পর্দা পালন করা ফরযে আইন:
মাহরাম ও গায়রে মাহরাম বিষয়ক বর্ণনা
, ১১ জুমাদাল ঊখরা শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ১৬ সাবি’, ১৩৯২ শামসী সন , ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রি:, ২৯ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) মহিলাদের পাতা
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عَنْ حضرة ام المؤمنين السادسة أُمِّ سَلَمَةَ عليها السلام قَالَتْ : دَخَلَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم أَنَا وَحضرة ام المؤمنين الثالثة عشر مَيْمُونَةُ عليها السلام جَالِسَتَانِ فَجَلَسَ فَاسْتَأْذَنَ ابْنُ أُمِّ مَكْتُومٍ الأَعْمَى رضى الله تعالي عنه فَقَالَ النبى صلى الله عليه وسلم احْتَجِبَا مِنْهُ. فَقُلْنَا : يَا رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم أَلَيْسَ بِأَعْمَى لاَ يُبْصِرُنَا؟ قَالَ النبى صلى الله عليه وسلم : افعميا وان انتما الستما تُبْصِرَانِهِ.
অর্থ: সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আস সাদিসাহ আলাইহাস সালাম তিনি বর্ণনা করেন- নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তাশরীফ মুবারক আনলেন ও বসলেন তখন আমি এবং সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ আশার আলাইহিমাস সালাম আমরা দুজন বসা ছিলাম ইতিমধ্যে অন্ধ সাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উম্মে মাকতুম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি আগমন করার অনুমতি প্রার্থনা করছিলেন, (বিষয়টি পর্দার আয়াত শরীফ নাযিল হওয়ার পরের) তখন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আমাদেরকে নির্দেশ মুবারক দান করে ইরশাদ মুবারক করলেন- আপনারা দুজন উনার থেকে পর্দা করুন। আমরা তখন আরজু করলাম ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! তিনি তো অন্ধ, তিনি তো আমাদেরকে দেখবেন না। তখন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন -আপনারা কি অন্ধ? আপনারা তো উনাকে দেখতে পাবেন। (আবু দাউদ শরীফ, সুনানুল কুবরা লিল বাইহাক্বী, বজলুল মাজহুদ, আউনুল মা’বূদ)
উপরোক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে খলিক্ব, মালিক, রব, মহান আল্লাহ পাক তিনি পুরুষ-মহিলা সকলের জন্যই পর্দা করাকে ফরজ করে দিয়েছেন। সাথে সাথে একজন পুরুষ কার কার সাথে দেখা করতে পারবে এবং একজন মহিলা কার কার সাথে দেখা করতে পারবে সে বিষয়টিও সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা মুবারক করেছেন। তাই উল্লিখিত আয়াত শরীফসমূহের ভিত্তিতে যতজন পুরুষ কতৃক মহিলাদেরকে এবং মহিলা কর্তৃক পুরুষকে দেখা করা জায়িয তার একটি তালিকা দেয়া হলো-
একজন পুরুষ যতজন মহিলাকে দেখতে পারে বা দেখা দিতে পারে:
(১) মা (আপন ও সৎ উভয়ের সাথেই দেখা করা জায়িয)। (২) দাদী, পরদাদী (এভাবে যত উর্ধ্বে যাক)। (৩) নানী, পরনানী (এভাবে যত উর্ধ্বে যাক) (৪) মেয়ে (বৈপিত্রেয়া, বৈমাত্রিয়া মেয়ে এবং দুধ মেয়েও শামিল) (৫) পুতনী (এখানে দুধ ছেলে ও বৈমাত্রেয় ও বৈপিত্রেয় ছেলের মেয়েও শামিল) (৬) নাতনী (এখানে দুধ মেয়ে ও বৈপিত্রেয়া মেয়ের মেয়েও শামিল) (৭) বোন (তিন প্রকারঃ আপন, বৈমাত্রিয়া বোন ও বৈপিত্রিয়া বোন শামিল) (৮) ফুফু (আপন ফুফু, বৈমাত্রিয়া ফুফু, বৈপিত্রিয়া ফুফু ও দুধ ফুফু শামিল) (৯) খালা (আপন খালা, বৈমাত্রিয়া খালা, বৈপিত্রিয়া ও দুধ খালা শামিল) (১০) ভাতিজী (ভাতিজীর মেয়ে যত নিম্নে যাক) (১১) ভাগ্নী (ভাগ্নীর মেয়ে যত নিম্নে যাক) (১২) দুধ মা (আড়াই বছরের মধ্যে যার দুধ পান করা হয়েছে)। (১৩) দুধ বোন (আপন বোনের মত দুধ বোনকে দেখা জায়িয) (১৪) শাশুড়ী (এখানে শুধু আপন শাশুড়ী উদ্দেশ্য, সৎ শাশুড়ীকে দেখা হারাম) (১৫) যে স্ত্রীর সাথে অবস্থান করা হয়েছে তার অন্য পক্ষের মেয়ে। (১৬) ঔরসজাত পুত্রের বধু বা স্ত্রী (এখান থেকে পালক পুত্রের স্ত্রীকে বাদ দেয়া হয়েছে অর্থাৎ পালক পুত্রের স্ত্রীকে দেখা হারাম। ) (১৭) দুধ পুত্রের বধু বা স্ত্রী। (১৮) অতি বৃদ্ধা মহিলা, যাদের প্রতি তাকালে আকর্ষণ বিকর্ষণে পরিণত হয়।
একজন মহিলা যতজন পুরুষকে দেখতে পারে বা দেখা দিতে পারে:
(১) পিতা (আপন ও মায়ের পূর্বের স্বামী উভয়ের সাথেই দেখা করা জায়িয)
(২) দাদা (পর দাদা এভাবে যত উর্ধ্বে যাক)
(৩) নানা (পর নানা এভাবে যত উর্ধ্বে যাক)
(৪) ছেলে (বৈপিত্রেয়, বৈমাত্রেয় ও দুধ ছেলে সকলেই শামিল)
(৫) নাতী বা পৌত্র (এখানে দুধ ছেলে, বৈমাত্রেয় ও বৈপিত্রেয় ছেলের ছেলেও শামিল)
(৬) নাতী বা দৌহিত্র (এখানে দুধ মেয়ে, বৈমাত্রেয় ও বৈপিত্রেয় মেয়ের ছেলেও শামিল)
(৭) ভাই (আপন, বৈমাত্রেয় ও বৈপিত্রেয় ভাই শামিল)
(৮) চাচা (আপন, বৈমাত্রেয়, বৈপিত্রেয় ও দুধ চাচা শামিল)
(৯) মামা (আপন, বৈমাত্রেয়, বৈপিত্রেয় ও দুধ মামা শামিল)
(১০) ভাতিজা (ভাতিজার ছেলে যত নিম্নে যাক) (১১) ভাগিনা (ভাগিনার ছেলে যত নিম্নে যাক) (১২) দুধ পিতা (আড়াই বছরের ভিতরে যার স্ত্রীর দুধ পান করা হয়েছে) (১৩) দুধ ভাই (আপন ভাইয়ের মত দুধ ভাইকেও দেখা দেয়া জায়িয) (১৪) শশুর। (শুধু আপন শশুর উদ্দেশ্য) (১৫) যে স্বামীর সাথে অবস্থান করা হয়েছে তার অন্য পক্ষের বা স্ত্রীর ছেলে। (১৬) ঔরসজাত মেয়ের স্বামী বা জামাতা (এখান থেকে পালিত মেয়ের স্বামী বাদ যাবে অর্থাৎ পালিত মেয়ের স্বামীকে বা পালিত মেয়ের জামাতাকে দেখা হারাম। ) (১৭) দুধ মেয়ের স্বামী বা জামাতা। (১৮) পুরুষদের মধ্যে যারা অবুঝ, মহিলার প্রতি যাদের কোন আকর্ষণ নাই। (১৯) বালকদের মধ্যে ঐ সমস্ত বালক যাদের কাছে এখনো মেয়েদের বিষয়টি স্পষ্ট হয় নাই।
(২০) অতি বৃদ্ধ পুরুষ, যাদের দিকে তাকালে আকর্ষণ বিকর্ষণে পরিণত হয়।
-আল্লামা মুফতী মুহম্মদ ফজলুল হক্ব।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
হুব্বে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
০৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সর্বক্ষেত্রে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে প্রাধান্য দিতে হবে
০৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সৃষ্টির শুরুতেই মহান আল্লাহ পাক উনার কুদরত মুবারক উনার মধ্যে ছিলেন, আছেন এবং অনন্তকাল থাকবেন
০৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
মহান আল্লাহ পাক তিনি তওবাকারীকে পছন্দ করেন (২)
০৭ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
ক্বলবী যিকির জারী না থাকলে শয়তানের ওয়াসওয়াসা থেকে বেঁচে থাকা সম্ভব নয়
০৭ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
দোযখে বেপর্দা হওয়া নারীদের শাস্তির বর্ণনা (৯)
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
জামায়াতের জন্য মহিলাদের মসজিদে ও ঈদগাহে যাওয়া হারাম ও কুফরী (৩)
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সম্বোধন মুবারক করার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ আদব-শরাফত বজায় রাখতে হবে
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথেই হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের বিষয় উল্লেখ থাকা উচিত
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
মহাসম্মানিত সুন্নত মুবারক ছেড়ে দেয়া মানেই পথভ্রষ্ট হওয়া। নাউযুবিল্লাহ!
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব-কর্তব্য
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
খছম বা ঝগড়া কু-স্বভাবটি পরিহার করা অপরিহার্য কর্তব্য
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার)












