ইলমে তাছাওউফ
মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (১৬)
, ২৫ জুমাদাল উলা শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ১১ সাবি’ ১৩৯১ শামসী সন , ১০ ডিসেম্বর, ২০২৩ খ্রি:, ২৪ অগ্রহায়ণ, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা

কামিল শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনার ইচ্ছার বিরুদ্ধে কাজ করলে বা উনার অনুমতি মুবারক ব্যতীত চলে গেলে মুরীদের শুধু পরকালীন ক্ষতিই হয় না বরং অনেক সময় দুনিয়াবী নানা প্রকার মুছিবতেও গ্রেফতার হতে হয়।
নিম্নলিখিত ঘটনাটিই এর উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। সুলত্বানুল আউলিয়া হযরত জা’ফর জালদী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার খালিছ ওলী। উনার হামযাহ আলভী নামক একজন খাছ মুরীদ ছিলেন। তিনি সর্বদা স্বীয় শায়েখের দরবার শরীফে থেকে মুর্শিদ ক্বিবলা উনার খিদমত মুবারকে আঞ্জাম দিতেন। একবার হঠাৎ উনার মনে বাড়ী যাওয়ার ইচ্ছা হলো। বাড়ী গিয়ে মোরগ যবেহ করতঃ সন্তানদেরকে নিয়ে আহার করবেন, এই ছিল উনার মনের আকাঙ্খা।
তিনি উনার শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনার নিকট বাড়ী যাওয়ার অনুমতি চাইলে সুলত্বানুল আউলিয়া হযরত জা’ফর জালদী রহমতুল্লাহি আলাইহি বললেন, তুমি আজ রাতে এখানে থাকো। হযরত হামযাহ আলভী মনে মনে চিন্তা করলেন, আমি যদি আজ রাতে এখানে থাকি তবে কাল ভোর বেলায় ফজর ও চাশতের নামায পর্যন্ত থাকতে হবে। তার আগে রওয়ানা করা যাবে না। ফলে ভোরে সন্তানদের নিয়ে আহার করাও হবে না। এ চিন্তা করে তিনি নিজ শায়েখের নিকট পুনরায় অনুমতি প্রার্থনা করলেন, কিন্তু শায়েখ বা মুুর্শিদ ক্বিবলা বললেন, না, তুমি আজ রাতে আমার এখানেই থাকো। তখন হযরত হামযাহ আলভী বললেন, না হুযূর! আমার বিশেষ জরুরত, তাই যেতেই হবে। তখন সুলত্বানুল আউলিয়া হযরত জা’ফর জালদী রহমতুল্লাহি আলাইহি বললেন, তাহলে তোমার যা ইচ্ছা তাই করো। হযরত হামযাহ আলভী বাড়ী চলে গেলেন। বাড়ী গিয়ে মোরগ যবেহ করতঃ গোশত উনুনে চড়িয়ে দিলেন। পরদিন ভোর বেলা নিজের মেয়েকে হুকুম করলেন, উনুনের উপর থেকে গোশতের ডেগচীটি তুলে নিয়ে আসতে। সেই মেয়ে পিতার নির্দেশে ডেগচীটি তুলে আনতে গেল। কিন্তু ডেগচীটি তুলে আনার সময় হঠাৎ পা পিছলে সে পড়ে গেল এবং হাতের ডেগচী থেকে সমস্ত গোশত মাটিতে ছিটকে পড়লো।
তখন হযরত হামযাহ আলভী দুঃখ করে বললেন, যা হবার তা হয়েছে। গোশতগুলো উঠিয়ে আনো, তা ধুয়ে খাওয়া যাবে। মেয়েটি গোশত উঠাতে যাবে, ঠিক এমন সময় একটি কুকুর এসে সমস্ত গোশতে মুখ লাগিয়ে দিল। কতগুলো ইতোমধ্যে খেয়েও ফেললো। হযরত হামযাহ আলভী এ ঘটনা দেখে আক্ষেপ করে বললেন, হায় হায়! মোরগ তো খাওয়াই গেল না।
কে জানে আপন শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনার মন থেকেও উঠে গেলাম কি-না! এই বলে তিনি উনার শায়েখের খিদমতের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়ে গেলেন। কামিল শায়েখ তিনি মুরীদকে ফিরে আসতে দেখে বললেন, যে এক টুকরা গোশত খাওয়ার লালসায় শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনার নির্দেশ মুবারক পালন করে না, তার সে গোশত মহান আল্লাহ পাক তিনি কুকুরের ভাগ্যেই দিয়ে থাকেন। শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলার মুখে এ কথা শুনে হযরত হামযাহ আলভী অত্যন্ত অনুতপ্ত হয়ে নিজের অমার্জনীয় ভুলের জন্য তওবা করলেন। (তাযকিরাতুল আউলিয়া)
অতএব উল্লেখিত আলোচনা দ্বারা এটাই প্রমাণিত হলো যে, শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনার আদেশ অমান্য করে কোন কাজ করা বা অনুমতি ব্যতীত উনার দরবার শরীফ ত্যাগ করা মুরীদের জন্য যেমন ক্ষতিকর ঠিক তেমনি আফসুস ও অনুতপ্তের কারণ। কাজেই মুরীদের জন্য আবশ্যক হলো, নিজ শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনার দরবার শরীফ ত্যাগ করার পূর্বে উনার সম্মতি বা অনুমতি নেয়া। আর এক্ষেত্রে কোন প্রকার পীড়াপীড়ি বা জোর-জবরদস্তি করা উচিত নয়। বরং শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনার ইচ্ছার সাথে নিজের ইচ্ছা ও কামনা-বাসনাকে বিলীন করে দিয়ে ছবর ইখতিয়ার করবে। এতেই মুরীদের জন্য সর্বপ্রকার কামিয়াবী নিহিত। যদিও তা জ্ঞানের স্বল্পতা হেতু বাহ্যিকভাবে অসংযত বা অকল্যাণকর মনে হতে পারে।
মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
وَعَسَى أَنْ تَكْرَهُوا شَيْئًا وَهُوَ خَيْرٌ لَكُمْ وَعَسَى أَنْ تُحِبُّوا شَيْئًا وَهُوَ شَرٌّ لَكُمْ وَاللَّهُ يَعْلَمُ وَأَنْتُمْ لَا تَعْلَمُونَ
অর্থ: “তোমাদের কাছে যা অপছন্দনীয় মনে হয় সম্ভবত সেটাই তোমাদের জন্য কল্যাণকর। আর যা তোমাদের কাছে কল্যাণকর বা পছন্দনীয় মনে হয় সম্ভবত সেটাই তোমাদের জন্য অকল্যাণকর। বস্তুতঃ মহান আল্লাহ পাক তিনি জানেন, আর তোমরা জান না। (পবিত্র সূরা বাক্বারাহ শরীফ, পবিত্র আয়াত শরীফ-২১৬)
কাজেই, মুরীদ যেহেতু কল্যাণ ও অকল্যাণের ব্যাপারে নিশ্চিত নয়। বিধায় নিজ শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনার ইচ্ছার উপর ছবর বা ধৈর্য ধারণ করবে। কেননা যারা হক্কানী রব্বানী ওলীআল্লাহ, কামিল শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনারা একজন সাধারণ মানুষকে হাক্বীক্বী মু’মিন, মুত্তাক্বী, পরহেজগার, আল্লাহওয়ালা বানাতে সক্ষম। উনারা মহান আল্লাহ পাক উনার প্রদত্ত নূর মুবারক দ্বারা সবকিছু প্রত্যক্ষ করেন এবং ফায়ছালা দিয়ে থাকেন। সুবহানাল্লাহ! (অসমাপ্ত)
-আল্লামা মুফতী সাইয়্যিদ মুহম্মদ আব্দুল হালীম।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
পর্দা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া হারাম
১৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
একটা আদেশ মুবারক অমান্য করে আরেকটা মান্য করা জায়িয নেই
১৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
একটা আদেশ মুবারক অমান্য করে আরেকটা মান্য করা জায়িয নেই
১৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত বড়পীর ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সাওয়ানেহ উমরী মুবারক (৭)
১৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
পবিত্র শবে বরাত উনার রোযা নিয়ে বিভ্রান্তি নিরসন
১৩ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
ছবি তোলা শক্ত হারাম, রয়েছে কঠিন শাস্তি
১৩ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৩ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার দৃষ্টিতে লেবাস বা পোশাকের হুকুম-আহকাম (১১)
১৩ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার দৃষ্টিতে লেবাস বা পোশাকের হুকুম-আহকাম (১১)
১৩ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পবিত্র ঈমান বা আক্বায়িদ সম্পর্কিত পবিত্র কালিমা শরীফসমূহ
১৩ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পবিত্র ছহীহ হাদীছ শরীফ দ্বারাই শবে বরাত প্রমাণিত (৪)
১২ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার)