ইলমে তাছাওউফ
মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক (৪৮) শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা যখন যা আদেশ করবেন তখন তা পালন করাই মুরীদের জন্য সন্তুষ্টি লাভের কারণ
-আল্লামা মুফতী সাইয়্যিদ মুহম্মদ আব্দুল হালীম।
, ২৭ জুমাদাল ঊখরা শরীফ, ১৪৪৭ হিজরী সন, ২০ সাবি’, ১৩৯৩ শামসী সন , ১৯ ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রি:, ০৪ পৌষ অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ ফসলী সন, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) ইলমে তাছাউফ
وَمِنَ الْآدَابِ أَنْ يَّسُدَّ عَلٰى نَفْسِهٖ بَابُ السُؤَالِ فَلَا يُسْأَلَ الشَّيْخُ عَنْ شَيْءٍ حَتّٰى يُحَدِّثَ لَهٗ مِنْهُ ذِكْرًا
অর্থ: “আর কামিল শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনার প্রতি মুরীদের আদব হলো, সে প্রশ্ন করার ব্যাপারে নিজেকে বিরত রাখবে এবং কখনও কোন বিষয়ে কামিল শায়েখ উনাকে প্রশ্ন করবে না। যতক্ষণ পর্যন্ত কামিল শায়েখ তিনি নিজে থেকে তাকে কিছু না বলবেন। ” (তাফসীরে রুহুল বয়ান ৫ম খ-, ২৭৭ পৃষ্ঠা)
এ প্রসঙ্গে জ্ঞানী ব্যক্তিগণ বলেছেন-
اِنْ كَانَ الْكَلَامُ مِنْ فِضَّةٍ فَالصَّمْتُ ذَهَبٌ.
অর্থ: “যদি কথা বলা বা প্রশ্ন করা রৌপ্য সাদৃশ্য হয় তাহলে চুপ থাকাটা স্বর্ণ তুল্য। ” (তাফসীরে রূহুল বয়ান)
উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, কামিল শায়েখ উনার সাথে প্রয়োজনের অতিরিক্ত কথা না বলা এবং তিনি যে বিষয়ে আদেশ করবেন তা যথাযথ পালন করাই হচ্ছে ছোহবতের আদব। যদিও তা দৃশ্যতঃ শরীয়তের খেলাফ মনে হয়।
তবে কামিল শায়েখ দাবি করে কেউ যদি প্রকৃতপক্ষে কামিল না হয়, কামিল শায়েখ উনার জন্য যে সমস্ত গুণাবলী আবশ্যক তা যদি তার নিকট বিদ্যমান না থাকে। কিংবা শরীয়তের বহির্ভূত, নাজায়েয, হারাম কাজে সর্বদা লিপ্ত থাকে, সুন্নতের অনুসরণ-অনুকরণের প্রতি অনুরাগী না হয়, তাহলে সেই ব্যক্তির ছোহবত ইখতিয়ার করা এবং তার নিকট বাইয়াত হওয়াই জায়েয নেই। সেক্ষেত্রে তাদের এরূপ শরীয়ত বহির্ভূত আদেশ-নিষেধ পালন করার প্রশ্নই উঠে না। সর্বোপরি এমন ব্যক্তি হতে দূরে থাকা ফরজ-ওয়াজিবের অন্তর্ভুক্ত।
কাজেই হাল যামানার যে সমস্ত নামধারী শায়েখ সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অনুসরণ-অনুকরণ থেকে বিমুখ; দুনিয়াবী ফায়দা হাছিলের জন্য বিধর্মীদের আদর্শ গ্রহণে সদা তৎপর তথা গণতন্ত্র, হরতাল, লংমার্চ, ব্লাসফেমী আইন, মৌলবাদ, কুশপুত্তলিকা দাহসহ হরদম ছবি তোলায় অভ্যস্ত তাদের নিকট বাইয়াত হওয়া, ছোহবত ইখতিয়ার করা ঈমান ও আমলের ক্ষেত্রে কিরূপ হুমকিস্বরূপ তা সহজেই অনুমেয়।
উল্লেখ্য যে, কামিল শায়েখ হচ্ছেন মুরীদের ইছলাহ্ তথা মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার হাবীব সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মা’রিফাত-মুহব্বত লাভের যেমন একমাত্র মাধ্যম তেমনি নাকেছ (অপূর্ণাঙ্গ) বা বিদয়াতীরা হচ্ছে- তা লাভের ক্ষেত্রে বিরাট অন্তরায়।
তাই আফদ্বালুল আউলিয়া, মাহবুবে সুবহানী, হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বিশ্ব বিখ্যাত কিতাব “মাকতুবাত শরীফে” উল্লেখ করেছেন, “বিদয়াতীদের সংশ্রব হতে দূরে থাকা আবশ্যক। কেননা বিদয়াতীদের সংশ্রব কাফিরদের সংশ্রব হতে অধিক অনিষ্টকর। ”
কাজেই কামিল শায়েখ যে আদেশ করবেন তা নির্দ্বিধায় পালন করবে। আর নাকেছ বা বিদয়াতী আলেমের ছোহবতে থাকা বিষ সাদৃশ্য বিধায় তা বর্জন করা আবশ্যক।
হুজ্জাতুল ইসলাম, ইমাম আবূ হামিদ মুহম্মদ গাজ্জালী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার বিশ্বখ্যাত অমরগ্রন্থ “ইহ্্য়াউ উলুমিদ্দীন” কিতাবে উল্লেখ করেন, “মুসলমানদের উচিত তাকে (বিদয়াতীকে) কাফির, মুশরিকের চেয়ে অধিক অপছন্দ করা। কেননা কাফিরের অনিষ্ট মুসলমানগণের জন্য সংক্রামক নয়। মুসলমানগণ তাদেরকে কাফির-মুশরিক হিসেবে চিনে বা বিশ্বাস করে। ফলে তাদের কথার প্রতি ভ্রুক্ষেপ করে না। সে নিজেও মুসলমান বলে দাবি করে না। কিন্তু বিদয়াতীরা? তারা এ কথাই বলে, যে বিষয়ের প্রতি সে আহ্বান করে সেটা হক, সত্য। ”
বিদয়াতীরা ইসলামী লেবাস-পোশাকে সজ্জিত হয়ে, পবিত্র কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফকে পুঁজি করে সম্মানিত ইসলাম ও মুসলমানগণের একান্ত দরদী সেজে আত্মপ্রকাশ করে। সেক্ষেত্রে বিদয়াতীরা দ্বীন ইসলামের ধারক-বাহক হিসেবে নিজেকে জাহির করে দরদমাখা, দু’চারটি বক্তব্য দিয়ে নেতার পদ অলংকৃত করার আশায় সর্বদা লালায়িত। দ্বীনদার, সরলমনা মুসলমানগণ তাদের সে ধোঁকা বুঝতে না পেরে অন্ধ অনুসরণ-অনুকরণে মেতে উঠে। ফলে অতি অল্প সময়েই তাদের ঈমান-আক্বীদা বিপর্যস্ত হয়, দ্বীনের ছহীহ্ সমঝটুকু হারিয়ে ফেলে, সত্য-মিথ্যার পার্থক্য নির্ণয়ের শক্তি খর্ব হয়ে যায়, হক্কানী-রব্বানী পীর-মাশায়েখ, আলেম-উলামাগণের প্রতি শত্রু ভাবাপন্ন হয়ে উঠে, হক-মত ও পথ হতে বিচ্যুত হয়। তখন হক্কানী-রব্বানী আলেম, আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ সম্বলিত উপদেশে কোন ফায়দা হয় না। অর্থাৎ তারা উনাদের তা’লীম বা নছীহত মুবারক বুঝতেই পারে না। (অসমাপ্ত)
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (৪৭)
১০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
পবিত্র ছোহবত মুবারক গ্রহণের ফাযায়িল-ফযীলত, গুরুত্ব-তাৎপর্য ও আবশ্যকতা:
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (৪৬)
৩০ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (৪৫)
২৯ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
পবিত্র ছোহবত মুবারক গ্রহণের ফাযায়িল-ফযীলত, গুরুত্ব-তাৎপর্য ও আবশ্যকতা:
২৮ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (৪৪)
২৬ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (৪৩) শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা যখন যা আদেশ করবেন তখন তা পালন করাই মুরীদের জন্য সন্তুষ্টি লাভের কারণ
২৫ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
ইলমে তাছাউফ
১৪ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
পবিত্র ছোহবত মুবারক গ্রহণের ফাযায়িল-ফযীলত, গুরুত্ব-তাৎপর্য ও আবশ্যকতা:
০৭ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
পবিত্র নক্শবন্দিয়ায়ে মুজাদ্দিদিয়া তরীক্বার শাজরা শরীফ
০৭ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
পবিত্র ছোহবত মুবারক গ্রহণের ফাযায়িল-ফযীলত, গুরুত্ব-তাৎপর্য ও আবশ্যকতা:
৩১ অক্টোবর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
যামানার মূল নায়িবে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে তায়াল্লুক-নিসবত ব্যতীত খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের সাথে তায়াল্লুক-নিসবত মুবারক রাখার দাবি বাতুলতার নামান্তর:
২৪ অক্টোবর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার)












