ইলমে তাছাওউফ
মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (২২)
স্বীয় শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনার জবান নিঃসৃত কথা মুবারক, আমল মুবারক, ব্যবহার, চলন মুবারক ইত্যাদি কোন বিষয়ে বিন্দু থেকে বিন্দুতম সংশয় বা সন্দেহকে অন্তরে স্থান দিবে না। যা মুরীদের কামিয়াবী হাছিলের পথে সবচেয়ে বড় অন্তরায়
, ২৫ শাওওয়াল শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ০৬ ছানী আশার, ১৩৯১ শামসী সন , ০৫, মে, ২০২৪ খ্রি:, ২২ বৈশাখ, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) ইলমে তাছাউফ
উল্লেখিত ঘটনার বেশ কিছু দিনের মধ্যে হযরত মনছুর হাল্লাজ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মধ্যে পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। তিনি উনার শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনার নৈকট্যশীল মুরীদ থেকে দূরে সরে গেলেন। কিন্তু উনার শায়েখ হযরত আমর ইবনে উছমান মাক্কী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি চাচ্ছিলেন না হযরত মনছুর হাল্লাজ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি দূরে সরে যান। সে জন্য তিনি উনার এই মুরীদের প্রতি বিশেষ নজর রেখেছিলেন। তবে আগের মত তিনি হযরত মনছুর হাল্লাজ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে যেরূপ ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার সাথে তা’লীম-তরবিয়ত দান করতেন সেরকম আর পরিলক্ষিত হলো না।
অন্য একদিনের ঘটনা, হযরত মনছুর হাল্লাজ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি গভীর মনোযোগের সাথে কিছু লিখছিলেন। এমন সময় উনার সম্মানিত শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা হযরত আমর ইবনে উছমান মাক্কী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি তা দেখতে পেয়ে জিজ্ঞেস করলেন, কি লিখতেছ? হযরত মনছুর হাল্লাজ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বললেন, পবিত্র কুরআন শরীফের অনুরূপ কিছু লিখছি। নাঊযুবিল্লাহ!
হযরত মনছুর হাল্লাজ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার এরূপ উত্তরে হযরত আমর ইবনে উছমান মাক্কী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার প্রতি আরও অসন্তুষ্ট হলেন।
এসবের পর আরো একটি ঘটনা ঘটলো, একদিন হযরত মনছুর হাল্লাজ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার শায়েখের একখানা হস্তলিখিত ইলমে তাছাওউফের কিতাব উনাকে না জানিয়ে নিয়ে গেলেন। অবশ্য উনার অসৎ উদ্দেশ্য ছিলনা। তিনি এরূপ ধারণায় নিয়েছিলেন যে, কয়েকদিন কিতাবখানা পড়বেন, পড়া শেষ হলেই আবার সেটি যথাস্থানে রেখে দিবেন। মহান আল্লাহ পাক উনার লিখন অলংঘনীয়। হযরত মনছুর হাল্লাজ রহমতুল্লাহি আলাইহি কিতাবটি নিয়ে যাওয়ার পরেই উনার শায়েখ তা খুঁজে না পেয়ে চিন্তা করলেন যে, কেউ তা চুরি করে নিয়ে গেছে। কিতাবখানা হযরত আমর ইবনে উছমান মাক্কী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার অত্যন্ত প্রিয় ছিল। উল্লেখ্য, তা ছিল হস্ত লিখিত, তাই এর দ্বিতীয় কোন কপিও নেই।
হযরত আমর ইবনে উছমান মাক্কী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি মূল্যবান কিতাবটি খুজে না পেয়ে অত্যন্ত ভারাক্রান্ত হৃদয়ে বদদোয়া করলেন। দোয়ার মধ্যে তিনি বলেছিলেন- “আয় আল্লাহ পাক! যে আমার এই দূর্লভ কিতাবখানা নিয়েছে তার হাতগুলো যেন দ্বিখন্ডিত করা হয়। ”
হযরত আমর ইবনে উছমান মাক্কী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার এই বদদোয়া মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট কবুল হলো। এবং তারই ফলে পরবর্তীকালে হযরত মনছুর হাল্লাজ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার হাতগুলো কাটা হয়েছিল। হযরত মনছুর হাল্লাজ রহমতুল্লাহি আলাইহি অবশ্য কিছু দিনের মধ্যেই কিতাবখানা যথাস্থানে রেখে দিয়েছিলেন।
উল্লেখ্য যে, হযরত মনছুর হাল্লাজ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার আক্বল-সমঝের অভাব অথবা শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনার আদেশ-নিষেধের খিলাফ আমল করা এবং শায়েখের অসন্তুষ্টির কারণে তিনি নিজ শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনার দরবার শরীফে বেশী দিন থাকতে পারেননি। পরবর্তীতে হযরত আমর ইবনে উছমান মাক্কী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি হযরত মনছুর হাল্লাজ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে উনার দরবার শরীফ থেকে বিদায় করে দিলেন।
(১৮) স্বীয় শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনার জবান নিঃসৃত কথা মুবারক, আমল মুবারক, ব্যবহার, চলন মুবারক ইত্যাদি কোন বিষয়ে বিন্দু থেকে বিন্দুতম সংশয় বা সন্দেহকে অন্তরে স্থান দিবে না। যা মুরীদের কামিয়াবী হাছিলের পথে সবচেয়ে বড় অন্তরায়।
মাহবুবে ইলাহী, হযরত খাজা নিযামুদ্দীন আউলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার খলীফাগণের মধ্যে নাছীরুদ্দীন মাহমূদ চেরাগে দেহলবী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি ছিলেন অন্যতম।
মাহবুবে ইলাহী, হযরত খাজা নিযামুদ্দীন আউলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি প্রায়ই সামা মজলিসের আয়োজন করতেন। একদিন সামা শরীফের মজলিস হচ্ছিল, সে সময় নাছীরুদ্দীন মাহমূদ চেরাগে দেহলবী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার বাড়ীতে ছিলেন। উনার এক পীর ভাই হযরত নাছীরুদ্দীন মাহমূদ চেরাগে দেহলবী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে নিতে আসলেন। অতঃপর বললেন, আপনি সামা মাহফিলে যাবেন না? হযরত নাছীরুদ্দীন মাহমূদ চেরাগে দেহলবী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বেশী কিছু বলেননি, শুধু এতটুকুই বলেছিলেন, “সবসময় না গেলেও তো চলে। ” উনার সেই পীর ভাই আর কিছু বললেন না, সেখান থেকে এসে উনার সম্মানিত শায়েখ হযরত খাজা নিযামুদ্দীন আউলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার নিকট বিষয়টি পেশ করলেন।
হযরত খাজা নিযামুদ্দীন আউলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি তখন শুনে শুধু এতটুকুই বললেন-
حق ھمی است کہ او گفتہ
“সে যা বলেছে ঠিকই বলেছে। সবসময় মজলিসে না আসলেও তো চলে”।
সাথে সাথে উনার নিকট ফায়েজ-তাওয়াজ্জুহ আসা বন্ধ হয়ে গেলো। উনার সিলসিলাও বন্ধ হয়ে গেলো। নাঊযুবিল্লাহ!
যার কারণে তিনি যতটুকু ফায়েজ-তাওয়াজ্জুহ, নিয়ামত উনার শায়েখের থেকে হাছিল করেছিলেন, উনার ইন্তেকালের পরে সব দাফন করে দেয়া হলো। তিনি এত বড় বুযূর্গ ব্যক্তি হওয়া সত্বেও উনার ইন্তেকালের সাথে সাথেই উনার সিলসিলাও বন্ধ হয়ে গেল। (অসমাপ্ত)
-আল্লামা মুফতী সাইয়্যিদ মুহম্মদ আব্দুল হালীম।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (২৪)
০৭ মে, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
আক্বীদা বিশুদ্ধ রাখার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা
০৬ মে, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (২৩)
০৬ মে, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
০৫ মে, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
০৫ মে, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত খাজা মুঈনুদ্দীন হাসান চীশতী আজমিরী সাঞ্জারী রহমতুল্লাহি আলাইহি (১৫)
০১ মে, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (২১)
২৮ এপ্রিল, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (২০)
৩১ মার্চ, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (১৯) সালিক বা মুরীদ তার গুরুত্বপূর্ণ সকল কাজ যথাযথভাবে স্বীয় শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনার পরামর্শ অনুযায়ী করবে
২৬ মার্চ, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে ইলমে তাছাউফ অর্জন করার গুরুত্ব
০৭ মার্চ, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনার ফায়িয-তাওয়াজ্জুহর বদৌলতে মৃত্যুর সময় অল্পের জন্য ঈমান রক্ষা...
০১ মার্চ, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
একজন কামিল মুর্শিদ বা শায়েখ উনার নিকট বাইয়াত হওয়া ফরয (৩)
১৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার)