খেলাধুলা করা, সমর্থন করা হারাম ও নাজায়িয (২)
২০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
যেখানে প্রাণীর ছবি থাকে, সেখানে রহমতের ফেরেশতা প্রবেশ করেন না
২০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের সম্মানিত ৩টি স্তর
২০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
আসমাউর রিজাল, জারাহ ওয়াত তা’দীল, উছুলে হাদীছ শরীফ উনার অপব্যাখ্যা করে অসংখ্য ছহীহ হাদীছ শরীফ উনাকে জাল বলছে ওহাবী সালাফীরা (৩)
২০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
পর্দা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া কবীরা গুনাহ
১৯ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৯ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
হযরত আব্বাস ইবনে মিরদাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
যাকাত সম্পর্কিত আহকাম, মাসায়িল ও ফাযায়িল (৪)
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার)












